সম্প্রতি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সুত্র ধরে ফেসবুকে বাইক কমিউনিটিতে ঝড় উঠে। বাইকারদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন উচ্চ সিসির বাইকের অনুমোদনের পথে বাংলাদেশ। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, আশা-নিরাশা সবই চলে। অনেকেই আশা করছেন এবার উচ্চ সিসি বাইক বাংলাদেশের রাস্তা কাঁপাবে। আবার অনেকে এতোটা আশাবাদী হতে পারছেন না অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে। চলুন বোঝার চেষ্টা করি প্রকৃত বাস্তবতা।
উচ্চ সিসি বাইকের অনুমোদন না দেয়ার ক্ষেত্রে যে অযুহাতগুলো দেয়া হয়ে থাকে-
দুর্ঘটনা বাড়বে:
উচ্চ সিসি বাইকের অনুমোদনে সর্ব প্রথম যে অযুহাতটি দেখানো হয় যে এতে বাইকাররা অনেক গতিতে বাইক চালাবে এবং দেশে দুর্ঘটনা বেড়ে যাবে।
বাস্তবতা: বেশি গতিতে বাইক চালালে দুর্ঘটনার সম্ভবনা বাড়ে এ কথা সত্য তবে উচ্চ সিসি মানেই সব সময় উচ্চ গতির বাইক তা নয়, বরং ভালো কন্ট্রোলযুক্ত সকল বাইকই উচ্চ সিসির হয়ে থাকে। তাই মান-সম্মত ভালো কন্ট্রোলের বাইক পেতে উচ্চ সিসি বাইকের বিকল্প নাই। বাংলাদেশে ট্রাফিক সার্জেন্টদের মাঝে ইয়ামাহা এফজেডএস ২৫০সিসি বাইক বিগত একবছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। সাধারন বাইকের তুলনায় এসকল বাইকের কন্ট্রোল কতটুকু ভালো নি:সন্দেহে তারা তা বলতে পারবেন।
ভালো রাস্তার অভাব:
দ্বিতীয় যে অযুহাতটি শোনা যায় তা হলো বাংলাদেশে রাস্তা ততটা উন্নত নয়, তাই উচ্চ সিসি বাইক চালানো সম্ভব নয় এবং চালালে দুর্ঘটনা বেশি ঘটবে।
বাস্তবতা: বাংলাদেশে প্রতিনয়তই রাস্তা ঘাটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েই চলেছে। এক্সপ্রেস হাইওয়ে হয়েছে।৪লেন থেকে ৬লেন পর্যন্ত সুপরিকল্পিত হাইওয়ে তৈরী হচ্ছে। এইসকল রাস্তায় স্বল্প গতির যানবাহন চলাচল দুর্ঘটনার কারন হয়ে দাড়াবে। এসকল রাস্তায় উচ্চগতির এবং ভালো কন্ট্রোলের বাহনের প্রয়োজন।
অপরাধ বাড়বে:
উচ্চ সিসি বাইকের ক্ষেত্রে তৃতীয় যে সমস্যার কথা বলা হয়ে থাকে তা হলো উচ্চ সিসি বাইক সহজলভ্য হলে অপরাধ বেড়ে যাবে।
বাস্তবতা: দু:খজনক ভাবে বাংলাদেশের যে কোন অপরাধের দোষ প্রথমেই এসে চাপে বাইকারের ঘাড়ে। জংগী হামলা হয়েছে, বাইকার ধরো। কোথাও মারামারি হয়েছে, বাইকার ধরো। রাস্তায় বাস এক্সিডেন্ট বেড়েছে, বাইকার ধরো। এ কথা সত্য যে অপরাধীরা অপরাধের জন্য অনেক সময়েই বাইক ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু কিছু মানুষের অপরাধ সকল বাইকারের উপর চাপিয়ে দেয়া দু:খজনক। বরং এখন আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে উচ্চ সিসির বাইক দেয়া হয়েছে। তারা চাইলেই বাইক দিয়ে করা অপরাধীরদের সহজেই ধরতে পারে।
উচ্চ সিসি বাইক অনুমোদনে নীতিগতভাবে যে সমস্যা থাকতে পারে:
বাংলাদেশে শিল্প বিকাশে দেশীয় উৎপাদনের উপরে জোর দেয়া হচ্ছে। আর তাই দেশীয়ভাবে উৎপাদিত বাইকে শুল্কের হার অনেক কম। বাংলাদেশের জনপ্রিয় বাইক ব্রান্ড রানার, হিরো, বাজাজ, হোন্ডা, টিভিএস, সুজুকি, ইয়ামাহা এবং এইচ-পাওয়ার পর্যায়ক্রমে দেশীয়ভাবে বাইক উৎপাদনের পথে এগিয়ে চলেছে। স্বল্প সিসির বাইক দিয়ে শুরু করে তারা ধীরে ধীরে উ্চ্চ সিসির বাইক উৎপাদনের পথে এগিয়ে চলেছে। দেশীয় উৎপাদনের সুফল বাইকাররাও পাচ্ছেন। মাত্র ৯০হাজার টাকায় হোন্ডা ১১০সিসি বাইক এখন বাজারে রয়েছে। যা এক সময় কল্পনাও করা যেতো না।
বর্তমানে যারা বাইক উৎপাদনে রয়েছেন তারা আচমকাই সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবেন যদি হঠাৎ উচ্চ সিসি বাইকের অনুমোদন দেয়া হয়। ধাপে ধাপে সিসি লিমিট বাড়ানোর পাশাপাশি কোম্পানীগুলোর উৎপাদন ক্যাপাসিটিও বাড়াতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। তবে এমনটা যেনো না হয় যে একেকবারে মাত্র ১০সিসি-১৫সিসি করে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। প্রতিবছর অন্তত ১০০সিসি করে বৃদ্ধি করলে উৎপাদনকারী কোম্পানী এবং আমদানীকারক উভয়েরই মাঝেই ব্যালেন্স হয়।
প্রয়োজন স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারনের:
অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশে বাইকের স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারন প্রয়োজন এবং সময়ের প্রয়োজনে আপডেট করা প্রয়োজন। যেমনটি করা হয়ে থাকে পার্শ্ববর্তী দেশে। সেখানে ইউরোপের সাথে তাল রেখে বর্তমানে BS6 স্ট্যান্ডার্ড বলবত রয়েছে। পূর্ববর্তী স্ট্যান্ডার্ডের তুলনায় পরের স্ট্যান্ডার্ডে বাইকের জ্বালানি থেকে দূষন কম হয়, বাইকের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
বহুল আলোচিত সিসি লিমিট বৃদ্ধির মিটিং এর সফলতা কামনা করি। আশা করি এখানে বাইকারদের সুদীর্ঘকালের মনের আশা পূরন হবে।
আবু সাঈদ মাহমুদ হাসান
মোটরসাইকেল ভ্যালী