বাজাজ পালসার ১৫০ ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা ৮৫০০কিমি বিন্দু

আমি অনেক ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি যে আমার পরিবারের সদস্যরা বেশিরভাগই বাজাজ বাইক ব্যবহার করেন। আমার বাবা বাজাজ বাইকের খুব ভক্ত ছিলেন, বাজাজ ডিসকভার ১৩৫  বাইকটি আমার বাবা অনেকদিন ব্যবহার করেছেন এবং এখনও স্মৃতি হিসেবে সেই বাইকটি আমাদের বাসায় রয়েছে। এই দেখে আমিও বাজাজ বাইকের ভক্ত হয়ে গেলাম এবং উপলব্ধি করলাম যে এই ব্রান্ডের বাইকগুলো খুবই ভালো। যেহেতু একটু তরুণ তাই বাজাজের দেখতে সুন্দর বাইকটি আমি পছন্দ করি এবং সেটি হল Bajaj Pulsar। প্রথম যখন আমি বাইক কিনি তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে  Bajaj Pulsar বাইক কিনবো।  সে সময়ে যে লেটেস্ট পালসার ছিল সেটাই আমি ক্রয় করেছি এবং অনেক দিন ব্যবহার করেছি।  এরপরে আমি আর অন্য কোন ব্র্যান্ডে যাই নি।  বাজাজ পালসার দিয়ে আমার বাইকিং জগতের যাত্রা শুরু হয়েছে এবং গর্বের বিষয় যে আমি এখনো বাজাজ পালসার এর লেটেস্ট বাইকটি ব্যবহার করি।

কেন Bajaj Pulsar 150?

যেহেতু আমি শুরু থেকেই বলছি যে আমি Bajaj Pulsar 150  এর খুব ভক্ত তাই আমি এই বাইকটি নিঃসন্দেহে ক্রয় করেছি। আমি উপরের অংশে বলেছি যে আমার জীবনের প্রথম বাইক হচ্ছে Bajaj Pulsar  এবং এখন আমি বর্তমানে ২০২০ সালের Bajaj Pulsar 150 বাইকটি ব্যবহার করছি।  এই বাইক নিয়ে আমি এখন পর্যন্ত ১৪ মাসে রাইড করেছি ৮৫০০ কিমি। মোটরসাইকেলভ্যালী মাধ্যমে আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার এই বাইক নিয়ে ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।  আশা করি এর ফলে আপনারা এবার একটি সম্পর্কে ভালো ধারণা লাভ করতে পারবেন এবং বাইকের সমস্যাগুলো কোম্পানি খুব সহজেই বুঝে সেটা পরবর্তীতে ঠিক করতে পারবেন।

প্রথমেই আমি বলতে চাই Bajaj Pulsar 150 এর ভালো দিক নিয়ে

Bajaj Pulsar 150 বাইকের ডিজাইন আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। ডিজাইনের মধ্যে খুব বেশি চাকচিক্য নেই তবে যেটা রয়েছে সেটা যথেষ্ট এবং মার্জিত। আমি মনে করি যে এই বাইকটি নিয়ে যে কোন স্থানে, যেকোন রাইডারের সাথে খুব ভালোভাবে মানানসই হবে। অন্যদিকে পালসার বাইকটি আমাদের দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং এই জনপ্রিয়তা এমনি এমনি হয়নি অবশ্যই বাইকটির জনপ্রিয়তার জন্য ডিজাইনের ভুমিকা রয়েছে। কারণ একটি বাইকের প্রথম যে বিষয়টি আমাদের নজরে আসে তাহল বাইকের ডিজাইন।

এই বাইকের আরেকটি বিষয় আমার খুব ভালো লাগে তা হল এর ইঞ্জিন পারফরম্যান্স এবং মাইলেজ।  ১৫০সিসির বাইক হিসেবে Bajaj Pulsar 150 অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয়।  এদিকে আমরা জানি যে বাজাজ তাদের ইঞ্জিন অনেক নিখুতভাবে তৈরি করে যার কারণে বাইকের ইঞ্জিন থেকে খুব ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যায় এবং ইঞ্জিন অনেক স্মুথ আগের ভার্সনের থেকে। সেই কারণেই এই বাইকটি অনেক জনপ্রিয় ইঞ্জিন পারফরমেন্সের দিক থেকেও। এদিকে আমি মাইলেজ পাচ্ছি শহরের মধ্যে ৪৫ কিমি প্রতিলিটারের একটু বেশি এবং হাইওয়েতে পাচ্ছি ৫০ কিমি প্রতি লিটারের একটু বেশি। মাইলেজ নিয়েও আমি সন্তুষ্ট কারণ ১৫০সিসির বাইক থেকে ৪৫-৫০ কিমি গড়ে মাইলেজ পাওয়া অনেক ভালো ব্যাপার।

