দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ৯০ এর দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে জাপানী মোটরসাইকেল এক চেটিয়া রাজত্ত্ব করে গিয়েছে। Honda HS100, Suzuki AX100, Yamaha RX100 বাইকগুলি ছিল তখন রাস্তার রাজা। এই বাইকগুলি ছিল ২ স্ট্রোকের। এর পাশাপাশি Honda S110, Honda CG125, Honda CD80 ছিলো যেনো আভিজাত্যের প্রতীক। বাইকগুলি যে শুধু আধুনিক ছিল তাই না, মানসম্মতও ছিল। দীর্ঘ দুই যুগেরও অধিক সময় পরেও বাইকগুলি স্ব-মহিমায় এখনও রাস্তা দাপিয়ে বেড়ায়। ৯০ এর দশকের পরে জাপান থেকে মোটরসাইকেল আনা বন্ধ করে দেয়া হয়, ইন্ডিয়া এবং চায়না থেকে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল আমদানি শুরু হয়। বলে রাখা ভালো এই আমদানি হয় বেসরকারি পর্যায়ে, যেখানে জাপানী বাইকগুলি আমদানি করা হত সরকারি মালিকানাধীন শিল্প মন্ত্রনালয় অধিভুক্ত এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড এর মাধ্যমে।
“বাসর রাতে বিড়াল মারা” এই কথার যে কত গভীর অর্থ আছে তা কখনও কখনও আমরা ভালোই বুঝতে পারি। বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজার দখল নেয়ার ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান বাইকগুলি “বাসর রাতে বিড়াল মেরে ছিলো”। এই সময় তিনটি ঘটনা ঘটলো যার ফলে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজার পুরোপুরি ইন্ডিয়ার দখলে চলে গেল। প্রথমত- প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় একদিকে যেমন ইন্ডিয়া থেকে বাইকের আমদানি খরচ কম ছিলো, পার্টসের সহজলভ্যতা ছিলো, দ্বিতীয়ত- জাপান থেকে মোটরসাইকেল আমদানী সম্পুর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিবেশ রক্ষায় ২০০৩ সালে তৎকালীন সরকার রাজধানীতে ২ স্ট্রোক ইঞ্জিনের গাড়ি নিষিদ্ধ করে। একই সাথে ২ স্ট্রোক ইঞ্জিন বিশিষ্ট মোটরসাইকেল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ফলে নিষিদ্ধ হয়ে যায় হোন্ডা এবং ইয়ামাহার ২স্ট্রোক বিশিষ্ট মোটরসাইকেল, এবং ৪স্ট্রোক মোটরসাইকেল আমদানীর চেষ্টাও করা হয় না। তৃতীয়ত- চাইনিজ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এ সময়ে বাংলাদশে মোটরসাইকেল রপ্তানীর ব্যাপারে আগ্রহ দেখালো না, কেননা সেসময়ে তাদের মুল লক্ষ্য ছিলো ল্যাটিন আমেরিকাতে বাজার তৈরী, এই সুযোগে কিছু মানুষ কম দামি ব্র্যান্ডহীন কিছু চাইনিজ বাইক নিয়ে এলেন যা ছিল মানের দিক থেকে অতি নিম্ন মানের। যদিও ডেইলিম, জিংফুর মতো কিছু ভালো ব্র্যান্ড এসেছিল কিন্তু পরে তা আর আনা হয়নি।
যে ভুল চাইনিজ বাইক কোম্পানি গুলি করেছিলো তার মাশুল এখনো দিতে হচ্ছে। নন ব্র্যান্ড চাইনিজ বাইকের দৌরাত্ব এখন অনেক কমে গেছে । নামিদামি চাইনিজ বাইকগুলি এখন বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু শুরুর দিকে যে নাম-গোত্রহীন চাইনিজ বাইকগুলি আমাদের মনে গভীরে যে খারাপ ধারনার বীজ বপন করেছিল তা আজ বিশাল মহীরূহে পরিনত হয়েছে। এই খারাপ ধারনার শেকড় সহ উৎপাটন করা সময় সাপেক্ষ , দুরূহ । কোন সন্দেহ নাই টেকনোলজির দিক থেকে চায়না অনেক এগিয়ে ইন্ডিয়া থেকে। অনেক ইন্ডিয়ান বাইক কোম্পানিই এখন চায়না থেকে তাদের বাইকের অনেক যন্ত্রাংশ বানিয়ে নেন, চাইনিজ ব্র্যান্ড এখন উইরোপ আমিরিকার বাজারে দৌরাত্ব দেখাচ্ছে। বিশ্বে জনপ্রিয় ব্রান্ডের সাথে এখন তাদের প্রতিযোগিতা হয়। কিন্তু ঐ যে বাসর রাতে আমাদের দেশে বিড়াল মারতে পারেনি; তাই আমরা আজও বলি “চায়না বেশিদিন যায় না” বা “চায়না মোটরসাইকেলের রিসেল ভ্যালু নাই”।
