Bajaj Avenger 160 ABS ফিচার রিভিউঃ
ক্রজার বাইকের প্রথম এবং প্রধান বৈশিষ্ট্য হল আরামদায়কভাবে রাইড করতে পারা। "অ্যাভেঞ্জার" সিরিজ সম্পর্কে বলতে গেলে, এই সিরিজের সব বাইক প্রায় একই রকম। "এলিমিনেটর" (কাওয়াসাকি) এর সাফল্যের অনুপ্রেরণা থেকে ২০০৫ সালে বাজাজ তাদের নিজস্ব পণ্য "অ্যাভেঞ্জার" বাজারজাত করে। প্রথমে এটি ছিল ১৮০ সিসি তারপর ২০০ এবং ২২০। বাজাজ তাদের ইঞ্জিনের পাওয়ারের সাথে সাথে এই বাইকের গুণগত মান বাড়িয়েছে। Bajaj Avenger 150 Street ছিল Avenger সিরিজের একটি মডেল যা কয়েক বছর আগে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে বাজারজাত করা হয়েছিল। এটি ছিল ইন্ডিয়ার সবচেয়ে কম সিসি ইঞ্জিন এবং সবচেয়ে কম দামের ক্রুজার। এদিকে, এটি "অ্যাভেঞ্জার" সিরিজের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বাইকও বটে। ইঞ্জিনের দাম ও ক্ষমতা অনুযায়ী এটি তরুণ প্রজন্মের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা একটি বাইক। এখন সময় অনেক পাল্টেছে এবং বাইকারদের প্রান্ত থেকে বিভিন্ন চাহিদা দেখা যাচ্ছে। যার ফলে, Bajaj প্রেমীদের জন্য Bajaj Avenger 160 ABS এডিশন বাজারে আনা হয়েছে। যারা সমস্ত প্রয়োজনীয় ফিচারসসহ আধুনিক দিনের ক্রুজার বাইক চেয়েছিলেন তারা তাদের জন্য এই মডেলটি নিতে পারেন। আপনারা কি ফিচার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? তাহলে চলুন জেনে ফেলি।
ডিজাইন এবং লুকঃ
নতুন Avenger 160 ABS এর ডিজাইনটি অনেকটাই অ্যাভেঞ্জার ১৮০ এর সাথে মিলে যায়, অনেকে ব্লেই বসে হুবহু মিল রয়েছে। Avenger 160 ABS বাইকটিকে অনেক ক্ষেত্রেই ১৮০ মডেল থেকে আলাদা করা অসম্ভব। সমস্ত বডি প্যানেল, হুইল, হেডলাইট, টেইল লাইট, ট্যাঙ্ক এমনকি গ্রাফিক্সও ঠিক অ্যাভেঞ্জার ১৮০-এর মতো! তবে ভাল দিক হচ্ছে, যেহেতু ১৮০ এর সাথে মিলে যায় তাই এর বিল্ডকোয়ালিটি নিয়ে কোন চিন্তা করার কারন নেই। ১৮০ এভেঞ্জ্যার ব্যবহারকারী কখনও এই বাইকের পারফর্মেন্স এবং বিল্ট নিয়ে অভিযোগ করেন না। এটি বেশ বড় সাইজের বাইক এবং বাইকের ডিকেল, রাইডিং সীট এবং এরগনোমিক্স সবকিছুই ক্রুজার প্রেমীদের জন্য পর্যাপ্ত রয়ে গেছে। বাজাজ এই বাইকের হ্যান্ডেলবারটিকে আরামদায়কভাবে চালানোর জন্য ডিজাইন করেছে, এই বাইকে ক্রুজারের হ্যান্ডেল বার রয়েছে যা খুব আরামদায়কভাবে সিট থেকে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাম দিকে এটির হর্ন, টার্নিং ইন্ডিকেটর সুইচ, হেড লাইটের হাই-লো ভিম এবং পাসিং সুইচ রয়েছে। ডানে ইঞ্জিন কিল এবং ইলেক্ট্রিক স্টার্ট সুইচ.
