আমাদের দেশে অনেকেই মনে করেন ১৫০সিসি বাইক মানেই ভয়ংকর বাইক। যত এক্সিডেন্ট সব এইসব বাইকের কারনে হয়, যত মন্দ কাজ সব এই বাইক দিয়ে হয়। অথচ দেশের বাইরে বাইক বলতে কমপক্ষে ২৫০সিসি বুঝে থাকে। ২৫০সিসি থেকে শুরু হয়ে কয়েক হাজার সিসি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বেশিদুরে যেতে হবে না কষ্টকরে পার্শ্ববর্তীদেশ ইনডিয়ার দিকে তাকালেই দেখা যায় কত উচ্চ সিসির বাইক সেখানে অবলীলায় চলে। বেশি সিসি মানেই যে বেশি গতি নয় এটি অনেকেই বুঝতে চান না। এটি ঠিক বেশি সিসি হলে গাড়ীর শক্তি বেশি থাকায় বেশি গতি তোলা সম্ভব কিন্তু বেশি সিসির বাইক প্রধানতই আরাম এরপরে ফ্যাশন বা শখের জন্য হয়ে থাকে।
আমাদের দেশের অনেক তরুনরেই স্বপ্ন একটু ভালো মানের বাইক চালানো। কিন্তু সিসি লিমিট থাকায় আমাদের তরুনদের স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। ১৫৫ সিসি থেকে মাত্র ৫সিসি বাড়িয়ে ১৬০সিসিই করা হচ্ছে না। যাইহোক আমাদের আজকের বিষয় আমাদের দেশের বাইকের সিসি নয়, বরং ভিন্ন দেশের কিছু বাইকের সাথে পরিচিত হওয়া যারা দামের কারনে পৃথিবীব্যাপী পরিচিত। এই দামে বাইক কেনা শুধু আমাদের নয় অনেক দেশের তরুনদের পক্ষেই সম্ভব নয়। তবুও সংবাদটি যেহেতু বাইক নিয়ে, জানতে দোষ কোথায়। চলুন পরিচিত হই বিশ্বের কিছু দামী বাইকের সাথে।
১০. NCR Leggera 1200 Special
টাইটানিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরী করা হয়েছে বাইকটির ফ্রেম যার ওজন মাত্র ১০.৬ পাউন্ড। ব্রেকে ব্যবহার করা হয়েছে কার্বন-সিরামিক। বডি এবং হুইলে ব্যবহার করা হয়েছে কার্বন। ১২০০সিসি রেন্জের ইনজিনটি ১৩২ হর্সপাওয়ার শক্তি তৈরী করতে পারে। দাম মাত্র ৭২০০০ ডলার। বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫৭ লাখ টাকা।
০৯. Vyrus 987 C3 4V V
মোটরসাইকেলের জগতে অনেকেই ভাইরাস(Vyrus) নামটির সাথে পরিচিত নয়। কিন্তু যারা চিনে, শ্রদ্ধার চোখেই তাকে দেখে। Ducati’র V-Twin ১১৯৪.৪ সিসি ইনজিন তৈরী করতে পারে ১৬৭হর্স পাওয়ার, ওজন ১৫৯ কেজি। অফিসিয়ালী দাবী করা হয় টপস্পীড ২৯৫কিমি/ঘন্টা। দামও তেমন বেশি নয়, মাত্র ৯১৭০০ ডলার।
০৮. MV Agusta F4CC
মাত্র ১লাখ ২০ হাজার ডলার মুল্যের এই ইতালিয়ান যন্ত্রটির ইনজিন ৪সিলিন্ডার বিশিস্ট, যে ২০০হর্সপাওয়ার তৈরী করতে পারে। টপস্পীড মন্দ না, প্রতি ঘন্টায় যেতে পারে ৩১৪কিমি। আশা করি খুব বেশি হতাশ হন নাই?
