১৯৮৪ সালে কি কেউ জানতো হিরো গ্রুপ আর জাপানি হোন্ডা মটরস যে জয়েন্ট ভেঞ্চার স্বাক্ষর করছে তা ২০০১ সালের মধ্যে বিশ্বের সর্ব বৃহৎ মোটরসাইকেল নির্মাতার খেতাব পাবে। ১৯৮৪ সালে মাত্র ১৬ কোটি রূপি দিয়ে এই জয়েন্ট ভেঞ্চার শুরু হয়েছিল যাতে হোন্ডার অংশিদারিত্ব ছিল ৪ কোটি রূপি। জয়েন্ট ভেঞ্চারে একটা পয়েন্ট ছিল, তা হল এই কোম্পানির প্রোডাক্ট শুধু ইন্ডিয়াতেই বিক্রি হবে । পৃথিবীর অন্য কোন দেশে রপ্তানি করা যাবে না। যদিও চুক্তির এই পয়েন্টটি কিছুটা পরিবর্তন করে সীমিত কিছু দেশে মূলত শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, নেপাল এবং কলম্বিয়ায় রপ্তানির সুযোগ করে দেয়া হয়। এই পরিবর্তিত পয়েন্টে হোন্ডা সাফ জানিয়ে দেয় , কোন কোন দেশে এই জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রোডাক্ট যাবে তা হোন্ডা মটরস ঠিক করবে এর বাইরে যদি হিরো গ্রুপ বাইক অন্য দেশে রপ্তানি করতে চায় তবে তা তাদের টেকনোলোজি আর রিসোর্স দিয়েই করতে হবে। হিরোর জন্য এই পয়েন্ট হজম করা বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো।
জয়েন্ট ভেঞ্চার শেষ । হোন্ডা আর কোন নতুন টেকনোলোজি হিরো কে দিবে না তবে তারা যে টেকনোলোজি ইতোমধ্যেই ব্যবহার করছে তা ব্যবহার করতে পারবে।
পাঁচ বছর পার হতে চলল Honda বিশ্বের সবচেয়ে বড় মোটরসাইকেল বাজারে তাদের মার্কেট শেয়ার প্রায় ডবল করে ফেলেছে। অন্যদিকে Hero MotoCorp Ltd তাদের মার্কেট শেয়ার হারিয়েছে ৪.৭৫% বর্তমানে যা ৩৮. ৯৫% । দুই দশকের মধ্যে সর্ব নিম্ন, যদিও একক ভাবে এখনো শীর্ষে রয়েছে। পুনের বাইক নির্মাতা Bajaj Auto Ltd এর মার্কেট শেয়ার ১১.৪৯% তারা অবশ্য স্কুটার নির্মান করে না। আর চেন্নাই ভিত্তিক বাইক নির্মাতা TVS Motor Co. এর মার্কেট শেয়ার গত পাঁচ বছরে কিছু বেড়ে ১৩.৪% এ দাঁড়িয়েছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে Honda পাঁচ বছরে ইন্ডিয়াতে তাদের মার্কেট শেয়ার ডবল করে ফেলেছে। কিন্তু তাই বলে কি Hero MotoCorp Ltd (HMCL) চুপচাপ বসে আছে? তাদের সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সম্পুর্ন হিরো ইঞ্জিন দিয়ে একটি বাইক বানানো, যা তারা করে দেখিয়েছে। HMCL তাদের Research and development (R&D) এর দিকে মন দিয়েছে। তারা জয়পুরে ২২৭ একর জমি নিয়ে যে R&D সেন্টার গড়ে তুলেছে তা দেখার মতো। তাদের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুদির্ঘ সময় BMW এ কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। আর সব চেয়ে বড় কথা তারা ইতালি ভিত্তিক বিখ্যাত ইঞ্জিন নির্মাতা Magneti Marelli এর সাথে নতুন করে জয়েন্ট ভেঞ্চারে যুক্ত হয়েছে ৬০ % এবং ৪০ % চুক্তিতে। মূলত তারা Magneti Marelli সাথে মিলে নতুন জেনারেশান ফুয়েলিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে।
