ট্রাক!ট্রাক!ট্রাক!
শুয়োর মুখো ট্রাক আসবে
দুয়োর বেধে রাখ।
কেন বাধবো দোর জানালা
তুলবো কেন খিল?
আসাদ গেছে মিছিল নিয়ে
ফিরবে সে মিছিল।
ট্রাক!ট্রাক!ট্রাক!
ট্রাকের মুখে আগুন দিতে
মতিয়ুরকে ডাক।
কোথায় পাব মতিয়ুরকে
ঘুমিয়ে আছে সে!
তোরাই তবে সোনামানিক
আগুন জ্বেলে দে।
দেশে ট্রাক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাবার হার বেড়ে যাওয়াতে কবি আল মাহমুদ এই প্রতিবাদী কবিতাটি লিখেছিলেন।
২০১৮ সালে বাংলাদেশি বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলার একটি বিমান নেপালের কাঠমান্ডু বিমান বন্দরের কাছে বিধ্বস্ত হলে ৫১ জন নিহত হয়। পৃথিবীর ভয়ংকর বিমানবন্দরের মধ্যে এটি অন্যতম। এর কারনে বিমানও নিষিদ্ধ হয় না, এয়ারপোর্টও বাতিল হয়নি।
বাংলাদেশে নিয়মিত লঞ্চডুবিতে বহুসংখ্যক মারা যায়, যার জন্য লঞ্চ চলাচল নিষিদ্ধ হয়নি।
বাস দুর্ঘটনার কারনে কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীদের দেশব্যাপী আন্দোলনের কথা সবাই জানে। সেকারনে কিন্তু বাস নিষিদ্ধের দাবী কেউ জানায় নাই, বরং আইনের শাসন চেয়েছে সবাই।
এবছর (২০২২) ঈদ-উল-ফিতরের ছুটিতে ব্যপক সংখ্যক মানুষ বাইকে চেপে নিজ গ্রাম/পরিবারের সাথে ঈদ করতে গিয়েছিলেন। ফলে কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি। যে কোনো ঈদের সময় দুর্ঘটনা বেশিই ঘটে থাকে অনেকগুলো কারনে, সকল কারন ব্যাখ্যায় যাবো না। শুধু এইটুকু বলা যায় যে এদেশে রাস্তায় যানবাহন বেশি থাকলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে, বিশেষকরে ঈদের সময়তো বটেই।
এবার জানার চেষ্টা করি অনিরাপদ জেনেও কেনো মানুষ বাইকে করে ঈদে বাড়ী যেতে চাইছে?
পৃথিবীর যে কেউ মারা যাবার চেয়েও হাত-পা ভেংগে অচল হওয়াকে বেশি অপছন্দ করে। বাইক নিরাপদ নয় জেনেও নিজে এবং সাথে বউ-সন্তান নিয়েও মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তায় নেমে যায়। এর অন্যতম কারন হলো বাস/ট্রেন/লঞ্চের টিকেট না পাওয়া, তাদের স্বেচ্ছাচারীতা এবং রাস্তায় বিশৃংখল অবস্থা এবং জানজট জীবনকে অতিষ্ট করে তুলে। এসকল বিষয় এড়াতেই বাইকাররা জীবনের ঝুকি নিয়ে হলেও বাইকে করে ঈদে বাড়ী ফিরে।
এ কথা সত্য যে রাস্তায় উচ্ছৃংখল, অদক্ষ বাইকারের কারনে দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে, তার পরিমান সীমিত এবং তা নিয়ন্ত্রনের জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগই যথেষ্ঠ। এদের কারনে মহাসড়কে বাইক বন্ধ করে দেবার চিন্তা বড়ই অদ্ভুত।
প্রত্রিকার খবর থেকেই জানা যায় গত রোজার ঈদে বাইকারদের কারনে বাস মালিকদের ব্যবসা তাদের ধারনার তুলনায় অনেক কম হয়েছে। এমন না হয় যে বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে গিয়ে গনহারে বাইকারদের উপর নিষেধাজ্ঞা আনা হয়।
মহাসড়ক ও এক্সপ্রেস হাইওয়েকে নিরাপদ রাখতে এসকল রাস্তায়-
- কম সিসি বাইকের জন্য নীতিমালা তৈরী করা হোক অথবা আলাদা লেন করা হোক
- অধিক সেফটি ফিচারযুক্ত হাই সিসি বাইক আমদানী/প্রস্তুত করা হোক
- হাই সিসি বাইক পেতে বিশেষ ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা অন্তত কয়েক বছরের দক্ষতাকে বিবেচনায় রাখা হোক।
সড়কে একটি দুর্ঘটনা, কোথাও বেআইনী কাজ বা যাই হোক সব কিছুর দায় কিভাবে যেন বাইকারদের উপরেই এসে চেপে বসে। সাম্প্রতিক সময়ে পদ্মা সেতুতে প্রথম দুর্ঘটনায় ২জনের বাইকারের মৃত্যুতে পদ্মা সেতুতে বাইক নিষিদ্ধ করা হয়। পরে জানা গেলো দুর্ঘটনায় তারা দোষী নয়। এ ঘটনার পরেও বাস/ট্রাক ইত্যাদি দুর্ঘটনায় মৃত্যু চলমান কিন্তু তাদের নিয়ে টু শব্দ নেই। বাইকারদের জন্য যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পের এই লাইনটিই প্রযোজ্য-
“যা-কিছু হারায়, গিন্নি বলেন, “কেষ্ট বেটাই চোর।“
আবু সাঈদ মাহমুদ হাসান
ফাউন্ডার, মোটরসাইকেল ভ্যালী