Yamaha Banner
Search

2017-05-08

Khardungla-Summit-by-Abdul-Momen-Rohit


বাতাসের মধ্যে বসবাস করেও যেমন বাতাসের প্রয়োজনীয়তা বোঝা যায় না, বোঝা যায় তখন, যখন নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তেমনি দেশে বসে দেশের পতাকার প্রতি ভালবাসা বুঝতে না পারলেও বিদেশের মাটিতে লাল-সবুজের পতাকা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়, মরুভূমিতে তৃষিতের মুখে একফোটা শীতল পানির মতো অমৃত মনে হয়। সেই অমৃতধারা বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই তরুন আব্দুল মোমিন রোহিত এবং আবু সাঈদ। তরুনদের প্রিয় বাহন মোটরসাইকেলে চেপে তারা বাংলাদেশ থেকে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ভারতের খারদুংলা সামিট করেন এবং পরে ভুটান ঘুরে আসেন। সময় লেগেছে প্রায় ১মাস। পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ১০হাজার কিলোমিটার পথ, ঘুরেছেন দুটি ভিন্ন দেশ, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন আবহাওয়ায়।

মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড়। এটি হাতে নাতে প্রমান পেয়েছেন জনাব রোহিত। ইন্টারনেট যে সকল ছবি দেখে চোখ জুড়িযে যেতো। ইউটিউবে যে ভিডিও দেখে মনে আফসোস জাগতো ইস্ আমি যদি যেতে পারতাম এই রাস্তায়। একদিন সেই রাস্তা দিয়েই বাইক নিয়ে যাবেন সেটি কল্পনাতেও ছিলো না কিন্তু বাস্তবেই ঘটে গেছে। পশ্চিম বাংলা, হাওড়া ব্রীজ, কাশ্মির, লাদাখ ইত্যাদি জায়গা বা শব্দ মিডিয়া এবং ইনডিয়ান সিনেমার কল্যানে আমাদের কাছে পরিচিত শব্দ, আর সেই পরিচিত জায়গাতেই বাইকে চেপে ঘুরে এসেছেন এই দুই তরুন। বুকে ধারন করে লাল-সবুজ পতাকা।

যাত্রার শুরু ১৬ই আগস্ট ২০১৬। এদিনে বেনাপোল হয়ে তারা প্রথমে ভারতে প্রবেশ করেন। বাহন হিসেবে ছিলো আব্দুল মোমিন রোহিতের সব সময়ের সংগী প্রিয় বাহন ইয়ামাহা ফেজার। আবু সাইদ কলকাতা থেকে একটি বাইক নেন, কেটিএম ডিউক।

যাত্রার শুরুটি মোটেও সুখকর ছিলো না। প্ল্যান রেডী করা, ভ্রমনের রুট সেট করা সহ নানান ঝামেলা। এসকল দিক সামলে সরকারী অফিসে গিয়ে আবার ঝামেলায় পড়েন রোহিত। সরকারী অফিস যেমন হয় তেমনটিই সামলাতে হয়েছে জনাব রোহিতকে। মোটরসাইকেল নিয়ে ইনডিয়া যাবার জন্য এনবিআর অনুমতি দিচ্ছিলো না, পরিচিত চ্যানেল/লবিং না থাকায় বিষয়টি আরো জটিল আকার ধারন করেছিলো। তিনি দেশের হয়ে প্রথম খারদুংলা সামিট করবেন জানানোর পরেও তারা কোনরকম আন্তরিকতা দেখায়নি। হতাশ হন নাই। দিনের পর দিন নাছোড়বান্দা হয়ে লেগে ছিলেন। অবশেষে সফলতার মুখ দেখেন। অনুমতি মেলে।

মোটরসাইকেল নিয়ে দেশের বাইরে যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে NBR থেকে একটি অনুমতি/অনাপত্তি বের করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি চেয়ায়ম্যান বরাবর সাদা কাগজে একটি দরখাস্ত লিখবেন আপনার উদ্দেশ্য জানিয়ে। অনাপত্তি পেয়ে গেলে সেই অনাপত্তি নিয়ে এবার চলে যাবেন বাংলাদেশ অটোমোবাইলস এসোসিয়েশন এর অফিসে (লিংক:
http://www.fia.com/about-fia/member-clubs/automobile-association-bangladesh ) ওরা আপনাকে ১৫০০০/- ফিসের বিনিময়ে বাইকের পাসপোর্ট (কারনেট) সহ আপনার ইন্টান্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্ট করে দিবে তবে বাইকের সমপরিমান টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হবে। পাশাপাশি আপনি আপনার ভিসা নিয়ে নির্দিষ্ট দিনে পোর্টে গিয়ে কাস্টমস এ NBR প্রদত্ত অনাপত্তি এবং কারনেট দাখিল করুন। তারা বাকি ব্যাবস্থা নিবে। ওখানে আপনাকে আরেকটি ৩০০/- টাকার স্ট্যাম্পে বন্ড দিতে হবে।

