নেপালের পথে যাত্রা করলো রানার গ্রুপের মোটরবাইক বহর। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের বহরে যুক্ত হলো মোটরবাইকের নাম। শনিবার (২১ জানুয়ারি) ময়মনসিংহের ভালুকা কারখানায় আনুষ্ঠানিকভাবে মোটরবাইক রফতানি উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
প্রথম ধাপে নয়টি কাভার্ড ভ্যান নেপালের পথে রওয়ানা দিয়েছে। প্রত্যেকটি কাভার্ড ভ্যানে সতেরটি করে মোটরবাইক রয়েছে। প্রথম লটে বুলেট-১২৫ বাইক নেপাল যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রানার গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। এতোদিন শুধু দেশের অভ্যন্তরে বাজারজাত করতো রানার মোটরবাইক। নেপালের বাইক রফতারি মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পা রাখলো তারা।
তোফায়েল বলেন, বাংলাদেশ সবকিছু পারে, এটা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছর (২০১৭-১৮) থেকে মোটরবাইক রফতানিতে প্রণোদনা দানের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ কখনই তলাবিহীন ঝুড়ি ছিলো না। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার জন্য এসব কথা বলা হতো। যারা একদিন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলেছিলো ‘বাংলাদেশ হবে দরিদ্র রাষ্ট্রের মডেল’। তারাই এখন বিস্ময় প্রকাশ করেছে। সরকার অপ্রচলিত পণ্য রফতানিতে জোর দিচ্ছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, এক সময় আমরা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিলাম। এখন তাদের থেকে অনেক এগিয়ে গেছি। ক্ষেত্র বিশেষে ভারতের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, আমাদের এখানে আঠার শ’ লোক কাজ করে। সবার আবেগ ভালোবাসা দিয়ে তৈরি করেছি এই কারখানা। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে কেউ ভাবতে পারেনি মোটরবাইক রফতানি হবে। কিন্তু সেই অভাবনীয় কাজটি সম্পন্ন হয়েছে।
রানার মোটরবাইক সারা বিশ্বজুড়ে দাঁপিয়ে বেড়াবে। অটোমোবাইলের কোনো নীতিমালা নেই। বাজেট এলে বুক দুরু-দুরু করে কী হতে যাচ্ছে। নীতিমালা করে দেন, সহায়তা করুন, আমরা দুনিয়ার যে কোনো অটোমোবাইলের চেয়ে কোনো অংশে কম না।
চীনের ডায়াং মোটরসাইকেল বিপণনের মাধ্যমে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড যাত্রা শুরু করে ২০০০ সালে। সেখান থেকে প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে অটোমোবাইলস লিমিটেড ডায়াং মোটরসাইকেলকে বাংলাদেশে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ২০০৭ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় স্থাপন করা হয় মোটরবাইকের কম্পোনেন্টস তৈরির কারখানা।
২০১১ সালে রানার ওয়েল্ডিং, পেইন্টিং, অ্যাসেম্বলিং, টেস্টিং, চেসিস, রিয়ার ফোরক, ফুয়েল ট্যাঙ্ক, মেইন স্ট্যান্ড, সাইড স্ট্যান্ড, ফুট পিগ এবং ইঞ্জিন তৈরির মাধ্যমে মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১২ সালে পুরোদমে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে রানার গ্রুপ। এ সব যন্ত্রাংশের রং করার জন্য অত্যাধুনিক পেইন্টশপ স্থাপন করেছে তারা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর আমানউল্লাহ, রানার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুকেশ শর্মা, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেট্রিক্স মোটো করপোরেশনের দিলীপ কুমার কার্নাসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রানার গ্রুপ আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর পূর্বে মোটরবাইক উৎপাদন শুরু করে। আর ঠিক সেই দিনটিতেই নেপালে মোটরবাইক রফতানির মাধ্যমে বিশ্ববাজারে পা রাখলো। এ উপলক্ষে পুরো কারখানা বর্ণিল করে সাজানো হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী দুপুর সাড়ে ১২টায় উপস্থিত হলে তাকে নেচে গেয়ে বরণ করে নেয় ক্ষুদে নাচিয়েরা। এরপর পুরো কারখানা ঘুরে ঘুরে দেখেন তিনি। এ সময় তোফায়েল আহমেদ রানার গ্রুপের এই কর্মযজ্ঞ দেখে গর্বের কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, তাদের এই কর্মযজ্ঞ সত্যিই বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
এ সময় মন্ত্রী বোতাম টিপে ইনভয়েস প্রিন্ট করেন প্রথম চালানের। আর সেই চালান নিয়েই যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের পতাকাবাহী সাতটি কাভার্ড ভ্যান। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ভারতের মাটি মাড়িয়ে পৌঁছে যাবে নেপালে।