বিষয়টি কি আসলেই তাই ? টেকনোলোজির দিক থেকে চীন এখন পৃথিবীর অন্যতম শক্তিধর দেশ। স্পেস পোগ্রামে আমিরিকা এবং রাশিয়ার পরেই এখন চীনের অবস্থান, পৃথিবীর দ্রুতগতির মেগলেভ ট্রেন (maglev train) চীনেই প্রথম চালু হয়। সাংহাই শহর থেকে পুডং এয়ার পোর্ট পর্যন্ত যে মেগলেভ ট্রেন চলে তা বর্তমান বিশ্বের দ্রুততম। বিশ্বের সবচেয়ে বড় তিনটি বাঁধ চীনেরই দখলে। এতো কিছু যদি করতে পারে তবে মোটরসাইকেলে কেনো নয়? বর্তমানে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারী দেশ চীন। প্রতিবছর ৩০মিলিয়নেরও বেশি মোটরসাইকেল প্রস্তুত করা হয় চায়নাতে, যেখানে পৃথিবীর অন্যান্য সকল দেশ মিলে তৈরী করে ২০মিলিয়নের মতো।
এ বিষয়ে সবাই একমত হবেন যে গত কয়েক বছরে চীনের মাটরসাইকেলের মান দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ কথাও সত্য তারা মোটরসাইকেল টেকনোলোজির শিখরে এখনো উঠতে পারেনি কিন্তু ভবিষত্যে পারবে না এ কথা বলার সাহস কিন্তু কেউ পায় না। পৃথিবীর যে ব্র্যান্ডেরই যত দামি বাইকই আপনি চালান না কেন এর কোন না কোন পার্টস কিন্তু চীনেই তৈরি ।
একথাও অস্বীকার করার উপাই নাই যে, এক দশক আগেও চীন মানের চেয়ে দামে সস্তা বাইক তৈরিতেই বেশী আগ্রহী ছিল। এটা আসলে তাদের ব্যবসায়িক কৌশল, ‘সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হওয়া’। তারা প্রথমে সস্তা পন্য মানুষের হাতে তুলে দিয়ে তাতে অভ্যস্ত করে নেয় এবং এরই ফাঁকে সেই অঞ্চল বা দেশে তাদের নেটয়ার্ক তৈরি করে নেয় এবং খুব দ্রুত কিছু মুনাফাও তাদের ঝুলিতে ভরে নেয়। যখন তারা আর্থিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে চলে যায় তখন মনোযোগ দেয় কোয়ালিটিতে। এই কাজটিই তারা করেছিল মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে। তারা প্রথমে নিম্ন মানের মোবাইল ফোন সেট তৈরি শুরু করলেও এখন বিশ্বের প্রথম সারির মোবাইল কোম্পানি ও প্রযুক্তি তাদের দখলে।
একই কাজ তারা মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রেও করেছে । তারা ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, পুর্ব ইউরোপ এবং দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলিতে সস্তা মানের মোটরসাইকেল দিয়ে বাজার দখল করে নিয়েছিল বা বলতে গেলে নিম্ন আয়ের মানুষদেরকে বাইকের প্রতি অভ্যস্ত করে নিয়েছিলো । এখন গত বছর দশেক হলো তাদের বাজারগুলিতে ইন্ডিয়ান বাইকের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকায়।
