চমকটা দেখিয়েছেন শুরুতেই। একের পর এক জেলা পাড়ি দিচ্ছেন আর সংবাদ শিরোনাম হচ্ছেন। সে সময় ফেসবুক খুললেই তাদের ছবি তাদের কথা। জ্বী, ঠিকই ধরেছেন। বাইকার দম্পতি আলমগীর আহমেদ চৌধুরী এবং চৌধুরানী দিপালী আহমেদ এর কথাই বলা হচ্ছে। সম্প্রতি তারা আরো চমক নিয়ে হাজির হয়েছেন। দেশের সীমানা পেরিয়ে তারা ঘুরে এসেছেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবংগ। দুই দেশের পারস্পারিক সৌহার্দ্য এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বৃদ্ধির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই ছিলো তাদের ভ্রমনের উদ্দেশ্য। এছাড়াও বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দেবার প্রয়াসেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে তারা ঘুরেছেন শহর-বন্দর-গ্রাম। মিশেছেন সাধারন পরিবার থেকে শুরু করে চলচিত্রের তারকা পর্যন্ত। ওপার বাংলায় বাইকারদের মিলমেলায় তারা ছিলেন মধ্যমনি।
মোটরসাইকেলভ্যালীর মুখোমুখি হয়েছিলেন এই বাইকার দম্পতি। জানিয়েছেন তাদের ভ্রমনের কথা, ভিনদেশে গিয়ে প্রাপ্ত সম্মান এবং ভ্রাতৃত্বের কথা।
মোটরসাইকেল ভ্যালী: আপনাদের ভ্রমনের উদ্দেশ্য কি ছিলো?
বাইকার দম্পতি: আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে ছড়িয়ে দেয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ করি।
মোটরসাইকেল ভ্যালী: ভ্রমনের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো সমস্যা ছিলো কি?
বাইকার দম্পতি: কিছুটা ঝামেলাপূর্ণ তো বটেই। সবচে বেশি দেরি হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমতি পেতে। বাকি অন্যান্য প্রসেসিং সহজ ছিল কিন্তু কারনেট ডি প্যাসেজ এর মাধ্যমে আসা যাওয়া কম থাকায় বর্ডার কাস্টমস কতৃপক্ষ কিছুটা ধীরগতিতে কাজ করেন এবং পেপার প্রসেসিং জটিল ও বটে। ফলে বর্ডারে অনেক সময় লেগে যায়।তবে প্রোগ্রামের বিশেষত্বের কারণে কাস্টম কমিশনার অনেক সহযোগিতায় করায় কিছুটা সহজ হয়েছে।
মোটরসাইকেল ভ্যালী: ওপার বাংলা কিভাবে আপনাকে স্বাগত জানিয়েছে?
