সময়ের পার্থক্য এবং প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের রুচি এবং আয়ব্যয়ের ইচ্ছার পরিবর্তনও ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। যোগাযোগের জন্যে আধুনিক যুগে কথা বলার নানান রকম মাধ্যম আবিষ্কৃত হলেও সড়ক পথে যোগাযোগের গুরুত্ব এবং প্রয়োজন সামান্যও কমে যায় নি বরং সবাই এখন আরও বেশি ভ্রমন বিলাসী হয়েছে যার কারনে সড়কে চলতে গিয়ে সবাই সর্বোচ্চ আরামের মাধ্যমটা খুজে চলেছেন।
মোটরসাইকেল বা মোটরবাইক বাংলাদেশের মানুষের কাছে অনেক গুরুত্বপুর্ন একটি বাহন যা অনেক ক্ষেত্রে সখ, অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন আবার অনেক সময় আভিজাত্যের একটি গুরুত্বপুর্ন বাহন হিসেবে দারুন কাজ করে আর এই কারনে সেগমেন্ট অনুযায়ী কোম্পানীগুলোও তাদের বাইকে নানান রকম আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘঠিয়ে বাইক প্রেমীদের কাছে তাদের পন্য অর্থাৎ বাইকসমুহ উপস্থাপন করে থাকে।
সময়ের সাথে সাথে যেহেতু মানুষের চাহিদা এবং তার ওপর নির্ভর করে যে কোন পন্যের দাম পুনঃনির্ধারিত হয়ে থাকে তাই আজকে আমাদের আলোচনায় আমরা তুলে ধরবো ২০২৩ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী বাইকসমুহ যেখানে আপনি দেখতে পাবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী বাইকের তালিকা এবং ঠিক কি কারনে সেই বাইকগুলো এতটা দামী সে ব্যাপারে সাধারন বিশ্লেষন।
Kawasaki Ninja 125
বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী বাইকের মধ্যে অন্যতম একটি হলো Kawasaki Ninja 125 আর এই বাইকের ব্যাপারে বলতে সবার আগে বলতে হবে যে Kawasaki ব্রান্ডটাই আসলে অনেক দামী। বিশ্বের নামীদামী টু-হিউলার প্রস্তুতকারক দেশ হিসেবে জাপানের সবসময়ই আলাদা একটা পরিচিতি আছে আর এই Kawasaki হলো জাপানের আরেকটি বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড আর বাংলাদেশে Kawasaki’র সবমিলিয়ে ৭টি মডেল চলমান আর এর মধ্যে স্পোর্টস সেগমেন্টের কয়েকটি মডেল রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হলো Kawasaki Ninja 125। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে Kawasaki Ninja 125 বাইকের বর্তমান দাম ৪,৯৯,০০০ টাকা। Kawasaki Ninja 125cc ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি যা সর্বোচ্চ 15 HP @ 10,000 rpm শক্তি এবং এর সর্বোচ্চ 11.7 Nm @ 7,700 rpm টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। কাওয়াসাকি নিনজা ১২৫সিসি ৪৫ কিমি প্রতি লিটার মাইলেজ দিতে সক্ষম বলে কোম্পানীর পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে।
Suzuki GSX R Dual ABS
বাংলাদেশে স্পোর্টস বাইকের মার্কেটে অন্যতম ক্রেজ সম্পন্ন একটি বাইক হলো জাপানীজ ব্র্যান্ড সুজুকির Suzuki GSX R Dual ABS, অসাধারন কালার কম্বিনেশন আর পিউর স্পোর্টস ডিজাইন এই বাইকের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারন। এছাড়াও Suzuki GSX R Dual ABS এর দারন স্পীড, ইঞ্জিনের পারফরমেন্স, আরামের সাথে দীর্ঘপথ যাওয়ার নিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় এই বাইকটাকে স্পোর্টস বাইকের মার্কেটে অনন্য একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ২০২৩ সালে Suzuki GSX R Dual ABS এর দাম ৪,২৯,৯৫০ টাকা। GSX R Dual ABS 149cc ইঞ্জিন দিয়ে সাজানো হয়েছে যা সর্বোচ্চ শক্তি 18.9 BHP @ 10,500 rpm এবং এর সর্বোচ্চ টর্ক হল 14 NM @ 9000 rpm। Suzuki GSX R Dual ABS এর মাইলেজ ৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার কোম্পানীর পক্ষ থেকে দাবী করা হলেও আমাদের সাথে কথা বলা দুইজন ব্যবহারকারীর প্রাপ্ত মাইলেজ গড় করলে দেখা যায় যে তারা গড়ে ৩৮ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাচ্ছেন।
Yamaha MT 15 Version 2.0