আমি পূর্বের পালসারের ভার্সনগুলো রাইড করেছি এবং সেগুলো থেকে আমার কাছে নতুন এডিশনের Bajaj Pulsar 150 বাইকটি অনেক স্মুথ ও আরামদায়ক মনে হয়েছে। সিটিং পজিশন বেশ প্রশস্ত যার কারণে রাইডার ও পিলিয়ন একত্রে আরামের সাথে বসে রাইড করা যায়। সিটিং পজিশন আমি আরও বেশি ভালোভাবে অনুভব করেছি যখন আমি এই বাইকটি নিয়ে একটানা ৩০০ কিলোমিটার রাইড করেছি। আমি আমার বাসা থেকে সিরাজগঞ্জ চায়না বাঁধের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে আবারো নিজের বাসায় একদিনে ফিরি এবং সেক্ষেত্রে আমার কাছে এ বাইকের সিটিং পজিশন থেকে খুবই আরাম অনুভব হয়েছে এবং কোন ব্যাকপেইন হয়নি।

আমি আমার বাইক নিয়ে যেখানেই যাই না কেন বাজাজের সার্ভিস সেন্টার বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় রয়েছে যার কারণে সার্ভিসিং নিয়ে বা বাইকের পার্টস নিয়ে আমার তেমন দুশ্চিন্তা করতে হয়না। এক শোরুম থেকে পার্টস না পেলে অন্য শোরুমে ঠিকই পাওয়া যায় এবং বাজাজের কাস্টমার সাপোর্ট আমার কাছে খুবই ভালো লাগে।

দাম অনুযায়ী ১৫০সিসির বাইক হিসেবে Bajaj Pulsar 150 খুবই ভাল একটি বাইক।  দামের দিক থেকে বিবেচনা করলে আমার মনে হয় যে এর উপরে আর কোন বাইক হয় না।  এখন আপনাদের পছন্দ ভিন্ন হতে পারে তবে আমি এই বাইকটি শুরু থেকে যেমন পছন্দ করি ভবিষ্যতেও ঠিক তেমনটাই করতে থাকবো বলে আমি আশাবাদী।


এবার বলি Bajaj Pulsar 150  এর কিছু মন্দদিক বা যেগুলো আরও উন্নত করার সুযোগ আছে।

শহরের রাইডে আমার কাছে হেডলাইটের আলো ঠিকই মনে হয় কিন্তু আমি যখন লং ট্যুরে বের হই তখন আমার কাছে এই হেডল্যাম্পের আলো অনেক কম মনে হয়। আমার একটানা ৩০০ কিমি রাইডে এই বাইক নিয়ে বাসায় ফেরার সময় সন্ধ্যা নেমে রাত হয়ে যায় এবং আমি অনুভব করি হেডল্যাম্পের আলোর ঘাটতি। হাইওয়েতে অন্যান্য বড় বড় যানবাহনের লাইটের কাছে আমার এই বাইকের হেডল্যাম্পের আলো কিছুই না। আমি লক্ষ্য করেছি যে এই সেগমেন্টে যে সকল বাইক রয়েছে সেগুলোর থেকে Bajaj Pulsar 150 বাইকের হেডল্যাম্পের আলো একটু কম। তাই আমার পরামর্শ থাকবে এই বাইকের হেডল্যাম্পের আলো যেন আরও বেশি শক্তিশালী করা হোক।

আরেকটি খারাপ লাগার বিষয় হলো যে আমি যখন এই বাইকটি দুই হাজার কিলোমিটার রাইড করি তারপর আমার একটি বাইকের যে সমস্যা দেখা দেয় তা হল বাইকের যে বডি প্লাষ্টিকগুলো রয়েছে যা বিভিন্ন নাট বোল্টএর সাথে সংযুক্ত সেগুলো দ্রুত লুজ হয়ে যায়। বিশেষ করে ভাঙা রাস্তায় রাইড করলে এই সমস্যাটা হয় এবং প্রতি দুই হাজার কিলোমিটার অন্তর অন্তর এ সমস্যাটা আমি অনুভব করি। আমি মনে করি যে বিল্ড কোয়ালিটির দিকে একটু নজর দেওয়া উচিত।

Bajaj Pulsar 150 বাইক নিয়ে আমার এই ছিল অভিজ্ঞতা। আসলে আপনাদের সাথে এত বেশি কথা শেয়ার করার কারণ হলো আমি এই বাইকটি খুবই পছন্দ করি এবং এ বাইকএর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করে আমি খুবই আনন্দিত হলাম। আশা করি আপনারাও আমারে রিভিউএর মাধ্যমে বাইকটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলেন এবং যদি কেউ এই বাইকটি কিনতে চান সেক্ষেত্রে তাদের একটু হলেও উপকারে আসবে বাইকের ভালো-মন্দদিক জানার পরে।

All BAJAJ bike price in bd

Bajaj Pulsar 150 SD