বাজাজ ডিস্কোভার ১১০ মোটরসাইকেল রিভিউ - মিলন আলী

প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু চাহিদা বা স্বপ্ন থাকে। তেমনি আমার জীবনে একটাই চাহিদা ছিল, সেটি হল অল্প মূল্যের মধ্যে একটা ভাল মাইলেজ সমৃদ্ধ মোটরসাইকেল কিনার। মাত্র এক মাস আগে সেই ইচ্ছাটি আমার পূরন হয়। আমাদের পরিবারের বিভিন্ন যাতায়াতের জন্য মূলত এই মোটরসাইকেলটি কেনা। আমার পরিচয় আমি মোঃ মিলন আলী। পেশায় আমি একজন কৃষক। আমার মোটরসাইকেল এর নাম বাজাজ ডিস্কোভার ১১০ সিসি। এই মোটরসাইকেলটি আমি “রাব্বী এন্টারপ্রাইজ” তাহেরপুর বাজার, বাঘমারা, রাজশাহীর একটি শোরুম থেকে কিনেছি। এই মটরসাইকেলটি আমার জীবনের প্রথম বাইক। অনেক দিন থেকেই ভাবছি মোটরসাইকেল কিনবো। পুরো টাকা জমাতে না পারায় একটু দেরি হয় কিনতে। আমি একটি গরু ১ বছর যাবত লালন-পালন করে তা বিক্রয় করে এই মোটরসাইকেলটি কেনার টাকা জমিয়েছি। আমার অনেক কষ্টের টাকা দিয়ে এই মোটরসাইকেলটি কিনেছি। আমার আগে থেকে কোন মোটরসাইকেল পছন্দ ছিল না। তবে ভেবে রেখেছিলাম মোটরসাইকেল কিনলে বাজাজ কোম্পানির কিনবো। আমার হাতে টাকাও চলে আসলো আর অন্যদিকে নতুন ব্যান্ডের মোটরসাইকেলও বাজারে চলে আসে। নতুন মোটরসাইকেল প্রথম বাজারে আসলে ভালই হবে, এই আশায় আমি ডিস্কোভার ১১০ সিসির মোটরসাইকেলটি কিনি। এই মডেলের মোটরসাইকেল আমাদের গ্রামে কারো নেই, এটা ভেবেও আমার ভাল লেগেছে। আমি এক মাসে প্রায় ৬৭০ কিমি পথ চালিয়েছি। আজকে আমি আমার মোটরসাইকেল এর এক মাসের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য হাজির হয়েছি। আমার রিভিউটি পড়ে বিভিন্ন তথ্য জানার পরে সাধারণ চালকেরা এই মোটরসাইকেল কেনার সময় উপকৃত হবেন।

আমি এখনো ভাল ভাবে মোটরসাইকেল চালাতে পারি না। মোটরসাইকেল চালানো শিখার জন্য আমাদের গ্রামে মটোল্যাব মাঠে প্রশিক্ষণরত রয়েছি। এই মটোল্যাব মাঠটি “মোটরসাইকেল ভ্যালীর” উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে থাকে। তারা আমাদেরকে ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। আমি এক মাস আগে সেখানে ভর্তি হই। আমি ইচ্ছে করলে আমার যে কোন বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়ে চালানো শিখতে পারতাম। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম নিজে মোটরসাইকেল কিনার পরেই চালানো শিখবো। মটোল্যাব মাঠে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি মোটরসাইকেল চালানো বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। তবে আমি এখনো পুরোপুরি ভাবে মোটরসাইকেল চালানো শিখতে পারি নাই। হয়ত আর কিছুদিনের মধ্যেই আমিও ভাল ভাবে চালাতে পারবো।



আমার মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুব ভাল। এর ইঞ্জিনটি অনেক শক্তিশালী। এর সিটে দুই বা তিন জন নিয়ে চালালেও ইঞ্জিন কোন সমস্যা করে না। আমি ১ মাসে এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনে কোন সমস্যা দেখতে পাই নাই। এছাড়া ইঞ্জিনের শব্দটাও আমার খুব ভাল লাগে। তবে আমি মনে করি ইঞ্জিন ভাল রাখাতে হলে ভাল মবিল ব্যবহার করতে হবে এবং সঠিক সময়ে মবিল পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে এর পারফরমেন্স সর্বদা ভাল থাকবে।