ChinaMotor Magazine এর ল্যাটিন আমেরিকার করেস্পন্ড Marco Tasca বলেন ল্যাটিন আমেরিকায় চীনের যে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক ছিল তার সুবিধা নিতে চাইছে ইন্ডিয়ান বাইক কোম্পানিগুলি । কারণ ল্যাটিন আমেরিকার কৃষকদের টার্গেট করে চাইনিজ কম্পানিগুলি সুলভ মুল্যে তাদের হাতে বাইক তুলে দিয়েছিল। এই কৃষক শ্রেণী এবং নিম্ন আয়ের মানুষের হাতে যখন কৃষি বিপ্লবের ফলে বাড়তি কিছু অর্থ আসতে শুরু করলো তখন তারা কোয়ালিটির দিকে মন দিলেন; বিশেষ করে ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ড। চাইনিজ মনোপলিতে হস্তক্ষেপ করে ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ড। ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ড একদিকে যেমন দামে চাইনিজ বাইকের থেকে বেশী, কোয়ালিটিতেও কিছুটা উন্নত। বিশেষ করে জাপানী বাইকের তুলনায় উন্নত না হলেও চাইনিজ ব্র্যান্ড থেকে উন্নত। মূলত এখান থেকেই শুরু চাইনিজ ব্র্যান্ডের মান উন্নয়েনের যাত্রা। এখনো চীনে সুলভ মুল্যে বাইক তৈরি হয় কিন্তু এরই মধ্যে বেশ কিছু চাইনিজ ব্র্যান্ড তাদের কোয়ালিটি দিয়ে বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করেছে। এখন তারা জাপান সহ ইউরোপ, আমেরিকার অনেক উন্নত দেশেও তাদের মান সম্মত বাইক রপ্তানি করে এবং বিশ্বমানের বাইক ব্র্যান্ডের সাথে প্রতিযোগীতা করছে। মোটরসাইকেল জগতে তারা যে সুচ হয়ে ঢুকে ছিল এখন তা ফাল এ পরিণত হয়েছে।
চায়নার অনেকগুলো নিজস্ব ব্রান্ড রয়েছে যেগুলো চায়না তো বটেই পৃথিবীর অনেক দেশেই সমাদৃত। চলুন এক ঝলক দেখে নেই চাইনিজ কয়েকটি নামি ব্র্যান্ডের বংশ পরিচয়।
Loncin
Loncin চীনের অন্যতম বৃহৎ মোটরসাইকেল নির্মানকারি প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৩ সালে চংকিং শহরে প্রতিষ্ঠিত চাইনিজ এই ব্র্যান্ড নির্ভর্যগ্য ও জ্বালানী সাশ্রয়ী ইঞ্জিনের জন্য যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। তারা মূলত মোটরসাইকেল, স্কুটার এবং মোটরসাইকেল ইঞ্জিন তৈরি করে। নিজের অভ্যান্তরি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি উৎপাদিত প্রায় অর্ধেক মোটরসাইকেল ইউরোপ, আমেরিকার অনেক উন্নত দেশে তাদের বাইক রফতানি করে। Loncin তাদের রিসার্চ ও ডেভোলেপমেন্ট খাতে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিযোগ করেছে। রিসার্চ ও ডেভেলেপমেন্ট খাতে তাদের বিনিযোগ দেখে বোঝা যায় তারা বিশ্বের নামি দামি ব্র্যান্ডের সাথে প্রতিযোগিতায় প্রস্তুত। এর পাশাপাশি তারা বাইক নির্মানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি যেমন CNC lathes and machining ব্যবহার করে। Loncin ISO 9002 কোয়ালিটি এস্যুরেন্সের পাশাপাশি তাদের অধিকাংশ বাইক মডেলের জন্যই ইউরপিয়ান ইউনিয়নের সার্টিফিকেট প্রাপ্ত। প্রতি বছর তারা প্রায় এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ ইঞ্জিন তৈরি করে পাশাপাশি BMW এর ব্যান্ডের ইঞ্জিন এর OME (Original Equipment Manufacturer) সাপ্লায়ার। Loncin ই প্রথম চাইনিজ কোম্পানি যারা MotoGP তে নিজেস্ব বাইক এবং টিম নিয়ে প্রতিযোগিতা করে।
Lifan
চীনের চংকিং শহরের আর একটা মোটরসাইকেল ব্যান্ড হলো Lifan । মোটরসাইকেল রিপেয়ার শপ দিয়ে ১৯৯২ সালে যাত্রা । ভাগ্য, পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় দিয়ে মাত্র অল্প কিছু দিনের মধ্যেই মোটরসাইকেল জগতে তাদের নাম করে নিয়েছে। তারাই প্রথম চাইনিজ ব্র্যান্ড যারা জাপানে বাইক রপ্তানি করে, ২০০১ সালে প্রথম জাপানে তাদের বাইক যায়। ২০০৩ এ তারা বাস এবং ২০০৫ সাল থেকে সেডান কার তৈরি শুরু করে। চীনে বর্তমানে তারা তৃতীয় বৃহত্তম বাইক নির্মাতা। বছরে তাদের গড় উৎপাদন এক কোটি চল্লিশ লাখ ইউনিট। ২০১১ সালে তারা MV Augusta এর সাথে পার্টনারশীপ গড়ে তুলে এর ফলে তারা কোয়ালিটি কন্ট্রোলের পাশাপাশি আরও শক্তিশালি ইঞ্জিন তৈরি শুরু করে।
