বাজাজ ডিস্কোভার ১০০ মোটরসাইকেল রিভিউ – সুরুজ জামান

পৃথিবীর সব দেশের মত বাংলাদেশেও বাইকের ব্যবহার হয়ে আসছে। বাইক এখন মানুষের একটি অতি প্রয়োজনীয় বাহন হিসেবে দাড়িয়েছে। সঠিক জায়গায় সঠিক সময়ে যাবার জন্য বাইক অনেক সাহায্য করে। এছাড়াও একেক জন একেক রকম ভাবে বাইকের ব্যবহার করে থাকে। কেউ ঘোরাঘুরি বা স্টাইলের জন্য বাইক ব্যবহার করে আবার কেউ নিজ কাজের জন্য প্রতিনিয়ত বাইক ব্যবহার করে। আবার বলতে গেলে এক ধরণের রোমাঞ্চ আছে বাইক চালানোর মধ্যে। সেই সকল দিক বিবেচনায় আমি আবার কেনো বাদ পড়বো। বাইক আমার কাছে প্রথমত অতি প্রয়োজনীয় একটি বাহন, সেই সাথে ভ্রমন পিপাষু ইচ্ছেটাও মেটানো বাহন। বলতে গেলে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করার মত।

আমি মোঃ সুরজ জামান, আমার বাসা বাঘা থানা, রাজশাহী জেলা। পেশায় একজন চাকুরীজিবী। সেই জন্য আমাকে প্রায় প্রতি দিনই অনেক পথ বাইকে ড্রাইভ করতে হয়। আমার কাজের গতিকে আরো বাড়িয়ে দেয় এই বাইক। তবে ছোট বেলা থেকে আমার বাইকের প্রতি একটা বিশেষ আকর্ষন ছিলো। কিন্তু সেটা ছাত্র অবস্থায় আমার কেনা হয়ে উঠেনি। তাই চাকুরী পাওয়ার সাথে সাথে আমি একটি বাজাজ ডিস্কোভার ১০০সিসি বাইক কিনে ফেলি। এই বাইকটি আমি দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ ব্যবহার করে আসছি। আমি এই বাইকটি ব্যবহার করে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি বলে আমি মনে করি। আর সেই গুলোই আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আজ।

প্রায় অনেক মানুষই বলে ইন্ডিয়ান বাইকের মধ্যে বাজাজ ডিস্কোভার ১০০সিসি বাইকের ইনজিন অনেক ভাল। আমিও সেটাই মনে করি। কারন এই বাইকের সিঙ্গেল সিলিন্ডার ও ফোর ষ্ট্রোক, ইনজিনের এয়ার কুলারও বেশ ভাল। এই বাইকের পাওয়ারও বেশ শক্তিশালী। তাই এর মান ও শক্তি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই এক কথায় বেশ ভাল। আমি বিগত তিন বছরে আমার কিছু বন্ধুদের ১০০ সিসির কমিউটার বাইকও চালিয়েছি কিন্তু আমার এই এই বাইকের মত শক্তিশালী মনে হয়নি। তাই আমার বাইকের ইনজিন পারফর্মেন্স আমার কাছে বেষ্ট বলে মনে হয়েছে। যদি শুধু ইনজিন দিয়ে বিচার-বিবেচনা করতে বলেন তবে আমি বলবো যে, যেকোন ব্যক্তি এই বাইকের ইনজিন পারফর্মেন্স নিয়ে কোন প্রকারের অভিযোগ করতে পারবে না।

আমার কাছে এই বাইকটি স্টাইলের দিক থেকে সে রকম না হলেও এর সাজানো গঠন যে কোন ব্যক্তিরই মনে ধরবে। বিশেষ করে যারা কমিউটার ক্যাটাগরির বাইক পছন্দ করেন। যে কোন বাড়ির ভদ্র ও ছিমছাম ছেলেটিকে যেমন বাড়ির সকলে ভালবাসে ঠিক তেমনটিই এই বাইকটিও। এই বাইকটি সকল বয়সের মানুষই ব্যবহার করতে পারে। দাদা, বাবা, ছেলে সকলেই এই বাইক ব্যবহার করতে পারে, এর সেই রকম ডিজাইন দিয়েই তৈরি। তাই এর ডিজাইন অতি ভাল বলে আমি মনে করি। এর সাথে বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি অনেক ভালো বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।