ডিজাইনের কথা বলতে গেলে এই ডিজাইনটা মোটামুটি আমার কাছে ভাল মনে হয়েছে। তাছাড়া এই মোটরসাইকেল এর প্লাস্টিক অনেক মজবুত। আমি এক দিন মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু উঠে দেখি মোটরসাইকেল এর কোন ক্ষতি হয় নাই। তখন আমার বাজাজ কোম্পানির উপরে আস্থা ফিরে আসে। মনে হল এই মোটরসাইকেলটি কিনে আমি ভূল করি নাই। এর পার্টস গুলোও অনেক মজবুত ও টেকসই। তেলের ট্যাংকারটাও মোটামুটি বড়। সব কিছু মিলিয়ে এটি দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। যে কোন বয়সের মানুষের সাথে খুব সহজেই এটি মানানসই।

এই মোটরসাইকেল এর সিটিং পজিশন বেশ বড় ও চওড়া। এতে করে আমি আমার পরিবার নিয়ে খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারি। এটিতে বসে যে কেউ খুব সহজেই মাটিতে পা রাখতে পারবে। কারণ এটি খুব একটা উঁচু মোটরসাইকেল না। আমি খুব আরাম এর সাথেই এটি চালাই। এর সুইচগুলো অনেক সুন্দর, যা ব্যবহার করতে আমার কোন রকম ঝামেলা হয় না। রাতে হেডলাইট থেকে আমি অনেক আলো পাই। যা আমাকে দিনের মতই দেখতে সুবিধা দেয়। বাইকটির হ্যান্ডেলবার অনেক ভাল অনুভূতি এনে দেয়। তবে দীর্ঘ যাতায়াতে আমার একটু সমস্যা হয়। আমার হাতে, পিঠে, কোমরে ব্যথা করে। আমি এক দিনে ৭৫ কিমি পথ অতিক্রম করেছি। এছাড়া আমি সর্বোচ্চ ৫৫ গতিতে তুলেছি। এই গতিতে চালিয়ে আমি কোন সমস্যা বুঝতে পারি নাই। এই মোটরসাইকেলটির সাসপেনশন খুব ভাল। অন্যান্য মোটরসাইকেল এর মত না, খারাপ রাস্তায় একা চালালেও তেমন ঝাঁকুনি লাগে না। তবে বলতে গেলে মাইলেজের দিক দিয়ে এই মোটরসাইকেলটি নাম্বার ওয়ান। এর তেল খরচ সত্যিই অনেক কম।

আমি আমার মোটরসাইকেলটি নিয়ে এক বারও সার্ভিসিং সেন্টারে যাই নাই। তবে ভাবছি সামের সপ্তাহে সার্ভিসিং সেন্টারে যাবো। এযাবত আমি একবার মবিল পরিবর্তন করেছি আমাদের বাজারের এক মেকানিক এর কাছে।

এই মোটরসাইকেল এর মাইলেজের দিক থেকে আমি খুবই সন্তুষ্ট। কারন মোটরসাইকেলটি কেনার সময় শোরুম থেকে বলেছিল এক লিটার তেলে ৬০ কিমি পথ চলবে। আমি পাকা রোডে ঠিক তেমন মাইলেজ পাই। কিন্তু কাচা রাস্তায় ৫০-৫৫ কিমি এর মত মাইলেজ পাচ্ছি। তবে এই দিক থেকে আমার কোন অভিযোগ নেই।

দামের কথা বলতে গেলে মোটরসাইকেলটির কোয়ালিটি ও পারফরমেন্স বিবেচনা করে দামটা আমার কাছে সঠিক বলে মনে হয়েছে। তবে বর্তমান বাজার পন্যের দাম বেশি হলে ক্রেতার সংখ্যা দিনদিন হ্রাস পায়। তাই আমি মনে করি দাম যদি একটু কমানো যায় পণ্য বিক্রয়ের হার বৃদ্ধি পাবে। মোটরসাইকেলটি শুধু মাইলেজ এর দিক থেকে নয়, এর সব কিছুই আমার কাছে মোটামুটি ভাল লেগেছে। এই মোটরসাইকেলটি কিনে আমি অনেক স্বাছন্দবোধ করি। এই মোটরসাইকেলটি আমি এক মাস চালিয়ে আমার চোখে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা দেখি নাই।

ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, কেউ ভাল মাইলেজ সমৃদ্ধ মোটরসাইকেল কিনতে চাইলে বাজাজ ডিস্কোভার ১১০ সিসির মোটরসাইকেলটি আমার মত চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে আমি আমার কথা শেষ করছি। সবাই ভাল থাকবেন, ধন্যবাদ।

All BAJAJ bike price in bd

Bajaj Discover 110