বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের চাহিদা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে মোটরসাইকেল কোম্পানীগুলোর মাঝে এক প্রতিযোগিতাপূর্ণ মার্কেট সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রাহকদের রুচি, চাহিদা, ক্রয় ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে মোটরসাইকেল কোম্পানীগুলো তাদের মোটরসাইকেল প্রস্তুত করে যাচ্ছে। ২০১৮ সাল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে কমিউটার সেগমেন্টের বাইকগুলো বাংলাদেশে বেশি বিক্রি হয়েছে এবং অন্যান্য সেগমেন্টের তুলনায় কমিউটার সেগমেন্টের বাইকগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। ঠিক তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ২০১৮ সাল পাড়ি দিয়ে ২০১৯ সালে প্রবেশ করেছি এবং আমরা বিভিন্ন বাইকের ব্রান্ড ভ্যালু, পারফরমেন্স, দাম, মার্কেট অবস্থান, রিসেল ভ্যালু ও আমাদের (মোটরসাইকেল ভালী) মতামতের উপরে ভিত্তি করে ১০ টি ১০০ সিসি সেগমেন্টের বাইক নির্বাচন করেছি। চলুন এক নজর দেখে নেওয়া যাক ২০১৮ সালে কোন বাইকগুলো কেমন অবস্থানে ছিলো।
০১. বাজাজ ডিস্কোভার ১০০
রুচিশীল ডিজাইন, দারুন ইঞ্জিন পারফরমেন্স, মজবুত গঠন সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মার্কেটে খুব জনপ্রিয় একটি বাইক বাজাজ ডিস্কোভার ১০০ সিসি। বাংলাদেশের বাজারে বাজাজ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তাদের মোটরসাইকেলগুলো সরবরাহ করে আসছে এবং দেশ জুড়ে তাদের সার্ভিস সেন্টার ও ডিলার পয়েন্ট ছড়িয়ে রয়েছে। গ্রাহকদের সন্তুষ্টি, স্পেয়ার পার্টসের সহজলভ্যতা, গুনগতমান বিবেচনা করে ২০১৮ সালে এই বাইকটি সবার পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করেছে।
বি দ্রঃ বাজাজ ডিস্কোভার ১০০ সিসি বাইকটি ২০১৮ সালে বেশ সুনামের সাথে দাপিয়ে বেড়ালেও বর্তমান এই মডেলটি বাজারে নেই কিন্তু গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনা করে বাজাজ বাইকটিকে আরও দৃষ্টি নন্দন করার জন্য নিয়ে এসেছে বাজাজ ডিস্কোভার ১১০ সিসি। এখন থেকে ১০০ সিসি এর পরিবর্তে ১১০ সিসি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
০২.টিভিএস মেট্রো ১০০
টিভিএস এর প্রোডাক্ট নিয়ে গ্রাহকদের মনে কোন সন্দেহ নেই কারণ ক্ষুদ্র পার্টস থেকে শুরু করে ইঞ্জিন পর্যন্ত তারা নিজেরা প্রস্তুত করে থাকে। দুর্দান্ত মাইলেজ, টেকসই গঠন, ১০০ সিসির অন্যান্য বাইকের তুলনায় কম মুল্য এবং দেশজুড়ে সার্ভিস সেন্টার ও ডিলার পয়েন্ট বিস্তৃত থাকার ফলে ২০১৮ সালে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে টিভিএস মেট্রো ১০০।
০৩.হিরো স্প্লেন্ডর প্লাস
যাত্রাকালে হিরো এবং হোন্ডা সম্মিলিতভাবে বাজারে নিয়ে এসেছিলো হিরো হোন্ডা স্প্লেন্ডর প্লাস । শুধু স্প্লেন্ডর প্লাস নয় হোন্ডা এবং হিরো সম্মিলিতভাবে বহু বাইক বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে এসেছিলো এবং সেগুলো গ্রাহকগণ স্বাদরে গ্রহন করেছিলো। হোন্ডা থেকে যখন হিরো আলাদা হয়ে যায় তারপরেও তারা গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনা করে হিরোর তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশের ১০০ সিসি কমিউটার বাইকপ্রেমিদের জন্য হিরো স্প্লেন্ডর প্লাস বাজারে নিয়ে আসে এবং এখন অবধি বাইকটির চাহিদা বহুলাংশে পরিলক্ষিত হয়। সুন্দর ডিজাইন, মজবুত গঠন, অসাধারণ মাইলেজ, সন্তোষজনক ইঞ্জিন পারফরমেন্স ইত্যাদি সব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের বাজারে কমিউটার প্রেমিদের মন জয় করেছে হিরো স্প্লেন্ডর প্লাস। বিশেষ করে কর্পোরেট লেভেলের মানুষদের এই বাইকটি বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায় এবং সব মিলিয়ে ২০১৮ সালে এই বাইকটি তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।
০৪.টিভিএস মেট্রো প্লাস
