এপ্রিলিয়া বিশ্ব মোটরসাইকেল বাজারের অন্যতম এবং বৃহত্তম একটি নাম। এই কোম্পানি কেবল জনপ্রিয় নয়, সেই সাথে নির্ভরযোগ্য এবং আধুনিকতম সমস্ত ফিচারসম্বৃদ্ধ ট্রেন্ডি বাইক তৈরীতে সক্ষম। তাদের এই অবস্থানের কারনে রেসিং ট্র্যাকগুলিতেও তারা বিখ্যাত। মোটজিপি রেসিং ট্র্যাকে আমরা বিভিন্ন ধরণের স্টাইলিশ এপ্রিলিয়া বাইক দেখেছি। তবে, বাংলাদেশে মোটরসাইকেল মার্কেটে বিক্রয় ও আমদানির জন্য বাইকের সিসি সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যার ফলে রাইডারদের উচ্চ সেগমেন্টের বাইক থেকে বিরত থাকতে হয়, তবে ভাগ্যক্রমে এপ্রিলিয়া আমাদের দেশেও খুব জনপ্রিয, তার কারন অনুমতিপ্রাপ্ত সিসি লিমিটের মধ্যে১২৫সিসি বা ১৫০সিসির মতো কয়েকটি লো-সিসি বাইক তারা তৈরি করে। রানার গ্রুপ বাংলাদেশে এপ্রিলিয়ার অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর এবং তারা ১৫০সিসি পর্যন্ত এপ্রিলিয়ার সমস্ত এক্সক্লুসিভ বাইক আনার চেষ্টা করে থাকে। যদিও, এর আগে থেকেই এপ্রিলিয়া বাইক আমাদের দেশে পাওয়া যেত, তবে ডিস্ট্রিবিউটর অন্য থাকায় সেগুলি তখন সত্যিই ব্যয়বহুল ছিল, তবে এখন রানার দ্বায়িত্ব নিজ হাতে নেবার পর ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখেই মূল্য নির্ধারনের চেষ্টা করছে যাতে করে বাইক সরবরাহ বেড়ে যায়। আর এত কিছু মাথায় রেখেই রানার সবে মাত্র ১৫০সিসি সেগমেন্টে আরেকটি এপ্রিলিয়া বাইকের মোড়ক উন্মচোন করেছে, বাইকটির নাম এপ্রিলিয়া জিপিআর ১৫০। এই বাইকটি খুবই ট্রেন্ডি এবং প্রথম নজরে এটি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। সন্দেহ ছাড়াই বাইকটি স্পোর্টি এবং চমৎকার ফিচারযুক্ত। তাহলে কি আপনারা এই বাইকের সকল আকর্ষনীয় ফিচারগুলো জানতে চান? আসুন জেনে নেয়া যাক।
জিপিআর ১৫০ এর কিছু বিশেষ ফিচার:
- ডেল্টা বক্স ডিজাইনের সাথে টুইন বিম অ্যালুমিনিয়াম অ্যালোয় ফ্রেম
- মোটোজিপি গ্রাফিক্সের সাথে অ্যারোডাইনামিক স্পোর্টস ফেয়ারিং
- ডিওএইচসি লিকুইড কুলড, ইএফআই ইঞ্জিন।
- ফ্রন্ট USD সাসপেনশন এবং মনো রিয়ার সাসপেনশন
- ৩০০ মিমি ফ্রন্ট ডিস্কএবং পিছনে ২১৮ মিমি এর ডিস্ক ব্রেক
- ১৫.৪ লিটারফুয়েল ট্যাঙ্ক
- ৬ স্পিড গিয়ার বক্স
ডিজাইন এবং আউটলুকঃ
আজকের সময়ে, মনমুগ্ধকর ডিজাইনের পাশাপাশি, উন্নত এবং ভাল ফিচারস একটি বাইক তৈরীর ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দিক থেকে ইতালিয়ান ব্র্যান্ডগুলি সত্যিই পেশাদারিত্বের প্রমান দেয়, ফলস্বরূপ এপ্রিলিয়া জিপিআর ১৫০ সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইন এবং আকর্ষনীয় রঙের সংমিশ্রনের সাথে ডিজাইন করা হয়েছে। এই বাইকের ডিজাইন কিছুটা তার ছোট ভাই