মোটরসাইকেল চালানোর শুরুটা হয় কলেজ জীবনে। প্রথম বাইকক কিনি ২০০৫ সালে,এরপরে বিগত প্রায় ১যুগ চলাচলের একটি বড় অংশ কেটেছে মোটরসাইকেলে। টিভিএস ছাড়াও দীর্ঘদিন ব্যবহার করেছি Honda H100S, Hero Honda CBZ এবং Bajaj Pulsar. সর্বশেষ ব্যবহার করছি Bajaj Avenger 150 Street.
আমি মো: শাহাজাদা হোসেন। পেশায় ক্রিকেটার এবং একই সাথে একজন ব্যবসায়ীও। রাজশাহীর পদ্মাগার্ডেনে অবস্থিত বহুল পরিচিত “রিভারভিউ ফুড কর্নার” এর কর্নধার। আমি আমার ব্যবহৃত Bajaj Avenger 150 Street ক্রুজারটির ভালোমন্দ তুলে ধরবো আমার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থেকে। যারা এই মোটরসাইকেলটির ভালো-মন্দ সম্পর্কে জানতে চান আশা করি আমার অভিজ্ঞতা হয়তো কিছুটা হলেও আপনাদের সাহায্য করবে।
খেলা এবং ব্যবসার প্রয়োজনে মাঝে মধ্যেই ইনডিয়া যেতে হয়। সেখানেই পরিচিত হই ইনডিয়ায় বহুল প্রচলিত Royal Enfield Bullet মোটরসাইকেলটির সাথে। মাঝে মাঝে চালানোর সুযোগ হয়েছে। বুলেটের ইনজিনের শব্দ আমার বুকে এখনও ধ্বক ধ্বক করে বাজে। নিজের জন্য এই বাইকটি কেনার ইচ্ছে সব সময়ের জন্যই। কিন্তু বাংলাদেশের সিসি লিমিটের কারনে হয়তো আমার এ স্বপ্ন আপাতত পূরন হবে না। যখন শুনতে পেলাম বাংলাদেশে বাজাজ এভেন্জার আসবে তখন থেকেই অপেক্ষায় ছিলাম এবং বাজারে আসামাত্র বাইকটি সরকার এন্টারপ্রাইজ রানীবাজার, রাজশাহী থেকে কিনে ফেলি। বলতে পারেন এটি অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। তবুও শখ পূরন করা বলে কথা। বাজাজ এভেন্জার এ হয়তো বুলেটের সেই অনুভুতি পাবো না, তবুও ক্রুজার মোটরসাইকেলের অনুভুতি পেতেই মূলত এই বাইকের স্বরনাপন্ন হওয়া। আর বলতে গেলে মোটরসাইকেলটি আমাকে হতাশ করে নাই।
মোটরসাইকেলটি সম্পর্কে বলতে হলে প্রথমেই বলতে হয় এর ডিজাইনের কথা। বাজাজের প্লাটিনা, ডিস্কোভার এবং এভেন্জার সিরিজগুলোর প্রায় প্রতিটি সিরিজ মডেলগুলো দেখতে প্রায় একই রকম। এভেন্জার এর সর্বোচ্চ সিসি ২২০ হলেও সর্বনিম্ন সিরিজ ১৫০ এবং দেখতে প্রায় প্রত্যেকেই একই রকম। যাকে বলা হয় আইকনিক। ক্রুজার মোটরসাইকেলের প্রয়োজনীয় প্রায় সকল বৈশিষ্ট্যই এখানে রয়েছে। লম্বাকৃতি ফুয়েল ট্যাংক, গোলাকৃতি হেডলাইট, পেছনের থেকে সামনের চাকা কিছুটা উচু। লং রাইডের উপযোগী আরামদায়ক রাইডিং পজিশন এবং নরমকুশন যুক্ত সীট। লম্বা হুইলবেজ এবং মোটা চাকা। যারা ক্রুজার মোটরসাইকেল পছন্দ করেন তাদের এক দেখাতেই ভালো লেগে যাবে। যেটা আমারও হয়েছিলো। আমার বাইকটি মিডনাইট ব্লু রং এর।
