মোটরসাইকেল আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যানবাহন। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে মোটরসাইকেলের ফিচার, স্ট্রাকচার এবং ডিজাইনে দিন দিন পরিবর্তন আসছে। মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো চেষ্টা করছে জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব মোটরসাইকেল প্রস্তুত করতে।
মোটরসাইকেলের ক্ষতিকর দূষণ নির্গমন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে প্রচলিত মোটরসাইকেলগুলোতে সাধারণত বিএস (ভারত স্ট্যান্ডার্ড) দেখা যায়। বিএস (ভারত স্ট্যান্ডার্ড) সর্বপ্রথম কার্যকর হয় ২০০০ সালে। বর্তমানে বিএস (ভারত স্ট্যান্ডার্ড) ৬ চালু আছে। তবে ক্রমবর্ধমান মোটরসাইকেল এর বাজার বৃদ্ধির ফলে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডের ইউরো ৫ সার্টিফাইড মোটরসাইকেল আসতে শুরু করেছে। ইউরো স্ট্যান্ডার্ড এবং ইউরো ৫ কী ?
যেকোনো মোটরসাইকেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য ইউরোপিয়ান বাজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত দেশ সমূহে মোটরসাইকেল বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিয়ম এবং বিধিমালা অনুসরণ করা অপরিহার্য। পরিবেশগত উদ্বেগ বৃদ্ধির সাথে সাথে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মোটরসাইকেলের দূষণ নির্গমনে ১৯৯৯ সালে প্রথম ইউরো স্ট্যান্ডার্ড চালু করে। পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে ইউরো ২ ,ইউরো ৩ এবং ইউরো ৪ এর পর ইউরো ৫ স্ট্যান্ডার্ড চালু করা হয়।
ইউরো ৫ মোটরসাইকেলের দূষণ নির্গমন নিয়ন্ত্রণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কর্তৃক আরোপিত পঞ্চম মানদন্ড। যা ২০২০ সালের ১’ই জানুয়ারি থেকে দুই চাকা এবং তিন চাকার অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনের পরিবেশগত প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে কার্যকর করা হয়। ইউরো ৫ স্ট্যান্ডার্ডে মোটরসাইকেলের কয়েকটি প্রধান দূষণকারী পদার্থের ওপর কঠোর সীমা আরোপ করা হয়েছে। এই দূষণকারী পদার্থের মধ্যে রয়েছে:
● কার্বন মনোক্সাইড (CO): সর্বোচ্চ নির্গমন সীমা ১.০০ গ্রাম প্রতি কিলোমিটারে।
● টোটাল হাইড্রোকার্বন (THC): সর্বোচ্চ নির্গমন সীমা ০.১০ গ্রাম প্রতি কিলোমিটারে।
● নন-মিথেন হাইড্রোকার্বনস (NMHC): সর্বোচ্চ নির্গমন ০.০৬৮ গ্রাম প্রতি কিলোমিটারে।
● নাইট্রোজেন অক্সাইডস (NOx): সর্বোচ্চ নির্গমন সীমা এখন ০.০৬ গ্রাম/কিমি, যা পূর্বে ছিল ০.০৯ গ্রাম/কিমি।
● পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM): ইউরো ৫ প্রথমবারের মতো একটি পার্টিকুলেট ম্যাটার সীমা ০.০০৪৫ গ্রাম প্রতি কিলোমিটারে প্রবর্তন করেছে।
কার্বন মনোক্সাইড,নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং হাইড্রোকার্বন এর মতো দূষণকারী গ্যাস কমিয়ে, ইউরো ৫ বায়ু দূষণের সাথে সম্পর্কিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করে। ইউরোপীয় পরিবেশ সংস্থার মতে, পরিবহন নির্গমন প্রতি বছর বায়ু দূষণ সম্পর্কিত মৃত্যুর প্রায় ২৫% জন্য দায়ী, এবং Euro 5 এই দূষণ হ্রাস করতে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
ইউরো ৫ এ মোটরসাইকেলের নির্গমন স্থায়িত্ব নিয়ন্ত্রনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। পূর্বে প্রচলিত ইউরো ৪ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কোনো মোটরসাইকেল ইউরোপে প্রতি ২০,০০০ কিমি রাইড করার পর সার্টিফিকেশনের প্রয়োজন হতো কিন্তু ইউরো ৫ স্ট্যান্ডার্ডে এটিকে গাড়ীর লাইফটাইম পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
চলুন জেনে নেয়া যাক, বর্তমানে বাংলাদেশের মার্কেটে ইউরো ৫ সার্টিফাইড কোন কোন মোটরসাইকেল পাওয়া যাচ্ছে । সাম্প্রতিক সময়ে দেশীয় বাজারে আসা সিএফ মটো তাদের ৩টি মোটরসাইকেল বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে। যার মধ্যে CFMOTO 250NK (দাম ৩,৪৮,৫০০ টাকা) এবং CFMOTO 300SR (দাম ৪,৫৮,৫০০ টাকা) ইউরো ৫ স্ট্যান্ডার্ড মোটরসাইকেল, এছাড়া CFMOTO 250SR (দাম ৩,৮৮,৫০০ টাকা) ইউরো ৪ স্ট্যান্ডার্ড মোটরসাইকেল।
ইউরো ৫ স্ট্যান্ডার্ড জলবায়ু পরিবর্তন এবং জনস্বাস্থ্যের উপর যানবাহনের নির্গমনের প্রভাব হ্রাস করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই স্ট্যান্ডার্ড শব্দ নির্গমনকেও নিয়ন্ত্রণ করে এবং বায়ুতে ক্ষতিকর দূষণকারী গ্যাসসমূহের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করে।