আমার বাইক চালানোর শুরুটা হয় টিভিএস মেট্রো দিয়ে যা আমি অনেকদিন ব্যবহার করেছি। সত্যি বলতে সেই বাইকটা খুব খারাপ ছিল না কিন্তু আমি পরিবর্তন চাচ্ছিলাম নতুন কিছুর পরিবর্তে তাই যখন খেয়াল করলাম যে পালসারের নতুন মডেল বাজারে আসছে মনে মনে অনেকটা সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম যে এবার পালসার কিনেই ফেলবো। তাই আজ থেকে প্রায় দুই মাস আগে আমি বাজাজ পালসারের নতুন মডেল পালসার নিওন ১৫০সিসি বাইক কিনে ফেলি এখন পর্যন্ত আমি অনেকটা সাধারন বাইকের মত চালিয়ে এই বাইকটা ১০০০ কিলোমিটার পার করে দিয়েছি। বলে রাখা ভাল যে আমার চাকরির প্রয়োজনে আমি বাইক ছাড়া একরকম অচল তাই আমাকে এমন একতা বাইক পছন্দ করতে হতো যে বাইকটা আমাকে সব সব ধরনের রাস্তায় যেকোন গতিতে বাইক চালানোর নিশ্চয়তা দিবে। এই দিক দিয়ে পালসার নিওন ১৫০সিসি বাইকটা আমাকে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে তবে কিছু দিক আমার মতে আরও ভাল হতে পারতো। একথা সত্য যে কোন বাইকই একেবারে পারফেক্ট আশা করাটা বোকামি ছাড়া কিছুই না কারন সবার রুচি/পছন্দ ভেদে কিছু না কিছু পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। গেল দুই মাসে আমার দেখা আমার বাইকের সবচেয়ে ভাললাগার দিকগুলা হলোঃ
-এর ইঞ্জিনের শক্তিটা বাইক চালানোর সময় ফিল করার মত
-লং ট্যুরে আমি অনেক আরাম পাই যা আমি আগের বাইকে পাইনি এবং আমি আশা করি যে সামনের দিনগুলাতে আমি আরও আরামদায়ক রাইড পাবো
-নতুন এই পালসারের ওজনের ব্যালেন্সটা অসাধারণ যা অন্য যেকোন বাইকের থেকে বেশ ভাল বলে মনে হয়েছে আর এই কারনে আমি কন্ট্রোলিং এর ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা পায়
-সিটিং পজিশন এবং হ্যান্ডেলবারের মধ্যে অসাধারণ একটা সামঞ্জস্য রয়েছে যা ১৫০সিসির একটা বাইক চালানোর ক্ষেত্রে অনেক সুবিধাজনক
একইসাথে যদি খারাপ দিক নিয়ে বলতে বলা হয় তবে আমি শুরুতেই বলে রাখতে চায় যে সরাসরি খারাপ বলার মত তেমন কোন দিক খুজে পায় নি তবে কিছু সমস্যা এবং কয়েকটি দিক আমি খুজে পেয়েছি যেগুলা আমার মতে আরও ভাল হতে পারতোঃ
-ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়ার পরে হাই পিক আপ দিলে অনেক সময় বাজে শব্দ হচ্ছে যেটাকে মিসফায়ার বলা চলে
-গিয়ার শিফটিং ঠিক আছে তবে আমি মনে করি সাধারন ইউজি৫ এর মত গিয়ার শিফটিং হলে সবার জন্যে অনেক সহজ হত
-কমন একটি ব্যাপার যা হয়তো সবাই বলে আমিও উল্লেখ করছি পালসারের ডিজাইনটা একই রয়ে গেল নিওনেও। শুধুমাত্র রঙ বদলিয়েছে কোম্পানী আবার কিটগুলা যদি ঠিকভাবে দিত তাতেও হয়তো এই বাইকটা সৌন্দর্য অনেক বাড়তে পারতো। কোম্পানীর কাছে আমার আন্তরিক আবেদন, বাইকের গেট আপ বা ডিজাইনের পরিবর্তনের ব্যাপারে সিরিয়াসলি চিন্তা করুন।
-হেডলাইটের লাল আলো আর চলে না বললেই চলে, কারন প্রায় সব বাইকারকেই বাইক নিয়ে আসার কিছু দিনের মধ্যেই এই লাল আলো বদলিয়ে এলইডি বাল্ব নিতে হয় এই কারনে আমি বলবো যে কোম্পানী যদি নিজে থেকেই এলইডি বাল্ব দিয়ে বাইক সাপ্লাই দেয় তবে তা কোনভাবেই মন্দ হবে না বরং চলমান বাজারে একধাপ এগিয়ে থাকাই হবে।
এখন যদি বলতে হয় যে ১৫০সিসির সেগমেন্টে আরও অনেক বাইক থাকার পরেও কেন আমি ঘুরেফিরে বাজাজ পছন্দ করলাম?
শুরুতেই আমি বলতে চায় যে আমি আগে থেকেই বাজাজ পছন্দ করি তাই অনেক আগে থেকেই চিন্তা করতাম যে পালসার বাইক হলে অনেক ভাল হতো তাই যখন শুনলাম যে পালসারের নতুন মডেল আসছে তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যে এবার নিয়েই ফেলবো কিন্তু রঙ ছাড়া কোনকিছুতে তেমন পরিবর্তন না থাকা আমাকে অনেক হতাশ করেছে।
মাইলেজ নিয়ে কথা বলতে গেলে আমি এই ব্যাপার নিয়ে অনেকটাই হতাশ কারন অন্যান্য ১৬৫সিসি বাইকে নতুন অবস্থায় অনেক ভাল মাইলেজ দেয় আমার এই বাইকের থেকেও সেখানে আমি হাইওয়েতে মাইলেজ পাচ্ছি ৩০ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাত্র। স্বভাবিকভাবেই শহরে চালানোর সময় মাইলেজ কিছুটা কম হবে। তবে বাজাজের মত ব্রান্ড হিসেবে আমি আশা রাখি সামনের দিনগুলাতে আমি আরও ভাল মাইলেজ পাবো।
গেল দুই মাসে আমি আমার বাইকটা একটানা রাইড করেছি ৩১৭ কিলোমিটার যেখানে সমস্যা বলার মত তেমন কোনদিক আমি খুজে পায় নি বরং আরাম, কন্ট্রোল এবং বাইকের অন্যান্য পারফরমেন্স উল্লেখ করার মত। একইসাথে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতি উঠিয়েছি ১১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা যেখানে আমি কোন্ রকম ভাইব্রেশন টের পায়নি কিন্তু গিয়ার বদলানোর পর পরই পুরো বাইকটাই কেমন জানি কেপে ওঠে। আমি আশা রাখি সামনের দিনগুলাতে আমার বাইকের পারফরমেন্সে অনেক পরিবর্তন আসবে এবং পালসার নিওন ঠিক একটি পালসারের মতই পারফরম করবে।