ডিজাইনের পরে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে ইনজিনের কথা। মোটরসাইকেলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৪৯ সিসির শক্তিশালী ইনজিন যেটি ১৪.৩ BHP শক্তি এবং ১২.৫Nm টর্ক তৈরী করতে পারে। গিয়ার ৫টি। মোটরসাইকেলটিতে আসলে বাজাজ পালসারের ইনজিন ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও শক্তিটা কিছুটা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। শহরের মধ্যে চলাচলে আমার কাছে যথেষ্ট আরামদায়কই মনে হয়েছে। দূরের পথে যাবার এখনও সুযোগ হয়ে ওঠে নাই, কিন্ত আমি আশা করি হতাশ করবে না। বাংলাদেশের মতো রাস্তায় চলার জন্য ক্রুজারটির ইনজিন যথেষ্ট শক্তিশালী এবং কার্যকরী।
বাইকটির পারফরমেন্স এবং আরামের কথা বললে একটি কথা বলতেই হয়। বাংলাদেশে বাজাজ পালসার জনপ্রিয় অনেকগুলো কারনে তার মধ্যে অন্যতম হলো তাদের প্রায় প্রতিটি মোটরসাইকেল আরামদায়ক। বাজাজ এভেন্জার তার ব্যতিক্রম নয়। নরম গদিযুক্ত সামনের নীচু সীট, রাইডিং পজিশন আপনাকে অসাধারন অনুভুতি দিবে। ক্রজারসুলভ উচু হ্যান্ডেল রাইডে আরামের পাশাপাশি আত্নবিশ্বাস জোগাবে। সামনের এবং পেছনের উভয় সাসপেনশনই নরম এবং আরামদায়ক। বাজাজের সাসপেনশনের কোয়ালিটি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। যারা বাজাজের মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছেন তারা জানেন বাজাজের সাসপেনশন অন্য যে কোন বাইকের থেকে সেরা। সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনে ড্রাম ব্রেক রযেছে। পেছনের মোটা চাকা ব্রেকিংয়ে একস্ট্রা গ্রিপিং দেয়।
আমি স্পীড লাভার নই, আর ক্রুজারমোটরসাইকেল অনেক জোরে চালানোর জন্যও নয়। তবুও ১০০কিমি/ঘন্টা অনায়াসে তোলা যায়। মাইলেজের বিষয়টি সেভাবে পরীক্ষা করা হয়নি। কেননা অধিকাংশ সময়েই শহরের মধ্যে চলাচল হয়েছে বেশি এবং ক্রুজার মোটরসাইকেল একটু বেশি জ্বালানি খরুচে হবে এটি স্বাভাবিক। তবুও গড় হিসেবে ৪৫কিমি/লিটার পাচ্ছি। হাইওয়েতে হয়তো এরথেকে বেশি পাওয়া যাবে।
হেডলাইটের আলো রাতের রাইডের জন্য যথেষ্ট। পেছনের সহযাত্রীর জন্য সীটটি যথেষ্ট লম্বা। পেছনের গ্র্যাবরেইলটিও অনেক কাজে লাগে। তবে সহযাত্রীর জন্য ব্যাকরেস্ট থাকলে হয়তো আরেকটু আরামদায়ক হতো। ক্রুজার হিসেবে সামনের চাকাটি আরেকটু মোটা হলে ভালো লাগতো। মোটরসাইকেলটির ডিজাইনে আরেকটু ক্রোমের ব্যবহার থাকলে বেশি সুন্দর লাগতো বলেই আমার মনে হয়েছে।
যেহেতু আমাদের দেশে দূরের পথ পাড়ী দেবার মতো রাস্তা এবং সুযোগ নেই বললেই চলে। তাই ক্রুজারের পাশাপাশি কমিউটার বাইকও দরকার যেটি বাজাজ এভেন্জার এ রয়েছে। লম্বা হুইলবেজের কারনে শহরের ভীড়ে চালাতে সামান্য কষ্ট হলেও বাকি সুবিধাগুলো আপনাকে এই কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। আর তাই বাইকটি এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট নিয়েই ব্যবহার করছি। ক্রুজার এবং কমিউটারের সংমিশ্রনে টেকসই এবং কম জ্বালানী খরচের ক্রুজার কেনার কথা যদি ভেবে থাকেন তাহলে চোখ বন্ধ করে Bajaj Avenger 150 Street কিনতে পারেন। আমার মতো আপনিও সন্তুষ্ট নিয়ে ব্যবহার করবেন এটি নিশ্চিত করেই বলতে পারি।