১লা জুলাই ২০২০, ইয়ামাহা তাদের গৌরবময় ৬৫ তম বছর উদযাপন করতে চলেছে।এই দিনটিকে ইয়ামাহা দিবসও বলা যেতে পারে। এই দিনটি উপলক্ষে ইয়ামাহা তাদের পুরো ৬৫ বছরের ঐতিহ্যর এই পথ চলায় সকলকেই অংশ নেবার আহ্বান জানিয়েছে এবং সেই সাথে তাদের এই মাইলফলকে পৌঁছাতে সহায়তা করার জন্যতাদের সকল ইয়ামাহা প্রেমীদের উপস্থিতির প্রশংসা এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষন করছে।
১৯৫৫ সালে যাত্রা শুরু করে ইয়ামাহা, তখন থেকেই তারা ব্যতিক্রমধর্মী কিছু অভিজ্ঞতা তৈরি করার চেষ্টা করছে যা তাদের গ্রাহকদের জীবনকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করে তুলতে সক্ষম হবে। ইয়ামাহার প্রথম মোটরসাইকেলটি সকলের সামনে আসার পর থেকেই ইয়ামাহা তাদের গ্রাহকের প্রয়োজন সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন। তাদেরকে সফলতা অর্জনের জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি সেই জন্য। এই সংস্থাটি পরিচালিত ছিল প্রতিষ্ঠাতা জেনিচি কাওয়াকামি দ্বারা, যিনি ছোট ছোট ইঞ্জিন এবং মোটরসাইকেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিশ্ব-যুদ্ধ পরবর্তী সময়কালে, জাপানের আশেপাশের অনেক নির্মাতারা তাদের যুদ্ধকালীন উৎপাদনকে নতুনভাবে বাজারযাত করতে চেয়েছিল,যেমন মোটরসাইকেল এবং অন্যান্য অটোমোবাইল প্রোডাকশন।সেই সময় থেকেই ইয়ামাহা উৎকৃষ্টতম যানবাহন সরবরাহের জন্য তাদের লক্ষ্য স্থির করে।
ইয়ামাহা তাদের প্রথম মোটরসাইকেলটি বাজারে নিয়ে আসে, ১৯৫৫ সালে, যা ইয়ামাহা মোটর কোম্পানির নামে বাজারেযাত হয়ে ছিল, নামকরন করা হয়েছিল ওয়াইএ -১(YA-1 )। সাফল্যের দিক থেকে, ইয়ামাহাকে তাদের সৌভাগ্যে বেশ সহযোগিতা করে,ইতিমধ্যে অন্য মোটরসাইকেল নির্মাতারা তাদের প্রাথমিক পণ্যগুলির সাথে মিসসেটাপের অভিজ্ঞতা নিচ্ছিল, তবে ইয়ামাহা ওয়াইএ -১ এর দ্বারা তাৎক্ষণিক সাফল্য খুঁজে পেয়েছিল। ফলস্বরূপ YA-1 এর সাফল্যের পরে, ইয়ামাহা ১৯৫৭ সালে YA-2 বাজারে নিয়ে আসে, যা YA-1 এর আপগ্রেড মডেল ছিল। পরে ওয়াইডি-১ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ইয়ামাহা১২৫ সিসি থেকে ২৫০ সিসিতে প্রবেশ করে। ১৯৫০ এর দশক এবং ১৯৬০ এর গোড়ার দিকে ইয়ামাহা তাদের রেসিং ট্রাকে সাফল্য অব্যাহত রাখতে শুরু করে এবং ১৯৬৪ সালের মধ্যে তারা থাইল্যান্ডে তাদের প্রথম বিদেশী সহায়ক সংস্থা স্থাপন করে ফেলতে সক্ষম হয়।
প্রথমদিকে, ইয়ামাহার টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন ডিজাইনের বিষয়ে বেশিরভাগ ফোকাস রাখলেও ১৯৬৪ সালে, তারা এক্সএস-১ দিয়ে তাদের প্রথম ফোর-স্ট্রোক ডিজাইন নিয়ে আসে। এই ডিজাইনটিXS-750 প্রমডেলটি বাজারে আসার মাধ্যমে পূর্ন স্বিকৃতি পায় ১৯৭০ এর দশকে। ইয়ামাহা এক্সএস-১১০০ এবং এক্সটি – ৫০০ এর মতো বাইকের সাহায্যে সাফল্য খুজে পেতে থাকে এবং সকলের মন জয় করতে থাকে।