টিভিএস মেট্রো প্লাস বাইকটিতে পূর্বের মেট্রো ১০০ সিসি বাইকের থেকে ডিজাইন, ইঞ্জিন এবং কিছু ফিচারস যোগ করা হয়েছে যা পূর্বের মডেলের থাকে অনেকটা ভিন্ন দেখতে মনে হয়। যেহেতু টিভিএস মেট্রো এর আপডেট ভার্সন তাই এর গঠন, মাইলেজ, ডিজাইন ইত্যাদি সব কিছু গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। টিভিএস কোম্পানী নিয়ে অন্তত বাংলাদেশের বাইকাদের মাঝে কোন দ্বিধাবোধ নেই । টিভিএস মেট্রো ১১০ সিসির বাইকটি সব দিক থেকে ২০১৮ সালের জরিপ আলোকে বাংলাদশের বাজারে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে ।
০৫. হোন্ডা লিভো
হোন্ডা নামটি বাইকারদের মাঝে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার দরকার নেই।বাংলাদেশের মোটরসাইকেল জগতে হোন্ডা একটি কালজয়ী ব্রান্ড এবং বর্তমানে তারা তাদের স্টাইলিশ কিছু বাইক নিয়ে লোকাল মার্কেটে অন্যান্য ব্রান্ডের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ঠিক তেমনি একটি ১১০ সিসির বাইক হচ্ছে হোন্ডা লিভো। এই বাইকটিকে দেখে অবশ্য অনেকেই ১৫০ সিসির বাইক ভেবে থাকেন । কারণ এর ডিজাইন, গঠন ও ফিচারস অন্যান্য সব কিছু মিলিয়ে, হোন্ডা একটি ১১০ সিসির প্যাকেজ বাইক বাংলাদেশের কমিউটার বাইকারদের হাতে তুলে দিচ্ছে। ২০১৮ সালে ব্রান্ড ভ্যালু, পারফরমেন্স, দাম, মার্কেট অবস্থান, রিসেল ভ্যালু এবং আমাদের(মোটরসইকেলভালী) মতামতের উপরে ভিত্তি করে হোন্ডা লিভো পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে।
০৬. বাজাজ প্লাটিনা
বাজাজ হচ্ছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড। বাংলাদেশের কমিউটার প্রেমিদের চাহিদা অভিরুচি ইত্যাদি বিবেচনা করে তারা বেশ কয়েকটি ১০০ সিসির বাইক বাজারে নিয়ে এসেছে এবং তাদের মধ্যে একটি উপরে বর্ণিত বাজাজ ডিস্কোভার ১০০ এবং আরেকটি হচ্ছে বাজাজ প্লাটিনা ১০০। খুব সাদামাটা ডিজাইন, ভালো ইঞ্জিন পারফরমেন্স, দুর্দান্ত মাইলেজ এবং মজবুত গঠন সব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের বাজারে বাজাজ প্লাটিনার বেশ সুনাম রয়েছে এবং ২০১৮ সাল পর্যালোচনায় বাইকটি ষষ্ট স্থান অর্জন করেছে।
০৭.হিরো এইচএফ ডিলাক্স
বাংলাদেশের সব কমিউটার বাইকারদের পছন্দ একই না এবং যারা একটি মার্জিত ডিজাইন, ভালো ইঞ্জিন পারফরমেন্স ও মাইলেজ বেশি চান তারা পছন্দ করে হিরো এইচএফ ডিলাক্স। যেহেতু হিরো বাংলাদেশের মার্কেটে অনেক বছর ধরে রয়েছে তাই তারা গ্রাহকদের চাহিদার উপর বিশেষ লক্ষ্য রেখে নিয়ে এসেছে হিরো এইচএফ ডিলাক্স যা ২০১৮ সালের পর্যালোচনায় সপ্তম স্থান অর্জন করেছে।
০৮. হিরো আই-স্মার্ট ১১০
i3S প্রযুক্তি সম্পন্ন ইঞ্জিন, মডার্ন গ্রাফিক্স, তেলসাশ্রয়ী প্রযুক্তি দিয়ে তৈরী হিরো স্প্লেন্ডর আইস্মার্ট ১১০সিসি বাইকটি। পুরাতন বিশ্বস্ততা সাথে মডার্ন প্রযুক্তির সংমিশ্রনের এই দুর্দান্ত বাইকটি ২০১৮ সাল জুড়ে ছিলো ক্রেতাদের ৮ম শীর্ষ পছন্দের তালিকায়।
০৯. রানার বুলেট
স্বদেশী মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক কোম্পানী হিসেবে রানার তাদের পথ চলা পূর্বের তুলনায় আরো বেগবান করার প্রচেষ্টায় সদা সচেষ্ট। তাদের অন্যতম জনপ্রিয় মডেল রানার বুলেট। ১০০সিসির এই বাইকটি আধুনিক ডিজাইন সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী ইনজিনযুক্ত। সকলদিক বিবেচনায় রানার বুলেট ছিলো ২০১৮ সালে নবম অবস্থানে।
১০.কিওয়ে আরকেএস ১০০
প্রসিদ্ধ ইতালীয় প্রতিষ্ঠান বেনেলির ডিজাইনে করা কিওয়ে আরকেএস ১০০ সিসি মোটরসাইকেলটি, প্রথম দেখাতেই যে কারোর চোখে লেগে যায়। আধুনিক সকল ফিচার দিয়ে সুজ্জিত বাইকটি সার্বিক বিবেচনায় বিগত বছরে ১০০/১১০সিসি বাইকগুলোর মধ্যে দশম স্থানে রয়েছে.
এগূলো ছাড়াও বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারে একই সেগমেন্টের আরও অনেক মোটরসাইকেল রয়েছে তবে এগুলো শীর্ষে মুলত বিক্রয়ের পরিমান, গ্রাহকের সন্তুষ্টির পরিমান, ব্রান্ড ভ্যালু, রিসেল ভ্যালু, সময় সাপেক্ষে পন্যের গুনগত মান একই সাথে মোটরসাইকেলভ্যালীর পর্যবেক্ষনের দিক দিয়ে এই মোটরসাইকেল গুলার অবস্থান সবার উপরে। পরবর্তীতে আমরা আরও চমকপ্রদ তথ্য উপাত্ত আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।