আমার নাম মোঃ সজল আলী। পেশায় আমি একজন মোটরসাইকেল মেকানিক। নাটোর সদর থানার ঝলমলিয়া গ্রামে আমার বাড়ি। বাল্যকাল থেকেই বাইকের প্রতি আমার আগ্রহ একটু বেশি। বাইক ছাড়া যেন আমাকে শূন্য মনে হয়। সাধারন যাতায়াতে ও আমার ব্যক্তিগত কাজের জন্য আমি এই বাইকটি কিনি। আজ মোটরসাইকেল ভ্যালী টিমের সাথে আমার দেখা হয়ে আমি তাদের কাছে আমার বাইকের গুণাগুণ ও তার পারফরমেন্স তুলে ধরি। এটা আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত। আমি প্রোফেশনাল বাইকার না হলেও আমার এই অভিজ্ঞতা ও মতামত নতুন বাইক ক্রেতাদের জন্য বাইক কেনার ক্ষেত্রে ভাল হবে বলে মনে করি। পালসার ১৫০ সিসি বাইকটি আমার জীবনের তৃতীয় বাইক। বর্তমানে আমি বাইক ছাড়া চলতেই পারি না। আমি অনেক ভেবে চিন্তায় ও পারফরমেন্স বিবেচনা করেই এই বাইকটি কিনি। প্রায় দেড় বছর যাবত আমি এ বাইকটি ব্যবহার করে আসছি। বাইকটি আমাকে সময় ও শ্রম দুটোই বাঁচিয়ে দেয়। শুধু শহরে বললে ভূল হবে, মূলত এই বাইকটি শহরে ও গ্রামে দুই জায়গাতেই রাইড করে আরাম আছে। বাইকটি ব্যবহার করে আমি দেড় বছরে এর ভাল ও মন্দ দুই গুণাগুণ বুঝতে পেরেছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার মতামত তুলে ধরার জন্য হাজির হয়েছি।
মূলত আমার চিন্তাধারা মুক্ত করার জন্য এ বাইক কেনা। সে দিক দিয়ে ইঞ্জিনের কথা আর কি বলবো ! আমি আগেও বলেছি যে এটা আমার জীবনের তৃতীয় বাইক। আমি মেকানিক হিসেবে ৩ টা বাইকের মধ্যে আমি এই বাইকের ইঞ্জিনটা ভাল বলব। কেননা, দেড় বছরে এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনে আমার হাত দেওয়া লাগেনি। আর অন্যান্য ছোট খাটো সমস্যা গুলো আমি নিজেই মেরামত করেছি। আমার মতে ইঞ্জিনের পারফরমেন্স ভাল না হলে রাইড করতে ভাল লাগবে না। তাই আমি আমার এই ইঞ্জিন নিয়ে আমি মন থেকে খুবই খুশি। এখনো ইঞ্জিনে মেজর কোন সমস্যা নেই। ইঞ্জিনটা খুব শক্তিশালী। আমি যে কোন সময় বেশি স্পিডে তুলতে পারি। এছাড়া ইঞ্জিনের শব্দটাও আমার মন ছুয়ে দিয়েছে, যা আমাকে অন্য কোন বাইক দিতে পারে নি।
শোরুম থেকে বাইকটি কেনার সময় যে মাইলেজের কথা বলেছিল আমি তেমন মাইলেজ পাচ্ছি। এজন্য মাইলেজ বিবেচনার আমি সন্তুষ্ট। বাইক কেনার সময় সার্ভিসিং সেন্টার থেকে আমাকে বলেছিল ১ লিটার তেলে ৫০ কিঃমিঃ চলবে। আমি কম-বেশি তেমন ই মাইলেজ পাচ্ছি।
