অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর মাধ্যমে বেশ কিছুদিন ধরেই যানা যাচ্ছে, উচ্চ সিসি বাইক অনুমোদনের পথে বাংলাদেশ। বর্তমানে স্পষ্টতইশোনা যাচ্ছে সিসি সীমা হবে ৩৫০ সিসি, এই বিষয়ে বাংলাদেশের বাইক কমিউনিটিতে ঝড় ইতিমধ্যেই উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য জায়গাগুলিতে মানুষেরা ইতিমধ্যে এই বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। এ নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, আশা-হতাশা সবই চলছে। অনেকে আশা করছেন, এবার হাই সিসি বাইক বাংলাদেশের রাস্তাঘাটকে জাগ্রত করবে। আবার অনেকে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তেমন আশাবাদী নন।
তবে, এই বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে আমাদের কাছে ফলাফল থাকবে, ততক্ষণ আসুন আমরা সেই বাইকগুলি নিয়ে আলোচনা করি যা সিসি লিমিট আরও বেশি হলে আমাদের লোকাল মার্কেটে আসতে পারে। এই লেখায় আমরা জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের জনপ্রিয় কয়েকটি বাইক সম্পর্কে আলোচনা করব, সিসি সীমা বাড়লে বাজারে আসার সর্বাধিক সম্ভাবনা রয়েছে এই বাইকগুলোর।
রানার:
সিসি সীমা বাড়িয়ে দিলে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলিই কেবল উপকারী হবে তা কিন্তু নয়। কারণ আমরা সর্বদা আমাদের দেশীয় বাইক প্রস্তুতকারক রানারকে পিছনে ফেলে রেখেছি। আমরা তাদের কাছে আমাদের জন্য কিছু পাবে তা আশাই করি না হয়ত। তবে, রানার ইতিমধ্যে উচ্চ সিসি বাইক তৈরী করে এবং সেগুলি নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশে বিক্রি হয়। সিসি সীমাবদ্ধতার বাড়ার সাথে রানার তাদের উচ্চ সিসি লাইনআপ থেকে দুটি বাইক আমাদের দিতে সক্ষম হবে, যথাযথভাবে, রানার ডোমিনেটর এবং রানার HAWK 200
বিএমডাব্লু:
একটি সুসংবাদ যে সিসি সীমা বেড়ে গেলেআমরা বিএমডাব্লু বাইকগুলিকে আর দেখব না, কপাল ভাল থাকলে আমাদের হাত থাকতে পারে। যদিও আমাদের সুপার বাইকগুলি হাতে পাব না,তবে আমাদের রাস্তায় ঝড় তুলতে বিএমডাব্লু G 310R এবং বিএমডাব্লু G 310 GS থাকবে।
জাওয়া:
জাওয়া ইন্ডিয়ার আরেকটি আইকনিক মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক। তাদের বাইক লাইনআপ বেশ ভাল এবং সিসি যদি বৃদ্ধি পায় তবে আমাদের দেওয়ার জন্য তাদের কাছে তিনটি পণ্য রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, জাওয়া পেরাক, জাওয়া 42 এবং জাওয়া। এগুলো সবকয়টি ক্রুজার ক্যাটাগরি এবং বাংলাদেশের বাজার আসার জন্য প্রস্তুত।
রয়েল এনফিল্ড:
আমাদের প্রতিবেশী দেশে রয়েল এনফিল্ড সর্বাধিক জনপ্রিয় বাইক, যার কারণে আমরাও জানি যে এই বাইকগুলি কতটা সক্ষম এবং স্টাইলিশ। সিসির সীমাবদ্ধতার কারণে এখনও আমরা আমাদের দেশের রাস্তায় বাইকগুলি দেখিনি। রয়েল এনফিল্ড ৩৫০ সিসি থেকে তাদের উৎপাদন শুরু করার কারনে আমাদের দেশের বাজারে বিক্রি করা সম্ভব ছিল না। সুতরাং, সীমা বৃদ্ধি পেলে এটি পাওয়া যাবে আসা করা যায়। আমাদের তথ্য অনুসারে সিসির সীমা ৩৫০ সিসি পর্যন্ত বাড়তে পারে, সুতরাং আমরা যদি এই সেগমেন্টের দিকে দেখি তাহলে রয়েল এনফিল্ডের তিনটি বাইক রয়েছে, রয়েলএনফিল্ড ক্লাসিক ৩৫০, রয়েলএনফিল্ড বুলেট ৩৫০, এবং রয়েল এনফিল্ড মেটিয়র ৩৫০। ইফাদ অটোস এনফিল্ডের আমদানি অংশীদারিত্ব নেবার পথে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা শীঘ্রই এই তিনটি বাইক রাস্তায় দেখতে পাব।
বেনেলি:
আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি বেনেলি বাইকারদের জন্য স্টাইলিশ এবং আরামদায়ক বাইক সরবরাহ করার ক্ষমতা রাখে। সিসি সীমা বাড়ানোর সাথে সাথে একদল বাইক আবার বেনেলির পক্ষ থেকে আসতে পারে। যথা, বেনেলি টিএনটি 200 এবং 300, বেনেলি 302 আর, বেনেলি 302 এস এবং ক্রুজার বেনেলি মোটোবি 200 ইভিও।
ইয়ামাহা:
ইয়ামাহা এফজেড সিরিজ নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। তাদের ১৫০ সিসি এফজেড সিরিজটি প্রায় এক দশক ধরে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে। সিসি লিমিট বাড়ানো হলে ইয়ামাহার ৪ টি ট্রাম্প কার্ড নিয়ে বসে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে শুরুতেই তাদের কাছে ইয়ামাহা এফজেড-25 এবং ফেজার-25 রয়েছে। এগুলোর পাশাপাশি রয়েছে ইয়ামাহা আর 3 এবং এমটি 03। তাই সিসি সীমা বৃদ্ধি পেলে আমাদের স্থানীয় বাজারে দেখা মিলতে পারে এই বাইকগুলোর।
বাজাজ:
যদি আমরা পারফর্মেন্স এবং দামের কথা বলি তবে বাজাজ সর্বদা আমাদের সাথে থাকে। তাদের উচ্চ সিসি বাইকের দিকে তাকালেও আমরা একগুচ্ছ পণ্য দেখতে পাব। জনপ্রিয় পালসার সিরিজটি দিয়ে শুরু করলে তাদের রয়েছে বাজাজ পালসার 250, 220 এফ, 180 এফ। এছাড়াও, বাজাজ পালসার এনএস 200 এবং পালসার আরএস 200 ও রয়েছে তালিকায়। এই ৫ টি পালসার সিরিজের বাইকের সাথে ডোমিনার 250 এবং অ্যাভেঞ্জার ক্রুজ 220যুক্ত হতে পারে সিসি সীমা বৃদ্ধি পেলে।
হোন্ডা:
জনপ্রিয় জাপানি বাইক প্রস্তুতকারক হিসাবে হোন্ডা তাদের গ্রাহকদের কখনই হতাশ করে না। সিসি সীমা বাড়লে হোন্ডা তাদের গ্রাহকদের জন্য কয়েকটি বাইক আনতে সক্ষম হবে। সেগুলো হচ্ছে হোন্ডা হরনেট 2. 0 180 সিসি, হোন্ডা রেবেল 300, হোন্ডা Hness CB 350 , হোন্ডা সিবিআর 300 আর, এবং হোন্ডা সিবি 300 আর।
সুজুকি:
বাংলাদেশে সুজুকি জিক্সারের নিজস্ব ফ্যান বেস রয়েছে, যদি সিসি সীমা বাড়ানো হয় তাহলে জিক্সার ১৫০ সিরিজের বড় ভাইদের চোখে পড়বে আমাদের। সেই তালিকায় আমরা দেখতে পাব সুজুকি জিএসএক্স আর ২৫০ এবং সেই সাথে, জিক্সার এসএফ ২৫০ এবং জিক্সার ২৫০।
কেটিএম:
সিসি সীমাবদ্ধতা বাড়লে কেটিএম আরসি ২০০ এবং কেটিএম ডিউক ২০০, ডিউক ২৫০তাদের আগের সেগমেন্টের ডিউক 125 এবং আরসি 125 এর অভিজাত্য অব্যাহত রাখবে বলে আসা করা যায়।
কাওয়াসাকি:
কাওয়াসাকি নিনজা সিরিজটি সর্বদাই দ্রুততম চলমান মোটরসাইকেলগুলোর মধে একটি হিসাবে পরিচিত। সিসির সীমা যদি বাড়ানো হয় তবে আমরা নিনজা সিরিজের সুপারবাইকগুলি পাব না ঠিকই, তবে কমপক্ষে আমাদের কাছে কাওয়াসাকি নিনজা 250, কাওয়াসাকি নিনজা 300 এবং কাওয়াসাকি নিনজা জেডএক্স-25 আরথাকার সম্ভাবনা আছে।
টিভিএস:
টিভিএস অ্যাপাচি সিরিজ তরুণদের জন্য সর্বাধিক জনপ্রিয়, তাদের লাইনআপ অনুযায়ী বাজারে আসার সম্ভাব্য বাইকের তালিকায় তিনটি বাইক রয়েছে, যথা, আরটিআর 4 ভি 200, অ্যাপাচি আরআর 300 এবং অ্যাপাচি আরটিআর 180।
হিরো:
হিরো এক্সট্রিম 200 এস এবং এক্সপালস 200 এই দুটি সিসি বাড়ার পরে আমাদের লোকাল বাজারে হিরোর পক্ষ থেকে পৌঁছে যেতে পারে।
লিফান:
কেপিআর সিরিজ আসার পরে, কোন ভাবেই অস্বীকার করা যায় না যে এই বাইকগুলি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। সিসির সীমা বাড়লে কেপিআর 200 স্থানীয় বাজারে দেখা যাবে। এছাড়াও, কেপিটি 200 ও সেই তালিকায় রয়েছে।
জিপিএক্স:
কয়েক বছর আগে জিপিএক্স বাইকগুলি আমাদের দেশের রাস্তাগুলিতে দেখা গিয়েছিল, তবে কিছু কারণে সেগুলি আর পাওয়া যায় নি। সিসি লিমিট বাড়ানোহলে, জিপিএক্স ডিমোন জিআর 200 আর এর হাত ধরে তাদের যাত্রা আবার শুরু হতে পারে।
তাহলে একনজরে লিস্টটি দেখলে আমরা পাচ্ছি,
Runner Dominator
Runner HAWK 200
Royal Enfield Classic 350
Royal Enfield Bullet 350
Royal Enfield Meteor 350
BMW G 310R
BMW G 310 GS
Jawa Perak
Jawa 42
Jawa
Benelli TNT 200 & 300
Benelli 302R
Benelli 302S
Benelli Motobi 200 EVO
Yamaha FZ-25
Yamaha Fazer 25
Yamaha R3
Yamaha MT03
Bajaj Pulsar 250, 220F, 180F
Bajaj Pulsar NS 200 and Pulsar RS 200
Bajaj Dominar 250
Bajaj Avenger Cruise 220
Hornet 2.0 180cc
Honda CB 300R
Honda Rebel 300
Honda Hness CB 350
Honda CBR300 R
Suzuki GSX 250
Gixxer SF 250 and Gixxer 250
KTM RC 200
KTM Duke 200 and Duke 250
Kawasaki Ninja 250
Kawasaki Ninja 300
Kawasaki Ninja ZX-25R
TVS Apache RTR 4V 200
TVS Apache RR 300
TVS Apache RTR 180
Hero Xtreme 200S
Hero XPulse 200
Lifan KPR 200
Lifan KPT 200
GPX Demon GR 200R
সিসি সীমাবদ্ধতা বাড়ানো সম্পর্কে যদিও আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত নই, তবুও, যদি আলোচনাসত্য হয়ে উঠে, তাহলে উল্লেখিত বিভিন্ন বাইকগুলই হবে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের শীর্ষ সম্ভাব্য বাইক, যা বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারকে প্রসারিত করতে প্রস্তুত। এর পাশাপাশি আরো অনেক চাইনিজ এবং অন্যান্য ব্রান্ড এসে যুক্ত হবে এগুলোর সাথে সন্দেহ ছাড়াই।আমাদের আলোচনা এবং ভাবনা অনুযায়ী সিসি সীমা যদি বেড়ে যায় তবে আপনার নিজেরটা বেছে নিতে প্রস্তুত থাকতে ভুলবেন না কিন্তু!