বাইকার দম্পতি: আশাতীত সম্মান ও স্বাগত জানিয়েছে।কিছু মানুষের ভালোবাসা কখনোই ভোলা যাবে না।যদি পশ্চিম বাংলার কোনো এক জনের নাম নিতে বলা হয় আমাদের তাহলে তিনি হলেন Suddhabrata Deb। দুই বাংলা মিলিত হয়েছে যেই মানুষটির মাঝে। যিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খোঁজ খবর ও সহযোগিতা করেছেন একজন অভিভাবকের মতো, প্রশাসনের মতো, বন্ধুর মতো। পশ্চিম বাংলা ভ্রমণের অধিকাংশ সাফল্য তার উছিলায় হয়েছে। বর্তমান সময়ে এরকম মানুষ খুবই দুর্লভ। আর প্রবাসে এমন বন্ধু ভাগ্যের ব্যাপার।
মোটরসাইকেল ভ্যালী: আপনার ভ্রমনের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যানটি বলুন।
বাইকার দম্পতি: ACI motors Yamaha আয়োজনে উদ্ভোধন হয় ২৬শে মে ২০১৭।উদ্বোধন করেন ডঃ মোঃ নাসির উদ্দিন (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড) আরও উপস্থিত ছিলেন নিখিল রয় (ডিরেক্টর বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড) জনাব রবিউল হক (মার্কেটিং ম্যানেজার ACI motors Yamaha) সার্বিক শো ডাউন সহযোগিতায় ছিল KB রাইডার্স। ২৯শে মে ২০১৭ আমরা যাত্রা শুরু করে যশোরে পৌঁছালে জেলা প্রশাসক যশোর আমাদের স্বাগতম জানান। ২২শে জুন ২০১৭ আমরা বাংলাদেশে এসে শেষ করি। ভ্রমনটিতে সময় লেগেছে মোট ২৫ দিন। পথ পাড়ি দিতে হয়েছে প্রায় ৪১০০ কিমি। পশ্চিমবংগে যেসব এলাকা ভ্রমন করা হয়: বনগাঁও, 24 পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ, শিলিগুড়ি, ডুয়ার্স, জলপাইগুড়ি, বারাসাত, কৃষ্ণনগর।
মোটরসাইকেল ভ্যালী: ভ্রমনে স্মরনীয় কোন ঘটনা থাকলে শেয়ার করুন
বাইকার দম্পতি: স্মরণীয় ঘটনা বলে শেষ করা যায় না।তিনটি পরিবারের সাথে অবস্থানের দিনগুলি স্মরণ করার মতো। তাদের ভালোবাসা, তাদের আপ্যায়ন, তাদের আপন করে নেয়া এবং বিদায়ের মুহূর্তগুলি ভোলার নয়।
মোটরসাইকেল ভ্যালী: ভ্রমনে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই থাকায় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কি?
বাইকার দম্পতি: সমস্যার সম্মুখীন তো হইনি বরং কাপল হওয়াতে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল আরো বেশি সবজায়গায় সবখানে। সবার সক্রিয় এবং স্বত:স্ফুর্ত সহযোগীতা পেয়েছি।
মোটরসাইকেল ভ্যালী: আপনার ভ্রমনের বাহনটি নিয়ে কিছু বলুন।
বাইকার দম্পতি: ধন্যবাদ ACI motors Yamaha কে এমন একটি কোয়ালিটি মোটর বাইক উপহার দেয়ার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ বাইকে কোনো সমস্যা দেয়নি। বাইকটি যেমন smooth তেমন শক্তিশালী।আর আন্তজার্তিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্র্যান্ড হওয়াতে পৃথিবী জুড়েই তাদের ডিলার এবং সার্ভিস সেন্টার ছড়িয়ে আছে। যে কারণে সমস্ত ডিলার এবং সার্ভিস সেন্টারের সহযোগিতার হাত প্রস্তুত ছিল। নিকটবর্তী Yamaha ডিলারগণ আমাদের উষ্ণ স্বাগতম জানান।
মোটরসাইকেল ভ্যালী: এতো দূরের পথ ভ্রমনে মোটরসাইকেলের যত্ন কিভাবে নিয়েছেন?
বাইকার দম্পতি: আমরা ব্যবহার করেছি Mobil-1 10w40 Lubricant যা খুবই উন্নতমানের সার্ভিস প্রদান করেছে। দীর্ঘপথ ভ্রমনে ইনজিনের সুরক্ষায় কাজ করেছে সেই সংগে নিকটতম Yamaha ডিলারগণ দিয়েছে ফ্রি সার্ভিস।
মোটরসাইকেল ভ্যালী: আপনার পরবর্তি পরিকল্পনা কি?
বাইকার দম্পতি: সার্ক ভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের পর্যটনকে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে এসকল দেশের সংগে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করা।
মোটরসাইকেল ভ্যালী: আমাদের সাথে আপনাদের মূল্যবান সময় দেবার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।
বাইকার দম্পতি: আপনাদেরকও ধন্যবাদ।