অনেক দিন থেকেই অনেক বাইক পছন্দ করেছি, কিন্তু পালসার ১৫০ সিসির এই বাইকটি একটু বেশিই আমার মন কেড়ে নিয়েছে। সকল ডিজাইন দেখে আমার এই বাইকটি বেশি পছন্দ হয়েছে। ডিজাইন এর কথা বলতে গেলে এ বাইকটি আমার মনের মত। এছাড়া বাইকটির ডিজাইনের পাশাপাশি আমার কাছে বিল্ড কোয়ালিটি অনেক মজবুত মনে হয়েছে। বাইকটির পার্টসগুলো এবং প্লাস্টিকগুলো অনেক টেকসই ও মজবুত। এই বাইকটি ব্যবহার করলে সবাই অনেক ভাল অনুভুতি পাবেন, কারন এটি একটি আরামদায়ক বাইক। এছাড়া সিটিং পজিশনটা অন্যান্য ১৫০ সিসি বাইকের তুলনার অনেক ভাল। খুব সহজেই আমি বাইকে বসে মাটিতে পা পেতে সুবিধা হয়। এই বাইকের হ্যান্ডেলবার খুব ভাল যা আমাকে অসাধারণ অনুভূতি এনে দেয়। এছাড়া এই বাইকের সাসপেনশন ভাল। খারাপ রাস্তায় বেশি ঝাকুনি মনে হয় না। বাইকটির সুইচ গুলো দেখতে আমার খুব ভাল লাগে। অন্যান্য বাইকের মত এই বাইকের সুইচ ব্যবহারে তেমন কষ্ট হয় না। রাতের বেলায় হেড লাইট থেকে আমি বেশ ভালো আলো পাই। যা আমাকে সঠিক পথ চলতে সুবিধা দেয়। এছাড়া, কন্টোলিং এর কথা বলতে গেলে বাইকটির ব্রেক ও কন্ট্রোল খুব ভাল। এজন্য আমাকে বেশি ভাল লাগে। খুব দ্রুত স্পিডে বাইকের মাথা ভাইব্রেট করে না, যা অন্য বাইকে করে। এ বাইকে আমি সর্বোচ্চ ১১০ গতিতে তুলেছি। এছাড়া একদিনে প্রায় ৩০০ কিঃমিঃ পথ চালিয়েছি। এই বাইকে দীর্ঘক্ষন বসে থাকলে হাত,পিঠ, কোমর ব্যাথা করে। এছাড়া বেশি স্পিডে হাত ঝিনঝিন করে। বাইকটা যে কোন ব্যাক্তির সাথে মানান সই হবে । এছাড়া দেড় বছরে আমি আমার বাইকটি প্রায় ২০,০০০ কিমি চালিয়েছি।
বাইকটি আমি নিজেই বেশ কয়েক বার সার্ভিসিং করিছি, কিন্তু বড় ধরনের সার্ভিসিং করার প্রয়োজন পড়েনি। সে জন্য সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয় নি।তবে আমি সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়ে দেখেছি তাদের কাজের মান, যন্ত্রপাতির সংখ্যা সন্তোষজনক। এছাড়া তাদের ব্যবহার ও অতিথি আপ্পায়ন দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। তার সার্ভিসিং এর কাজ অনেক ভাল করে।
বাইকের ডিজাইন, কোয়ালিটি, পারফরমেন্স বিবেচনার আমার কাছে মনে হয়েছে দামটা একটু বেশি।
নতুন ক্রেতাদের জন্য আমার পরামর্শ এই যে, যদি কেউ ১৫০ সিসির মধ্যে বাইক কেনার কথা ভাবছেন,তাহলে এই বাইকটি আপনি নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। কারন বাইকটি খুবই ভাল। এবং এর পারফরমেন্স আমার কাছে খুব ভাল মনে লেগেছে। আমি একজন বাইক মেকানিক হিসেবে বলছি যে কোন সময় নিশ্চিন্তে এই বাইকটি কিনতে পারেন।
মাইলেজ বেশি পাওয়া যায়। সাসপেনশন ভাল। রাতে হেড লাইটে আলো বেশি। সুইচ গুলো দেখতেও অসাধারণ।
ভাল দিকঃ ইঞ্জিন শক্তিশালী। খুব দ্রুত যাতায়াত করা যায়। ডিজাইন ভাল লাগে। সার্ভিসিং সেন্টার এর কাজের মান ভাল। এর পারফরমেন্স ভাল। ব্রেক ও কন্ট্রোল ভাল।
মন্দ দিকঃ দীর্ঘক্ষন রাইড করলে হাত ঝিনঝিন করে, এছাড়া কোমর, পিঠ, হাত ইত্যাদি ব্যথা করে। দাম বেশি।
সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে আমার কথা শেষ করছি, সবাই ভাল থাকবেন। এই শুভ কামনায় বিদায়।