সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলেন। বাসে যাত্রী বোঝাই। ভাবলেন সিএনজিতে যাবেন, যে ভাড়া চাইবে ২দিনের ইনকাম এক বেলাতেই খরচ হয়ে যাবে। তারপরেও যদি যেতে চায়। এমন সময়ে যদি মোটরসাইকেলের চেপে অফিসে যাওয়া যেতো তাহলে নিশ্চয় আপত্তির কিছু নাই? ভাবছেন মোটরসাইকেল কেনার কথা বলছি? না । বলছি “পাঠাও” সার্ভিস এর কথা।“পাঠাও” হলো স্মার্টফোন ভিত্তিক একটি এপস যেখানে একজন মোটরসাইকেল চালকের সংগে একজন যাত্রীর সংযোগ ঘটিয়ে দিবে। একটি নির্দিষ্ট পরিমান ভাড়ার বিনিময়ে আপনি মোটরসাইকেলে চেপে গন্তব্যে পৌছে যেতে পারবেন অল্প সময়েই।
ব্যস্ততম শহর গুলোতে যাতায়াতের ভোগান্তি নতুন করে বলার কিছু নাই। কিন্তু যারা বাইকার আছেন তারা কিছুটা এ ঝামেলা থেকে মুক্ত। বাইকে রাস্তার অল্প জায়গা দখল করে বলে খুব সহজেই জ্যামের মধ্যে দিয়ে কখনও প্রয়োজনে গরি পথ ধরে গন্তব্যে পৌছাতে পারে। সাধারনতই একজন বাইকারের পেছনের সিটটি খালি থাকে। একজন মোটরসাইকেল চালক তার যাত্রা পথে যদি আরেকজন সহযাত্রী তুলে নেন তাহলে দুজনেই যেমন সময় বাচাতে পারলেন তেমনি বাইকার তার যাত্রাপথেই কিছু আয়েরও সুযোগ পেলেন। এই ভাবনা থেকেই শুরু হয়েছে “পাঠাও”।
পাঠাও সার্ভিস পেতে ইন্টারনেট কানেকশানের মাধ্যমে সেই এপস টি আপনার মোবাইলে ইন্সটল করতে হবে এবং সেই এপস এর মাধ্যমে রাইডারকে একটি রিকুয়েস্ট পাঠাতে হবে। তারপর রাইডার আপনাকে আপনার মোবাইলে ফোন কলের মাধ্যমে আপনার অবস্থান নিশ্চিত করবে এবং অবস্থান নিশ্চিত করার পর রাইডার আপনাকে সেই স্থান থেকে তুলে নিয়ে আপনাকে আপনার গন্তব্য পৌঁছে দিবে। বিনিময়ে রাইডারকে ফি প্রদান করতে হবে।
যে কারনে পাঠাও এর মতো সার্ভিস কার্যকরী হতে পারে-
- বর্তমানে মোটরসাইকেল অনেক সাধারণ এবং সহজ একটি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে পরিচিত।
- মোটরসাইকেল রাস্তায় চলার সময় জায়গা অনেক কম নেয় এবং এর ফলে ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা সম্ভাবনা অনেক কম।
- বেশির ভাগ বাইকাদের রাস্তায় চলার পথে দেখা যায় যে তাদের পেছনের পিলিয়ন সিট ফাঁকা থাকে যা ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এটা বাইকারদের জন্য অর্থ উপার্জন করার একটি বিশাল সুযোগ যদি সেটা স্বেচ্ছায় কোন বাইকার কাজে লাগাতে পারে।
- যে সকল মানুষদের ট্রাফিক জ্যাম পছন্দ না এবং গন পরিবহন পছন্দ না যেমন বাস, সি এন জি ইত্যাদি।তাদের জন্য এটি একটি স্বস্তিকর অনুভুতি।
- কল দেওয়া অনেক সহজ এবং খুব তাড়াতাড়ি গন্তব্যে যাওয়া যায়।এটি বাইকার এবং প্যাসেঞ্জার উভয়েরই ব্যবহার করা সহজ।
- এগুলো ছাড়াও আরও কিছু সাধারন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে এটাকে সকল প্যাসেঞ্জার নিরাপদ এবং ঢাকার মত বড় বড় শহর গুলোতে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গ্রহন করে। প্যাসেঞ্জারের আরেকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তারা এই ব্যবস্থাটাকে নিরাপদ এবং সহজ যোগাযোগের মাহ্যম হিসেবে নিয়েছে। তারা আরও এই মাধ্যম কে বেছে নিয়েছে তার কারন হল তাদেরকে বাস কন্ট্রাক্টার বা সি এন জি ড্রাইভারদের সাথে কোন ভাড়া নিয়ে কোন প্রকার ঝামেলা করতে হয় না।