বাজাজ ডিস্কোভার ১০০সিসি বাইকটির সিটিং পজিশন বেশ ভাল। এই বাইকের চেসিস কিছুটা বড় হবার কারণে পেছনে দুজন মানুষ নিয়ে বেশ স্বাছন্দ্যে চালানো যায়। রাইডারের আসন তুলনামূলক সমান হওয়ার কারণে সিটে বসার পজিশন এমন হয় যে আপনি সহজে ক্লান্ত বোধ করবেন না। তাই আপনার বিরক্তের কোন কারনই নেই। বাইকটির হ্যান্ডেল যথেষ্ট আরাম দায়ক এবং এর সুইচ গুলোও বেশ ভাল কাজ করে। আমি তিন বছরে ছোট খাটো সমস্যা ছাড়া বড় ধরনের কোন সমস্যার দেখা পাইনি। বাইকটির কালার কম্বিনেশন এমন যে, যেকারো কাছে নেচারাল মনে হয়। এর সবকিছু মিলিয়ে যেমনটি আগে বলেছি সব বয়সই মানুষের সাথেই বাইকটি চমৎকার মানিয়ে যায়। দেখতেও বেশ সুন্দর দেখাই আমার কাছে সেটাই মনে হয়।

বাজারের আর সব ১০০ সিসি বাইকের তুলনায় এই বাইকটির কন্ট্রোল অনেক সহজ। আমি আস্তে বা জোরে যে ভাবেই চালাই না কেন এর কন্ট্রোল নিয়ে আমার চিন্তা নেই, এর ব্রেক গুলো বেশ ভাল কাজ করে। ব্রেকিং সাস্পেনশন বাইকের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। আর হ্যা এই বাইকের সামনে পেছনে দুটিই ড্রাম ব্রেক। তবে সামনের চাকাতে ডিস্ক ব্রেক হলে আরো ভাল হতো। তারপরেও ড্রাম ব্রেকের পারফর্মেনসে আমি সন্তুষ্ট। তাই এর উপর আমার কোন অভিযোগও নাই। তবে বেশি গতিতে বাইক ড্রাইভ করলে সামান্য কাপে/ঝাকুনি দেয়। কিন্তু আবার এর শকাপ গুলো বেশ ভাল খেলে তাই ভাঙ্গা রাস্তাতেও এর ঝাকুনি বোঝা যায় না। এই বাইকটির টায়ার অতি উন্নত তাই স্লিপ খায় না। আমি শহর, গ্রাম দুই রাস্তাতেই বাইক চালিয়েছি, আর আমার কাছে মনে হয়েছে সহজ সরল ডিজাইনের কারণে যে কোন বাঁক নিতে বা কাউকে সাইড দিতে এর কোন জুড়ি নেই। এর তেল খরচও বেশ কম। আমি এখন পর্যন্ত ৬০ কিমি পাচ্ছি। তাই তেলের দিক দিয়েও আমার কিছু বলার নেই। অন্য বাইকের তুলনাই এটি বেশ ভাল।

তবে এই বাইকটির আলো একটু কম কম। রাতে ড্রাইভ করা একটু সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়। এছাড়াও এর বড় একটি খারাপ দিক হলো বাইকটির চেইন এর মধ্যে ঘটঘট শব্দ হয়। আমার মনে হয় এই সমস্যাটা চেইন হয়তো কারো সাথে বাড়ি খাই। আর এটি আমার কাছে অতি বিরক্তকর একটি ব্যাপার। এই দিকটি দেখার দরকার। আর তাই এই বাইকটি সম্পর্কে বলতে গেলে এক কথায় বলতে পারি বাইকটির এই চেইন এর সমস্যা বড় সমস্যা আমার কাছে মনে হয়, আলোর সল্পতা ছাড়াও সামনের চাকায় যদি ডিস্ক ব্রেক হয় তবে ভাল হয়। এছাড়া আর সব কিছু বেশ ভালই আছে। এমনকি সার্ভিসিং সেন্টারের সকল কার্যক্রমও আমার কাছে বেশ ভাল মনে হয়েছে।

সর্বশেষে আমি আমার বাজাজ ডিস্কোভার ১০০সিসি বাইকটি তিন বছর চালিয়ে যে সকল সুবিধা ও অসুবিধা পেয়েছি সব কিছুর দিক বিবেচনা করেও বাইকটি আমার কাছে বেশ পছন্দের। এছাড়াও একটি বড় দিক হলো বাজারের অন্য সকল বাইকের তুলনাই এই বাইকটির দাম তুলনা মূলক ঠিক আছে এবং এর সকল দিকও বেশ ভাল। তাই এক কথায় বলতে পারি আমি আমার বাইকটি অনেক ভালবাসি এবং এই বাইকটি নিয়ে আমি বেশ মনের দিক দিয়ে খুশি আছি। তাই আপনারা যারা বাইক কেনার কথা ভাবছেন তারা এই বাইকটি চোখ বন্ধ করে কিনে ফেলতে পারেন। ধন্যবাদ

All BAJAJ bike price in bd

Bajaj Discover 100