এবার যাত্রার শুরুর পালা। কুমিল্লার বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ইনডিয়াতে প্রবেশ করেন। এরপরে কলকাতা আসানসোল হয়ে কানপুর-আগ্রা-দিল্লী পৌছেন। তারা ছাপ রেখে যান শ্রীনগর, কারগিল, লেহ-খারংদুলা পাস সহ মাহী ব্রীজ, ফ্রোজেন লেক এবং সিমলায়। এরপরে দিল্লী থেকে আজমীর শরীফ ঘুরে এহলাবাদ হয়ে পাটনা দিয়ে শিলিগুড়ি থেকে ভুটান প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে শিলিগুড়ি দিয়ে মালদা-রানাঘাট হয়ে বেনাপোল দিয়ে কুমিল্লাতে প্রবেশ করেন।

অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে জনাব রোহিত বলেন- “খারদুংলা সামিটের পর বেশ ফুরফুরে লাগছিলো নিজেদের। তাই ২৮শে আগস্টও থেকে গেলাম আমরা লেহ সিটিতে। উদ্দেশ্যহীনভাবে এখানে সেখানে ঘুরতে থাকলাম আর ব্রেকফাস্টে ইটালিয়ান ডিশ তো লাঞ্চে ইস্রায়েলী ডিশ বা ডিনারে সুইডিশ ডিশ ট্রাই করতে থাকলাম। লেহ সিটি হচ্ছে এই ধরনের ডিশ গুলো ট্রাই করার জন্য এক আদর্শ জায়গা। খুব সস্তায় আপনি অথেনটিক ভেরিয়েশনগুলো পেয়ে যাবেন।

যাই হোক এত সুখ স্থায়ী হলোনা বেশিক্ষণ! পরেরদিন সকাল সাতটায় উঠেই না খেয়েই দিলাম দৌড় দুজনে। শখানেক কিমি চালানোর পর নাস্তা সেরে আস্তে আস্তে তৃতীয় সর্বোচ্চ মটোরেবল পাস চ্যাং লা'এর দিকে এগুতে থাকলাম। বলে রাখি, আমার মতে এই ট্যুরের সবচেয়ে টাফ দিন ছিলো এটিই। সমস্ত ট্যুরে এইদিনেই লো টেম্পারেচারের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছিলো বেশি। ১০০ কিমি দুরের চ্যাং লাকেও অনন্ত দূর লাগছিলো আর রাস্তাতো রাস্তা নয়! সাক্ষাৎ আজব!! ভুল করলেই উপরওয়ালার কাছে ডাইরেক্ট চালান কোনরকম ইমপোর্ট/এক্সপোর্ট ট্যাক্স ছাড়াই!!

চ্যাং লায় টেম্পারেচার পেলাম ২/৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দম নিতে কস্ট হচ্ছিলো খুব। দেরী না করে প্যাং গং লেকের দিকে আগাতে থাকলাম। ওখানে গিয়ে লেকের সৌন্দর্য্য দেখে কস্টের কথা বেমালুম ভুলে গেলাম! ঘন্টা খানেক ছবি টবি তুলে রেস্ট নিয়ে আবার আগাতে থাকলাম লেকের একদম পাশ ঘেসেই। দুপুরে খেয়েওছিলাম লেকের একদম পাশের এক ধাবায়।
তারপর থেকেই শুরু হলো এক ম্যারাথন অফরোডিং। আমাদের বামে ছিলো লেক। স্প্যাংমিক, মান, মিরাক, হয়ে চুশুল পৌছানোর আগেই অন্ধকার নেমে এলো। এরমধ্যে আমরা কোন জনবসতিও পেলাম না! তবে খুব কাছ থেকে একপাল বন্য গাধা(বিশাল সাইজের) ও বন্য হরিনের পাল আমাদের অতিক্রম করে গেলো। শুনেছিলাম এদিকটায় নাকি কিছু হিংস্র নেকড়েও আছে! তাই ভিতরে ভিতরে একধরনের ভীতি কাজ করছিলো। এদিকে ঠান্ডায় হাত জমে অবশ হয়ে যাচ্ছিলো। থেমে থেমে ইঞ্জিনে হাত দিয়ে গরম করে রক্ত সচল রাখছিলাম। দুর্গতি আরো বাড়াতে শুরু হলো এবার বৃষ্টি। খারাপ রাস্তা, লো টেম্পারেচার, সংশয়, সংকা, ভীতির সাথে এবার যুক্ত হলো বৃষ্টি ও। আহ!! সে যে কি এক ফিলিংস ছিলো!! চুশুলের চেকপোস্টে আমাদের পরামর্শ দেয়া হলো থেকে যেতে। উষ্ণ আশ্রয় ও গরম খাবারের নিশ্চয়তাও দিলো। অন্য কেউ হলে হয়তো লুফে নিত প্রস্তাব। কিন্তু আমি আরো এগিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম।