পাঠাও সার্ভিস দাতা(বাইকার) এবং গ্রহীতাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে জানা যায় যে এই ব্যবস্থাটার কিছুটা সমস্যা রয়েছে যেগুলো দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে এই ব্যবস্থাটিকে একটি উন্নত এবং গ্রহণযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করবে।
“পাঠাও” সম্পর্কে অভিযোগ এবং কিছু নেগেটিভ বিষয় সম্পর্কে জানানোর মাধ্যমে আমরা এর থেকে ভবিষ্যতে আরও ভাল কিছু সুযোগ সুবিধা নিতে পারব এবং আমরা আশা করি যে এই সকল সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সকল বাধা অতিক্রম করে এই সুবিধাটা আরও সামনের দিকে আরও উন্নত হবে।
প্রথমত আমরা সকলেই অবগত আছি যে আমাদের দেশে মহিলাদের নিরাপত্তা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম তাই এক্ষেত্রে প্রথম অভিযোগটা হল-
“রাইডার অনেক সময় মহিলা প্যাসেঞ্জার কে ফোন দিয়ে বিরক্তিকর কিছু বলেন যেটা এই সার্ভিসের লক্ষ্যকে ব্যহত করতে পারে এবং এটি “পাঠাও” কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি অস্বস্তিকরও বটে। “
আজ পর্যন্ত একটি বিষয়ে ঘাটতি দেখা যায় সেটা হল “পাঠাও” এর প্রশাসনিক কাঠামো বেশ দুর্বল যার ফলে অনেক রাইডারকে রাস্তায় ট্রাফিক সার্জেন্টের সমস্যার সম্মুখীন হতে এবং আরও জানা যায় যে অনেক রাইডার এই সমস্যার কারনে “পাঠাও” এর সার্ভিস ছেড়ে দিয়েছে।
এই সমস্যা নিয়ে “খন্দকার শাহাদাত নয়ন” তার ফেসবুক পেইজে বলেন- “কেউ কি আমাকে “পাঠাও” এর ভবিষ্যত সম্পর্কে বলতে পারবেন? কিছু দিন ধরে আমি রাইডিং করার সময় একটি ভয়ের সম্মুখীন হচ্ছি ,সেটা হল পুলিশ কেসের ভয়। আমি শঙ্কায় আছি, “পাঠাও” কি একদিন বন্ধ হয়ে যাবে ?
এ বিষয়ে “মোয়েন মাহমুদ” বলেন “দ্রুত আইন-কানুন পরিবর্তন করা দরকার । তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন যে, পুলিশের মারাত্মক কোন কেসের সম্মুখীন হলে বাইকসহ পুরো পাঠাও সিস্টেম ব্যহত হবে।“
আরেকটি ভিন্ন মত প্রকাশ করলেন বাইকার বুলবুল হোসেন। তিনি বলেন যে, পুলিশের কেসের বিষয়টা নিয়ে কোন চিন্তা করার দরকার নেই। “পাঠাও “ এর কর্মকর্তা এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করছে। তার ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে একজন রাইডারকে ১৫০০ টাকার কেস বহন করতে হয় কিন্তু “পাঠাও” টিম সেটিকে আন্তরিকতার সাথে নজরে রাখছে কেসের পেপারগুলো তাদের টিমের হাতে হস্তান্তর করার মাধ্যমে সেগুলোকে সমাধান করছে।
সবকিছু মিলিয়ে বলা যায় যে এই সিস্টেমটি যদি ভাল মত গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই সিস্টেমটি প্রশংসনীয় এবং মাইলফলক সিস্টেমে পরিনত হবে। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে হলে কতৃপক্ষের কড়া নজরদারি থাকতে হবে। প্রত্যেকটি বিষয়ের ভাল এবং খারাপ দিক রয়েছে তবে খারাপ দিকের পরিমান কমিয়ে নিয়ে গ্রাহকদের কে ভাল কিছু সার্ভিস উপহার দিতে হবে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, এটি সৃজনশীল মানসিকতার এক উৎসাহমূলক চিন্তা ভাবনা এবং এটি খুব জলদি রোড ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমে ভাল একটি খ্যাতি অর্জন করবে যেখানে ঢাকার মত বড় বড় শহরগুলোতে যানজট অসহনীয় পর্যায়ে। আমরা আশা করি কতৃপক্ষ সমস্যা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে এর প্রসার আরও বৃদ্ধি করবে।