আমাদের সকলেরই জানা মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ড হিসেবে বাজাজ কতটা পরিচিত, আর তা যদি হয় এশিয়ার ভেতর তাহলেতো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা সবসময় চেষ্টা করে সময়ের সাথে সাথে ব্যাবহারকারীদের নিত্য নতুন চাহিদা পূরন করার, আর এজন্য তাদের চেষ্টারও কোন কমতি থাকে না। সম্প্রতি ১২৫ সিসি সেগমেন্টে নতুন চমক এবং অ্যাডভেঞ্চার যোগ করতে বাজাজ নিয়ে এসেছে সর্বাধিক শক্তিশালী ১২৫ সিসির একটি বাইক যেখানে থাকছে সেই পুরোনো আইকনিক পালসারের সাথে আধুনিকত্যের ছোয়া। হ্যাঁ আমরা কথা বলছি বাজাজ পালসার ১২৫ নিওন সম্পর্কে যা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্ডিয়াতে যাত্রা শুরু করেছে।
এই ব্র্যান্ড নিউ বাজাজ পালসার ১২৫ নিওন এর যাত্রা শুরু করার মাধ্যমে বাজাজ তাদের পালসার পরিবারের আরেকটি সক্রিয় সদস্য বৃদ্ধি করেছে। ১৫০ সিসি ক্যাটাগরিতে বাজাজের ফ্ল্যাগশিপ বাইক হিসবে পালসার সিরিজ পরিচিত। নিজস্ব দেশে এবং বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে রয়েছে এই বাইকগুলোর ব্যাপক চাহিদা এবং বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী। আর এখন থেকে থ্রিল শুরু হতে চলেছে ১২৫সিসি সেগমেন্টেও পালসারের সাথে। পালসার ১২৫ চালু করার মাধ্যমে বাজাজ শুধুমাত্র তার পালসার পোর্টফোলিওকে প্রসারিত করেছে তা নয়, এটি এখন পালসার সিরিজের সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের ভাল বৈশিষ্ট্যযুক্ত বাইক। পালসার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মতো এই নতুন বাইকেও রয়েছে সেই একই বৈশিষ্ট্য এবং ডিজাইনের ছাপ; তবে এটি তার নিজস্ব স্টাইলের জন্যই বেশি আকর্ষণীয়। নতুন এই পালসার বাইকটিতে ব্যাবহার করা হয়েছে ইনফিনিটি টুইন স্ট্রিপ এলইডি টেইল ল্যাম্প, হ্যালোজেন বাল্ব হেডল্যাম্প, বাইকটির ট্যাঙ্কে, গ্রাবরেল এবং কালো এলয় হুইলে ব্যাবহার করা হয়েছে আকর্ষণীয় নিয়ন হাইলাইট কালার, এছাড়াও এতে রয়েছে শক্তিশালী ১২৫ সিসির শক্তিশালি ইঞ্জিন।
নতুন ট্রেন্ডি এই পালসারের মূল ফিচারসগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো বাইকটির শক্তিশালি ইঞ্জিনটি ১২৪.৪ সিসি, ৪-স্ট্রোক, ২-ভালভ, টুইন স্পার্ক বিএসআইভি ডিটিএস-আই কার্বুরেটেড ইঞ্জিন, যা ১১.৪ বিএইচপি মাক্স পাওয়ার এবং ১১ এনএম টর্ক উৎপাদন করতে সক্ষম, সেই সাথে ইঞ্জিনটিকে দেয়া হয়েছে ৫ স্পিড গিয়ার বক্স যা ইঞ্জিন পাওয়ার ট্রান্সমিশনের জন্য। পালসার ১২৫ এর অন্যান্য সেটআপগুলো মোটামোটিভাবে পালসার ১৫০ সিসি বাইকটির সাথে মিল রেখেই বাজারে নিয়ে আসা। সাসপেনশনগুলির দিকে তাকালে, সামনের অংশে দেখতে পাওয়া যায় টেলিস্কোপিক ফরকস এবং পিছনের দিকে টুইন শক সাসপেনশন। ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে, বাজাজ এই মোটরসাইকেলের জন্য ডিস্ক- ড্রাম সেটআপের পাশাপাশি শুধুমাত্র ড্রাম কনফিগারেশনর ভ্যারিয়েন্টও অফার করছে। তবে দুটি ভ্যারিয়েন্টের সাথে থাকছে সিবিএস। দুটি হুইলেই টিউবলেস টায়ার রয়েছে। এছাড়াও ১৫০সিসি পালসার থেকে নেয়া হয়েছে, স্পিডোমিটার, পিছনের গ্র্যাবরেল ডিজাইন, টেইল ল্যাম্প ডিজাইন এবং সেই সাথে আরও অনেক ফিচার, শুধুমাত্র এই নতুন পালসারে নেয়া হয়নি ১৫০ এর ট্যাঙ্কার কওল।
