Bajaj Pulsar AS150 motorcycle technical review
ডিজাইন
খুটিনাটি কিছু বিষয় বাদ দিলে Pulsar AS150 আর Pulsar AS200 এর মধ্যে আপনি কোন অমিল খুঁজে পাবেন না। আইডেনটিক্যাল বললে ভুল হবে না। পশু সমাজের দলপতিকে ‘আলফা মেল’ বলা হয়। বাইকটির ডিজানের ক্ষেত্রে এই দর্শন মেনে তুলনামূলক লম্বা ধাঁচের এই বাইকে আপনি সুক্ষ কিছু প্লাস্টিকের কারুকাজ দেখতে পাবেন। প্রোজেক্টর হেডলাইট সাথে বড় মাপের উইন্ড স্কিন আপনাকে আলফা মেলের কথাই মনে করিয়ে দিবে।
বাইকটির ডিজাইন এর প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য বাইকের তুলনায় বেশ ভালো । অন্তত নতুনত্ব পাবেন আপনি। হ্যান্ডেল বার গ্রিপ ধরে আপনি বেশ আরাম পাবেন । পালসার রেগুলার মডেলে গিয়ার নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করেন যা এখানে ঠিক করে নেয়া হয়েছে। রাইডিং পজিশান আরামদায়ক এবং খাড়া । কিন্তু বাইকটির সিট কিছু উঁচা হবার কারণে খাটো মানুষের জন্য বাইকটি আরাম দায়ক হবে না। Bajaj Pulsar AS150 আপনাকে বড় মোটরসাইকেলের ভিজুয়াল অ্যাপিল দিবে
কন্ট্রোল
বাইক চালানোর সময় এর কন্ট্রোল আর হ্যান্ডেলিং নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে না। একটা প্রশান্তির অনুভূতি হবে আপনার। এই সেগমেন্টের অন্য যেকোনো বাইকের তুলনায় পাওয়ার আউটপুট ভালো। বাইকটি আসলে গতির দানব। ৬০০০ থেকে ৯০০০ RPM range বাইকটিকে নিয়ে গেলে দেখবেন মাথার উপর বাতাসের ধমকানি। আসলে তীব্র বাতাস আপনার হেলমেট ছুতে পারবে না বড় উইড স্ক্রিনের জন্য। এর MRF টায়ার আপনাকে চমৎকার গ্রিপ দিবে । গতির এই দানব কিন্তু শহরের ব্যাস্ত রাস্তাতেও আপনার কথা শুনবে বাধ্য ছেলের মতো।
ইনজিন
Pulsar AS150 ইঞ্জিন ১৪৯.৫ সিসির এয়ার কুল 4-valve DTS-i প্রযুক্তির। ইঞ্জিনের প্রশংসা না করলে অন্যায় হবে। 17 PS @ 9500 rpm এই সেগমেন্টের অন্যতম শক্তিশালী বাইকে পরিণত করেছে Pulsar AS150 কে। সাথে 13 Nm torque অন্য যেকোনো ১৫০ সিসির সাথে টক্কর দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এর পেটের সাথে লাগানো দৃষ্টির বাইরের এক্সহষ্ট এর ধিক ধিক শব্দ আপনাকে স্পোর্টস বাইকের কথাই মনে করিয়ে দিবে। আগের বা পুরাতন পালসারের ইঞ্জিনে যে ইন্ডাকশান নয়েজ ছিল তা এই মডেলে একদমই নেই। জোরে চালালে বা পুরাতন হলে আগের পালসারের ইঞ্জিনের সাউন্ড ভেঙ্গে যাওয়ার বা ইঞ্জিন নয়েজের অভিযোগ থেকে Pulsar AS150 মুক্ত। অনেক দিক থকেই আগের মডেলের থেকে এর ইঞ্জিন রিফাইন করা হয়েছে। ইঞ্জিনের NVH ( Noise, Vibration, and Harshness) অসাধারণ। হ্যান্ডেল বার আর ফুট প্যাডেলের ভাইব্রেশান জাপানি বাইকের মানের মতো না হলেও কাছাকাছি। CV Carburetor (Constant Velocity) বাইকটিকে এর শক্তি অনুপাতে অনেক জ্বালানী সাশ্রয়ী করে তুলেছে। বাইকটির ইঞ্জিন সবচেয়ে ভালো পারফর্মেন্স দেয় ৬০০০ RPM এ।