আরএস-4 125 এর মতো দেখাতে পারে, তবে ব্যবহারিকভাবে এটি আরও বড় এবং সেই মডেলের চেয়ে ভাল । এই বাইকটি আরও কমপ্যাক্ট এবং এর ডিজাইনে অত্যন্ত নান্দনিক। এপ্রিলিয়া জিপিআর ১৫০এ মোটোজিপি গ্রাফিক্সের সাথে অ্যারোডাইনামিক স্পোর্টস ফুল ফেয়ারিং কিট ব্যাবহার করা হয়েছে, যা রাইডারদের আকর্ষণ কেড়ে নিতে সক্ষম। তা ছাড়া ডেল্টা বক্স ডিজাইন পুরো বাইকটিকে দৃড়তা এবং কমপ্যাক্ট চেহারা প্রদান করেছে। আকর্ষনীয় রিয়ার ভিউ মিরর সহ সম্পূর্ন নতুন ধরনের হেডলাইট এই বাইকটিকে আরও স্পোর্টি ভাব দিয়েছে। সেই সাথে রাইডার সিটটি রেসিং বাইকের সাথে অভিন্ন রেখেই তৈরী, তবে আরাম এবং ভারসাম্যের কথা মাথায় রেখে পিলিয়ন সিটটি আরও বড় এবং মোটা করা হয়েছে। দুর্দান্ত রঙের সংমিশ্রণ, আকর্ষোনীয় অ্যালুমিনিয়াম বিম, নান্দনিক অ্যালোয় এবং ডিস্ক প্লেটগুলো এই বাইকটিকে নিশ্চিতভাবে অতিরিক্ত সুন্দর করেত অনেকটা ভুমিকা রাখছে। সর্বপরি, আন্ডার বডি এক্সহস্ট এগুলোর সাথে মিলিত হয়ে সম্পূর্ণ স্পোর্টস বাইকের অনুভূতি পরিপূর্ন করেছে।
ইঞ্জিন পারফর্মেন্সঃ
যখন শক্তিশালী এবং রিফাইন ইঞ্জিনের কথা বলা হয় তখন আপনি এই সামনের দিকে এপ্রিলিয়াকে খুজে পাবেন। এই স্পোর্টস ক্যাটেগোরি বাইকেরজন্য এপ্রিলিয়াকে ব্যাবহার করেছে ৪-স্ট্রোক, লিকুইড-কুল্ড, ডিওএইচসি, সিঙ্গেল সিলিন্ডার ১৪৯ সিসি ইঞ্জিন, যা ১৮ বিএইচপি ম্যাক্স পাওয়ার দিতে সক্ষম ৯৭৫৫ আরপিএম এ এবং ১৪ এনএম সর্বোচ্চ টর্ক প্রদানে সক্ষম ৭৫০০ আরপিএম এ। জিপিআর ১৫০ এর জন্য এপ্রিলিয়া ইঞ্জিনে ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম স্থাপন করেছে। ফলস্বরূপ, এই ইঞ্জিনটিতে দুর্দান্ত মাইলেজ সরবরাহ করার এবং জ্বালানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সক্ষম। আরও ভাল এবং স্মুথ পার্ফরমেন্সের জন্য ৬ স্পিড গিয়ারবক্স ইনস্টল করা হয়েছে ওয়ি বাইকের ইঞ্জিনে, সেই সাথে ওয়েট মাল্টি-প্লেট ক্লাচ। সর্বোচ্চ গতি এবং মাইলেজটি রাইডার এবং রাইডিং এর উপর নির্ভর করে। তবে ফিচার অনুযায়ী যেকোন রাইডার এই বাইকটি থেকে ভালো মাইলেজ এবং স্পীড অনায়াসে আসা করতে পারেন। ইঞ্জিন স্টার্টের জন্য বাইকে শুধুমাত্র ইলেক্ট্রিক স্টার্টের ব্যাবস্থা রয়েছে।
ডাইমেনশনঃ
একটি আদর্শ বাইকের জন্য ডাইমেনশন খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভাল ডাইমেনশনের ফলে আরাম এবং বাইকের ভালো পরিচালনা দুটিই নিশ্চিত হয়। জিপিআর ১৫০ বাইকের দৈর্ঘ্য ১৯৫০ মিমি, প্রস্থ ৭৭০ মিমি, উচ্চতা ১১০০ মিমি এবং হুইলবেস ১৩৪৫ মিমি। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সের ক্ষেত্রে ১৫০ মিমি নিয়ে এই বাইকটি রাস্তার বিভিন্ন অবস্থায় কিছুটা সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। রাইডারের জন্য সীটের উচ্চতাটি কিছুটা উচু তবে সহনশীল যা ৮১০ মিমি, তবে চিন্তার কিছু নেই এই সীট অন্যান্য উচু বাইকের চেয়ে বেশি আরামদায়ক। এই সমস্ত পরিমাপের সাথে এই বাইকের ওজন ১৪০ কেজি এবং বাইকটিতে রইয়েছে ১৫.৪ লিটার ফুয়েল ট্যাঙ্ক।
