খুব বেশি দিনের কথা না! যদি বলা হতো ঘরে বসেই আপনি আপনার প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন তবে তা বিশ্বাস করাটা খুব সহজ ছিল না। তবে তথ্য প্রযুক্তি, তৃতীয় শ্রেণীর দেশ গুলোর মাঝে কোন বৈষম্য করেনি বরং খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার দোয়ার। দেশের অন্য বিজনেস সেক্টর গুলিরপাশাপাশি মটরসাইকেল মার্কেটের উপরে এর প্রভাব দেখা যায়।
আমাদের দেশে যেখানে প্রায় ৪০% মানুষ দিন আনে দিন খায়, সেখানে ১ থেকে ২ লাখ টাকা ব্যয় করে মটরসাইকেল কেনাকে এখনো সখের জিনিস বললে হয়তো ভুল হবে না ! যদিও এ কথা অবশ্য সত্য যে দুই চাকার এ বাহন আমাদের জীবনযাত্রা কে অনেক সহজ ও সময় সঞ্চয় করতে সহযোগিতা করে। আর নিজের সখের বাহনকে ভালমতো না জেনে কেনা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। কিছুদিন আগেও, মোটরসাইকেলসম্পর্কে জানার জন্যে সম্ভাব্য ক্রেতাদের একমাত্র জায়গা ছিল বিভিন্ন ব্র্যান্ড এর শোরুম গুলো এবং এলাকার মেকানিক বা টেকনিশিয়ান। তবে এখন আর তা নয়। তথ্য প্রযুক্তির যুগে ঘরে বসেই মিলছে সকল বাইকেরবিস্তারিত তথ্য ও ক্রয় এর সুবিধা যা প্রভাব ফেলছে সিদ্ধান্ত গ্রহণএর ক্ষেত্রে। যার ফলে গতানুগতিক ব্যবসায়ীদেরকে তাদের ব্যবসার পদ্ধতি নিয়ে নতুন ভাবে ভাবার জন্যে তাড়া দিচ্ছে। সম্ভাবনাময় মোটরসাইকেল সেক্টরে বিগত ৫ বছরকে(২০১৫-২০১৯) সোনালী সময় বলা যেতে পারে, যার প্রতি বছর গড় প্রবৃদ্ধি ছিল মোটামোটি ৩০%। এই উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তি কি পরিমাণ অবদান রেখেছে তা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করা হল।
যেকোনো পরিবর্তন এবং সূচনার জন্যে কিছু কিছু বিষয় তার প্রভাবক হিসাবে কাজ করে। ঠিক তেমনি মোটরসাইকেল অনলাইন মার্কেটের বিস্তারের বিষয়ে কিছু প্রভাবক কাজ করেছে।
ইনফরমেটিভ ওয়েবসাইট
এখন আমরা সবাই আমাদের মুঠো ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাহায্যে নিজেদের প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে ঘরে বসে তথ্য পেতে পছন্দ করি। যা আমাদের বিষয়টা সম্পর্ক আরও ভালভাবে জানতে, বুঝতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। বর্তমান সময়ে মোটরসাইকেল বিষয়ে ইনফরমেটিভ ওয়েবসাইট থাকারজন্যে ঘরে বসেই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাইকের বৈশিষ্ট, দাম, ছবি, শোরুমের ঠিকানাসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্ক জানা যাচ্ছে। যা একজন সম্ভাব্য ক্রেতাকে তার প্রয়োজনীয় তথ্য সরবারহ করার পাশাপাশি নতুন ক্রেতাদের মাঝে বাইকের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করছে। যদি আমরা ২০১৫ সালের কথা বলি তাহলে সে সময়ে আমাদের দেশে দুইটি ইনফরমেটিভ ওয়েবসাইট ছিল।
- Motorcyclevalley.com
- Bikebd.com
তবে সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে ভিজিটরের সংখ্যা যেমন বেড়েছে ঠিক তার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে ইনফরমেটিভ ওয়েবসাইট এর সংখ্যা। যার ফলে যারা মোটরসাইকেল পছন্দ করে তারা আরও বিস্তারিত ভাবে তথ্য যাচাই বাছাই করার সুযোগ পাচ্ছেন।
