অন্য দেশ বাদ থাকুক, পাশের দেশের হাই সিসি বাইক দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলা অনেক তরুনের প্রতিদিনের কাজ। ১৫০সিসিতে আটকে থাকা সিসি লিমিট প্রতিবছর ৫সিসি/১০সিসি করে বাড়ছে। অনেক তরুন চান সিসি লিমিট বাদ হয়ে যাক। আবার অনেকেই চান অন্তত ২০০সিসি থেকে ৩০০সিসি পর্যন্ত অনুমোদন পাক। তরুনদের এ চাওয়ার বিপরিতে অনেকেই যুক্তি দিয়ে থাকেন বেশি সিসি মানেই বেশি গতি, আর বেশি গতি মানেই এক্সিডেন্টে মৃত্যুর হার বেশি, অনেক সময় শোনা যায় বেশি সিসির বাইক আমদানীর অনুমোদন দিলে অপরাধীরা বাইক নিয়ে অপরাধ করবে বেশি এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে উচ্চ সিসির বাইক না থাকায় তাদের ধরাও সহজ হয়ে উঠবে না। আবার বাংলাদেশের রাস্তাগুলোও উচ্চগতিতে মোটরসাইকেল চালানোর উপযুক্ত নয়। উচ্চ সিসি বাইকের পক্ষে-বিপক্ষের এই বিভেদ দূর হতে পারে কিভাবে?
বাংলাদেশের বর্তমান মোটরসাইকেল মার্কেটের দিকে নজর দিলে দেখা যায় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন মোটরসাইকেল হলো ১০০সিসি। এর প্রধান কারন দুটি। প্রথমত কম দাম, দ্বিতীয় কম জ্বালানি খরচ। এরপরেই রয়েছে ১৫০সিসি এবং ১২৫সিসি মোটরসাইকেলের চাহিদা।
বেশি সিসি মানেই বেশি গতি?
কথাটি ঠিক আবার ঠিক নয়। ৩০০সিসি বাইক মানেই ৩০০কিমি/ঘন্টা স্পীড তোলা যেমন যাবে না, তেমনি কিছু মোটরসাইকেলে তার সিসির থেকে বেশি স্পীড তোলা সম্ভব হয়। তবে এটি সত্য বেশি স্পীড পেতে বেশি সিসির ইনজিন প্রয়োজন।
কেন বেশি সিসির মোটরসাইকেল প্রয়োজন?
তরুনদের প্রধান আকর্ষন গতি। কাজেই তারা মুলত বেশি সিসির মোটরসাইকেল পছন্দ করে থাকেন বেশি গতির আশায়। বাংলাদেশের রাস্তাও বেশি গতির উপযুক্ত নয়। খোদ রাজধানী ঢাকার বর্তমান গড় গতি সম্ভবত ৫কিমি থেকে ৬কিমি প্রতি ঘন্টায়। অর্থাৎ জ্যামের চক্করে পড়ে মোটরসাইকেলের থেকে হেটেই এখন বেশি দ্রুত পথ চলা যায়। মোটরসাইকেলের বেশি সিসি শুধু গতির কারনেই প্রয়োজন নয়, গতি ছাড়াও বেশি সিসির মোটরাসাইকেল আরো বেশ কিছু কাজে প্রয়োজন রয়েছে যেমন ট্যুরিং এর প্রয়োজনে, পাহাড়ী রাস্তায়, ক্রুজার বাইকে ইত্যাদি।
সিসি বনাম জ্বালানি খরচ
তরুনদের মাঝে স্পোর্টস বাইক জনপ্রিয় হলেও জ্বালানি খরচ নিয়েও তাদের আক্ষেপ দেখা যায়। দু:খের বিষয় হলো কম জ্বালানি খরচে বেশি গতি বা ভালো পারফরমেন্স পাওয়া সম্ভব নয়। যেমন বর্তমানে ১৫০সিসি বাইকে কমবেশি ৪৫কিমি/লিটার, ১৬৫সিসি বাইকে সর্বোচ্চ ৪০কিমি/লিটার পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব। সেভাবে ২০০সিসি বাইকে সর্বোচ্চ ৩৫কিমি/লিটার এবং ২৫০সিসি বাইকে সর্বোচ্চ ৩০কিমি/লিটার পাওয়া যেতে পারে। কাজেই দামের পাশাপাশি জ্বালানি খরচ বিবেচনায় উচ্চ সিসির বাইকগুলো অধিকাংশই সৌখিন বাইক হিসেবে বিবেচিত হবে। যদিও সময়ের সাথে সাথে বিষয়গুলো সহনীয় হয়ে আসবে।
চাহিদা বাড়ছে উচ্চ সিসির
শুধু দাম বা জ্বালানি খরচের বিবেচনাই যদি হতো তাহলে ৫০সিসি বা ৮০সিসি বাইকের চাহিদা বেশি থাকতো। অথচ এইসব বাইকের চাহিদা বর্তমানে নেই বললেই চলে। বরং দিনে দিনে সবার মাঝেই উচ্চ সিসি বাইকের চাহিদা বাড়ছে। গতির বিষয় বাদ দিয়েও যারা বাইকে ট্যুর দিয়ে থাকেন, আকর্ষণীয় বাইক ব্যবহার করতে চান অথবা চট্টগ্রাম এবং পাবর্ত্য এলাকায় নিয়মিত চলাচলের জন্য উচ্চ সিসির বাইক স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজন। তাই বর্তমানে অনুমোদিত ১৬৫সিসি হওয়াতে নতুন মাত্র ৫-৬টি মডেলের মোটরসাইকেল বাংলাদেশে এসেছে। ২০০-২৫০ সিসি অনুমোদনে বেশ কিছু ভালো মানের মোটরসাইকেল বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ পাবে। আর কমপক্ষে ৩৫০সিসি পর্যন্ত অনুমোদন পেলে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল মার্কেটের অবস্থান ইর্ষনীয় পরিবর্তন ঘটবে। বিশেষকরে অনেক তরুনের স্বপ্নের মোটরসাইকেল “রয়েল এনফিল্ড” কেনার সুযোগ তৈরী হবে।
পরিশেষে
সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশে পর্যায়ক্রমে উচ্চ সিসির মোটরসাইকেলের চাহিদা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঠিক আইনের ব্যবহারের মাধ্যমে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে উচ্চ সিসি বাইকের অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। এতে একদিকে ভালো মানের মোটরসাইকেলের বাজার যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি তরুনদের সুদীর্ঘকালের আকাংখাও পূরন হবে। আশা করা যায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবেন।