টায়ার আবিষ্কার হয়েছিল ১৮৮৮ সালে, আবিষ্কার করেছিলেন জন বয়ড ডানলপ এবং সেটা সাধারনভাবে বাইসাইকেলে ব্যবহার করা হত পাশাপাশি ১৮৯৬ সালে কিছু মোটরসাইকেল প্রোটোটাইপে ব্যবহৃত হত। তখন থেকেই টায়ার এর ব্যবহার বিস্তার লাভ করে এবং বর্তমানে বাইক রাইডিং এর জন্য এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মোটরসাইকেল বা যে কোনো যানবাহনে ভালো টায়ার ব্যবহার করা জরুরী। বিভিন্ন রাস্তায় ভালভাবে চলাচলের জন্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে টায়ার বিশেষ ভুমিকা পালন করে থাকে। পূর্বে বাইসাইকেল গুলো শুধুমাত্র চাকার সাহায্যে চালানো, তখন রাইডারদের জন্য উঁচুনিচু রাস্তায় রাইড করা অনেক কঠিন ও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠত। কিন্তু টায়ার এর সহজলভ্যতার পরে এই ব্যপারটি অনেক সহজ হয়ে গেছে। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন প্রকারের টায়ার আমাদের যানবাহনের প্রয়োজন অনুযায়ী পছন্দ করে নিতে পারি। যখন মোটরসাইকেল এর টায়ার পছন্দের বিষয় আসে তখন এটা বাইকারদের জন্য বড় একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ কার এবং অন্য কোন চার চাকার যানবাহন এর টায়ার যেটা শুধু ভাল রোড গ্রীপ এবং অবশ্যই ওজন বহন করার ক্ষমতা থাকতে হবে। কিন্তু বাইকের ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনা করে টায়ার ব্যবহার করা হয় যেমন, ভাল করনারিং, রোড এর অবস্থা, ভাল গ্রিপ ইত্যাদি।
মোটরসাইকেলে দুই ধরনের টায়ার ব্যবহার করা হয়ে থাকে একটা হল টিউব টাইপ টায়ার আরেকটি হল টিউবলেস টায়ার। টিউব টায়ার অনেক আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশে বেশিরভাগ মোটরসাইকেলে টিউবলেস টায়ার প্রচলন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ মোটরবাইক উৎপাদক টিউব টায়ারের এর পরিবর্তে টিউবলেস টায়ারকেই বেছে নিচ্ছে। একটা বিষয় সকলকেই বুঝতে হবে যে এই দুই প্রকার টায়ার এর সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়েই রয়েছে। তাই ব্যবহারকারী কে তার পরিস্থিতি অনুযায়ী বিচক্ষনতার সাথে টায়ার বেছে নিতে হবে এবং বেছে নেওয়া টায়ার এর ভাল মন্দ দিক সমূহ গুলো জানতে হবে। চলুন দেখে আসি এই দুই ধরনের টায়ার এর সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো এবং টায়ার উৎপাদনের উপাদান এবং উৎপাদনের পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে একজন তার পছন্দের টায়ার বেছে নিতে পারেন।
টিউব টায়ার
টিউব টায়ার এর ক্ষেত্রে, সাধারণত টিউব টায়ারে এর বডি মিক্সিংটা নরম আবরন দ্বারা আবৃত থাকে। এর মানে যখন রাস্তার উপরিভাগে গ্রিপিং করার ক্ষেত্রে এই টায়ার ভাল পারফরমেন্স দিয়ে থাকে। এই টায়ার এর ভেতরের অংশে টিউব রয়েছে যেটা এর ভেতরে বাতাস আটকে রাখে এবং বাতাস এর চাপ নিয়ন্ত্রন করে থাকে। টিউব টি রাবারের তৈরী এবং এটা অনেক চিকন কিন্তু নমনীয় উপাদান দ্বারা তৈরী যেটা বাতাস খুব ভালভাবে আটকে রাখতে পারে এবং টায়ার কে শক্ত করে তোলে । এই সফট মিক্সচার এর কারণে টায়ার অনেক বেশী ওজন বহন করতে পারে । টীউব টায়ারের সাথে ভেতরের বাতাসের সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই,তাই টায়ার এবং চাকার মধ্যে যোগাযোগ একেবারেই এয়ার টাইট নয় । সেই জন্য সেসব বাইক যেগুলোর স্পক চাকা আছে সেই সাথে টিউব টায়ার এগুলোর চাকা পাংচার হওয়ার সাথে সাথে বাতাস লিকেজ হয় যেটা সমস্যা তৈরি করতে পারে । টিউবের ভেতরে যে বাতাস চাপ হিসেবে থাকে সেটি পাংকচার হলে টিউব, টায়ার এবং রিম হোল দিয়ে বের হবার চেষ্টা করে যার ফলে টায়ার খুব তাড়াতাড়ি অকেজো হয়ে পড়ে ।
টিউবলেস টায়ার
টিউবলেস টায়ারে টিউব এর কোন দুশ্চিন্তা নেই এবং লিকেজ এর কোন ভয় নেই কারণ ‘ইনার টিউব’ বিহীন টায়ার কে টিউবলেস টায়ার বলা হয় ।যদিও টিউবলেস টায়ার এর প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশী কিন্তু সার্বিক দিক বিবেচনা করলে টিউব টায়ার থেকে টিউবলেস টায়ার বেশী টেকসই। টিউবলেস টায়ার তৈরির প্রধান কারণ হল এর উন্নত টায়ার কোয়ালিটি এবং লাইফ টাইম এর জন্য কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান ব্যবহার করা হয় । উৎপাদনের দিক থেকে টিউব টাইপ টায়ার নরম প্রকৃতির কিন্তু সাধারনত শক্ত প্রকৃতির টায়ার টেকসই বেশি হয়ে থাকে। টিউবলেস টায়ারে সরাসরি বাতাস ভরা হয় ,তাই টায়ারের বাতাস আটকে রাখার জন্য চাকার এয়ার টাইট সিল ব্যবহার করা হয় । সেইজন্য বাতাস লিকেজ হওয়ার কোন ভয় নেই । এলয় হুইল গুলোতে সচারচর টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয় যার ফলে সম্প্রসারণ হওয়ার সুযোগ কম থাকে । টায়ার পাংচার হলে শুধুমাত্র পাংচার হওয়া স্থান থেকে বাতাস লিকজ হয় যেটা খুব একটা বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় না।
টিউবলেস টায়ার দুই ধরনের। উভইয়েরই বিশেষ কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে ।
বায়াস প্লাই টায়ার
ডিজাইন অনেক পুরাতন যা অনেক শতাব্দী ধরে চলে আসছে। বায়াস প্লাই টায়ার এর বডি ফ্রেব্রিক লেয়ার দ্বারা তৈরি যেমন নাইলন অথবা পলেস্টার এবং টায়ার এর বিট গুলো একটি অপরটির উপর আড়াআড়ি ভাবে আবৃত। বহুবিধ লেয়ার গুলি বাকানো এবং নরম আস্তরন এর মত হয়ে থাকে যার ফলে অত্যাধিক ওজন বহন এবং ভাল হ্যন্ডেলিংয়ে সক্ষম। অন্যথায় খারাপ দিক হিসেবে এটি তাপ উৎপাদন করে বেশি, এবং উচ্চ গতিতে ভাল কন্ট্রোলিং পাওয়া যায় না।
রেডিয়াল টিউবলেস টায়ার
এই ধরনের টায়ার আধুনিক বৈচিত্র্যময় টায়ার গুলোর মধ্যে একটি যা তৈরি হয়েছে শক্ত হার্ড কড বডি দ্বারা এবং যে থ্রেড দ্বারা টায়ারটি তৈরি সেগুলো লম্বালম্বিভাবে টায়ারে মোড়ানো থাকে । তৈরি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় স্টীল এর স্ট্র্যাপ, পলেস্টার অথবা ফেব্রিক( যেমন ক্যালিভার) ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। রেডিয়ালস টায়ার সাধারনত শক্ত হয়ে থাকে। ভাল পারফরমেন্স, যথাযথ হ্যান্ডেলিং দিয়ে থাকে, হাই স্পীড তুলতে সক্ষম। কিন্তু খারাপ দিক হল এই চাকার রাইডিং নমনীয় না। মোটামুটি ভাবে বলা যায় রেডিয়ালস টায়ার অন্যান্য সাধারন টায়ারের থেকে উন্নত যা বিশেষত স্পোর্টস ক্যাটাগরি বাইক গুলোতে বেশী লক্ষ্য করা যায় ।
টিউব টায়ার এবং টিউবলেস টায়ার এর ভিন্ন ভিন্ন সুবিধা অসুবিধা থাকে এবং এগুলোই টিউব টায়ার এবং টিউবলেস টায়ার এর মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে । আসুন দেখে নেই আমাদের আলোচিত এই দুই ধরনের টায়ারের সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো।
টিউব টাইপ টায়ার এর সুবিধা
-কম দামে পাওয়া যায়
-ভাল গ্রিপ এবং চাপ নিতে সক্ষম
-বাতাসের প্রেসার হারানোর কোন কারণ নেই
-খুব তাড়াতাড়ি গরম হয় না
-কম খরচে যে কোন স্থানে পাংচার ঠিক করা যায়
টিউব টায়ারের অসুবিধা
-যে কোন সময় পাংচার হয়ে যাওয়ার একটা রিস্ক থাকে ।
- পাংকচার হওয়ার সাথে সাথে আর টায়ার আগের আবস্থায় থাকে না
-পাংচার অস্থায় সমতল রাস্তায় চলাচলের সময় ভালভ নষ্ট হয়ে যায় এবং পরিবর্তন করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
- ভাংগা রাস্তায় দ্রুতগতিতে চললে টায়ার এবং টিউবের ঘর্ষনে টিউব ক্ষতিগ্রস্থ হয়
টিউবলেস টায়ায় এর সুবিধা
- সহজেই রক্ষনাবেক্ষন করা যায় এবং ওজনে কম
- খুব সহজেই পাংচার হয় না
- পাংচার এর ক্ষেত্রে এটি খুব অল্প অল্প করে এয়ার লিকেজ করে এবং অনেক দূর রাইডিং নিশ্চিত করে।
- দীর্ঘস্থায়ী
- যে কোন রাস্তায় হাই স্পীড তুলতে সক্ষম
- ভাল মাইলেজ এবং টিউব টায়ারের থেকে বেশী নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।
টিউবলেস টায়ার এর অসুবিধা
- টিউব টায়ারের থেকে দামে বেশী
- পাংচার ঠিক করতে নিদিষ্ট টুল বক্স এর প্রয়োজন হয় যা সহজলভ্য নয়
- দক্ষ মেকানিক ছাড়া অন্য যে কোন মেকার এটি ঠিক করতে বাধার সম্মুখীন হবে
- যদিও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম কিন্তু দাম বেশী
শেষকথা
আমরা টিউব টায়ার এবং টিউবলেস টায়ার এর সুবিধা অসুবিধা গুলো চিহ্নিত করেছি এবং আমরা দ্বিধাহীন ভাবে বলতে পারি যে টিউবলেস টায়ার আসলেই অনেক উন্নত। এর অনেক সুবিধা আছে টিউব টায়ার থেকে। বর্তমানে অনেক উৎপাদক কোম্পানিই তাদের বাইকে টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করছে । কমপক্ষে প্রিমিয়াম টাইপের বাইকগুলোতে এখন টিউবলেস টায়ার এর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। যদিও টিউবলেস টায়ারের সুবিধা অনেক তবুও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে এর অসুবিধা গুলোও উপেক্ষা করার নয়, কারন আমাদের মতো অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেও টিউবলেস টায়ারের অবস্থান একই। টিউবলেস টায়ার এর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং এর অসুবিধাসমুহ দূর করতে হবে । তাই সবশেষে বলা যেতে পারে যে, বর্তমান সময়ে টিউব টায়ারের থেকে টিউবলেস টায়ার বেশি ভাল এবং সর্বদা ব্যবহার উপযোগী।