এখন প্রশ্ন হলো তাহলে মানুষ অন্যান্য ১২৫ সিসি বাইকের পরিবর্তে এই বাইকটি কেন বেছে নেবে বা স্পেশিয়াল পার্থক্য কি রয়েছে? এই গুরুতবপূর্ণ প্রশ্নের জবাবে বলা যাবে হ্যাঁ বেশ কিছু আকর্ষণীয় বিষয় রেইয়েছে, এই বাইকের নিজস্ব তৈরিকারক বাজাজ দাবি করে পালসার সিরিজের সেরা মাইলেজ রয়েছে এই নতুন বাইকে। এছাড়াও আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি যে নতুন পালসার ১২৫ নিওন এ মোটামোটিভাবে সকল ফিচারই ১৫০ সিসি পালসার থেকে নেয়া হয়েছে, সুতরাং এই সেগমেন্টে ব্যাবহারকারীরা এতটা আপডেট এবং ব্যাপক ফিচারস সম্পন্ন বাইক আরেকটি খুজে পাবেন না আশা করা যায়। বাইকের সবথেকে নজরকাড়া বিষয় হচ্ছে এর কালার স্কিম। তিনটি কালারে স্কিমে এই বাইকটি পাওয়া যাবে বলে বাজাজ জানায় – নিওন ব্ল , প্ল্যাটিনাম সিলভার এবং সোলার রেড। নিওন ব্লুয়ে বেজ কালার হিসেবে থাকছে ম্যাট ব্লাক কালার, তবে প্ল্যাটিনাম সিলভার এবং সোলার রেডে থাকছে চকচকে কালো রং।এই বাইকটির সাথে "নিওন" নামটি যোগ করার কারণ হচ্ছে নিওন-কালার বিটগুলি পুরো বাইকেই দেখা যায়। ফুয়েল ট্যাঙ্কের আইকনিক পালসার লোগো থেকে পিছন গ্র্যাবরেল পর্যন্ত এবং "১২৫" থ্রি ডি চিহ্ন সবগুলিতেই নিওন কালার ব্যাবহার করা হয়েছে। সুতরাং এখন সবাই সেই পুরোন পালসারের একই স্বাদ পাবেন কেবলমাত্র নতুন নামেই নয়, কিছু বিশেষত্ব এবং আকর্ষণীয় ফিচারেও।
আমরা যদি বাংলাদেশি মোটরসাইকেল মার্কেটের কথা বলি তাহলে দেখতে পাবো যে পালসার বাইকের কথা বলতে গেলে মানুষ কতো আকৃষ্ট এবং এই উন্মাদনার শুরু পালসার সিরিজের যাত্রাকাল থকেই। যেহেতু আমরা বিশ্বব্যাপী ১২৫ সিসি সেগমেন্টটিকে এন্ট্রি লেভেল বাইক হিসেবে বিবেচনা করি এবং আমাদের দেশে সিসির সীমাবদ্ধতা ১৬৫ এর বেশি নয় তাই এ দেশে ১২৫ সিসি সেগমেন্টটি ১৫০ এর পাশাপাশি খুবই জনপ্রিয়। বর্তমান বাজারে বাইক ব্যাবহারকারীদের কাছে ১২৫ সিসি মোটরসাইকেলের খুব বেশি অপশন হাতে নেই তবে বাজাজ পালসার ১২৫ সিসি নিওন এর আগমন ঘটলে এর থেক ভাল অপশন আর হবেনা। পালসার ১৫০ এর একই ফ্লেভারের কারনে এই নতুন মডেলের উপর বিশ্বাস সকলেরই থাকবে, আর তাছাড়াও পারফরম্যান্স এবং ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণে অবশ্যই এই বাইকটি নিমিষেই বাজারটি দখল করতে সক্ষম হবে। নতুন পালসারটি হোন্ডা, হিরো, টিভিএস এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি বাইক প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ড যারা বাজারে বিদ্যমান তাদের জন্য দুর্দান্ত প্রতিযোগিতা বয়ে নিয়ে আসবে।
যেহেতু এই বাইকটি ইতিমধ্যে ইন্ডিয়ার বাজারে চলে এসেছে আমরা আশা করতে পারি এটি একইভাবে বাংলাদেশেও খুব শিগ্রই পাওয়া যাবে। এখন থেকে পালসার পরিবারে যুক্ত হওয়া এই মোটরসাইকেলের কারণে পালসার লাভাররা আরও সাশ্রয়ী দামে পালসার ব্যাবহার করতে পারবে বলে আশা করা যায়। বাজাজ ১২৫ সিসি সেগমেন্টে ভাল প্রভাব ফেলতে যে কৌশলটি ব্যবহার করেছে তা হচ্ছে বাজাজ পালসার ডিএনএ, পালসার ব্র্যান্ডের সমতা, ডিজাইন এবং ১৫০ সিসি সেগমেন্টের মতো আরও সুবিধাগুলি কিন্তু তা ১২৫ সিসি প্যাকেজে যার ফলে তা ক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছে আরও সুবিধা হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে বাজাজ সকলের জন্য সাশ্রয়ী মূল্য নির্ধারণ করেছে নতুন পালসার ১২৫ নিওনের। বাজাজ পালসার ১২৫ নিওন দুটি ভেরিয়েন্টে পাওয়া যাবে, স্ট্যান্ডার্ড ড্রাম ব্রেক ভেরিয়েন্টির দাম রাখা হয়েছে ৬৪০০০ রুপি এবং সামনের ডিস্ক ব্রেকের ভেরিয়েন্টের দাম রাখা হয়েছে ৬৬৬১৮ রুপি। ভ্যাট, ট্যাক্সের মতো সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর আমাদের বাংলাদেশী টাকায় এই মূল্যগুলি রূপান্তর করলে এই বাইকটি আনুমানিক ১৩০০০০ থেকে ১৪০০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। নতুন পালসারের সমস্ত ফিচার এবং মূল্য পর্যবেক্ষণ করে আশা করা যায় যে এটি বাংলাদেশের বাজারে পৌঁছলে পালসার ১৫০ এর মতো এটিও নতুনভাবে এক ধরেনের ধারাবাহিকতা তৈরি করবে আর তাই বাজাজ পালসার ১২৫ নিওন সম্পর্কে বলছে "এখন থ্রিলের শুরু ১২৫ এ”।