বাজাজ ডিস্কোভার ১০০সিসি মোটরসাইকেল রিভিউ – আলতাফ আলী

শুরুতে আমার পরিচয় দেই। আমার পরিচয় আমি মোঃ আলতাফ আলী। পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী বাল্যকাল থেকেই বাইকের প্রতি আমার আগ্রহ একটু বেশি। বাইক ছাড়া যেন আমাকে শূন্য মনে হয়। সাধারন যাতায়াতে ও আমার ব্যক্তিগত কাজের জন্য আমি এই বাইকটি কিনি। আজ মোটরসাইকেল ভ্যালীর টিমের সাথে আমার দেখা হয়ে আমি তাদের কাছে আমার বাইকের গুণাগুণ ও তার পারফরমেন্স তুলে ধরি। আমি একজন সাধারন বাইকার। এটা আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত। আমি প্রোফেশনাল বাইকার না হলেও আমার এই অভিজ্ঞতা ও মতামত নতুন বাইক ক্রেতাদের জন্য বাইক কেনার ক্ষেত্রে ভাল হবে বলে মনে করি। ডিস্কোভার ১০০ সিসি বাইকটি আমার জীবনের চতুর্থ বাইক। এর আগে আমার টিভিএস মেট্রো, হিরো হোন্ডা, ডায়াং ইত্যাদি বাইক ছিল। বর্তমানে আমি বাইক ছাড়া চলতেই পারি না। আমি এবার অনেক ভেবে চিন্তায় ও পারফরমেন্স বিবেচনা করেই এই বাইকটি কিনি। প্রায় ৮ মাস যাবত আমি এ বাইকটি ব্যবহার করে আসছি। বাইকটি আমাকে সময় ও শ্রম দুটোই বাঁচিয়ে দেয়। মূলত এই বাইকটি শহরে ও গ্রামে দুই জায়গাতেই রাইড করে আরাম আছে। এছাড়া যে কোন বয়সের ব্যক্তির সাথে বাইকটি মানান সই। বাইকটি ব্যবহার করে আমি ৮ মাসে এর ভাল ও মন্দ দুই গুণাগুণ বুঝতে পেরেছি। এছাড়া আমি এ যাবত প্রায় ৫০০০ কিমি পথ চালিয়েছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার মতামত তুলে ধরার জন্য হাজির হয়েছি।

প্রথমেই বলা যায় যে, মূলত আমার চিন্তাধারা মুক্ত করার জন্য এ বাইক কিনা। সে দিক দিয়ে ইঞ্জিনের কথা আর কি বলবো ! আমি আগেও বলেছি যে এটা আমার জীবনের চতুর্থ বাইক। আমাকে আমার ৪ টা বাইকের মধ্যে এই বাইকের ইঞ্জিনটা ভাল লেগেছে। কেননা, ৮ মাসে এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনে আমার হাত দেওয়া লাগেনি। আর অন্যান্য ছোট খাটো সমস্যা গুলো আমি বাজারের পাশে মেরামত করেছি। আমার মতে ইঞ্জিনের পারফরমেন্স ভাল না হলে রাইড করতে ভাল লাগবে না। তাই আমি আমার এই ইঞ্জিন নিয়ে আমি মন থেকে খুবই খুশি। এখনো ইঞ্জিনে মেজর কোন সমস্যা নেই। আমার কাছে এ বাইকের ইঞ্জিনটা খুব শক্তিশালী মনে হয়েছে। কারন ২/৩ জন নিয়ে রাইড করলেও তেমন সমস্যা বোঝা যায় না। এক্ষেত্রে আমার অন্য বাইকগুলোতে ২ অধিক ব্যক্তি নিয়ে রাইড করলে অনেক সমস্যায় পড়তে হত। এছাড়া এই বাইকে আমি যে কোন সময় বেশি স্পিডে তুলতে পারি। ইঞ্জিনের শব্দটাও আমার মন ছুয়ে দিয়েছে, যা আমাকে অন্য কোন বাইক দিতে পারে নি। তাই আমি মনের দিক থেকে খুব খুশি। শোরুম থেকে বাইকটি কেনার সময় যে মাইলেজের কথা বলেছিল আমি তেমন মাইলেজ পাচ্ছি। তাই মাইলেজ বিবেচনার আমি সন্তুষ্ট। বাইক কেনার সময় সার্ভিসিং সেন্টার থেকে আমাকে বলেছিল ১ লিটার তেলে ৬০ কিঃমিঃ চলবে। আমি ঠিক তেমনই মাইলেজ পাচ্ছি।