সাসপেনশন এবং ব্রেকঃ
স্পোর্টস বাইকগুলিতে সর্বদা উন্নত শ্রেণীর সাসপেনশন এবং ব্রেক ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। কারণ তাদের গতি এবং পারফর্মেন্সের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য এগুলো প্রয়োজন। এ কথা মনে রেখে এপ্রিলিয়া জিপিআর ১৫০ এর জন্য মানের সাথে মিল রেখে সামনের অংশে আপসাইড ডাউন সাসপেনশন ব্যবহার করেছে, যা পারফরম্যান্সে সত্যই উত্কৃষ্ট। অন্যদিকে, পিছনের দিকে ব্যাবহার করা হয়েছে মোনো শক সাসপেনশন। সামনের ইউএসডি সাসপেনশন ওজন অনুপাতকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করবে এবং পেছনের মনো শক কর্নারিং এবং উচ্চ গতির সময় বাইকটিকে স্থিতিশীল করবে।
আমরা যদি ব্রেকগুলো নিয়ে কথা বলি তাহলে, এই বাইকটিতে এবিএস, বা সিবিএসের মতো ট্রেন্ডি ফিচার নেই। তবে সামনে ৩০০ মিমি ডিস্ক এবং পিছনের চাকাতে ২১৮ মিমি ডিস্ক রয়েছে যা অবশ্যই কার্যকরী ব্রেকিং পারফরম্যান্স সরবরাহ করবে।
টায়ার এবং হুইলঃ
এপ্রিলিয়া টিউবলেস টায়ার এবং দুইদিকেই১৭ ইঞ্চি স্টাইলিশ এলয় হুইল ব্যবহার করেছে।সামনের দিকে ১০০ / ৮০-১৭ চাকা এবং পিছনে১৩০ / ৮০-১৭ হচ্ছে এই বাইকের চাকার মাপ।
মিটার প্যানেল এবং ইলেক্ট্রিকাল:
জিপিআর১৫০ এর জন্য এপ্রিলিয়া ডিজিটাল এবং অ্যানালগ মিটার প্যানেলের সংমিশ্রণ বেছে নিয়েছে। যাতে করে এটিতে একটি ক্লাসি লুক পাওয়া যায়। সেই সাথে সমস্ত প্রয়োজনীয় ফিচার এখানে রয়েছে। এই বাইকের ইনস্ট্রুমেন্ট প্যানেলটি আধা-ডিজিটাল। এখানে টেকোমিটারটি অ্যানালগ এবং অন্যান্য ফিচার যেমন স্পিডোমিটার, ট্রিপ মিটার, ফুয়েল গেজ, গিয়ার িন্ডিকেটর ইত্যাদি সবকিছুই ডিজিটাল।
ইলেক্ট্রিকাল অপারেটিং এবং অন্যান্য ফিচারের জন্য ১২ ভোল্টের ব্যাটারি রয়েছে এই বাইকে, যা দিয়ে সামনের হ্যালোজেন বাল্ব, পেছনের এলইডি এবং পার্কিং এলইডি লাইট পরিচালিত হয়। এমনকি এই ব্যাটারির মাধ্যমেই এলেক্ট্রিক স্টার্ট ব্যাবহার হয়ে থাকে।
পরিশেষেঃ
এই স্টাইলিশ বাইকটি বাংলাদেশে তিনটি কালারে পাওয়া যাবে এবং সেগুলি লাল, কালো এবং সাদা। সব কালারই অন্য কালার শেডের সাথে বিশ্রিত। সামগ্রিকভাবে, এপ্রিলিয়া জিপিআর ১৫০ পুরোপুরি মনোমুগ্ধকর এবং প্রয়োজনিয়ফিচার দিয়ে তৈরী এবং কোম্পানির খ্যাতির কারনে বলাই যায় এই বাইক রাস্তা কাপাতে প্রস্তুত। এখন শুধু সময়ের এবং ফিডব্যাকের অপেক্ষা।