ই-কমার্স
যে বিষয়টা প্রায় অসম্ভব ভাবা হতো তা করে দেখিয়েছে ই-কমার্স সাইট গুলো। এখন আপনি আপনার পছন্দের বাইক ঘরে বসেই ক্রয় করতে পারেন। শুধু তাই নয়, ক্রেতাদেরকে উৎসাহ প্রদান করার জন্যে বিভিন্ন অফার এবং মূল্য পরিশোধের সুবিধা করে যাচ্ছে ই-কমার্স সাইট গুলো। এই বিষয়ে ব্যাংকও তার ক্লায়েন্টদের ক্রেডিট কার্ড ব্যাবহার করে মূল্য পরিশোধে সহযোগিতা করছে। যা মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রেতাদেরকে তাদের প্রিয় বাইক কিনতে সহযোগিতা করছে। ই-কমার্স সাইট গুলো নতুন বাইক এর পাশাপাশি পুরাতন বাইক কেনা বেচার জন্যেও সুযোগ প্রদান করেছে, যা এই মার্কেট কে আরও বড় করতে সহযোগিতা করার পাশাপাশি নতুনদেরকে বাইকের প্রতি আকৃষ্ট করছে। বাংলাদেশে প্রথম ই-কমার্স এর মাধ্যমে নতুন পুরাতন বাইক ক্রয় বিক্রয় করার সুচনা করেছে বিক্রয়.কম। আস্তে আস্তে অন্যান্য ই-কমার্স সাইট গুলো তাদের ক্যাটাগরিতে বাইক বিক্রয় এর জন্যে কাজ কর্ম শুরু করেছে। প্রথমের দিকে বাইক ডেলিভারি, সার্ভিস, স্পেয়ার পার্টস সহ বিভিন্ন বিষয়ে ক্রেতাদের মনে দ্বিধা থাকলেও সময়ের সাথে সাথে এবং কোম্পানিদের প্রচেষ্টায় তা অনেকাংশে দূর হয়েছে। বর্তমান সময়ে ই-কমার্স সাইটে বাইক বিক্রির বড় রেভুলেশান দেখা যায় ইভ্যালীর মাধ্যমে। তথ্য মতে, এই পর্যন্ত তারা প্রায় ৬০০০ বাইক বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমানে দেশি বিদেশী মিলে প্রায় ৬টি ই-কমার্স সাইট নতুন পুরাতন বাইক কেনা বেচা করছে। যা পুরা মার্কেটের উপরে পজেটিভ প্রভাব ফেলেছে।শুধু তাই নয় বরং অনেক কোম্পানীর আপদকালীন সময়ে সহযোগীতার মাধ্যম হয়েছে এই ওয়েবসাইটগুলো।
কোম্পানি ইনভল্ভমেন্ট
ইনফরমেটিভ ওয়েবসাইট ও ই-কমার্স গুলোর পাশাপাশি কোম্পানিগুলো নিজেদেরকে অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে নিজেদের ওয়েবসাইটে বাইকের মডেল ও আধুনিক বৈশিষ্ট তুলে ধরার ফলে সাধারন ক্রেতাগন ছাড়াও তাদের নিজ নিজ ডিলারগন বাইক সম্পর্কে জানার ও জানানোর সুযোগ পাচ্ছে। ওয়েবসাইট বানানোর পাশাপাশি সুপরিচিত ইনফরমেটিভ ওয়েবসাইটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রচার সম্প্রসারন মুলক কার্যক্রমের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচারনা মুলক কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ড অনলাইন কার্যকলাপ আরও জোরদারকরতে ডিজিটাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট চালু করেছে। কোম্পানি গুলোর ইনভল্ভমেন্ট নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা বিগত ৫ বছরের মধ্যে নিজেদের আরও ভাল ভাবে অফলাইন ও অনলাইন প্ল্যাট ফর্মে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করছে। যা স্বাভাবিক ভাবে মোটরসাইকেল মার্কেটকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মোক্ষম ভুমিকা রেখেছে।
ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন ইউজার