১৯৭৪ সালে ইয়ামাহা শর্ট ডিস্টেন্স পাড়ি দেবার জন্য প্রথম ল্যান্ড কারতৈরী করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তী কিছু দিনের মধ্যেই ইয়ামাহা একটি নতুন ধরণের ব্যক্তিগত জলবিদ্যুৎ যানবহন গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করে যা নিরাপদ, আরও মজাদার এবং আরও সহজেই চলাচল করতে পারে- এবং সেই চিন্তা থেকেই তৈরী হয় ট্যান্ডেম মডেল ওয়েভরানার১৯৮৬ সালে। ১৯৮৭ সালের জানুয়ারীতেওয়েভ জ্যামার, একক-রাইডিং মডেলটি ইয়ামাহা বাজারে নিয়ে আসে। প্রতিটি মডেল এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যা এর আগে ছিল না। যাত্রা এখানেই থেমে থাকেনি, অবশেষে ১৯৮৫ সালে প্রথম ফোর-হুইল এটিভি এবং পরের বছর প্রথম দূরবর্তী নিয়ন্ত্রিত হেলিকপ্টার তৈরি করে ইয়ামাহা।
এই আধুনিক যুগে, জাপানের এই অটোমোবাইল কোম্পানি রেসিং ট্র্যাকগুলির পাশাপাশি তাদের গ্রাহকের নিয়মিত জীবনে বেশ ভালোমতই প্রভাব রাখতে সক্ষম। গ্রামীণ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিখ্যাত মোটো জিপি রাইডার ভ্যালেন্টিনো রসি পর্যন্ত অনেকেই তাদের জীবনে ইয়ামাহাকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। ইয়ামাহা কেবল ব্যক্তিগত চলাফেরার ধারণাটিই নয়, মানবিক সম্ভাবনার শিল্পকে অন্বেষণের লক্ষ্যে পরবর্তী বছরগুলির দিকে যাত্রা করছে এবং বিগত ৬৫ বছর ধরে তাই করে চলেছে।
বাংলাদেশী মোটরসাইকেলের মার্কেটের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ইয়ামাহা গত তিন দশক থেকে ব্যাবহারকারীদের বিশ্বাস অর্জন করেছে। ২০১৬ সাল থেকেবাংলাদেশে ইয়ামাহা মোটরসাইকেল এসিআই দ্বারা বিতরণ হয়ে আসছে। এসিআই এর পূর্বেকর্ণফুকলী গ্রুপ এই দায়িত্ব পালন করে থাকতো। এসিআই মোটরস ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের একমাত্র পরিবেশক হওয়ার পরেজনগণের চাহিদা এবং প্রয়োজন পরিপূর্নভাবে সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে ইয়ামাহার সেরাটায় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। এসিআই মোটরস উন্নত মানের বাইকগুলো দ্বারা ইয়ামাহার এমন একটি অবস্থান তৈরি করেছে যা সকলের কাছেই গ্রহনযোগ্য। সেই সাথে বিক্রয় পরিষেবার ধরনটিও অকল্পনীয়। বাংলাদেশে ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের নিজস্ব ফ্যান বেস রয়েছে এবং ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তা প্রতিটি মোটরসাইকেলের প্রেমিকের মধ্যে সন্দেহ ছাড়াই দেখা যায়। ১৫০ সিসি সেগমেন্টে ইয়ামাহার চাহিদা বর্তমানে প্রচুর। তরুণ রাইডারদের মধ্যে ইয়ামাহা এফজেড-এস, ইয়ামাহা ফেজার এবং ইয়ামাহা আর-১৫ জনপ্রিয় মডেল। এসিআই মোটরস সর্বদা ইয়ামাহার আধুনিক ও আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন মডেলগুলি আনার বিষয়ে উদ্বেগ বজায় রাখে, এ কারণেই ইয়ামাহা প্রেমীরা কখনই হতাশ হয়ে থাকেন না।
শেষ কথাই আসার আগে বলা যায়, যেহেতু ইয়ামাহা তাদের গ্রাহকদের ইচ্ছা পূরণের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাই তারা তাদের লক্ষ্যে কখনই ব্যর্থ হয় নি। গত ৬ দশক ধরে তারা মোটরসাইকেলের মান এবং পারফর্মেন্স দিয়ে প্রকৃতভাবেই তাদের গ্রাহকদের হৃদয়কে জয় করে আসছে। আন্তরিকভাবে সমস্ত ইয়ামাহা প্রেমি এবং টিম মোটরসাইকেলভ্যালী ইয়ামাহার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, এবং এই ৬৫ বছরের ইয়ামাহা যা অর্জন করেছে তার প্রতি ভালবাসা জানিয়ে তাদের উৎসবে আনন্দিত।