বর্তমান সময়ের সিনিয়র এবং জুনিয়র অর্থাৎ সকল বয়সী বাইকারদের অন্যতম পছন্দের একটি বাইক হলো Yamaha MT 15 Version 2.0, এই বাইকটির অসাধারন ন্যাকেড স্পোর্টস বা সেমি স্পোর্টস ডিজাইন সকল শ্রেনীর বাইকারদের কাছে দারুন পছন্দের। বাংলাদেশে এমন ব্যতিক্রমী ডিজাইনের বাইক দ্বিতীয়টি নেই বললেও ভুল বলা হবে না। প্রিমিয়াম লেভেলে এমন ডিজাইনের বাইক বাংলাদেশে খুব কমই আছে যা সকল শ্রেনীর বাইকারের পছন্দ। Yamaha MT 15 Version 2.0 এর বর্তমান দাম ৫,২৫,০০০ টাকা। MT 15 V2 150cc ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি যা সর্বোচ্চ 18.1 bhp @ 10,000 rpm শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম এবং এর সর্বোচ্চ 14.7 Nm @ 7500 rpm টর্ক উৎপন্ন করে পারে।
KTM Series
বাংলাদেশে KTM এর সবমিলিয়ে ৩টি মডেল চলমান যার মধ্যে প্রতিটা বাইকই হলো প্রিমিয়াম কোয়ালিটির স্পোর্টস ক্যাটেগরির আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বাংলাদেশের KTM এর যে কয়েকটি বাইক আছে সবগুলিই ১২৫সিসি ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি যা দিয়ে ১৪০+ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতি তোলা সম্ভব হয়েছে। এখানে একটা বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, যদি বাংলাদেশে প্রিমিয়াম বাইকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দ্রুতগতির বাইকের কথা উল্লেখ করতে হয় তাহলে KTM বাইকের কথা সবার আগে উল্লেখ করতে হবে কারন এই বাইকগুলি সবই হলো ১২৫সিসির। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে দামী বাইকের তালিকায় KTM এর দুটি মডেল স্থান পেয়েছে সেগুলো হলো KTM RC 125 যার বর্তমান মুল্য ৫,৬৬,০০০ টাকা এবং আরেকটি হলো KTM 125 Duke Special যার মুল্য ৬,০৫,০০০ টাকা।
Yamaha R15 V3 Series
বাংলাদেশে তরুনদের পছন্দের শীর্ষে থাকা স্পোর্টস সেগমেন্টে সর্বাধিক বিক্রিত বাইক হলো Yamaha R15 V3 সিরিজ যার পিউর স্পোর্টি লুক, একটি স্পোর্টস বাইকের অত্যাধুনিক সকল প্রযুক্তির সমন্বয়, স্পেয়ার পার্টস এবং বিক্রয়োত্তর সকল সার্ভিস পাওয়ার নিশ্চয়তা এই বাইকটিকে বাংলাদেশের অন্য যেকোন স্পোর্টস বাইকের থেকে আলাদা জনপ্রিয়তা দিয়েছে। Yamaha R15 V3 বাইকটার ডিজাইন সবার চোখেই পছন্দ হতে বাধ্য কিন্তু এর দানবীয় ডিজাইন এবং পিউর স্পোর্টস লুক সিনিয়র বাইকারদের বেশিরভাগ সময় Yamaha R15 V3 কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য করে। ২০২৩ সালে R15 V3 সিরিজের ৩টি মডেল বর্তমানে বাজারে চলমান Yamaha R15 V3 Racing Blue যার বর্তমান মুল্য ৪,৮৫,০০০ টাকা, Yamaha R15 V3 Dark Knight এই মডেলটিতেও ৬,০০০ টাকার ছাড় আছে আর এই ছাড় দিয়ে বর্তমান মুল্য ৪,৭৯,০০০ টাকা, V3 এর সবশেষ এবং ৩য় মডেলটি হলো Yamaha R15 V3 Dual Channel ABS এই মডেলটির অসাধারন কালার কম্বিনেশন এর সৌন্দর্যকে অন্যান্য মডেলের থেকে কিছুটা আলাদা করেছে সাথে রয়েছে ব্রেকিং এ আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় আর এই সবকিছু মিলিয়ে এই মডেলটি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪,৮৫,০০০ টাকায়।
Yamaha XSR 155
দামী বাইকের তালিকায় সব দিকেই যখন স্পোর্টস, ন্যাকেড স্পোর্টস বা সেমি স্পোর্টস বাইকের ছড়াছড়ি সেখানে ইয়ামাহা নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্পুর্ন ব্যতিক্রমী একটি বাইকের সেগমেন্ট যা Scrambler Bike নামে পরিচিত। বাংলাদেশের বাইক প্রেমীদের মাঝে যারা প্রিমিয়াম বাইকের মধ্যে ভিন্নতা পছন্দ করেন তাদের পছন্দ তালিকায় ইদানীং শীর্ষে দেখা যাচ্ছে Yamaha XSR 155 বাইকটাকে আর সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজারে থাকা অন্য যেকোন বাইকের থেকে সৌখিন বাইকারদের দৃষ্টি আলাদাভাবে আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছে। Yamaha XSR 155 আধুনিক একটি মোটরসাইকেলের সকল প্রযুক্তি সম্পন্ন কিন্তু এই বাইকের মুল আকর্ষনের কেন্দ্র হলো এর ক্ল্যাসি লুক যার ভিন্নতা যে বয়সের বাইক প্রেমীকে দারুনভাবে আকর্ষন করে। ২০২৩ সালে Yamaha XSR 155 বর্তমান দাম ৫,৪৫,০০০ টাকা, বাংলাদেশে এই বাইকটিই হলো সর্বোচ্চ দামের Scrambler Bike। XSR বাইকটি 155.1cc ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি যা সর্বোচ্চ 19.3 HP @ 10,000 rpm শক্তি উৎপন্ন করে এবং এর সর্বোচ্চ টর্ক 14.7 NM @ 8500 rpm। Yamaha XSR 155 মাইলেজ ৫০ কিলোমিটার প্রতি লিটার কোম্পাণীর পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে।
