আমি মিজানুর রহমান সজিব।পেশায় একজন ছাত্র। বাইকের নেশা আমার ছোট বেলা থেকেই। আব্বুকে দেখতাম বাসার বিভিন্ন কাজে বাইক নিয়ে ছুটে বেড়াতেন।কখনও কখনও আমাকে নিয়ে বাজারে যেতেন। সেই থেকে শুরু হয় আমার বাইকের প্রতি অন্য রকমের নেশা। তারপর অনেক বাইক দেখেছি,চালিয়েছি কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে ভাল লেগেছে স্টাইলিশ ক্রুজার বাইক গুলো কারণ হল বাইকগুলো দেখতে অন্যান্য বাইকের থেকে আলাদা এবং আনকমন একটি বাইক, তাই নিয়ে নিলাম বাজাজ এভেঞ্জার ১৫০ সিসি। বাইকটি নিয়ে আমি এই পর্যন্ত প্রায় ৬০০০ কিমি এর মত পথ পাড়ি দিয়েছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার ৬০০০ কিমি রাইডিং ফিলিংস শেয়ার করব।আশা করি আপনারা আমার সাথেই থাকবেন।
২০০৬ সাল তখন YAMAHA 100 বাইক দিয়ে আমি প্রথম বাইক চালানো শিখি। বাইকটি ছিল আমার বাবার অনেক পছন্দের একটি বাইক। সেই বাইক দিয়ে আমার বাবা আমাকে তার নিজ হাতে বাইক চালানো শিখিয়েছেন।এরপর ধীরে ধীরে শুরু হয় আমার মোটরসাইকেলের প্রতি ঝোঁক। এরপর বিভিন্ন সময় বন্ধুদের বাইক চালিয়েছি। বন্ধুর বাইকে চেপে ঢাকা গেছি। বাজাজ এভেঞ্জার বাইকের আগে আমার ব্যবহৃত বাইকগুলো হল- হিরো স্প্লেন্ডার, বাজাজ সিটি ১০০, ইয়ামাহা ১০০ সিসি। আমার অনেক দিনের শখ যে আমার একটা দেখতে সুন্দর ক্রুজার বাইক থাকবে। টেলিভিশনে বিভিন্ন বাইকারদের দেখতাম তারা সুন্দর সুন্দর ক্রুজার বাইক চালাচ্ছে। এই দেখে আমারও শখ জাগে।তারপর শুনলাম বাজাজের এভেঞ্জার বাইকটি দেখতে সুন্দর এবং অনেক আরামদায়ক একটি বাইক তাই কিনে নিলাম। বাইকটি চালিয়ে আমি অন্য বাইকের কথা ভুলে গেছি।আমার শুধু আমার বাইক চালাতে মন চায়, আসলেই এটি একটি স্বর্গীয় একটি বাইক। বিশেষ করে রাইড করার সময় বাইকের ইঞ্জিন শব্দটা আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে। ইঞ্জিন শব্দটা আসলেই অনেক সুন্দর যার ফলে রাইড করে বেশ মজা পাওয়া যায়।
আমার বাইকের ব্রেকিং এবং সাসপেনশন
প্রথমে আসি বাইকটির ব্রেকিং, বাইকটির ব্রেকিং খুবই চমৎকার। আমি এই পর্যন্ত কোন প্রকার স্কীড বা কড়া ব্রেক করলে চাকা পেছলানো এমন কোন কিছুই পাইনি। আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে ব্রেকিং করতে পারি এবং যে কোন খারাপ পরিস্থিতিতে বাইকের ব্রেকিং একদম সুন্দর যার ফলে বাইকের কন্ট্রোল আমার হাতে।সামনের দিকের ডিস্ক ব্রেকটার ডিজাইন আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছে। অন্যদিকে বাইকটির সাসপেনশন আমার কাছে বেশ ভাল মনে হয়েছে।আমি গ্রামের রাস্তায় এবং বিভিন্ন খারাপ রাস্তায় চালিয়েছি সেই তুলনায় আমার কাছে বাইকটির সাসপেনশনটা আমার কাছে ভাল লেগেছে।
মাইলেজ এবং টপ স্পীড
আমি প্রথমেই উল্লেখ করছি যে আমি আমার বাইক নিয়ে এই পর্যন্ত ৬০০০ কিমি রাইড করেছি। এই ৬০০০ কিমি রাইডের মধ্যে আমি বাইকের মাইলেজ ৫০ এর বেশী পাচ্ছি কারণ আমার জানা মতে বাজাজের (ডী টি এস আই) ইঞ্জিন বেশ তেল সাশ্রয়ী।যার ফলে দেখা যাচ্ছে যে ১৫০ সিসির শক্তিশালী ইঞ্জিন হিসেবে এর মাইলেজ নিয়ে ভাবাই যায় না। ১৫০ সিসি হিসেবে অবিশ্বাস্য মাইলেজ পাচ্ছি।বলে রাখা ভাল যে আমি আমার বাইক নিয়ে একদিনে প্রায় ৪০০ কিমি এর মত পাড়ি দিয়েছি এবং সেটা হল রাজশাহী থেকে শুরু করে নাটোর হয়ে বগুড়া এবং বগুড়া থেকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে সেই দিন আবার ফেরত। এই দীর্ঘসময় চলার পথে বাইক আমাকে কোন প্রকার ঝামেলায় ফেলেনি।আরেকটি বিষয় সেটি হল বাইকের টপ স্পীড আমি হাইওয়েতে ১২০ কিমি প্রতি ঘন্টায় পেয়েছি। মাইলেজ, টপ স্পীড সব মিলিয়ে বাইকটি অসাধারণ একটি বাইক।
অন্যান্য দিক সমূহ
বাইকের অন্যান্য দিক সমূহ আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছে।আমি অন্ধকার রাস্তায় বাইক চালিয়েছি সেক্ষেত্রে আমি বাইকটির হেড ল্যাম্পে আলোর কোন ঘাটতি অনুভব করিনি। বাইকের হেডল্যাম্প আকারে এবং দেখতে ছোট মনে হলেও এটি বেশ কার্যকর।এছাড়া আরেকটি বিষয় অবাক করার মত সেটা হল বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকারের সাথে ব্যাটারী ইন্ডিকেটর এবং বিভিন্ন ইন্ডিকেটর রয়েছে যেটা বাইকটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয় এবং কাজে লাগে।
আমার বাইকের কিছু ভাল দিক
- আমার কাছে মনে হয়েছে বাইকটির কুইক পিকাপ রয়েছে যেটা অল্প ব্যবহার করলে বেশী স্পীড পাওয়া যায়।
- প্রশস্ত আরামদায়ক সিটিং পজিশন
- কন্ট্রোলিং ভাল
- স্টাইলিশ ক্রুজার বাইক
আমার বাইকের কিছু খারাপ দিক গুলো হল
- বাইকের এনালগ মিটার টা আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে। আরেকটু আপডেটেড কিছু থাকলে ভাল হত।
- কিক স্টার্ট নাই যার ফলে যে কোন সময় ব্যাটারি ডাঊন হয়ে গেলে সমস্যায় পড়তে হবে।তবে আমি এখনও সমস্যায় পরিনি।
- ১০০০ কিমি চালানোর পর বাইকের ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন না করলে গিয়ার সিফটিংটা বেশ শক্ত হয়ে যায়।যেটা অন্য বাইকে খুব কম লক্ষ্য করা যায়।
এই ছিল আমার ৬০০০ কিমি রাইডিং অভিজ্ঞতা।এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
হ্যাপি রাইডিং, সেফ রাইডিং