হুন্ডা চালায় গুন্ডা। আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি কথা। আবার, মোটরসাইকেল নয় মরনসাইকেল, আরেকটি প্রচলিত কথা। দুটোই নেগেটিভ অর্থে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং রাস্তা ও আবহাওয়া সব মিলিয়ে মোটরসাইকেলের জন্য উপযোগী একটি পরিবেশ। প্রতিবছর লক্ষাধিক বাইক আমদানী ও বিক্রি হয় এবং প্রতিনিয়তই চাহিদা বাড়ছে। এতো চাহিদা থাকার পরেও সমাজে কিশোর-তরুনদেরকে বাবা-মা বাইক কিনে দিতে চান না, বরং বাইক কিনতে চাইলে উপরের কথাগুলো শুনিয়ে দেন। কিন্তু কেনো?
প্রকৃত অর্থে এই ধরনের নেগেটিভ মনোভাবের কিছু কারনও রয়েছে। কিছু বাইকার(তাদেরকে বাইকার বলতেও ইচ্ছে করে না) আছেন যারা তাদের কর্মকান্ডের জন্য পুরো বাইক কমিউনিটিকে কলংকিত করেন, সমাজের চোখে ছোট করে দেন। চলুন দেখি তারা কি কি অপকর্ম গুলো করেন।
অতিরিক্ত তাড়াহুড়া করা
সিগন্যালে, ভীড়ের মধ্যে, রিকশার পেছনে সব জায়গাতেই তাদের তাড়াহুড়োর মনোভাব দেখা যায়। যেখানে একইঞ্ছি জায়গা নেই সেখানেই বাইকের মাথা ঢুকিয়ে দেয় সামনে যাবার আশায়। চালানোতে রয়েছে অস্থিরতা। বাইক নয় যেন ফাইটার বিমান চালানো হচ্ছে।
গতি
দুইচাকার এই বাহন বাইকের সবচেয়ে ভালো এবং মন্দ দিক হলো গতি। বাহনটির তুলনাতে গতি তোলা যায় অনেক অথচ নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক কম। তাই প্রয়োজন সংযমের। কিছু বাইকারের কাজই হলো গতির ঝড় তোলা, শহরের ব্যস্ততম রাস্তায়, হাইওয়েতে, ভীড়ের মধ্যে সব জায়গাতে প্রচন্ড গতিতে বাইক না চালালে তারা শান্তি পায় না।
যেখানে সেখানে স্টান্ট করা
মোটরবাইকে স্টান্ট খারাপ কিছু নয় বরং প্রচলিত এবং খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন নিরাত্তার। বাইকারকে পরতে হয় নিরাপদ পোশাক ও উপকরন, বাইককে সাজাতে হয় নিরাপত্তামুলক কিটস দিয়ে। স্টান্ট করতে হয় নির্ধারিত জায়গায়। আমাদের দেশের কিছু বাইকার আছেন মেয়েদের দেখলে বাউলি মারা তাদের ফরজ কাজ। হাইওয়েতে অনেকেই স্টান্ট করেন।
চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যাবহার করা
বাম কাধে ফোন লাগিয়ে একদিকে কাত হয়ে কথা বলতে বলতে বাইক চালাচ্ছেন এমন দৃশ্য প্রায়শ: চোখে পড়ে। এটি যে কত মারাত্বক জিনিস যিনি করছেন হয়তো তিনি বুঝছেন না। প্রয়োজনে রাস্তার এক পাশে থেমে ৩০সেকেন্ড কথা বলে আবার বাইক চালানো যেতে পারে। ৩০সেকেন্ড বাচাতে গিয়ে জীবনকে বরবাদের ঝুকিতে ফেলা কখনই বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না।
ওভারেটেক
পাশ দিয়ে অন্য বাইকার ওভারটেক করে গেলে মনে হয় যেনো রক্তে আগুন ধরে গেলো। যেভাবেই হোক তাকে হারাতেই হবে। আবার অনেক বাইকার আছেন ওভারটেক করে সামনে গিয়ে আবার পেছনে চলে এসে এই বাইকারকেও প্ররোচিত করেন রেস খেলার জন্য।
রেস খেলা
শহরের ব্যস্ত রাস্তায় আচমকা পাশ দিয়ে বিকট শব্দে কয়েকটি মোটরসাইকেল চলে গেলো। যেমন তাদের গতি তেমনি তাদের শব্দ।এমন দৃশ্য অনেক সময়েই চোখে পড়ে। আরো দেখা যায় হাইওয়েতে। তীব্র গতিতে ছুটে চলছে কয়েকটি বাইক। অনেকের হেলমেট নাই, সেফটি গিয়ার নাই।
ট্রাফিক নিয়ম না মানা
সিগন্যালের লাল বাতি জ্বলে গেছে, টান দিয়ে বের হয়ে যাওয়া, বাইকের সঠিক কাগজপত্র সাথে না রাখা, ফুটপাতের উপর দিয়ে বাইক চালানো সহ হাজারো অনিয়মে বাইক চালানো অনেক বাইকারের স্বভাব। হেলমেট না পরা, লুকিং মিরর না লাগানো ইত্যাদিকে তারা স্মার্টনেস মনে করে। রেল ক্রসিং এ সিগন্যাল অমান্য করে একেবেকে বের হয়ে যাওয়া।
হর্ন বাজানো
বাইকের হর্ণ অন্যকে সতর্ক করার জন্যই, কিন্তু সতর্ক করার পরিবর্তে যদি যন্ত্রনার কারন হয়ে দাড়ায় তাহলে কার ভালো লাগে? কিন্তু অনেক বাইকারই এই কাজ গুলো যত্ন সহকারে আনন্দ নিয়ে করে। তীব্রশব্দে হর্ন বাজানো, একটানা হর্ন বাজানো, হর্ন বাজাতে বাজাতে তীব্র গতিতে বাইক চালিয়ে অনেকেই আনন্দ পায়।
শোঅফ করা
উপরের সব গুলোর কাজের বড় কাজ হলো শোঅফ করা। সবগুলো কাজ করাই হয় মুলদ এই শোঅফ বা অন্যকে দেখানোর জন্য, অন্যের চোখে পড়ার জন্য।
অপরাধমুলক কাজে বাইক ব্যবহার
ছিনতাই, সন্ত্রাস সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়, যার দায় এসে পড়ে সাধারন বাইকের উপরে। ফলাফল হিসেবে রাস্তায় ব্যাপক চেকিং এবং হয়রানির শিকার হতে হয় নিরীহ বাইকারদেরকে।
অনেকগুলো কাজের এগুলো কয়েকটি উদাহরন মাত্র যা হরহামেশাই আমাদের চোখে পড়ে। এই কাজ করতে গিয়ে একজন বাইকার হয়তো ক্ষনিকের আনন্দ পায় কিন্তু পুরো বাইক সমাজকে কলংকিত করে। সমাজের সাধারনের চোখে এই কারনেই অনেকে বাইক রাইডিংকে ভালো চোখে দেখে না। প্রয়োজন সচেতন হবার, সতর্ক হবার।
লেখক: সুব্রত বিশ্বাস