হিরোর মডেল সংখ্যা অনেক । মূলত ২৫০ সিসির নীচের সেগমেন্ট বাইক মডেল নিয়েই তাদের কাজ। এই মডেল গুলি চুক্তি পরবর্তি এবং আগের তুলনা মুলক আলোচনা আমরা করার চেষ্টা করবো। আজ আমারা আলোচনা করবো HUNK নিয়ে।
হিরোর যতগুলি ব্যান্ড আছে তার মধ্যে Hunk অন্যতম জনপ্রিয় এবং বেস্ট সেলিং একটা মডেল। সম্প্রতি এই ব্রান্ডটি মার খাচ্ছিল FZS, Gixxer ও Pulsar এর নতুন ভার্শানের কাছে । যদিও Hunk এর ডিজাইন এবং টেকনোলজিতে হিরো তেমন কোন পরিবর্তনই আনে নাই। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হিরো কিছুটা পরিবর্তিত রুপে Hunk কে উপস্থাপন করে ২০১৫ এর ডিসেম্বারে । চলুন দেখে নেয়া যাক আগের এবং নতুন ভার্সানের কি কি পরিবর্তন হিরো করেছে।
এক নজরে Hunk এর নতুন রুপ
মাইলেজ : ৫০ কিমি/ লিটার (Approx)
ইঞ্জিন ডিটেইলঃ ১৪৯.২ সিসি , সিঙ্গেল সিলিন্ডার , এয়ার কুল, ইঞ্জিন পাওয়ার 14.4 Ps @ 8,500rpm , টর্ক 12.80Nm @ 6500rpm , ট্রান্সমিশান 5-speed manual
কালারঃ Panther Black, Bold Brown, Force Silver, Ebony Grey, Blazing Red and Matte Black
সাস্পেন্সানঃ সামনে টেলিস্কোপিক হাইড্রোলিক সক এবজর্ভার । পেছনে Rectuangular Swing Arm with 5 step adjustable Inverted Gas Reservoir Suspension
ব্রেকিং সিস্টেমঃ 240mm Disc , 130mm Drum & 220mm optional Disc
টায়ার সাইজ : Front – 80/100 x 18-47 P, Tubeless. Rear – 100 / 90 X 18-56 P, Tubeless
Dimension: (LXHXD) 2080mm x 765mm x 1095mm
Wheelbase: 1325mm
Ground Clearance: 163mm
Kerb Weight: 146kgs
নতুন হাঙ্কে যে পরিবর্তনগুলি চোখে পড়বে
- বডি পার্টেসে কালো রঙের ছোঁয়া
- ক্রাঙ্ককেসে লাল রঙের হিরো ব্যাজ
- আগের তুলনায় এর ফেয়ারিং বড়
- রিভার্স ফ্রন্ট মাডগার্ড
- নতুন instrument cluster
- ডিজিটাল স্পীডো মিটারে চকচকে ক্রমের ছোঁয়া
মূলত তরুন প্রজন্মের বাইকারদের মাথায় রেখেই বাইকটির ডিজাইন করা হয়েছিল। সিটিং পজিসান, প্রসস্থ হ্যান্ডেল বার , মিড সেট ফুট পেজ আপনাকে রিলাক্স রাইডিং এর অভিজ্ঞতা দিবে। যারা নিয়মিত ৫০ কিমির অধিক বাইক চালান এবং মাঝে মধ্যে হাইওয়েতে লং রাইডে যান তাদের জন্য আদর্শ বাইক Hero Hunk
ইন্ডিয়াতে বাইকটির মুল প্রতিদ্বন্দ্বী Suzuki Gixxer, Honda Unicorn 160, Bajaj Pulsar 150, Pulsar AS 150, Yamaha FZ এবং CB Hornet 160R । আসলে এই প্রতিযোগিতা হিরোর জন্য কিছুটা কঠিনই হয়ে যাচ্ছে কারণ হিরো যেখানে গুরুত্ত্ব দিচ্ছে অধিক শক্তিশালী কমিউটার বাইকের সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাইকগুলি গুরুত্ত্ব দিচ্ছে স্পোর্টি ডিজাইনে। দেখা যাক সামনে হিরো স্পোর্টি সেগমেন্টে আমাদের নতুন কোন বাইক উপহার দেয় কিনা