বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেট ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩০% হারে গড় প্রবৃদ্ধি করতে থাকে। মাঝে করোনা মহামারী, তেলের দাম বৃদ্ধিসহ নানান বাধার কারনে মোটরসাইকেল মার্কেটের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্থ হয় এবং এখন পর্যন্ত মোটরসাইকেল ব্রান্ডগুলো তাদের নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেটে ইন্ডিয়ান ব্রান্ডের বেশ আধিপত্য দেখা যায়। গত দুইটি অর্থবছরে ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩ এর পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে গড়ে প্রায় ৫৮% মার্কেট শেয়ার দখন করে আছে ইন্ডিয়ান ব্রান্ডগুলো যার মধ্যে বাজাজ সবথেকে এগিয়ে।
বাজাজ বর্তমানে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেটের লিডার, যার মার্কেট শেয়ার ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ছিল ৩৩% এবং ২০২২ – ২০২৩ অর্থবছরে ছিল ২৮%। বাজাজ এই অবস্থান ধরে রাখার পেছনে অন্যতম কারন হিসেবে দেখা যায় তাদের ১১০সিসি – ১২৫সিসি সেগমেন্টে শক্ত অবস্থান। তারা তুলনামুলক কম সিসির গ্রাহকদের চাহিদা মোতাবেক ভাল মাইলেজের পাশাপাশি সুলভ মুল্যে বাজারে মোটরসাইকেল দিতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও ১৫০সিসি সেগমেন্টে ইয়ামাহা, সুজুকি ব্রান্ডের শক্ত অবস্থান থাকলেও তাদের ১৫০সিসি সেগমেন্টে অন্যতম মডেল বাজাজ পালসার গ্রাহকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়।
মোটরসাইকেলের সেগমেন্ট অনুসারে মার্কেটকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় গড়ে প্রায় ৪৪% মার্কেট শেয়ায়র দখল করে রেখেছে ১৫০সিসি বাইক। এই সেগমেন্ট বৃদ্ধি পাবার অন্যতম কারন হলো দেশের তরুন প্রজন্মের বাইকের প্রতি আকর্ষনের পাশপাশি বাংলাদেশি ব্রান্ডগুলো ১৫০সিসি সেগমেন্টে দারুন কিছু বাইক উপহার দেওয়া। এই তালিকায় সবথেকে এগিয়ে আছে বিশ্ববিখ্যাত জাপানীজ ব্রান্ড ইয়ামাহা।
ইয়ামাহা বাংলাদেশে ACI Motors এর হাত ধরে ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে। তারা বাংলাদেশের মার্কেটে ১৫০সিসি বাইকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং মার্কেটের চাহিদা মোতাবেক বাইক সরবরাহ করে আসছে। ইয়ামাহা বাইকের প্রতি মানুষের যে আস্থা তার প্রতিচ্ছবি গত দুইবছরের ডাটা দেখলেই বুঝা যায়। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ইয়ামাহা ১৫০সিসি সেগমেন্টে ২১% মার্কেট শেয়ার ছিল যা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১০% বেড়ে দাড়িয়েছে ৩১%, যা ইয়ামাহাকে ১৫০সিসি সেগমেন্টে মার্কেট লিডারের পজিশনে নিয়ে গেছে।
এছাড়াও ইয়ামাহা ইয়ুথ সেগমেন্টকে দারুন ভাবে টার্গেট করতে সক্ষম হয়েছে। সাকিব আল হাসানের মতো ইয়ুথ আইকনকে তারা তাদের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর বানিয়েছে। পাশাপাশি বাইকারদের মাঝে বন্ডিং তৈরি করতে ২০১৬ সালে ইয়ামাহা Yamaha Riders Club চালু করে। ইয়ামাহা রাইডারস ক্লাব দেশব্যাপী বিভিন্ন মানবিক কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। যেমন: বন্যার্তদের সাহায্য করা, করোনার সময় মাস্ক বিতরণ ইত্যাদি। বাইকারদের জন্য ইয়ামাহা স্পেশাল কিছু ইভেন্ট আয়োজন করে থাকে। যেমন:
১. ইয়ামাহার রাইডিং একাডেমির পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিগেনার রাইডারদের ট্রেনিং দেওয়া হয় ।
২. Yamaha Road Safety Campaign এবং Yamaha Friendship Day তে তারা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ক্যাম্পেইন চালায়।
৩. Yamaha Exchange Festival এ তারা বাইকারদের অন্য ব্র্যান্ডের বাইক এক্সচেঞ্জ করে ইয়ামাহার ব্র্যান্ড নিউ বাইক নেওয়ার সুযোগ দেয়।
৪. গিনেস বুক রেকর্ডে বিশ্বের বিগেস্ট বাইক লগো এখন বাংলাদেশের এবং এই কৃতিত্বও ইয়ামাহার।
৫ .বাইকারদের এচিভমেন্টগুলোকে ইয়ামাহা তাদের টক শো গুলোতে তুলে ধরে।
৭. ইয়ামাহা রাইডিং ফেস্ট এ বাইকাররা গেট টুগেদার করার সুযোগ পায়।
এভাবে বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তারা নিজেদের শুধু একটি বাইক ব্র্যান্ড থেকে বের হয়ে কাস্টমারদের কাছে লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে।তবে ইয়ামাহা ব্রান্ডের পাশাপাশি ১৫০সিসি সেগমেন্টে সুজুকির শক্ত অবস্থান দেখা যায়। তাদের জিক্সার সিরিজ আকর্ষনীয় আউটলুকের জন্য বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে সুজুকির অবস্থান ২য় এবং মার্কেট শেয়ার প্রায় ২৭%। এছাড়াও এই সেগমেন্টে বাজাজসহ টিভিএস এবং হোন্ডার অবস্থান লক্ষ্যনীয় হলেও ইন্ডিয়ান ব্রান্ড হিরো তেমনভাবে এই সেগমেন্টে নিজেদের জানান দিতে পারছে না।
ইয়ামাহার আরেকটি স্ট্রেংথের জায়গা হচ্ছে ১৫০ সিসি সেগমেন্টে বিভিন্ন ভ্যারাইটির প্রোডাক্ট থাকা। কমিউটার সেগমেন্টে তাদের FZS V2, FZS V3 এবং FAZER Fi মার্কেট দখল করে আছে। আবার ইয়ামাহার R15 সিরিজটি প্রিমিয়াম সেগমেন্টে কাস্টমারদের সাটিসফাই করে আসছে। নেকড স্পোর্টস বাইক যারা পছন্দ করে তাদের জন্য রয়েছে MT15। আবার যারা ভিন্টেজ বা ক্যাফে রেসার টাইপের বাইক পছন্দ করে তাদের জন্য রয়েছে ইয়ামাহার XSR। এই প্রত্যেকটা বাইকই ১৫০ সিসি সেগমেন্টের এবং প্রত্যেকটি বাইকই আলাদা আলাদা কাস্টমার টাইপকে টার্গেট করে ম্যানুফ্যাকচার করা হয়েছে। দেশের বাজারে এই সেগমেন্টে এতো ভ্যারাইটি আর কোন ব্র্যান্ড দিতে পারেনা।
জাপানিজ ব্র্যান্ডের গুণগতমানের প্রতি আস্থা,বিভিন্ন ভ্যারাইটির কোয়ালিটি বাইক প্রোভাইড করা এবং নিজেদের লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড হিসেবে উপস্থাপন করার এই কম্বিনেশনই মুলত ১৫০ সিসি সেগমেন্টে ইয়ামাহাকে মার্কেট লিডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।