এবারে শুরু হলো রাতের অফরোডিং! আরো প্রায় শখানেক কিমি যাবার পরে রাত আনুমানিক ৯টায় আমরা উপস্থিত হলাম নায়োমা নামের এক হাই অল্টিচ্যুড গ্রামে। একটা দোকান খোলা পেয়ে ব্ল্যাকে কিছু তেল নিয়ে নিলাম। সাইদভাই পরামর্শ দিলো আজকের মত ক্ষান্ত দিতে। আমিও ভাবলাম যথেস্ট এগিয়েছি। এইরকম পরিস্থিতিতে আর এইরকম রাস্তায় দিনে ৩৫০ কিমি এসেছি, বহুত এসেছি, আলহামদুলিল্লাহ। গ্রামের ভিতরে ঢুকে আশ্রয় চাইলাম একবাড়িতে। এদিকে AMS এর জন্য চিনচিনে মাথাব্যাথাও হচ্ছিলো খুব আমার। আল্লাহর অশেষ রহমতে একবাড়িতে আমাদের খুব সুন্দর থাকার ব্যবস্থা, গরম কাপড়, গরম পানি, গরম গরম রাতের খাবার আর আমার ওষুধও পেয়ে গেলাম মাত্র ১০০০/- রুপীর বিনিময়ে। আর সারাদিনের কষ্টের কথা একনিমিষেই ভুলে গেলাম।“ এমন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কাহিনী দিয়ে তাদের ঝুলি ভরপূর। প্রতিটি দিনই ছিলো রোমাঞ্চকর, উত্তেজনাময়।



ভ্রমনের উল্লেখযোগ্য কিছু পরিসংখ্যান-
মোট সময় লেগেছে = ২৬ দিন
মোট দেশ = ২ টি, ভারত ও ভূটান
মোট প্রদেশ = ১১টি (পশ্চিমবংগ, ঝারখান্ড, বিহার, উত্তর প্রদেশ, দিল্লী, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ)
ভ্রমনে পাড়ি দিতে হয়েছে = ৯৬১১ কিমি
প্রতিদিন গড়ে অতিক্রম করতে হয়েছে = ৩৭০ কিমি
মোট পেট্রোল লেগেছে= ২৫২ লিটার
গড় মাইলেজ পাওয়া গেছে= ৩৮+ কিমি/লিটার
মোট ইঞ্জিন লুব ব্যবহার হয়েছে = ৩ টি (MOTUL 7100 10W40)
মোট খরচ হয়েছে = ১ লক্ষ টাকা যার মধ্যে-
- কারনেট বাবদ লেগেছে = ১৫০০০/- (ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিট সহ)
- জ্বালানি খরচ= ২৫০০০/- (ইঞ্জিন লুব সহ)
- টায়ার সহ অন্যান্য স্পেয়ার্স খরচ= ২৫০০০/-
- থাকা-খাওয়া = ৩০০০০/-
- অন্যান্য = ৫০০০/-


ভ্রমনের কিছু ছবি:



3idiots-shooting-spots-ladakh




Abu-Saeed





rohit-abu-saeed





tajmahal




hills-house






hills-road






hills-road2




Pass-Changla-Rohit




Khardungla-Summit-by-Abdul-Momen-Rohit

Bike News

CFMoto Bike Prices in Bangladesh January 2025
2025-01-13

CFMoto is currently the most exciting motorcycle brand in the sports bike segment in the Bangladeshi motorcycle market, one of...

English Bangla
GPX Bike Price in Bangladesh January 2025
2025-01-13

Among the foreign premium quality brands, one of the best motorcycle brands in Bangladesh is the Thai brand GPX, which is main...

English Bangla
Yamaha offering special discounts on exchange in the new year 2025
2025-01-08

A unique arrangement of Yamaha in customer service is Bike Exchange which is only offered by Yamaha throughout the year for Ya...

English Bangla
Lifan Bike Price in Bangladesh January 2025
2025-01-08

Lifan is a very well-known name among bike lovers in Bangladesh and one of the reasons for this recognition is to provide the ...

English Bangla
Bajaj Bike Price in Bangladesh January 2025
2025-01-06

A large portion of those who use bikes for general needs in Bangladesh recommend buying Bajaj bikes in terms of buying advice ...

English Bangla
Filter