একজন মোটরসাইকেল প্রেমীর কাছে তার মোটরসাইকেলটি যেন এক অমূল্য রতন। মোটরসাইকেল নিয়ে কেউ ঘুরতে ভালোবাসে , কেউ স্টান্ট ভালোবাসে আবার কেউ একটি মোটরসাইকেল হলেও খুশি তার নিত্যদিনের চলাচলের জন্য। আজ আমরা টিম মোটরসাইকেল ভ্যালী আপনাদের সাথে আলোচনা করবো খুবই আকর্ষণীয় একটি বিষয় নিয়ে । বিশ্বে অনেক নামী দামী ব্রান্ডের বাইক আছে যেগুলো আমরা আমাদের দেশে দেখতে পাই না । কেমন হয় যদি সেই সব দামী বাইকের সাথে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই ? নিশ্চয় মন্দ না । আজ আমরা টিম মোটরসাইকেল ভ্যালী আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো বিশ্বের ১০ টি ব্যয়বহুল বাইকের সাথে। চলুন তাহলে একে একে আমরা বাইকগুলোর সাথে পরিচিত হই।
১০- ইকোসি ফাউন্ডারস এডিশন টিআই এক্সএক্স
ইকোসি স্কটল্যান্ডের স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান। ইকোসি কোম্পানীর এই বাইকটি বিশ্বের সেরা ব্যয় বহুল বাইকের তালিকার ১০ নম্বরে রয়েছে। বাইকটি পরিপুর্নভাবে কাস্টমাইজ করে তৈরি করতে সময় লেগেছে ৩ হাজার ঘন্টা । এই সুপার বাইকের ফিচারসে রয়েছে ইন্টার-কুলড ইঞ্জিন, , ২২৫ এইচপি ( হর্স পাওয়ার) এবং ২১০এফটি-এনএম টর্ক, টাইটেনিয়াম ফ্রন্ট এক্সেলের সাথে টিটিএক্স ফ্লু টেড গ্যাস ফর্ক। রেসিং লেভেলের পারফরমেন্সের জন্য এই বাইকের বিদ্যমান আছে কার্বন সিরামিক ব্রেক। এই বাইকটি তৈরি করতে যে সকল উপাদানের প্রয়োজন হয়েছে সেগুলো হল- কার্বন ফাইবার, টাইটেনিয়াম, এইরোস্পেস গ্রেড অ্যালুমিনিয়াম, ইনকনেল। এই বাইকটি বর্তমান বাজার দর প্রায় ৩ লক্ষ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে হয় আনুমানিক ২ কোটি ৪৪ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা।
০৯- লিজেন্ডারি ব্রিটিশ ভিন্টেজ ব্লাক
এই লিজেন্ডারি ব্রিটিশ ভিনটেজ ব্লাক ভিনসেন্ট-এইচডিআর নামেও পরিচিত। ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারিং এক উদাহরণ হল লিজেন্ডারি ব্রিটিশ ভিন্টেজ এবং বিশ্বের কোন বাইকই এর সমকক্ষ নয়। এই বাইক মাত্র ৩৩টা তৈরি করা হয়েছে এবং যিনি তৈরি করেছিলাম তার নাম হল রিচারড থাম্পসন। এটা খুব বেশি দ্রতগামীর বাইক না কিন্তু চাইলেই খুব ভালো এক্সেলেরেশন ফিডব্যাক পেয়ে আপনি উপযুক্ত একটি স্পীড লাভ করতে পারবেন। ১৯৪৮ সালে এই লিজেন্ডারি ব্রিটিশ ভিনটেজ ব্লাক মার্কেটে আসে এবং জাগুয়ার এক্সকে ১২০ স্পোর্টস গাড়ীর থেকে অনেক বেশি দ্রতগামী ছিলো। বাইকটির বর্তমান বাজার দর প্রায় ৪ লক্ষ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে হয় আনুমানিক ৩ কোটি ৪০ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা।
০৮- ডজ তোমাহাওয়াক ভি১০ সুপারবাইক
ডজ তোমাহাওয়াক ভি১০ সুপারবাইক ২০০৩ সালে নর্থ আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল অটো শো তে সুচনা হয় এবং এটি একটি নন স্ট্রিট লিগ্যাল ধারণার মোটরসাইকেল। এটা খুব স্বল্প পরিমাণে উৎপাদন ও বিপণন করা হয়েছিলো । প্রথম দর্শনে এটা একটি মোটরসাইকেলও মনে হবে না আবার গাড়ীরও মনে হবে না । এটা দেখে মনে হবে যে মোটরসাইকেল ও গাড়ির মাঝামাঝি পর্যায়ের কোন একটি বাহন। ডডজি তোমাহাওয়াক ভি১০ সুপারবাইক এর ইঞ্জিন প্রচুর শক্তি উৎপাদন করতে পারে । ইঞ্জিন পাওয়ার ৫০০ এইচপি ( হর্স পাওয়ার ) এবং টর্ক ৭১২ এনএম। সামনে এবং পেছনের দুইটি করে মোট ৪টি টায়ার রয়েছে এবং এই সুপার বাইকটা দেখতেও অনেক দানবীয়। এই দানবীয় বাইকটির বর্তমান বাজার দর প্রায় ৫ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে হয় আনুমানিক ৪ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।