ছোট বেলা থেকেই অনেক বাইক পছন্দ করেছি, কিন্তু Discover 100cc এই বাইকটি একটু বেশিই আমার মন কেড়ে নিয়েছে। সকল ডিজাইন দেখে আমার এই বাইকটি বেশি পছন্দ হয়েছে। ডিজাইন এর কথা বলতে গেলে এ বাইকটি আমার মনের মত। এছাড়া বাইকটির ডিজাইনের পাশাপাশি আমার কাছে বিল্ড কোয়ালিটি অনেক মজবুত মনে হয়েছে। বাইকটির পার্টসগুলো এবং প্লাস্টিকগুলো অনেক টেকশই ও মজবুত। এই বাইকটি ব্যবহার করলে সবাই অনেক ভাল অনুভুতি পাবেন, কারন এটি একটি আরামদায়ক বাইক। এছাড়া সিটিং পজিশনটা অন্যান্য বাইকের তুলনার অনেক ভাল। ৩ জন নিয়ে খুব সহজেই রাইড করা যায়। তাছড়া খুব সহজেই আমি বাইকে বসে মাটিতে পা দিতে পারি। এই বাইকের হ্যান্ডেলবার খুব ভাল যা আমাকে সুন্দর অনুভূতি এনে দেয়। তবে এই বাইকের সাসপেনশন ভাল না। খারাপ রাস্তায় বেশি ঝাকুনি মনে হয়। বাইকটির সুইচ গুলো দেখতে আমার খুব একটা ভাল লাগেনি। অন্যান্য বাইকের মত এই বাইকের সুইচ গুলো ব্যবহারে খুব কষ্ট হয়। রাতের বেলায় হেড লাইট থেকে আমি অনেক প্রচুর পরিমানে আলো পাই। এদিক থেকে আমি সন্তুষ্ট । এছাড়া, কন্টোলিং এর কথা বলতে গেলে বাইকটির ব্রেক ও কন্ট্রোল খুব ভাল। এজন্য আমাকে বেশি ভাল লাগে। খুব দ্রুত স্পিডে বাইকের মাথা একটু ভাইব্রেট করে, যা আমার অন্য বাইক গুলোতেও করত। এ বাইকে আমি সর্বোচ্চ ৯০কিমি গতিতে তুলেছি। এছাড়া আমি একদিনে প্রায় ১৫০ কিঃমিঃ পথ চালিয়েছি। এই বাইকে দীর্ঘক্ষন বসে থাকলে হাত,পিঠ,কোমর ব্যাথা করে। এছাড়া বেশি স্পিডে হাত ঝিনঝিন করে। বাইকটা যে কোন ব্যাক্তির সাথে মানান সই ।

বাইকটি আমি এক বার সার্ভিসিং করিয়েছি, কিন্তু বড় ধরনের সার্ভিসিং করার প্রয়োজন পড়েনি। সে জন্য সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে গিয়েছি। তার পরে আর কোন সমস্যা হয় নি। তবে আমি সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়ে দেখেছি তাদের কাজের মান, যন্ত্রপাতির সংখ্যা সন্তোষজনক। এছাড়া তাদের ব্যবহার ও অতিথি আপ্পায়ন দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। তারা সার্ভিসিং এর কাজ অনেক ভাল করে। তাদের কাজের মান আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে। বাইকের ডিজাইন, কোয়ালিটি, পারফরমেন্স বিবেচনার আমার কাছে মনে হয়েছে দামটা একটু বেশি। ১০০ সিসি বাইক হিসেবে দামটা অনেক বেশিই বলে মনে করি।
নতুন ক্রেতাদের জন্য আমার পরামর্শ এই যে, যদি কেউ ১০০ সিসির মধ্যে বাইক কেনার কথা ভাবছেন,তাহলে এই বাইকটি আপনি নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। কারন বাইকটি খুবই ভাল এবং এর পারফরমেন্স আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে। আমি ১০০ সিসির অনেক বাইক ব্যবহার করে দেখেছি হিসেবে জোর গলায় বলছি যে কোন সময় নিশ্চিন্তে এই বাইকটি সবাই কিনতে পারেন।

ভাল দিকঃ সিটিং পজিশন ভাল। ইঞ্জিন শক্তিশালী। খুব দ্রুত যাতায়াত করা যায়। ডিজাইন ভাল লাগে। পারফরমেন্স ভাল। সার্ভিসিং সেন্টার এর কাজের মান ভাল। ব্রেক ভাল। মাইলেজ বেশি পাওয়া যায়। রাতে হেড লাইটে আলো বেশি। সঠিক গতি তুলতে পারে। বাইকের বডির প্লাস্টিক গুলো অনেক মজবুত।
মন্দ দিকঃ দীর্ঘক্ষন রাইড করলে হাত ঝিনঝিন করে, এছাড়া কোমর, পিঠ, হাত ব্যথা করে। দাম বেশি। সুইচগুলো ব্যবহারে কষ্ট হয়। সাসপেনশন ভাল না।

পরিশেষে সবার সুস্থতা কামনা করে বিদায় নিচ্ছি, সবাইকে ধন্যবাদ।

All BAJAJ bike price in bd

Bajaj Discover 100