Honda CBR 150R ABS Motogp Edition
বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজারে শুরু থেকে নিয়ে এখনও অন্যতম জনপ্রিয় একটি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড হলো Honda কারন তাদের মোটরসাইকেলের গুনগতমান দীর্ঘদিন ব্যবহারের নিশ্চয়তাসহ বিশ্বে হেভিওয়েট মোটরসাইকেল তৈরিকারী অন্যতম স্বনামধন্য একটি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড। বাংলাদেশে যেসব বাইক প্রেমী প্রিমিয়াম স্পোর্টস বাইক ব্যবহার করেন তাদের বড় একটি অংশ হোন্ডার CBR 150R ABS Motogp Edition মডেলটাকে তাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রেখে থাকেন। বলে রাখা ভাল যে হোন্ডার যে কয়েকটি প্রিমিয়াম মডেল তাদের পন্য তালিকায় আছে সেগুলার মধ্যে Honda CBR 150R ABS Motogp Edition হলো সেরাগুলোর মধ্যে একটি। ২০২৩ সালে Honda CBR 150R ABS Motogp Edition এর দাম ৫,৫০,০০০ টাকা। Honda CBR 149.16cc ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি যা সর্বোচ্চ 17.1 PS @ 9000 rpm শক্তি উৎপাদন করে এবং এর সর্বোচ্চ 14.4 Nm @ 7000 rpm টর্ক উৎপাদন করতে সক্ষম। Honda CBR 150R ABS Motogp Edition মাইলেজ প্রতি লিটারে ৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার কোম্পানীর পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে পক্ষান্তরে আমরা একজন ব্যবহারকারীর সাথে কথা বলেছি যিনি ৩৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাচ্ছেন।
Yamaha R15 V4 Series
তরুন বাইক প্রেমীদের মধ্যে বিশেষ করে যারা স্পোর্টস বাইক পছন্দ করে তাদের উন্মাদনার অন্যতম একটি আধুনিক বাইক হলো Yamaha R15 V4 Series যা Version 3 এর ব্যাপক সাফল্য এবং জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় Yamaha এর আরেকটি তুরুপের তাশ হলো R15 V4 আর এই বাইকটি ভার্শন ৩ এর থেকে আরও উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে যার কারনে আগেরটির থেকে এই বাইকটির মুল্যও কিছুটা বেশি। এই বাইকটির বর্তমানে দুইটি মডেল একটি হলো Yamaha R15 V4 ২০২৩ সালে যার মুল্য ৫,৫০,০০০ টাকা এবং সমমুল্যের আরেকটি হলো ভার্শন ৪ এর মডেল হলো Yamaha R15 V4 Racing Blue ২০২৩ সালে এই বাইকটি বিক্রি হচ্ছে ৫,৬০,০০০ টাকায় আধুনিকতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজারে অন্যতম সেরা প্রিমিয়াম বাইক হলো এই দুইটি।
Yamaha R15M
সবশেষে বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী বাইক যা স্পোর্টস সেগমেন্টের বাইক প্রেমীদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে রেখেছে বর্তমান সময়ে সেটা হলো Yamaha R15M ২০২৩ সালে Yamaha R15M মুল্য ৬,০৫,০০০ টাকা। R15M বাইকটি 155cc ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি যা সর্বোচ্চ শক্তি 13.5kW(18.4PS)/10000 RPM উৎপন্ন করে এবং এর সর্বোচ্চ 14.2 Nm সর্বোচ্চ টর্ক উৎপাদন করে এবং সর্বোচ্চ শক্তি উৎপন্ন করে (1.4 kgfm) @7,500 RPM। বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী বাইক হউয়াতে এই বাইকের ব্যবহারকারীদের মতামত অনেক গুরুত্বপুর্ন অনেকের কাছে। আমরা এখন পর্যন্ত Yamaha R15M বাইকের দুইজনের মতামত সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি মাইলেজের বিষয়ে তাদের থেকে প্রাপ্ত রেঞ্জ বলে উনারা গড়ে ৫০ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাচ্ছেন। এখানে উল্লেখ্য যে ইয়ামাহার এই বাইকটার ওজন হলো ১৪২ কেজি আর এই ওজনের একটি স্পোর্টস বাইক থেকে এমন রেঞ্জের মাইলেজ পাওয়াটা সত্যিই অবাক করার মত।