এপ্রিলিয়া বিশ্বব্যাপী অনেক জনপ্রিয় একটি ব্রান্ড। তাদের বাইকের গুণগতমানের জন্য সারা বিশ্বে তাদের কদর রয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে এপ্রিলিয়া আসা খুব বেশিদিন হয়নি। আমাদের দেশীয় ব্র্যান্ড রানার এর মাধ্যমে এপ্রিলিয়া তাদের বাইক বাংলাদেশে সরবরাহ করছে। আমার কাছে এপ্রিলিয়া জিপিআর ১৫০ বাইকটি অনেক ভালো লাগে। প্রথমেই ভালো লাগে এর অস্থির লুক সেই সাথে বাইকটা দেখেই একটা প্রিমিয়াম ভাব আসে এবং এপ্রিলিয়া ব্র্যান্ডের একটা আলাদা ভাব আছে । সব মিলিয়ে আমার বাইকটি দেখে অনেক ভালো লাগে কিন্তু বাইকটি কেনার পর যে সমস্ত সমস্যা আমি পেয়েছি সেগুলো নিয়ে আমার আর এই বাইকটা রাইড করার ইচ্ছা হয়নি। সে সমস্ত বিষয় আমি আপনাদের বলবো । আমি এই বাইকটা মাত্র ২০০ কিমি রাইড করেছি এবং ২০০ কিমি রাইড করে অনেক সমস্যা পেয়েছি। শুধু যে সমস্যা পেয়েছি তা নয় এই বাইকের কিছু ভালো দিক আছে যেগুলো অন্যান্য বাইকে নেই। এপ্রিলিয়া জিপিআর ১৫০ বাইকটি শতভাগ অন রোড একটি বাইক ।
আমার ব্যাক্তিগত কারণে বাইকটা চালিয়ে সমস্যা অনুভব করছি কারণ আমার দুই হাতে মেজর সমস্যা আছে এবং এর জন্য আমি হেলে রাইড করতে পারি না। আমি ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ ভার্সন ৩ চালিয়েছি এবং সেই বাইকেও আমার হাতে সমস্যা অনুভব হয়েছিলো কিন্তু এপ্রিলিয়ার মত এতটা না। আরওয়ানফাইভ ভি৩ এর থেকে এর হ্যান্ডেলবার নিচু এবং এর জন্য কড়া ব্রেক করলে দুই হাতে প্রচন্ড চাপ লাগে যার ফলে আমার জন্য সুবিধা হয়নি। শুধু যে সমস্যা পেয়েছি তা নয় এই বাইকের কিছু ভালো দিক আছে যেগুলো অন্যান্য বাইকে নেই।
এই বাইকটি রাইড করে আমি ভালো যে সকল দিক পেয়েছি
-বাইকের ব্রেকিং এবং কন্ট্রোলিং অনেক ভালো। আমি হাইওয়েতে এবং শহরের রাস্তায় ব্রেকিং করে খুব ভালো পারফরমেন্স পেয়েছি। এদিকে বাইকের কন্ট্রোল শহরের রাস্তার থেকে হাইওয়েতে অধিক কন্ট্রোল পাওয়া যায়।
-বাইকের প্রতিটা পার্টস অনেক মজবুত এবং প্রিমিয়াম। আমার কাছে এই বাইকের সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে এর ইউনিক ডিজাইনের পার্টসগুলো। এপ্রিলিয়া বিল্ড কোয়ালিটি ও পার্টসের দিক থেকে তাদের সুনাম ধরে রেখেছে।
-হাইওয়েতে রাইডের জন্য মাস্টার পিস একটা বাইক। এই বাইক নিয়ে হাইওয়েতে টানাটানি করে সেই মজা পেয়েছি। স্পীড এক্সেলেরেশন অনেক ভালো এবং বাইকটা হাইওয়েতে অনেক স্ট্যাবল।
-ডিজাইনের দিক থেকে আমার কাছে মনে হয়েছে যে বাংলাদেশের মার্কেটে এত সুন্দর ডিজাইনের বাইক আর নাই। কারন এর ডিজাইনটাই ইউনিক এবং রেসিং একটা ভাব আছে। এদিকে ডিজাইনের সাথে মিল রেখে এপ্রিলিয়া তাদের গ্রাফিক্সগুলো মারাত্মক করেছে। আমার কাছে এই বাইকের সবচেয়ে ভাল লেগেছে এর ডিজাইন।
-ইঞ্জিনের দিক থেকে আমি সাপোর্ট ভালো পেয়েছি তবে প্রিমিয়াম বাইক হিসেবে এর শক্তি আরেকটু বেশি হলে ভালো হত।
এইবার বলি এই বাইক নিয়ে আমার মন্দ কিছু অভিজ্ঞতা
-বাইকটার ক্লাচ লিভার, গিয়ার এগুলোর পজিশন আমার কাছে ঠিক মনে হয়নি। আমি সেগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক বেগ পোহাইছি এবং এই কারণেই বাইকটা আমার কাছে কম আরামদায়ক মনে হয়েছে।এদিকে আমার উচ্চতা বেশি হওয়ার কারণে বেশি লিন হতে হয় এবং হাতে চাপ পরে । আমি এই কারণে একটানা ২০ কিমি এর বেশি রাইড করতেই পারিনি। শহরের মধ্যে তো এই কারণে আমি রাইড করতেই পারি না।
-বাইকটার গঠন বাংলাদেশের অন্যান্য বাইকের থেকে একদম আলাদা। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ মেকানিক না হলে এই বাইকের সমস্যার সমাধান করা খুব মুশকিল এবং রানার সেটার বাস্তবায়ন কম করছে। তাদের উচিত সারভিস মান আরও উন্নত করা এবং এই বাইকের উপর মেকানিকদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা।
-শহরের মধ্যে চালানোর জন্য এই বাইক একদমই না। আমি শহরের মধ্যে একদিন বিশেষ করে ঢাকা শহরের মধ্যে একদিন রাইড করে হাতের ব্যথায় পরের কিছুদিন রাইড করতে পারিনা।
-লো আরপিএম তে ভাইব্রেশন নাই কিন্তু যত আরপিএম বাড়বে ততই এর ভাইব্রেশন বাড়বে। আমি মনে করি এই বাইকের ভাইব্রেশন আরও কম হওয়া উচিত।
এই বাইকের টপ স্পীড আমি পেয়েছি ১২৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা। আমার মনে হয় ইঞ্জিনের শক্তি আরেকটু বেশি হওয়া উচিত। মাইলেজের দিক থেকে এই বাইকটা নিয়ে অসন্তুষ্ট। শহর ও হাইওয়ে মিলিয়ে গড়ে আমি মাইলেজ পাচ্ছি ৩২ কিমি প্রতি লিটার।
সমস্যাগুলো সম্পূর্ণ আমার ব্যাক্তিগত। আমি যে সমস্ত সমস্যা অনুভব করছি আপনারা হয়তো সেটা নাও করতে পারেন। আমি যে যে ভালো দিক এবং মন্দ দিক পেয়েছি সেগুলোই আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। তবে আমি বলবো যে এপ্রিলিয়া যদি কারও পছন্দ থাকে তাহলে টেস্ট রাইড দিয়ে বাইকটা নেওয়ার জন্য কারণ টেস্ট রাইড দিলেই হয়তো আপনি আপনার ভালো-মন্দ সুবিধা-অসুবিধা খুঁজে পাবেন ।
ধন্যবাদ আমার রিভিউ পড়ার জন্য।