যদিও আমাদের দেশে মোটরসাইকেলের জন্য সিসি সীমাবদ্ধতা ১৬৫, তবুওবাংলাদেশী মোটরসাইকেল মার্কেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভাল মানের বাইকেরসংখ্যা কখনই কম ছিল না। বেশিরভাগ সময় আমরা ভারতীয় এবং জাপানিজ বাইক নিয়ে থাকি তবে আজকাল বিভিন্ন আমদানিকারকের মাধ্যমে অন্যান্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলি বাজেরে সহজলভ্য হয়েছে। মোটরসাইকেল মার্কেটে বিশ্বব্যাপি বৃহত্তম ও জনপ্রিয় নাম এপ্রিলিয়া। তাদের বাইকগুলি গত কয়েক বছর যাবত আমাদের বাজারে পাওয়া যেয়ে থাকলেও, বিভিন্ন কারণে এই বাইকগুলি সর্বদা সকলের হাতের নাগালে পাওয়া যায় নি। রানারকে ধন্যবাদ, তাদের কারনেই এপ্রিলিয়ার বিভিন্ন মডেলগুলি পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশের বাজারে এবং তা বেশ সল্প মুল্যে। এপ্রিলিয়ার লাইনআপে সদ্য যুক্ত হওয়া বাইকের মধ্যে অন্যতম বাইক হচ্ছে জিপিআর ১৫০, আর তারপরই রয়েছে এপ্রিলিয়া টেরা ১৫০।আমরা সবাই স্পোর্টস বাইক পছন্দ করি। তবে ভেবে দেখুন যদি আমরা ডুয়াল পারপাস বাইক একসাথে ভালো ফিচারসহ পায় যা আমাদের অফ-রো এবং অন-রোড উভয় ক্ষেত্রে সমানভাবে পথ পাড়ি দিতে সাহায্য করে তবে সেই বাইকটি কতটা কার্যকরী হবে? হ্যাঁ! এপ্রিলিয়া টেরা ১৫০এই ধরণেরই বাইক, যা যেকোন রাস্তায়ব্যাবহার উপোযোগি।
ইতালিয়ান ব্র্যান্ড এপ্রিলিয়ার এই ডুয়াল পারপাস ১৫০ সিসি বাইকটিতে রয়েছে অতিয়াধুনিক সকল ফিচারস।তাহলে চলুন আর দেরি না করে দেখি ফেলা যাক কি কি নতুনত্য আছে আই বাইকে।
এপ্রিলিয়া টেরা ১৫০ এর কিছু বিশেষ ফিচারস:
-ডুয়াল পারপাস বাইক, অন রোড এবং অফ রোডন দুই ক্ষেত্রেই আদর্শ বাইক
- আরামদায়ক রাডিং
- ডিওএইচসি লিকুইড কুলড এবং ইএফআই ইঞ্জিন
- ১১.২ লিটার ফুয়েল ট্যাংক
- ৬ স্পিড গিয়ার বক্স
- আপ রেইসড হ্যান্ডেল বার
- প্রসস্ত সীটিং পজিশন
- প্রসারিত ফ্রেন্ড ফ্রেন্ডার
- আপার মাউন্ট এক্সহস্ট
- লাগেজ ক্যারিয়ার
ডিজাইন এবং লুক:
এই বাইকটি ডুয়াল পারপাস রাইডিংয়ের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যার ফলে বাইকটিকে টুরিং বাইক বললেও ভুল হবে না। এর ডিজাইনের জন্য এপ্রিলিয়া ব্যবহার করেছে, আপ রাইসড হ্যান্ডেলবার, প্রসস্ত সীট, প্রসারিত ফ্রন্ট ফ্রেন্ডার, উপরের মাউন্টযুক্ত এক্সহস্ট, আকর্ষোনীয় ডাইমেনসন ইত্যাদি যা একটি আদর্শ টুরিং বাইক হিসেবে এপ্রিলিয়া টেরা ১৫০ কে চোখে পড়ার মত একটি লুক দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই বাইকের সামনের দিকে এপ্রিলিয়ার স্টিকার রেয়েছে যা ব্রান্ড অরিজিন অনেকটা নিশ্চিত করে। লাগেজ ও ওজন বহনের জন্য এই বাইকের পিছনের অংশে রাখা হয়েছে একটি ক্যারিয়ার। ক্রোম-ফিনিশড এক্সহস্টযা পিলিয়ন সিটের নীচে অবস্থিত এবং এটি বাইকের আউটলুককে বিশেষ লুক প্রদান করতে সক্ষম। প্রতিটি কালার স্কিমের কন্য ব্যাবহার করা হয়েছে ডুয়াল শেড বাইকের সম্পুর্ন ডিজাইনকে আরও মার্জিত করে তোলে।
ইঞ্জিন ও ট্রান্সমিশনঃ
ইঞ্জিন এর ক্ষেত্রে এপ্রিলিয়া টেরা ১৫০ বাইকে১৪৯ সিসি ডিওএইচসি লিকুইড কুলড ইঞ্জিন দেখা যায়, যা ১৮ বিএইচপি মাক্স পাওয়ার ৯৭৫০ আরপিএম এ তৈরী করতে সক্ষম। সেই সাথে ১৪ এনএম টর্ক আরপিএম এ। দ্রুত থ্রটল রেস্পন্স এবংআরও ভাল মাইলেজ প্রদানের ক্ষমতা বাড়াতে এপ্রিলিয়া এই ইঞ্জিনের মধ্যে এফআই প্রযুক্তি এবং ৪ টি ভাল্ব স্থাপন করেছে। স্মুথ ট্রান্সমিশনের জন্য সিক্স স্পীড গিয়ারবক্স এবং একটি ওয়েট মাল্টি-প্লেট ক্লাচ ইনস্টল করা হয়েছে। ইঞ্জিন স্টার্ট করার জন্য এই বাইকে ইলেক্ট্রিক স্টার্টের ব্যাবস্থা রয়েছে।
