বছরে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি মোটরসাইকেল কেন্দ্রীক ব্যবসার কেন্দ্রস্থল বাংলাদেশ। প্রতিবছর এর পরিমান বেড়ে চলেছে। ঘনবসতিপূর্ন ছোট দেশ হওয়াতে ব্যবসার সম্ভবনা অনেক। মোটরসাইকেল আমদানী বা প্রস্তুতের পাশাপাশি মোটরসাইকেল কেন্দ্রীক ব্যবসার নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরী হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিছু ব্যবসায়ীক আইডিয়া শেয়ার করা হলো যেগুলো আগামিতে নতুন সম্ভবনার দ্বার উন্মোচন করবে। আইডিয়াগুলো থেকে ব্যবসা শুরু করতে শুন্য বিনিয়োগ থেকে কোটি টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্র রয়েছে। আপনি বেছে নিতে পারেন আপনার সুবিধামতো যে কোন একটি। অংশীদার হতে পারেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপ্লবের।
মোটরসাইকেল অনলাইন শপ
২০০০সালে মুন্সীজী ডট কম এর হাত ধরে বাংলাদেশ প্রবেশ করে ইকমার্সের জগতে। ব্যস্ততম জীবনে মানুষ অনেকটাই নির্ভর হয়ে পড়ছে ইন্টারনেটের উপরে। আর কেনাকাটার ঝক্কি সামলাতে ইকমার্সে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন অনেকেই। অনলাইনে মোটরসাইকেল বিক্রির বিষয়টি এই মুহুর্তে কিছুটা আজগুবি শোনালেও আগামি বছরগুলোতে অনলাইনই হয়ে উঠবে মোটরসাইকেল বিক্রির অন্যতম ক্ষেত্র। ক্রেতা যেমন শোরুমে দৌড়াদৌড়ি না করে ওয়েবসাইট থেকে বাইকের বিস্তারিত বিষয় জেনে নিয়ে অর্ডার দিয়ে বাইক কিনতে পারবে। তেমনি ব্র্যান্ডগুলোকেও তাদের শোরুম/ডিলারদের পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচের প্রয়োজন পড়বে না। বরং সেই অর্থটি সার্ভিস সেন্টার এবং স্পেয়ার পার্টস এর জন্য বরাদ্দ রাখতে পারবে।
মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ প্রস্তুত
আগামি কয়েক বছরের মধ্যে অধিকাংশ ব্র্যান্ডগুলোই দেশে মোটরসাইকেল প্রস্তুত করবে। মোটরসাইকেল প্রস্তুত করতে প্রয়োজনী হবে যন্ত্রাংশ। যেগুলোর অন্যতম যোগানদাতা হবে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান। মোটরসাইকেলের সিট, প্লাস্টিক আইটেম, শাড়ী গার্ড/লেগ গার্ড ইত্যাদি প্রস্ততের ব্যবসা হতে পারে লোভনীয় ব্যবসা।
মোটরসাইকেল পার্টস/গিয়ারশপ
মোটরসাইকেলের চাহিদা যেমন বাড়ছে, পাশাপাশি পার্টসের চাহিদাও তেমন বাড়ছে। এছাড়াও অন্যান্য সৌখিন/প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ এবং নিরাপত্তা গিয়ার এর চাহিদা বাড়ছে। তাই আগামিতে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল পার্টস/গিয়ারশপ বিষয়ক ব্যবসার ক্ষেত্র সুবিশাল।
মোটরসাইকেল রিপেয়ার সার্ভিস
ভালো মানের রিপেয়ার সার্ভিস ব্যবসা সকল দেশে সকল পন্যের জন্যই প্রযোজ্য। আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত এবং দক্ষ-অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দ্বারা মোটরসাইকেল রিপেয়ার সার্ভিস খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। পাশাপাশি অন-কল বা বাসায় গিয়ে রিপেয়ার সার্ভিস প্রদান ব্যবসায় অতিরিক্ত ভ্যালু এড করবে।
মোটরসাইকেল ট্যুর অপারেটর
কয়েকজন মিলে মোটরসাইকেলে চেপে ট্যুর দেয়া এখন খুবই সাধারন ঘটনা হয়ে গেছে। দেশের ভেতরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন ট্যুর হচ্ছে তেমনি দেশের সীমানা পেরিয়ে দেশের বাইরেও বাইকাররা চলে যাচ্ছেন ট্যুর দিতে। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে “মোটরসাইকেল ট্যুর অপারেটর” সার্ভিস চালু করা যেতে পারে। যাদের কাজ হবে বাইকারদের জন্য বিভিন্ন ট্যুর আয়োজনকরা।
মোটরসাইকেল ট্রেনিং সার্ভিস
দেশে প্রতিবছর হাজার হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্রেতাই মোটরসাইকেল চালানো জানেন না। দেশের জেলা শহরগুলোতে মোটরসাইকেল ট্রেনিং সার্ভিস একটি চমতকার ব্যবসার ক্ষেত্র হতে পারে। পাশাপাশি কেউ চাইলে এককভাবে অর্থাৎ ব্যক্তিগত ভাবেও এই সার্ভিস প্রদান করতে পারে। এক্ষেত্রে মোটরসাইকেল চালানোর ভালো অভিজ্ঞতা ছাড়া আর কোনো অর্থনৈতিক বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।
মোটরসাইকেল মডিফিকেশন
এই সার্ভিস নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ইতমধ্যেই জনপ্রিয় হওয়া শুরু করেছে। আগামিতে এর ব্যবসায়িক ক্ষেত্র আরো প্রসারিত হবে বলেই আশা করা যায়।
মোটরসাইকেল ডেলিভারী সার্ভিস
মোটরসাইকেলে করে পন্য ডেলিভারী সার্ভিসটি খুবই জনপ্রিয় এবং প্রয়োজনীয় একটি সার্ভিস হতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বা এককভাবে এই সার্ভিসটি দেয়া যেতে পারে।
মোটরসাইকেল ভাড়া
কক্সবাজারে গিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরতে গেলেই আপনি অনুভব করবেন একটি মোটরসাইকেল থাকলে হয়তো ঘুরাঘুরিগুলো আরো সহজ হতো। অনেক বাইকারই আছেন যারা অন্য দেশে গিয়ে বাইক ভাড়া নিয়ে ঘুরে বেড়ান। একইরকম সার্ভিস এদেশেও চালু করা যেতে পারে।
মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার
এই ব্যবসাটি ইতমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে গেছে। এই মুহুর্তে শুধুমাত্র ঢাকাতে এর প্রভাব থাকলেও আগামিতে ব্যস্ততম প্রতিটি নগরীতেই এর পরিধি প্রসারিত হবে।
বর্নিত ১০টি হয়তো অন্যতম জনপ্রিয় ব্যবসায়ীব আইডিয়া হতে পারে তবে এই তালিকা আগামিতে আরো বর্ধিত হবে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আর তাই যারা মোটরসাইকেল ভালোবাসেন বা ব্যবসা করতে পছন্দ করেন তারা উপরের যেকোনো একটি বা একাধিক ব্যবসায়ীক আইডিয়া কাজে লাগাতে পারেন।
তবে-
নতুন ব্যবসায়ীরা মনে রাখবেন, ব্যবসায় প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট টার্গেট এবং নিরিবিচ্ছিন্নভাবে লেগে থাকা।
শুভকামনা!