ভেসপা শব্দটি অনেক জনপ্রিয়। বাংলাদেশে স্কুটার বলতে এক সময় শুধু ভেসপাকেই বুঝা হতো। আর স্কুটার মানেই মেয়েদের বাহন এমন একটি ধারনা সবার মাঝে এখনও হয়ে আছে। অথচ দেশের বাইরে তো পরের কথা, দেশের ভেতরেই অধিকাংশ স্কুটারের চালক হলেন পুরুষ। নারী পুরুষের বিভেদ বাদ দিয়েও বাংলাদেশে দিনে দিনে স্কুটারের জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে। স্কুটারে চালকের পা রাখার জায়গাটি খোলা হবার কারনে নারীদের যেকোনো পোশাকে অর্থাৎ শাড়ী/প্যান্ট/সালোয়ার-কামিজ পরে অনায়াসেই চালানো যায়। আবার স্কুটার চালানো তুলনামুলক সহজ হওয়াতে বাংলাদেশে নারীদের মাঝে স্কুটারের জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। জনপ্রিয় প্রায় সকল ব্রান্ডেরই স্কুটার রয়েছে। কিছু সমস্যা দূর করা এবং কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করলে নারীদের মাঝে স্কুটার ব্যবহার আরো জনপ্রিয় হতে পারে।
ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা
নারীদের মাঝে বাইক ব্যবহারে সবচেয়ে বড় বাধা বাইক চালানো শেখা। খুব কম পরিবার থেকেই মেয়েদের বাইক চালানোতে উৎসাহ দেয়া হয়। আর শিখতে চাইলেও শেখার সুযোগ/জায়গা/পরিবেশ না থাকায় অনেক মেয়েরই স্কুটার ব্যবহারে আগ্রহ থাকলেও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসতে হয়। স্কুটার ব্র্রান্ডগুলো নিয়মিতভাবে নারীদের মাঝে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করলে নারীদের মাঝে স্কুটার ব্যবহারের প্রাথমিক বাধা দূর হয়। যদিও কিছু ব্র্যান্ড মাঝে মাঝে এমন ট্রেনিং এর আয়োজন করে থাকেন, তবে সেটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
সহজ কিস্তির ব্যবস্থা করা
কর্মজীবি নারী এবং কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রীদের মাঝে স্কুটার ব্যবহারের আগ্রহ বেশি দেখা যায়। এছাড়াও অনেক গৃহিনী রয়েছেন যারা নিজেদের প্রয়োজন এবং বাচ্চাকে স্কুল যাতায়াতের জন্য স্কুটার ব্যবহার করে থাকেন। এসকল নারীদের জন্য সহজ কিস্তিতে স্কুটার ক্রয়ের সুবিধা দিলে তাদের মাঝে স্কুটার ব্যবহারের আগ্রহ অনেক বেশি তৈরী হবে এটি সুনিশ্চিত।
হোম সার্ভিস চালু করা
বাইক থাকলে সার্ভিস সেন্টারে যেতে হবে এটি স্বাভাবিক। সার্ভিস সেন্টারে মেয়েদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা এবং হোম সার্ভিসের মাধ্যমে স্কুটার সার্ভিস/রিপেয়ারের ব্যবস্থা করলে স্কুটারের টেকনিক্যাল সমস্যাজনিত বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না।
চৌধুরানী দীপালি আহমেদ, বাইকার কাপল হিসাবে যিনি পরিচিত। প্রায় পনেরো বছর যাবত তিনি মটরবাইকিং এর সাথে জড়িত। মেয়েদের স্কুটি চালানো দেখেই মূলত বাইকের প্রতি আকর্ষণের শুরুটা হয়। তার এই শখ পূরণ হয় বিয়ের পর। বাইক চালানোর হাতে খড়ি হয় মোটরবাইক দিয়ে। স্কুটি চালানো শুরু করেন আরো অনেক পর থেকে। ইতিমধ্যে তিনি পালাক্রমে একটি মোটরবাইক চালিয়ে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ এর ৬৪ জেলা এবং ২০১৭ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ১৪টি জেলা ভ্রমণ করেছেন তার স্বামী আলমগীর আহমেদ চৌধুরীর সাথে। তার মতে নিত্যদিনের কাজের জন্য স্কুটি মেয়েদের জন্য অনেক উপযোগী, বেশি বড় ট্যুর, অফ রোড ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্কুটি ব্যবহার না করার পক্ষে মত দেন তিনি। তবে স্কুল , কলেজ, অফিস এর ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য স্কুটি একমাত্র উপযোগী বাহন মনে করেন তিনি। যদিও তিনি মূলত একজন মোটরবাইকার এবং মোটরবাইককে তিনি লং ট্যুর ও এক্সট্রিম রাইডে তিনি ব্যবহার করেন। তবে স্কুটিকেই তিনি মেয়েদের জন্য মানানসই, আত্মবিশ্বাসী এবং উপযোগী বাহন মনে করেন। তার মতে স্কুটি একটি মেয়েকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সহযোগিতা করে। যেসব মেয়েরা এক্সট্রিম মোটরবাইক রাইড করতে চান স্কুটি চালানো দিয়ে তারা শুরু করতে পারেন।
চৌধুরানী দীপালি আহমেদ এর মতে বাংলাদেশে স্কুটার জনপ্রিয় হতে যে সমস্যা গুলো রয়েছে তারমধ্যে - মেয়েদের জন্য ঘরের বাইরে কাজ করাই প্রথম সমস্যা, বিশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থা, অনভিজ্ঞ ড্রাইভারদের দিয়ে গাড়ি চালানো, অসম্ভব অনুপযোগী একটি বাহন রিকশাকে যেখানে সেখানে চলতে দেয়া, কিছু মোটরবাইকারদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো, পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অসহযোগিতা ও নারী সদস্যদের অনীহা ইত্যাদি অন্যতম বলে মনে করেন। তারমতে বাংলাদেশে মেয়েদের মাঝে স্কুটার জনপ্রিয় করতে হলে সর্বপ্রথম পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সহযোগিতা এবং নারী সদস্যদের উৎসাহ প্রদান করা উচিৎ, পুরুষ বাইকারদের উচিৎ নারী স্কুটার চালকদের অগ্রাধিকার দেয়া, স্কুটি চালক মেয়েদের উচিৎ বাহুল্য সাজপোশাক পরিত্যাগ করে নিরাপদ পোশাকে স্কুটি চালানো। অন্যান্য যে সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে সেই গুলি সমাধানে সরকারকেই মূলত পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য আমাদের করণীয় হলো সরকার কে সমস্যা গুলো সমাধান এ দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং সমাধান এ সহযোগিতা করা। সর্বোপরি এত সীমাবদ্ধতার মাঝেও মেয়েদের উচিৎ পরিবারের সদস্যদের রাজি করিয়ে তাদের সহযোগিতা নিয়ে স্কুটি ব্যবহারে এগিয়ে আসা।
সুদীর্ঘ সময়ধরে স্কুটার ব্যবহারকারী
আলিয়া বেগম বলেন – “বর্তমানে নারীরা অনেক এগিয়ে রয়েছে। নিজের বা কর্মের প্রয়োজনে নারীদের বের হতে হয়। বাস বা সিএনজি ছাড়া দূরের যাতায়াত সম্ভব হয়না। কিন্তু সেখানে নানান ভোগান্তীতে পড়তে হয়। এসকল ঝামেলা এড়াতেই এখন অনেক নারী যাতায়াতের জন্য স্কুটারকে বেছে নিয়েছেন। স্কুটার ব্যবহারে সহজ, ঝামেলাবিহীন। যেমন আমি নিজেই সম্প্রতি সাজেক ট্যুর দিয়ে এসেছি। নারীদের স্কুটার ব্যবহারে পরিবার এবং সমাজের প্রতিবন্ধকতা অন্যতম। অথচ নারীদের নিরাপদে পথ চলতেই স্কুটার অনেক সহায়ক ভূমিকা রাখে। এব্যাপারে সবার আগে পরিবার-পরিজনকে এগিয়ে আসতে হবে”।