ইঞ্জিন এবং ট্রান্সমিশন:
Bajaj Avenger 160 ABS ভেরিয়েন্টটি 160.4cc, একক-সিলিন্ডার, এয়ার-কুলড ইঞ্জিনের সাথে বাজারে আসে, যা 15 PS @ 8500 rpm সর্বোচ্চ শক্তি এবং 13.5 NM টর্ক তৈরি করতে পারে। এই ইঞ্জিনটিতে আরও রয়েছে টুইন স্পার্ক, ২টি ভালভ এবং সিঙ্গেল সিলিন্ডার এয়ার কুল ডিটিএস-আই ইঞ্জিন টেকনোলজি। এই বাইকে একটি বিশাল আকারের এয়ার ফিল্টার দেয়া হয়েছে। এটি সহজেই 5টি গিয়ার ট্রান্সমিশনের সাহায্যে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে চলতে পারে। Avenger 160 হাইওয়েতে 53.72kmp/l এবং কোম্পানির মতে শহরে 46.83kmp/l মাইলেজ দিতে পারবে।
বডি ডাইমেনশনঃ
Bajaj Avenger 160 ABS অ্যাভেঞ্জার ১৮০ এর মতো একই ডিজাইন নিয়ে বাজারে আসে তা আমরা আগেই বলেছি, এই কারনে এর বডি ডাইমেনশন প্রায় একই রকম। এই বাইকের ডাইমেনশন যথাক্রমে ২১৮৬ মিমি দৈর্ঘ্য, ৮০৬ মিমি প্রস্থ এবং ১০৭০ মিমি উচ্চতা । এই বাইকের সীট হাইট অ্যাভেঞ্জার ১৫০ বাইকের মতই যা ৭২৫ মিমি। এই বাইকটি বরাবরই মাঝারি উচ্চতার বাইকারদের জন্য একটি পারফেক্ট বাইক। আপনি যদি আরামদায়ক বাইক প্রেমি হয়ে থাকেন তবে এটি ১৪৮০ মিমি হুইলবেস এবং ১৯৬ মিমি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স সহ আপনার জন্য বাইকটি সেরা হতে পারে। যদিও টার্নিং রেডিয়াস বড় কিন্তু বড় এবং ভারী সাইজের কারণে আপনি আরামদায়ক রাইডিং উপভোগ করতে পারেন। এই বাইকটির কার্ব ওয়েট ১৫৪ কেজি। ফুয়েল ট্যাঙ্কটি ৩.৪ লিটার রিজার্ভ সহ ১৪ লিটার ফুয়েল বহন করতে পারে। আপনি জরুরী পরিস্থিতিতে ফুল ট্যাঙ্ক সহ ৬০০+ কিলোমিটার লং রাইড করতে পারবেন অনায়াসে।
সাসপেনশন এবং ব্রেক:
Bajaj Avenger 160 ABS-এর উভয় চাকায় অত্যন্ত কার্যকর সাসপেনশন রয়েছে। সামনের চাকায় টেলিস্কোপিক এবং পিছনের চাকায় রয়েছে টুইন সক সাসপেনশন। এটি আপনাকে ব্যালান্স, ব্রেকিং এবং আরামের সাথে রাইড করতে বেশ সাহায্য করবে।
ব্রাকিং এর জং Avenger 160 ABS বাইকে এবিএস চ্যানেলের সাথে 240 মিমি ডিস্ক ব্রেক দেয়া হয়েছে সামনের অংশে এবং পেছনের চাকায় ১৩০ মিমি ড্রাম ব্রেক রয়েছে। বলে রাখা ভাল, এই সিরিজের সব মডেল তৈরির শুরু থেকেই RLP সিস্টেম সহ বাজারে আসে। "রিয়ার হুইল লিফট-অফ প্রোটেকশন"-RLP মূলত একটি নিরাপত্তা ফিচারস যা কিছুটা ABS, CBS, Stability কন্ট্রোল ইত্যাদি ব্যাবস্থার মত। যে সকল বাইকে একক চ্যানেল ABS, বা CBS আছে, এই ফিচারসটি তাদের সাথে আরও ভালোভাবে কাজ করে।
হুইল এবং টায়ার:
Bajaj Avenger 160 ABS বাইকটিতে ১২স্পোক বিশিষ্ট এলয় হুইল ব্যবহার করা হয়েছে। সামনে ১৭ ইঞ্চি এবং পেছনের হুইল ১৫ ইঞ্চি। পর্যাপ্ত গ্রীপ সহ চওড়া টায়ার রয়েছে। টায়ারের সাইজ সামনে ৯০/৯০ এবং পেছনে ১৩০/৯০।
মিটার ক্লাস্টার:
Bajaj Avenger 160 ABS বাইকে অ্যানালগ স্পিডোমিটার সহ একটি সিঙ্গেল-পড ইন্সট্রুমেন্ট কনসোল দেয়া হয়েছে, যেখানে ট্রিপ মিটার এবং ওডোমিটারের মতো কাউন্ট প্রদানের জন্য একটি ডিজিটাল রিডআউট রাখা হয়েছে। ফুয়েল গেজ বাইকের ফুয়েল ট্যাঙ্কে স্থাপন করা হয়েছে, যার মানে এটি রাইডারের দৃষ্টিভঙ্গির এবং বাইএক্র সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে দেবে। যদিও অ্যানালগ, তবে ক্লাস্টারটি সহজে রাইড করার জন্য সকল তথ্য সরবরাহ করে।
শেষকথাঃ
Bajaj Avenger 160 ABS দুটি ভিন্ন কালার ভেরিয়েন্টের সাথে বাজারে লঞ্চ করা হয়েছিল। একটি হল ইবোনি ব্ল্যাক এবং অন্যটি হল স্পাইসি রেড। এই বাইকটিতে একটি আধুনিক ক্রজার হিসেবে প্রয়োজনীয় সমস্ত ফিচারস রয়েছে, যদিও এই বাইকটিতে হার্লির মতো রাইডিং ভঙ্গি নেই, তবে এই বাইকটির সামগ্রিক মেকিং ব্যবহারকারীদের অবশ্যই সন্তুষ্ট করতে পারে। ইন্ডিয়াতে পূর্বের সুনাম এবং চলমান বাজার অনুযায়ী এই বাইকটি বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে অবশ্যই দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকবে আসা করা যায়।