মোটরসাইকেল স্টান্ট বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খেলা। পশ্চিমা দেশগুলোতে এর অন্যরকম একটা ক্রেজ থাকলেও বাংলাদেশে এর পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললেই চলে। কিন্তু তাতে কি? পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই বহু যুগ ধরে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল স্টান্ট চলে আসছে। কি অবাক হচ্ছেন? বহু যুগ বললাম ! মনে করছেন লেখক ভুল করেছেন? আসলে তা নয়, আপনারা কি সার্কাসের অন্ধকূপে মোটরসাইকেল স্টান্ট দেখেছেন? বাংলাদেশে বহুকাল ধরেই সার্কাস বা গ্রাম্য মেলাতে মোটরসাইকেলের বিভিন্ন কসরত বা স্টান্ট দেখানোর প্রচলন রয়েছে। যেখানে সাধারন ভাংগাচোরা ২স্ট্রোক মোটরসাইকেল দিয়েই কত দু:সাহাসিক কসরত দেখানো হয়।
বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের তরুনরা এই খেলাকে অন্যান্য খেলার মতই জনপ্রিয় করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে অনেক গুলো স্টান্ট রাইডিং দল গঠিত হয়েছে। এমনই একটা দল রাজশাহী স্টান্ট রাইডার্স। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে পৃষ্ঠপোষকতা তো তারা পানই না বরং নানা রকমের বাধার সম্মুক্ষীন তারা হন। যেমন স্টান্ট অনুশীলন করার মত পর্যাপ্ত জায়গার অভাব। মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টীভঙ্গি , পারিবারিক বাধা ইত্যাদি অন্যতম। সাথে প্রশাসনিক ঝামেলা তো আছেই। তাদের এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণও আছে, রাজশাহী স্টান্ট রাইডার্স এর প্রতিষ্ঠাতা মেম্বার এমএ হানিফ জিসান বলেন, মানুষ মনে করেন এতে জীবনের ঝুকি আছে । কিন্তু যখন তারা বুঝতে পারবে এটি অন্যান্য খেলার মতই একটি খেলা তখন হয়তো তারা এরকমটি না করে আরো উৎসাহ দিবে।
আসলে বাইক রেস আর বাইক স্টান্ট পুরোপুরি আলাদা দুটি বিষয়। বাইক রেইস এ দূর্ঘটনার ঝুকি থাকলেও বাইক স্টান্ট এ এরকম সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেননা স্টান্ট করার সময় ব্যবহার করা হয় হেলমেট, সেফটি জ্যাকেট, সেফটি গার্ড, জুতা সহ আরো অনেক কিছু। তাছাড়া স্টান্ট করার সময় বাইকের স্পীড থাকে ৩০/৪০, যেখানে বাইক থেকে পড়ে গেলেও আহত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাছাড়া বাইক স্টান্ট এর প্রতি আসক্ত থাকলে যুবসমাজ মাদকদ্রব্য সহ অন্যান্য নেশার দিকে ঝুঁকতে পারে না। বাংলাদেশের অনেক স্টান্ট গ্রুপ আছে যারা বিভিন্ন সমাজ কল্যান মুলক কাজ যেমন রক্তদান কর্মসুচি, মাদক বিরোধী কাজের সাথে যুক্ত।
অবশ্যই বাইক স্টান্ট এর সময় অনেক গুলো বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। প্রথম হচ্ছে সেফটি, একজন স্টান্ট রাইডারকে সব সময় হেলমেট এবং প্রয়োজনীয় সকল সেফটি গ্রহন করতে হয়। সেফটি জ্যাকেট, হ্যান্ড গ্লোভস, ব্যাকবোন গার্ড, এলবো গার্ড, নী গার্ড, জুতা ইত্যাদি এবং অবশ্যই সেফ পরিবেশে করতে হবে। যে সকল রাস্তা অথবা জায়গাতে যানবাহন অথবা মানুষের চলাচল সাধারণত হয় না, সেই সকল রাস্তায় বাইক স্টান্ট গুলো করা হয়ে থাকে।
আমাদের দেশেও এই সকল মটর বাইক স্টান্ট নিয়ে বিভিন্ন ধরনের লাইভ এভেণ্ট হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন এবং মিউজিক ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে এদের, যেটা বহিবিশ্বে অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। আমাদের দেশের মটর বাইক স্টান্ট রাইডাররাও ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে, এখন শুধু দরকার সঠিক পৃষ্টপোষকটা। সঠিক পৃষ্টপোষকটা পেলে খুব দ্রুত এটাও একটি উন্নত এবং আধুনিক স্পোর্টস এর অংশ হিসেবে দাড়াতে সক্ষম হবে আমদের দেশে।
পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন ধরনের মোটরসাইকেল স্টান্টের প্রচলন থাকলেও আমাদের দেশে স্টপি, হুইলি, ফুটপেজ হুইলি, হাই চেয়ার স্টপি, হিউম্যান কম্পাস ইত্যাদি অধিক জনপ্রিয়।
যারা নতুন স্টান্ট শিখে থাকেন এবং অতি উৎসাহী অনেকেই শহরের ব্যস্ত রাস্তায় বা যেখানে সেখানে স্টান্ট করে থাকেন যা মোটেও ঠিক নয়, বরং এ ধরনের কাজে পুরো বাইকিং কমিউনিটিকে বদনামের ভাগীদার হতে হয়। অনেকেই সেফটি গিয়ার ছাড়াই স্টান্ট করে থাকেন যা মোটেও নিরাপদ নয়।
সেফটি ফার্ষ্ট। নিজের এবং অন্যের নিরাপত্তা ঠিক রেখে স্টান্ট করা সকলের জন্যই মংগলজনক। তাই আসুন নিয়ম মেনে নিরাপদে থেকে স্টান্ট করি।