আমরা সবাই জানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বড় আবিষ্কার হল ইন্টারনেট যা আমাদের অনেক সামনে এগিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে তথ্য ও প্রযুক্তিকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মোতাবেক দেশকে ডিজিটালাইজেশন করার লক্ষে দেশের সকল প্রান্তে ইন্টেরনেট সুবিধা দেওয়ার যে চেষ্টা তা ব্যবসায়ী অঙ্গনে প্রভাব ফেলেছে।
ইন্টেরনেটের সম্প্রসানের পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মাঝে স্মার্ট ফোনের ব্যাবহার ও বেড়েছে যার ফলে তারা যেকোনো নতুন পণ্য সহ সকল প্রকারের তথ্য শহরের মানুষের মতোই জানতে পারছে যা তাদেরকে নতুন পন্যের প্রতি আকৃষ্টকরছে এবং নতুন ক্রেতাদের আগ্রহী করে তুলছে।
আমরা যদি মোটরসাইকেল মার্কেটের কথা ভাবি তবে গ্রাম অঞ্চলে গতানুগতিক বাইকের প্রচলন বেশি ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে এর প্রভাব অনেক কমেছে। এখন গ্রাম অঞ্চলেও বেশ নামি দামি ব্র্যান্ড ও আধুনিক ফিচারস সমৃদ্ধ বাইক এর উপস্থিতি বেশ ভাল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনেরজন্য অবশ্যই ইন্টেরনেটের সহজলভ্যতা, স্মার্টফোনের ব্যবহারসহ কোম্পানি গুলোর ইনফরমেটিভ ওয়েবসাইটের সঙ্গে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করার ফল বলা যায়।
এছাড়া ইন্টেরনেট ব্যবহারকারী বৃদ্ধির সাথে সাথে সেবার মান উন্নয়ন করা হয়েছে। ২০১৫ সালে ইন্টেরনেট এর গতি 2G থাকলেও এখন আমরা 4Gসুবিধা পাচ্ছি। বর্তমানে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা নতুন প্রজন্মনের সোশ্যাল মিডিয়াতে উপস্থিতি বৃদ্ধি করছে।
এই সোশ্যাল মিডিয়াএখন বাইক কোম্পানিগুলোর প্রচারণার বড় জায়গা বলা চলে। বর্তমানে প্রতিটি বাইক কোম্পানি তাদের নতুন বাইক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সোশ্যাল নিডিয়ার মাধ্যমে তাদের গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে, যা মোটরসাইকেল মার্কেটকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করছে।
সর্বোপরি উপরোক্ত সবই মোটরসাইকেল মার্কেটের বিস্তারের জন্যে কাজ করছে। তাছাড়া উন্নত এবং আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর দিকে দেখলে দেখা যায়, তাদের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস এর প্রচারণা ও সেলসে অনলাইন প্ল্যাটফরমের ভূমিকা উল্লেখ করার মতো।
তবে আমাদের দেশে মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড গুলো অনলাইন প্লাটফর্মের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও সুবিধা পেতে মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড গুলোকে অবশ্যই নিজেদের পাশাপাশি তাদের সকল প্রকার ডিস্ট্রিবিউটার ও ডিলারদের সম্পৃক্ত করতে হবে। আশা করা যায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যথাযথ ব্যবহার আমাদের মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে।
তথ্য:
- Motorcycle Valley
- BTRC
-
The Daily Star
-
Nepoleon cat
-
Wikipedia