বাজাজ ডিস্কোভার ১১০ মোটরসাইকেল রিভিউ - মেহেদী হাসান

সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি মোঃ মেহেদী হাসান। পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার ব্যবসার কাজের জন্য ও ব্যক্তিগত কাজের উদ্দেশ্যে এই মোটরসাইকেলটি মূলত আমি কিনি। আমার মোটরসাইকেল এর নাম বাজাজ ডিস্কোভার ১১০ সিসি। এটি আমার জীবনের ১ম বাইক। এই মোটরসাইকেলটি আমি তাহেরপুর বাজার, বাঘমারা, রাজশাহীর একটি শোরুম থেকে কিনেছি। আমার ইচ্ছে ছিল নতুন কোন মোটরসাইকেল প্রথম বের হবার সাথে সাথেই কিনার। হঠাৎ দেখি নতুন ফিচারস নিয়ে বাজারে এসেছে নতুন মডেলের ডিস্কোভার ১১০ সিসির মোটরসাইকেল। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই এই মোটরসাইকেলটি আমি কিনবোই। তাহেরপুর বাজারে গিয়ে শোরুম থেকে রং টা পছন্দ করে এই মোটরসাইকেলটি কিনি। এই মোটরসাইকেল এর ডিজিটাল মিটারটি আমার খুব পছন্দের। এছাড়া এটি দেখতে প্রায় ডিস্কোভার ১২৫ সিসি মোটরসাইকেল এর মতই। আমার এই মোটরসাইকেলটি আমি তিন মাস যাবত ব্যবহার করছি প্রায় ৩,৫০০ কিমি পথ চালিয়েছি।



আমি এই মোটরসাইকেলটি ভাল পারফরমেন্স ও ভাল মাইলেজ পাবার আশায় কিনেছি। এই বাইকের ডিজাইনটা আমার কাছে পারফেক্ট মনে হয়েছে। আমি তিন মাস মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করে বুঝতে পেরেছি এর বডির প্লাস্টিকগুলোও অনেক মজবুত, যা খুব সহজে ভেংগে যায় না। এর বিল্ড কোয়ালিটি বেশ মজবুত। আমি মনে করি এই মোটরসাইকেলটি যে কোন বয়সের মানুষের সাথে মানানসই হবে। এছাড়া এই মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনের পারফরমেন্স খুবই ভাল। ১১০ সিসির মোটরসাইকেল হিসেবেও এটি অনেক ভাল শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। কারন এটি খুব শক্তিশালী। আমি নিজে অল্প কিছু সময়ের ব্যবধানে ৮০ কিমি স্পীডে নিমিষেই তুলতে পারি। এই মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনের শব্দটা অনেক সুন্দর। তাছাড়া অন্যান্য বাইকের মত এই ইঞ্জিনের ভেতরে কোন খারাপ শব্দ করে না। এই মোটরসাইকেলটির কন্ট্রোল অনেক ভাল। তবে ডিস্ক ব্রেক বা হাইড্রোলিক ব্রেক না। এই মোটরসাইকেলটির কন্ট্রোল অনেক ভাল। তবে ডিস্ক ব্রেক বা হাইড্রোলিক ব্রেক থাকলে আরো ভাল কন্ট্রোল করা যেত। অতি বেশী স্পীডে একটু ঝাঁকুনি মনে হয়, তবে এটি আমি এমন আমলে নেই নাই। কারণ আমি বেশি স্পীডে মোটরসাইকেল চালাই না। এক্ষেত্রেও আমি সন্তুষ্ট।

এই মোটরসাইকেলটি কেনার সময় আমাকে বলা হয়েছিল ১ লিটার তেলে প্রায় ৬০ কিমি পথ চলা যাবে। আমি এখন ঠিক তেমনই মাইলেজ পাচ্ছি। তেল খরচ কম হবে এটা ভেবেই আমি এই মোটরসাইকেলটি কিনেছিলাম। তবে কাচা রাস্তায় ৫০ থেকে ৫৫ কিমির মত মাইলেজ পাই। আমি মাইলেজ নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট আছি। এছাড়া আমার মোটরসাইকেলে বড় কোন সমস্যা পাই নাই। তবুও আমি সার্ভিসিং সেন্টারে একবার গিয়েছি, তারা আমার সাথে অনেক ভাল ব্যবহার করেছেন। তাদের কাজের মান দেখে ভাল মনে হয়েছে। এছাড়া আমি লক্ষ্য করে দেখেছি সেখানে যথেষ্ট পরিমানে যন্ত্রপাতিও রয়েছে। তাছাড়া একটি বিষয় আমার কাছে খারাপ লেগেছে, সেটি হল এই মোটরসাইকেল এর দাম একটু বেশি। এর সকল পারফরমেন্স বিবেচনা করে দামটা আর একটু কম হলে খুব ভাল হত। কেননা এই দামে অন্য কোম্পানি মোটরসাইকেল কিনলে ১২৫ সিসির মধ্যে ডিস্ক ব্রেকসহ পাওয়া যাবে।