ডাইমেনশন:
একটি টুরিং বাইকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এর ডাইমেনশন। যেমনটি আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, এতে আপ রাইসড এবং প্রসস্ত সীট রয়েছে, সুতরাং এটি টুরিং বাইকের বেশখানিকটা বৈশিষ্ট্য বহন করেছে, তবে বাইকের ডাইমেনশনের দিকে তাকালে মনে হবে তা সকল বৈশিষ্ট্যযুক্ত।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ডুয়াল পারপাস বাইকগুলি স্ট্যান্ডার্ড বাইকের চেয়ে কিছুটা আকারে বড়। সেই দিকথেকে বাইকের সম্পুর্ন দৈর্ঘ্য ২১৩০ মিমি, প্রস্থ ৭৯০ মিমি, উচ্চতা ১২৪৫ মিমি এবং হুইলবেজের মাপ১৪২৫ মিমি। এগুলোর পাশাপাশি বাইকে ১৮০ মিমি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এবং ৮০০ মিমি সীট হাইট রয়েছে। সামগ্রিকভাবে, এই বাইকটির ওজন ১২০ কেজি, এই ধরনের লাইটওয়েট রাইডারকে স্বাচ্ছন্দ্যে পথ চলতে যেকোন ধরণের রাস্তার অবস্থাতে সাহায্য করবে।
সাসপেনশন এবং এক্সহস্ট:
ডুয়াল পারপাস এই বাইকটিতে আরামদায়ক এবং উন্নত মানেরসাসপেনশন ব্যাবহার করেছে এপ্রিলিয়া। সামনের অংশে টেলিস্কপিক ফর্ক সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে এবং পিছনের চজন্য মনো-শক অ্যাবসবার্বারের সাথে সুইং আর্ম স্থাপন করা হয়েছে। মনো শকের কারণে এই বাইকটি স্পর্টি লুক পেয়েছে এবং বাইকটি হাই স্পীডেও স্থির থাকবে। সামনে টেলিস্কোপিক স্থিতিশীলতা এবং ওজন অনুপাতের বিষয়টি ঠিক রাখতে সক্ষম। পিছনের মনো-শক যেকোন রাইডরকে আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে পথ চলতে সাহায্য করেবে। সেই সাথে মাউন্টেন এক্সহস্ট বিভিন্ন রাস্তার পরিপ্রেক্ষিতে আরও ভাল শব্দ, বাতসের সরবরাহ, মাইলেজ এবং ভালো গতি সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত।
ব্রেক এবং টায়ার:
যদিও এপ্রিলিয়া এই বাইকের জন্য ট্রেন্ডি এবিএস, বা সিবিএস ব্রেক ব্যবহার করেনি, তবে টেরা ১৫০ এর ডুয়াল ডিস্ক ব্রেকগুলি যাত্রাপথে নিরাপদ ব্রেকিং নিশ্চিত করবে এতে কোন সন্দেহ নাই। উভয় দিকেই স্পোক হুইলগুলি টিউবলেস টায়ারের সাথে মিলিত হয়ে অফ রোডেদুর্দান্ত গ্রিপিং দিতে প্রস্তুত। যার ফলে ভাল গতি এবং ব্রেকিং দিতে সক্ষম। টেরা ১৫০ এ স্থাপন করা হয়েছে টিউবলেস টায়ার যার পরিমাপ সামনের দিকে ১০০/৯০-৮০, এবং পিছনের দিকে ১৩০/৮০-১৭।
মিটার ক্লাস্টার ও ইলেক্ট্রিকাল:
এই বাইকের মিটার প্যানেলটি আধা-ডিজিটাল। এপ্রিলিয়া একটি ক্লাসিক লুক দেবারজন্য এই ধরনের মিটার প্যানেল বেছে নিয়েছে। টেকোমিটার, স্পিডোমিটার, ট্রিপ মিটার, ফুয়েল গেজ, গিয়ার ইনডিকেটর এজাতীয় প্রয়োজনীয় সমস্ত যন্ত্র মিটার ক্লাস্টারের স্থাপন করা হয়েছে এবং টেকোমিটার ব্যতীত সমস্ত ফিচারই ডিজিটাল।
ইলেক্ট্রিকাল অপারেটিং এর জন্য মেইন্টেনেন্স ফ্রি ১২ ভোল্ট ব্যাটারি এই বাইকে ব্যাবহার করা হয়েছে এবং এর সহায়তায়, সমস্ত ইলেক্ট্রিকাল ফিচার যেমন, হেডল্যাম্প, টেল ল্যাম্প, টার্নিং লাইট, বৈদ্যুতিক স্টার্ট পরিচালিত হয়ে থাকে।
পরিশেষে:
বাংলাদেশে দুটি ভিন্ন কালার স্কিমে এপ্রিলিয়া টেরা ১৫০ পাওয়া যাবে। এতক্ষন আমরা এই ডুয়াল পারপাস বাইকের সমস্ত ফিচারগুলোর সাথে পরিচিত হলাম, বলা যেতে পারে যে এই বাইকটি নিয়ে টুর দেবার ক্ষেত্রে এমনকি শহরের রাস্তাতেও আমরা বিশেষ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকবো, এখন বাকিটা পারফরম্যান্স বলে দিবে।