কিছুক্ষণের জন্য হর্স পাওয়ারের কথা ভুলে যান, বর্তমান সময়ে ক্রেতাদের জন্য সবচেয়ে ভাল মানের পরিবেশ বান্ধব এবং বিশ্বের দশম বড় অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান সুজুকির শুরু ইঞ্জিনের গর্জনের মাধ্যমে হয়নি বরং শুরু হয়েছিল তাঁতের ছন্দময় শব্দ দিয়ে।
১৯০৯ সালে Machio Suzuki জাপানের একটি ছোট শহরে Suzuki loom works নামক একটি তাত তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁত শিল্পে সুজুকির বিপ্লবী সাফল্য আসে ১৯২৯ সালে, তাদের তৈরি তাঁত দেশের বাইরে রপ্তানি হতে শুরু করে। যা সুজুকির আত্মবিশ্বাস আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় এবং নতুন উদ্ভাবনের অনুপ্রেরণা জোগায়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক Machio Suzuki ছিলেন একজন দূরদর্শী লোক, তিনি চেয়েছিলেন ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী নতুন কিছু উদ্ভাবনের। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পরবর্তী সময়ে মানুষের দৈনন্দিন কাজে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে সাধ্যের মধ্যে ছোট আকারের নিজস্ব যানবাহন। এই বিশ্বাস থেকে নতুন যানবাহন উদ্ভাবনে মনোযোগ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। যদিও ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান সরকার কারখানাটি দখল করে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কাজে ব্যবহার করে। তবে যুদ্ধ শেষে জাপানের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে এবং সত্যিই জাপানিদের সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিগত পরিবহনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।
মোটরসাইকেল জগতে সুজুকির আবির্ভাব
১৯৫২ সালে প্রথম সুজুকি ইঞ্জিন চালিত ১ হর্স পাওয়ারের ,২ স্ট্রোক এবং ৩৬ সিসি'র বাইসাইকেল "পাওয়ার ফ্রি" তৈরি করে । ১৯৫৩ সালে একই গঠনের ৬০ সিসি ইঞ্জিনের ডায়মন্ড ফ্রি তৈরি করে । স্বল্প বাজেটের গাড়ি হিসেবে ডিজাইন করা পাওয়ার ফ্রি ও ডায়মন্ড ফ্রি'র সাফল্য সুজুকিকে তাদের পরবর্তী বাইক তৈরিতে উৎসাহিত করে।
১৯৫৪ সালে সুজুকি তাদের নাম সুজুকি মোটর কোম্পানিতে পরিবর্তন করে এবং পুরোপুরি অটো মোবাইল প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর হয়। সে বছর সুজুকি Colleda (কোলেডা) নামের ৯০ সিসির বর্তমান প্রচলিত গঠনের বাইক লঞ্চ করে। এটিই প্রথম স্পীডোমিটার যুক্ত জাপানি বাইক । ছোট ইঞ্জিন,বড় চাকা ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের হওয়ায় Colleda সেই সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় । পরবর্তীতে সুজুকির আর থামতে হয়নি । এইভাবে শুরু হওয়া সুজুকি মোটর হয়ে ওঠে অটোমোবাইল জগতের অন্যতম মার্কেট লিডার।
মোটর স্পোর্টসে সুজুকি
প্রযুক্তি দক্ষ ও গতিসম্পন্ন সুজুকির ছিল মোটর স্পোর্টসে রেকর্ড পদচারণা। তাদের তৈরি ইঞ্জিন বিশ্বব্যাপী শুরু থেকেই মোটর স্পোর্টস জগতে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। সুজুকি ১৯৬২ থেকে শুরু করে ১৯৬৭ পর্যন্ত একটানা পাঁচবার ৫০ সিসির ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে এবং একই সময়ে ১২৫ সিসিতে দুবার জয়ী হয়।
Barry Sheene ১৯৭৬ ও ১৯৭৭ সালের ৫০০ সিসি প্রিমিয়ার এবং Wes Cooley আমেরিকান সুপার বাইক চ্যাম্পিয়নশিপে ১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালে ‘Suzuki GS 1000’ রাইড করে জয়ী হয়। MotoGP World Champions 2000 – এ Kenny Roberts Jnr ৫০০ সিসিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০০০ সালে বিখ্যাত রাইডার Joan Mir MotoGP তে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং ২০২২ সালে 220.4mph/354.8kmh গতিতে GSX-RR রাইড করে Qatar GP তে জয় লাভ করেন ।
গতির দানবঃ Suzuki GSX1300R Hayabusa
আধুনিক ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সুজুকির মোটরসাইকেল অসংখ্য সংস্করণের মধ্যে Suzuki GSX1300R Hayabusa অনন্য। ১৯৯৯ সালে বাজারে আসা ১২৯৮ সিসির, ঘণ্টায় ৩১০ কি মি গতির এই স্পোর্টস বাইকটি ছিল তৎকালীন সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম মোটরসাইকেল।
সুজুকি সব সময় তাদের এডভান্স প্রযুক্তি ও উৎসাহের সাথে যুগ,দেশ ও লাইফস্টাইল অনুযায়ী মানুষের চাহিদা মত গুণগত মানসম্মত ইঞ্জিন উদ্ভাবনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি অটো মোবাইল জগতের অন্যতম মার্কেট লিডারে পরিণত হয়েছে। সুজুকি বর্তমানে বিশ্বের ১০ম বড় অটো মোবাইল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি এবং বিশ্বের ১৭২ টি দেশে তাদের তৈরি মোটরসাইকেল বাজারজাত করা হচ্ছে । ২০২৩ সালে সুজুকির শুধুমাত্র মোটরসাইকেল সেল ছিল ১.৯১ মিলিয়ন ইউনিট।
সুজুকির জনপ্রিয় মোটরসাইকেলের মধ্যে অন্যতমঃ
1. Suzuki GSX-S1100S Katana
2. Suzuki Katana 1000
3. Suzuki TL 1000S
4. Suzuki GSX-R750
শুরু থেকেই সুজুকি গ্রাহক চাহিদার উপর গুরুত্ব দিয়ে উন্নত ইঞ্জিন ও মানসম্মত পণ্য নিশ্চয়তা প্রদান করছে। সুজুকি তাদের উৎপাদন নীতি “Sho-Sho-Kei-Tan-Bi (Smaller, Fewer, Lighter, Shorter, Beauty) অনুযায়ী যতটা সম্ভব হালকা ধরন ও ফ্লেক্সিবল ডিজাইনের উপর গুরুত্ব দিয়ে মোটরসাইকেল উৎপাদন করে আসছে। ২০২৪ সালে সুজুকি তাদের মোটরসাইকেল সংস্করণের সাথে যোগ করতে যাচ্ছে স্পোর্ট ট্যুরিং এক্সপার্ট GSX-S1000GT/GT, স্পোর্ট বাইক Hayabusa 1,340cc ,GSX-R1000R/1000, GSX-R600 ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহারের জন্য GSX-S1000 ,GSX-8S।
সুজুকির তৈরি গাড়ি শুধুমাত্র মেশিন নয়,এটি জীবনকে উপভোগ করার একটি উপায় " Our Motorcycle Our Passion ".