গতি আর অবাধ স্বাধিনতার বাহন মোটরসাইকেল যেন ছেলেদেরই নিজস্ব সম্পদ। এই জগতে মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ। অন্তত আমাদের মতো রক্ষনশীল দেশগুলোতে এমনই। গ্রামের মেয়েরা অনেক সময় দূরের পথে স্কুল যেতে সাইকেল ব্যবহার করে, সেটিকেই অনেকে বাঁকা চোখে দেখেন, আর সেখানে মোটরসাইকেলের কথা বললে তো লোকে চোখ কপালে তুলবে।
বাংলাদেশে মহিলারা মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন এমন দৃশ্য এক সময় আমাদের দেশে ছিলোই না। মহিলাদের মাঝে মোটরসাইকেলের ব্যবহারের প্রচলন করে “ব্র্যাক” নামের এনজিও। তাদের মাঠ পর্যায়ের অনেক মহিলা কর্মকর্তা বাইক চালাতেন। তখন ব্যবহার হতো হোন্ডা কাব ৫০সিসি বাইকটি। পরবর্তীতে তারা হোন্ডা ৮০সিসি বাইকটিও ব্যবহার করেন।
দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। একটি সংসারে স্বামী এবং স্ত্রী দুজনেই হয়তো চাকুরী করেন। কখনও স্বামী চাকুরী করলে সেক্ষেত্রে অনেক সময় বাচ্চার স্কুল যাতায়াতের জন্য গৃহিনীর দায়ীত্বে থাকে। মফস্বল শহরগুলোতে রিকশা বা অন্য বাহনগুলো কিছুটা সহজলভ্য হলেও ঢাকায় স্বল্প খরচে যাতায়াতের জন্য বাসের বিকল্প নাই। কিন্তু সন্তানকে সাথে নিয়ে পাবলিক বাসে ওঠা কতটুকু ভোগান্তির তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে কার কিনে চালানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে যাতায়াতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হন নারীরা।
কর্মস্থলে যাবার জন্যই হোক কিংবা সন্তানকে নিয়ে স্কুলে পৌছে দেবার জন্যই হোক নারীদের মাঝে বাইকের ব্যবহার শুরু হয়েছে। স্বাধীনমতো, নিজেকে নিরাপদে রেখে যাতায়াতের জন্য মেয়েদের জন্য সাধ্যের মধ্যে বাইকের মতো আদর্শবাহন আর হতেই পারে না। অভ্যাস না থাকার কারনে হয়তো পুরষশাসিত সমাজে এখনও বিষয়টি দৃষ্টি কটু লাগছে, কিন্তু সময়ের প্রেক্ষিতে এক সময়ে তা স্বাভাবিক হয়ে আসবে। প্রয়োজন শুধু সাহস ও মানসিকতার পরিবর্তন। পরিবর্তনের বাতাস ইতমধ্যেই বইতে শুরু করেছে। অনেক নারী তার ব্যবহারের জন্য বাহন হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন। আর তাই চলতি পথে হঠাৎ ২/১জন নারী রাইডার দেখলে আর অবাক লাগে না।
নারীরা বাইকের ব্যাপারে কত এগিয়ে এসেছেন তার একটি উদাহরন হলো “Bangladesh Women Riders Club”। নারী মোটরসাইকেল রাইডাররা গড়ে তুলেছেন ফেসবুক গ্রুপ। তারা ব্যক্তিজীবনে যেমন বাইক ব্যবহার করছেন তেমনি অন্য নারীদেরও উৎসাহিত করছেন এব্যাপারে।
সম্প্রতি ২২জন নারী সার্জেন্টকে তাদের কাজে ব্যবহারের জন্য ২২টি স্কুটি দেয়া হয়। অর্থাৎ সাধারন নারীদের বাইক ব্যবহারের পাশাপাশি নিরাপত্তাবাহিনীতেও নারী বাইকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যদিও নারী বাইকাররা সহজে ব্যবহারের জন্য স্কুটারকেই বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু অনেকেই সাধারন কমিউটার বাইক থেকে শুরু করে স্পোর্টস বাইক পর্যন্ত ব্যবহার করে থাকেন। কর্মস্থলে যেতে, সন্তানকে স্কুলে পৌছে দিতে, কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে যেতে যেমন বাইক ব্যবহার করেন তেমনি অনেকে একেবারেই নিজের শখে বাইক ব্যবহার করে থাকেন।
বাংলাদেশে প্রায় সকল মোটরসাইকেল কোম্পানীরই স্কুটার রয়েছে। প্রয়োজন মেয়েদের উপযোগী কিছুটা নীচু, কম ওজনের এবং সহজব্যবহারযোগ্য মোটরসাইকেল। সাথে প্রয়োজন ট্রেনিং স্কুল। এব্যাপারে মোটরসাইকেল কোম্পানীগুলো পজিটিভ ভুমিকা রাখতে পারে।
PC: BBC, Internet