Zongshen
Harley Davidson এবং Piaggio এর সাথে পার্টনারশীপ আছে Zongshen এর। তাই Zongshen এ তাদের ইঞ্জিন বা ডিজাইনে ব্যাপক প্রভাব থাকবে এতাই স্বাভাবিক। ১৯৯২ সাথে মোটরসাইকেল রিপেয়ার শপ দিয়ে শুরু কিন্তু মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে Zongshen গ্রুপ বর্তমানে বছরে এক কোটি বাইক নির্মান করে। বিশ্বের প্রায় ৭০ টি দেশে তাদের বাইক রপ্তানি হয়।
QianJiang
QianJiang যাত্রা শুরু করে ১৯৮৫ সালে। ২০০৫ সালে Benelli কোম্পানি কিনে নিয়ে নতুন নামকরণ হয় Qianjiang-Benelli Motorcycle Group (QJB)। বর্তমানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। হেড অফিস Zhejiang প্রদেশের Wenling এ। Benelli অনেক আগে থেকেই তাদের ভালোমানের বাইক ইঞ্জিনের কারণে বিখ্যাত ছিল। আর QianJiang এর লজিস্টিক সাপোর্ট আর মাস প্রডাকশান এবং ডিস্ট্রিবিউশনের অবিজ্ঞতা কাজে বর্তমানে বিশ্ব বাজারে বেশ শক্ত অবস্থানে আছে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে তারা আমেরিকার মার্কেটে বাইক রপ্তানি শুরু করে এবং উইরোপ আমেরিকার অনেক দেশেই তাদের ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা আছে। বিশ্বব্যাপি এই কোম্পানির একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হলো Keeway। Keeway ইউরোপে ও আমেরিকার বাজারে অত্যান্ত জনপ্রিয় ব্র্যান্ড এবং ৮০ টিরও বেশী দেশে এই ব্র্যান্ড রপ্তানি হয় এর মধ্যে বাংলাদেশও আছে।
Dayun
হেভী ট্রাক, লাইট ট্রাক, ডাম্প ট্রাক তৈরীতে চীনের অন্যতম বিখ্যাত একটি প্রতিষ্ঠান ডাইয়ুন এর পাশাপাশি তারা মোটরসাইকেল এবং মোটরসাইকেল ইঙ্গিন তৈরীর জন্যও একটি নির্ভর্যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। তাদের ৪০ টি মডেলের ২০০ টির অধিক বাইক রয়েছে। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকা এবং আফ্রিকায় তাদের বাইকের বিশাল বাজার রয়েছে এবং সাফল্যের সাথে গ্রাহক সন্তুষ্টি ধরে রেখেছে। ইইউ মার্কেটের উপযোগী করে তাদের প্রতি বাইকেই E-mark label উত্তীর্ন।এছাড়া্ও বিশ্বের অনেক মোটরসাইকেল কোম্পানিই Dayun এর ইঞ্জিন তাদের বাইকে ব্যবহার করে।
Jialing
চীনের সবচেয়ে পুরাতন মোটরসাইকেল কোম্পানি। শুরুতে তারা সেনাবাহিনীতে অস্ত্র সরবরাহের কাজ করতো। কোম্পানি ১৮৭৫ সালে স্থাপিত হলেও বাইক নির্মান শুরু করে প্রায় ১০০ বছর পরে ১৯৭৯ সালে । ১৯৮১ সালে হোন্ডার সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজ শুরু করে । ১৯৯০ সাল থেকে Jialing দেশের বাইরে বাইক রপ্তানি শুরু করে। বর্তমানে ৯০ এর অধিক দেশে তাদের বাইক রপ্তানি হয়, কর্মি সংখ্যা ১০,০০০ হাজার এবং সম্পদ ৫০ বিলিয়ন আরএমবি।
CFMoto
চীনের অন্যতম সেরা মোটরসাইকেল ব্যান্ড CFMoto । তাদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে বিশ্বব্যাপি তাদের পরিচিতি আছে। তাদের রিসার্চ এবং ডেভল্পমেন্ট এ ৫ দেশের ২০০ ও অধিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ সদস্য আছে। বাইক ও ইঞ্জিনের ডিজাইন তারা শুধু চীনেই না সারা বিশ্বেই সমাদৃত হয়েছে। অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট টিমের সহায়তায় তারা এখন বিশ্বের অন্যতম পাওয়ার স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে।