০৭. MTT Turbine Streetfighter
বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে রোলস রয়েসের এলিসন টারবাইন ইনজিন যে নিমিষেই ৩২০ হর্সপাওয়ার যোগান দিতে পারে। সর্বোচ্চ ৪০০কিমি গতিতে ছুটতে পারা এই যন্ত্রটি তৈরীতে কার্বন ফাইবার ব্যবহার করা হয়েছে। উল্লেখ্য এই বাইকটিকে ৪২০হর্সপাওয়ারে আপগ্রেড করা সম্ভব। এর ফলাফল কি হবে বুঝতে পারছেন তো? আর দাম? মাত্র ১লাখ ৭৫ হাজার আমেরিকান ডলার।
০৬. Ducati NCR M16
২০০ অশ্বশক্তির V4 ইনজিনে তৈরী এই কালোদৈত্যটি ডিজাইনে এবং কাজে অতুলনীয়। এটি অন্যতম হালকা ওজনের সুপারবাইক হিসেবেও পরিচিত। পকেটে মাত্র ২,৩২,৫০০ ডলার থাকলেই আপনি এটি কিনতে পারবেন।
০৫. Ecosse FE Ti XX
এই বাইকটির দাম মাত্র ৩লাখ। এই দাম দিয়ে আমাদের দেশেই মাঝারি মানের বাইক হয়। সমস্যা হলো মুদ্রাটি টাকা হবে না, মুদ্রাটি হবে আমেরিকান ডলার এ। অর্থাত আপনি যদি নগদ ৩লাখ ডলার এর মালিক হউন তাহলে এই বাইকটি কেনার কথা ভাবতে পারেন। এই বাইকটি তৈরীতে মুল্যবান ধাতু টাইটেনিয়াম এবং কার্বন ব্যবহার করা হয়েছে। ২২৫হর্সপাওয়ার এর ইনজিনটি চালু হলেই এর গর্জনে আপনি রীতিমতো মুগ্ধ হবেন।
০৪. Legendary British Vintage Black
বিলেতে তৈরী বাইকটি তার গঠন বা ক্ষমতার জন্য বরং বাইকটির সাথে কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা জড়িত বলে এর এমন আকাশ ছোয়া দাম। ১৯৪৮ সালে তৈরী হওয়া V-twin ইনজিন বিশিষ্ট এই বুড়ো ভল্লুককে আপনার বাসায় আনতে হলে আপনাকে গুনতে হবে নগদ ৪লক্ষ ডলার।
০৩. Dodge Tomahawk V10 Superbike
ইন্টারনেট এবং ফেসবুকের কল্যানে আমরা অনেকেই এই অদ্ভুত ধরনের বাইকটি অনেকেই দেখেছি। ইনজিন ৮৩০০সিসি। ০ থেকে ১০০কিলোমিটার স্পীড তুলতে সে সময় নেয় মাত্র ২.৬সেকেন্ড।৫০০হর্সপাওয়ারের ইনজিনটির টপস্পীডও নেহায়েত কম নয়, ৬৭৫কিমি/ঘন্টা। দাম মাত্র ৫লাখ ৫৫হাজার ডলার।
০২. 1954 AJS 500 cc Porcupine
এটিই আরেকটি ঐতাহাসিক বাইক। যেটির দাম মুলত বাইকটির গঠন বা ক্ষমতার জন্য হয়নি। এলুমিনিয়াম এলয়ে তৈরী বাইকটির ইনজিন ৫০০সিসি। বাইকটি ১৯৪৫ সালে তৈরী করা হয়। দাম ৬লাখ ৭৫হাজার ডলার।
০১. Million Dollar Harley Davidson
দাম মাত্র মিলিয়ন ডলার। টাকায় কত হয় বলতে পারছি না, আমার ক্যালকুলেটরটা কয়েকদিন যাবত নষ্ট। ব্যতিক্রমী এবং দামী বাইকের জন্য এমনিতেই হার্লি ডেভিডসনের নাম বিশ্বজোড়া। ৬সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইনজিন রয়েছে বাইকটিতে।উজ্বল লাল এবং হলুদ রং ব্যবহার করা হয়েছে ডিজাইনে। ২০১০ সালে বাইকটি প্রস্তুত করা হয়।
সব সময়েই বাইকের দাম বাইকের সিসি বা গঠনের কারনে হয় না। কখনও এর সাথে ইতিহাস জড়িত থাকে, কখনও তাকে আবেগ, কখনও থাকে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। তাই সকল বাইক দাম দিয়ে তাকে বিচার করা সম্ভব নয়। আর বর্নিত দাম কখনই সঠিক নয় কারন বাইকের বর্তমান মালিক আপনার কাছে এই দামে বাইকটি বেচবেন কিনা সেটিও বিবেচ্য বিষয়।