০৭- হারলে ডেভিডসন কসমিক স্টারশিপ
২১ শে অক্টোবর ২০১০ সালে ক্যালিফোরনিয়ার ম্যারিনা ডেল রে তে হারলে ডেভিডসন এর “ দ্যা কসমিক স্টারশিপ” উন্মোচিত হয়। এটা দেখলে মনে হয় যেন এটা হারলে ডেভিডসনের আরেকটি বাইক ভি – রড এর চাকার উপর বডি স্থাপন করা। আর্টিস্টের অভিনব রঙ এর কৌশল , ইউনিক পেইন্টিং যাকে বলা হয় কসমিক এক্সটেনশনালিজম এর সাহায্যে কালার ও টেক্সচার এর কম্বিনেশনের মাধ্যেম মারকিংগুলো চিত্রিত হয়েছে। বিশ্বখ্যাত আর্টিস্ট জ্যাক আরমস্ট্রং এই বাইকের পেইন্টিং সম্পন্ন করেছেন। হারলে ডেভিডসন কসমিক স্টারশিপ বাইকের বর্তমান বাজার দর ১.৫ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে হয় আনুমানিক ১২ কোটি ৭১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা।
০৬ – হারলে ডেভিডসন বুখেরার ব্লু এডিশন
হিরা, গোল্ড প্লেটেড স্ক্রু, ট্যংকে লোহার সিন্দুক সম্বনিত এবং এক ধরনের কার্ল এফ ঘড়ি এর সমন্বয়ে গঠিত হারলে ডেভিডসন বুখেরার ব্লু এডিশন । এই হারলে ডেভিডন বুখেরার ব্লু হচ্ছে বুখেরার ব্লু এর স্পেশাল ফ্যামিলি মেম্বার। এটা হচ্ছে হারলে ডেভিডসনে সবচেয়ে ব্যয় বহুল একটি বাইক যার বর্তমান বাজার দর ১.৭৯ মিলিয়ন যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে হয় আনুমানিক ১৫ কোটি ১৭ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা।
০৫- ইয়ামাহা বিএমএস চপার
জাপানিজ মোটরসাইকেল ও মেরিন প্রডাক্ট প্রস্তুতকারী কোম্পানী ইয়ামাহার অভিনব সৃষ্টি হচ্ছে এই বিএমএস চপার। এটা বিলাসবহুল একটি বাইক । এই বাইকের সাথে আছে ৩৬০ মিমি বড় পেছনের টায়ার, অটোমেটিক ক্লাচ এবং স্মার্ট ইলেকট্রিক গ্রিপ। বিএমএস এ আরো আছে গোল্ড প্লেটেড উপাদান যার জন্য এটা প্রিমিয়াম কাস্টম বাইকের কাতারে রাখা হয়। রোড স্টার বিএমএস চপার বাইকের আরও আছে ১০২ কিউবিক ইঞ্চি ফ্রন্ট ফর্ক। এর শক্তিশালী ৪৮ ডিগ্রি ইঞ্জিন সেরা ক্রুজিং পারফরমেন্স নিশ্চিত করে। ইয়ামাহা বিএমএক্স বাইকের বর্তমান বাজারদর ৩ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে হয় আনুমানিক ২৫ কোটি ৪৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
০৪- হাইল্ডব্রান্ড এবং ওলফমুলার
হাইল্ডব্রান্ড এবং ওলফমুলার হচ্ছে বিশ্বের প্রথম প্রস্তুতকারক মোটরসাইকেল । এই ঐতিহাসিক বাইকটি পৃথিবীর প্রথম বাইক এবং এটার ইতিহাস ধরে রাখার জন্য অনেকেই বেশি দাম দিয়ে ক্রয় করে থাকেন। এই মোটরসাইকেলের আছে দুই স্টক ,চার সিলিন্ডারের ইঞ্জিন । এটি জার্মানিতে উৎপাদিত হয় এবং বিশ্বের সেরা ব্যয়বহুল বাইকের তালিকায় এখনও শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। হাইল্ডব্রান্ড এবং ওলফমুলার এর বর্তমান বাজার মুল্য ৩.৫ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে হয় আনুমানিক ২৯ কোটি ৬৭ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা।
০৩- ইকোসি ইএস১ স্পিরিট
একদল ইংলিশ ফর্মুলা ইঞ্জিনিয়াররা এবং আমেরিকান দম্পতি একত্রে মিলে স্পোর্টস বাইক ইএস১ নামের তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছিলো। সেই থেকে মুলত এই বাইকের ধারণার উৎপত্তি। ইকোসি ইএস১ হচ্ছে একটি শক্তিশালী ম্যাশিন যা ২৫০ কিমি প্রতি ঘন্টা স্পীড তুলতে সামর্থ্য রাখে। এই বাইকে রয়েছে এরগোনোমিক ফিটমেন্ট, এডভান্স কম্পোজিট ডিজাইন , পছন্দসই ইঞ্জিন পরিমিতি, ইলেকট্রিক কন্ট্রোল সিস্টেম এবং এই দুই চাকায় এফ১ পুনরায় উৎপাদন করা যেতে পারে। প্রস্তুতকারকেরা দ্বিমত পোষণ করে থাকেন এই ইকোসি স্পিরিট এর ইঞ্জিন অন্যান্য দ্রতগামী বাইকের মত শক্তিশালী নয়। এই বাইকের বর্তমান বাজার দর ৩.৬ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে হয় আনুমানিক ৩০ কোটি ৫২ লক্ষ ২১ হাজার টাকা।