Jianshe
চীনের অন্যতম পুরাতন মোটরসাইকেল কোম্পানি। কোম্পানি টি চীনের চংকিং এ স্থাপিত হয় ১৮৮৯ সালে। JIANSHE মোটরসাইকেল প্রস্তুত, বিপণন, আফটার সেল সার্ভিস ও যন্ত্রাংশ তৈরিতে চীনের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। ১২০ বছরের অধিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই কোম্পানিতে সারা বিশ্বে প্রায় ৫০০০ কর্মি কাজ করে। JIANSHE ১৯৮০ সাল থেকে Yamaha এর সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজ করছে এবং চীনে ইয়ামাহার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। বছরে কোম্পানিটি উৎপাদন করে এক কোটি ৪০ লাখ মোটরসাইকেল এবং চীনের অভ্যান্তরিন চাহিদা পুরন করে ছয় মহাদেশের প্রায় ৮৭ টি দেশে তাদের উৎপাদী মোটরসাইকেল রপ্তানি করে।
Haojue
জাপানী ব্যান্ড সুজুকির সাথে Haojue জয়েন্ট ভেঞ্চার আছে। প্রযুক্তি ও কোয়ালিটিতে তাদের বেশ নাম রয়েছে। তারা নিজেস্ব Haojue এওং সুজুকি মিলিয়ে বছরে ৩০ লাখের উপরে বাইক নির্মান করে। জাপান সহ বিশ্বের ৮০ টি দেশে তাদের বাইক রপ্তানি হয়।
ZNEN
ZNEN বান্ড Zhongneng Group of Industry এর একটা পন্য। এরা স্কুটার, ইলেকট্রিক বাইক, গ্যাসোলিন বাইকের পাশাপাশি চার চাকার গাড়িও তৈরি করে। কোম্পানি ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে ১৯৯৮ থেকে। ZNEN বাইক নির্মানের ক্ষেত্রে কম্ফোর্ট, হ্যান্ডেলিং, কন্ট্রোল এই তিনটি বিষয়ের উপরে অধিক গুরুত্ব দেয়। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই সারা বিশ্বে তারা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। আমেরিকার কিছু সিনিয়র মোটরসাইকেল কোম্পানির সাথে তাদের লিয়াজো থাকার কারণে তারা আমেরিকান ইপিএ সার্টিফিকেট এর পাশাপাশি DOT certification পায় ফলে আমেরিকাতে তারা বিশাল একটা বাজার তৈরিতে সক্ষম হয়। Znen এর Znen C Artemis স্কুটারটি বিশ্বের অন্যতম জপ্রিয় একটি স্কুটার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে এই স্কুটার টি প্রচলিত এমন কি স্কুটারের জন্মস্থান হিসাবে পরিচিত ইটালিতেও স্কুটারটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পৃথিবীর ১৩৮ টিরও অধিক দেশে বর্তমানে Znen তাদের বাইক রপ্তানি করে।
পরিশেষে
ব্যপকভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথের কারনে সমস্ত পৃথিবীর মনযোগ এখন চায়নাতে। কম খরচে মানসম্মত পন্যের জোগান দিতে পারে বলেই এপল থেকে শুরু করে পৃথিবীর বড় বড় ব্র্যান্ড তাদের পন্য চায়না থেকেই তৈরী করিয়ে নেয়। পাশাপাশি চায়নার জনপ্রিয় ব্রান্ডগুলো পৃথিবীর শতাধিক দেশে প্রচলিত এবং সমাদৃত। সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারেও একে একে চাইনিজ ব্রান্ডগুলো প্রবেশ করছে। পন্যের মান এবং আমদানী ও বিপননকারক কর্তৃক আফটার সেলস সার্ভিস ভালো হলে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় খুব সহজেই প্রবেশ করবে চাইনিজ ব্রান্ডের মোটরসাইকেল।