দুর্ঘটনা কমানো এবং মহাসড়কে শৃংখলা রক্ষার্থে প্রস্তাবিত “মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা ২০২৩” এ প্রস্তাবকৃত সুপারিশগুলোর কিছু অংশ যৌক্তিক এবং বাইকাররাও এর সাথে একমত। কিন্তু এমন কিছু বিষয় প্রস্তাবনায় উঠে এসেছে যা রীতিমতো অযৌক্তিক, অসম্ভব এবং বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার্থে বলেই প্রতীয়মান হয়। যা বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী এবং মোটরসাইকেল উৎপাদন/সংযোজন/আমদানীকারকদের বিপদের মধ্যে ফেলে দিবে। একটি বড় সিদ্ধান্ত হঠাৎ করেই চাপিয়ে না দিয়ে ধাপে ধাপে এবং পরিবেশ তৈরীর মাধ্যমে গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করতে হয়।
খসড়া “মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা, ২০২৩” এর প্রস্তাবিতনীতিমালাগুলো নিঃসন্দেহে ভালো। যা মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী এবং বাকী সকলের জন্যই উপকারী বলা যেতে পারে। প্রস্তাবের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৬.৩ থেকে সমস্যার সুত্রপাত হয়েছে।
মহাসড়কে চলবে ১২৬সিসি+ বাইক
৬.৩ এ বলা হয়েছে সর্বনিম্ন ১২৬সিসি বা এরচেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন বাইক মহাসড়কে চলবে। প্রস্তাব নিঃসন্দেহে ভালো কিন্তু পরিবেশ তৈরী হয় নাই। বাংলাদেশে যেখানে ১৬৫সিসির বেশি বাইক ব্যবহারের অনুমতি নেই সেখানে হুট করেই ১২৫সিসির কম বাইক হাইওয়েতে নিষিদ্ধ না করে বরং একটি সময়সীমা বেধে দেয়া দরকার এবং সেফটি ফীচার্স সমৃদ্ধ হাই সিসি বাইক ব্যবহারে অনুমতি প্রদান করা দরকার।
এবিএস ব্রেকিংযুক্ত বাইক
৬.৪ এ বলা হয়েছে মহাসড়কে চলাচলের জন্য বাইকে এবিএস ব্রেকিংযুক্ত থাকতে হবে। এবিএস ব্রেকিং অবশ্যই নিরাপদ এবং ভালো। কিন্তু এই ব্রেকিং এর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। অর্থাৎ দেশে বাইক প্রস্তুত/আমদানীকৃত বাইকে এবিএস থাকতে হবে এমনটি নেই। বাইকের উৎপাদন/আমদানীতে এবিএস ব্রেকিং বাধ্যতামুলক করে দিলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কেননা মাত্র কয়েক বছর ধরে এবিএস ব্রেকিং এর প্রচলন হয়েছে। এর আগে লক্ষ লক্ষ বিক্রিত বাইক গুলো এবিএস বিহীন। এসকল ব্যক্তির কথা বিবেচনাতেই নেয়া হয় নাই।
আরোহী বহনে নিষেধাজ্ঞা
৬.৫ এ বাইকে আরোহী বহন করতে পারবে না বলে সুপারিশ করা হয়েছে। যাদের নিজস্ব গাড়ী রয়েছে অথবা গনপরিবহনে চলাচলের অভিজ্ঞতা নেই এমন ব্যাক্তিছাড়া এমন অদ্ভুত সুপারিশ কারো মাথায় আসা সম্ভব না। পৃথিবীব্যাপী প্রায় সকল বাইকেই চালক ব্যাতিত আরো একটি আরোহী সীট থাকে আরোহী বহনের জন্য। বাইক গুলো নিবন্ধনও করা হয় সেভাবেই। বাইকে ৩জন বসা নিষিদ্ধ এটি সবাই জানে। কিন্তু এক বাইকে ১জন যাতায়াত করবে এমন অদ্ভুত চিন্তা মানুষের মাথায় আসে কিভাবে?
ঈদ/পার্বনের আগে/পরে ১০দিন বাইকে নিষেধাজ্ঞা
৬.৬ এ বলা হয়েছে ঈদ/পার্বনের আগে/পরে ১০দিন বাইক নিয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানো যাবে না।
ঈদে/পার্বনে বাস/ট্রেন/প্লেন/লঞ্চে টিকেট পাওয়া সোনার হরিন পাওয়ার থেকেও কঠিন। একজন বাইকার নিতান্তই নিরূপায় হয়ে এ সময়ে বাইক নিয়ে নাড়ীর টানে গ্রামে যায়। এ সময়ে টিকিট নিয়ে বিড়ম্বনা, নৈরাজ্য এবং দুর্বিষহ জ্যাম যদি দূর করতে পারেন তাহলে কেউ বাইক নিয়ে রাস্তায় বের হবে না।
শহরে সর্বোচ্চ গতিবেগ ৩০কিমি
তৃতীয় অধ্যায়ের ৮.২ এ বলা হয়েছে শহরের মধ্যে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতিবেগ হবে ৩০কিমি/ঘন্টা। যা রীতিমতো কল্পনাপ্রসুত। একজন বাইক সম্পর্কিত ধারনাবিহীন ব্যক্তি ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে না। প্রথমত এতো কম স্পীডে বাইক চালানো বাইকের ব্যালেন্সের জন্য সমস্যা তেমনি অন্য বাহনে যেখানে এর থেকে বেশি স্পীডে চলবে সেখানে বাইকের গতি সর্বোচ্চ ৩০কিমি হলে শহরের চলাচলে সার্বিক গতিই কমে যাবে। এরচেয়ে বাইকের জন্য বাইসাইকেলের সাথে আলাদা লেন করে দেওয়াই নিরাপদ।
অফিসের চেয়ারে বসে সিদ্ধান্ত আর বাস্তবতা সব সময়েই এক হয় না। বাইক সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে হলে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং এই ইন্ডাষ্ট্রির ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে করলে সকলের অধিকার সুনিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক
আবু সাঈদ মাহমুদ হাসান
প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও
মোটরসাইকেল ভ্যালী