এই মোটরসাইকেলটির সিটিং পজিশন খুবই ভাল ও বড়। সিট নরম হওয়ায় সিটে বসে অনেক আরাম আছে। এক সাথে ২ বা ৩ জন বসে চালালেও কোন সমস্যা হয় না। এছাড়া সিটে বসে আমি খুব সহজেই মাটিতে পা রাখতে পারি। কারন এটি খুব বেশি উঁচু না। এর সুইচ গুলো দেখতে অনেক সুন্দর এবং এগুলো ব্যবহার করতে আমার কোন সমস্যা হয় না। এছাড়া রাতে হেড লাইট থেকে প্রচুর আলো পাই। এই মোটরসাইকেলের হেড লাইটটি এল,ই,ডি লাইট। যা অন্য কোন ১১০ সিসির মোটরসাইকেলে নেই। এছাড়া এর ব্যাটারি কোয়ালিটি বেশ মজবুত ও টেকসই। আমি মোটরসাইকেলটি হাই রোডে সর্বোচ্চ ৮৫ গতিতে তুলেছি। তবে বেশি গতিতে আমার হাত একটু ঝিনঝিন করে। এছাড়া এক দিনে প্রায় ৯০ কিমি পথ চালিয়েছি। তবে দীর্ঘক্ষণ বসে চালালেই আমার হাতে, পিঠে, কোমরে ব্যথা করে না। এই মোটরসাইকেলটির সাসপেনশন আমার পছন্দ হয়েছে। কারণ খারাপ রাস্তায় একা একা চালালেও খুব একটা ঝাঁকুনি অনুভব করি না। তবে এর কন্ট্রোল খুব ভাল। এর চাকার গ্রিপ গুলো দেখতে অনেক সুন্দর। এই গ্রিপগুলো ভাল হবার কারণে ব্রেক করলেও চাকা পিছলায় না বা স্লিপ করে না। এর লুকিং গ্লাস থেকে আমি খুব সহজেই পিছনের দৃশ্য পরিষ্কার দেখতে পাই। এই মোটরসাইকেলের সেল্ফটি ভাল কাজ করে।
পরিশেষে বলতে চাই, যারা ১১০ সিসির মধ্যে মোটরসাইকেল কিনার কথা ভাবছেন, পরিশেষে বলতে চাই, যারা ১১০ সিসির মধ্যে মোটরসাইকেল কিনার কথা ভাবছেন, তারা নিশ্চিন্ত মনে এই মোটরসাইকেলটি কিনতে পারেন। কারণ এ বাইকের তেল খরচ খুব কম। এছাড়া, মোটরসাইকেলটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুবই ভাল। নিজের মোটরসাইকেল বলে বলছি না। আমি তিন মাস বাইকটি ব্যবহার করে এর ভাল গুণাগুণ বুঝতে পেরেছি। এছাড়া এই মোটরসাইকেলটির খারাপ দিকের চেয়ে ভাল দিক গুলোই বেশি।

ভাল দিকঃ ১/ তেল খরচ কম, ২/ ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল, ৩/ ডিজাইন ভাল, ৪/ সিটিং পজিশন ভাল, ৫/ সুইচগুলো দেখতে সুন্দর, ৬/ লুকিং গ্লাসে পরিষ্কার দেখা যায়, ৭/ এল ই ডি হেড লাইট আছে, ৮/ ডিজিটাল মিটার আছে, ৯/ উন্নত মানে ব্যাটারি রয়েছে, ১০/ সেল্ফ আছে।
মন্দ দিকঃ ১/ দামটা একটু বেশি, ২/ হাই স্পীডে হাত ঝিনঝিন করে।

কোম্পানির কাছে আমার সেই রকম কোন দাবি নেই। শুধু বলতে চাই দামটা আর একটু কম হলে ভাল হত। দাম কমার সাথে সাথে এই মোটরসাইকেলটির বিক্রয়ের হার দ্বিগুন বেড়ে যাবে বলে মনে করি। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার কথা এখানেই শেষ করছি।

All BAJAJ bike price in bd

Bajaj Discover 110