০২- ১৯৪৯ ই৯০ এজিএস পরকুপিন
এজিএস ৫০০ সিসি পরকুপিন বাইক ছিলো ব্রিটিশ রেসিং বাইক যা ১৯৪৫ সালে প্রস্তুতকরা হয় এবং এর ইঞ্জিন ছিলো ই৯০এস মনোনীত সমতল আকৃতির। এসোসিয়েট মোটর সাইকেল ( এএমসি) কোম্পানীর মাধ্যমের এটি প্রস্তুত করা হয়েছিলো। এই মোটরসাইকেলটি খুবই বিরল এবং এর চমৎকার কিছু রেসিং এর ইতিহাস ছিলো। এই মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক কোম্পানীটি কম ইউনিক এবং বেশি টার্গেট ব্যাখ্যা করার ফলে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলো। বিশ্বব্যাপী এই মোটরসাইকেলটি মাত্র চার ইউনিক রয়েছে। ১৯৪৯ ই৯০ এজিএস পরকুপিন বাইকটিতে অনেক রিফাইন্ড এবং উদ্ভাবনী ছিলো কিন্তু প্রত্যাশা ও ব্যয় পূরণ করতে গিয়ে কোম্পানী এই বাইক বেশিদিন বাজারে চলমান রাখতে সক্ষম হয়নি। বর্তমানে এই বাইকের বাজার দর রয়েছে ৭ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে হয় আনুমানিক ৫৯ কোটি ৩৪ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা।
০১- নেইমান মার্কাস লিমিটেড এডিশন ফাইটার
এটি অবাক করার মত বিষয় ছিলো যে নেইমান মার্কাস পুরোপুরিভাবে মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক ছিলো না । এটি ছিলো বিলাসবহুল ডিপার্ট্মেন্ট স্টোরগুলির একটি আমেরিকান চেইন। যখন এই নেইমান মার্কাস নিলামের জন্য একটি বাইক উন্মোচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন বাইকের দাম আকাশ চুম্বী হয়ে গেছে। যদিও বাইকের দাম নিলামে ১, ১০, ০০ ডলার হয়েছিলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা বিক্রি হয়েছে ১১ মিলিয়ন ডলারে। এটা লিমিটেড এডিশনের বাইক এবং মাত্র ৪৫টি বাইক প্রস্তুত করা হয়েছিলো। এটা দেখতে অবার করার মত একটি বাইক যেটা সম্পূর্ণ বৈধ একটি বাইক ছিলো এবং ৩০০ কিমি প্রতি ঘন্টা বেগে ছুটতে সক্ষম ছিলো। " মেশিনের বিবর্তন" ট্যাগ লাইন দিয়ে বাইকটি বিপনন শুরু করেছিলো এবং এর আছে সুন্দর ক্লকওয়ার্ক ডিজাইন। ইঞ্জিনে রয়েছে ১২০ সিআই ৪৫ ডিগ্রি , এয়ার কুল্ড, ভি টুইন ইঞ্জিন। এই বাইকের সমস্ত বডি জুরে রয়েছে টাইটানিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, এবং কার্বন ফাইভার এর ব্যবহার। বর্তমানে এই বাইকটির বাজার দর ১১ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে হয় আনুমানিক ৯৩ কোটি ২৬ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা।
আমরা টিম মোটরসাইকেল ভ্যালী সর্বদা চেষ্টা করি আপনাদের জন্য অজানা কিছু তথ্য বা নতুন নতুন আপডেট তথ্য, খবরাখবর ইত্যাদি শেয়ার করার । উপরিউক্তে যে দামী বাইকগুলো দেওয়া আছে সেগুলো অনেকের কাছেই মনে হতে পারে যে অস্বাভাবিক দাম এবং ডলার থেকে টাকায় রূপান্তর করার পরে বাইকের দাম শুনে অনেকেই হয়তো আকাশ থেকে পরেছেন। এই সমস্ত বাইকের তথ্য আমরা বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে সংগ্রহ করে আমাদের দক্ষ টিম মেম্বার দ্বারা যাচাই করণ করে আপনাদের সাথে শেয়ার করা হয়েছে। যদি এই লেখার মধ্যে কোন ভুল বা অপ্রাসঙ্গিক কিছু খুঁজে পান তাহলে সেটা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের সর্বদা সঙ্গল কামনায় টিম মোটরসাইকেল ভ্যালী।