মনে করিয়ে দেই বাইকটি কিন্তু এডভেঞ্চার সিরিজের এর ১৭০ মিমি. গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স হাই ওয়ের স্পীড ব্রেকার এবং গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা বা অফ রোডে চমৎকার এসিষ্ট করবে। এর Power to weight ratio.9 PS / tonne হবার কারণে বাইকটি নিয়ে অফ রোডেও কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন।
ফীচার
সেমি ডিজিটাল কনসোল
Pulsar AS150 এর পার্ট এনালগ পার্ট ডিজিটাল দিয়ে instrument cluster এ এনালগ টেকনোমিটার কনসোল প্যানেলের একদম মাঝখানে রয়েছে। এর দুই পাশে ডিজিটাল প্যানেলে আপনি পাবেন speedometer, odometer, trip meter, fuel gauge এবং clock. গিয়ার সিফট লাইট এবং সারভিস রিমাইন্ডার ইন্ডিকের এর পাশাপাশি সাইড স্ট্যান্ড ইনডিকেটর বাড়তি পাওনা।
মনোশক সাসপেনশন
সামনের ৩৭ মিমি. টেলিস্কোপিক এন্টি ফিকশান সাস্পেন্সান এবং বাজাজ এই প্রথম ১৫০ সিসি কোন বাইকে monoshock suspension ব্যবহার করলো । সারা পৃথিবীতেই বেটার রাইড কোয়ালিটির জন্য এই monoshock suspension সমাদৃত। বাইকটির পেছনের চাকার ডিস্ক ব্রেকের অভাব সব সময়ই বোধ হবে। এই মাপের একটি বাইকে পেছনে ডিস্ক ব্রেক থাকা উচিৎ ছিল। বাইকটির সামনে ২৪৪ মিমি. ডিস্ক এবং পেছনে ১৩০ মিমি. ড্রাম ব্রেক ।
হেডল্যাম্প
বাইকটির মুল প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু Suzuki Gixxer SF এবং Yamaha Fazer FI V2.0 । সবচেয়ে বড় কথা হোল এই সেগমেন্টের বাইকের মধ্যে AS150 এর Projector Lamp আছে। স্ট্যান্ডার্ড হেড লাইটের তুলনায় এর আলো অনেক ভালো । আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে উজ্জ্বল আলোর প্রয়োজনীয়তা আশা করি ব্যাখ্যা করতে হবে না।
Quarter Fairing এবং Windscreen
Pulsar AS150 পালসার পরিবারের প্রথম ১৫০ সিসির বাইক যার quarter fairing রয়েছে। ফুয়েল ট্যাঙ্কের দুইপাশে মারাত্মক সুন্দর quarter fairing এর কারণে কোন মানুষের পক্ষেই একবার দেখেই চোখ ফিরানো সম্ভব না। এর পাশাপাশি বড় windscreen আপনাকে উচ্চ গতিতে বাতাসের ঝাঁপটা থেকে অনেক খানি রক্ষা করবে । এই দুটি বিষয় নিঃসন্দেহে বাইকটির ভিজুয়াল অ্যাপিল কে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।
মাইলেজ ও টপস্পীড
Pulsar AS150 এর ইঞ্জিন আসলে আগের রেগুলার 150 Dtsi এর রিভাইজ ভারশান। রেগুলার 150 Dtsi এর BHP যেখানে ছিল ১৫ নতুন AS150 তা ১৭ করা হয়েছে। তাই রেগুলার ভারশানের থেকে এর টপ স্পীড বেশী হবে এটাই স্বাভাবিক। রেগুলার ভারশানে যেখানে টপ স্পীড ছিলো ১১০ কিমি/ ঘন্টা এখানে অনায়াসেই আপনি ১১৫ /১২০ কিমি / ঘন্টা তুলে ফেলতে পারবেন যদিও কোম্পানি দাবি করে এর টপ স্পীড ১৩৫ কিমি/ ঘন্টা।
ফুয়েল ট্যাঙ্ক ক্যাপাসিটি ১২ লিটার। বাজাজ দাবি করে এর মাইলেজ ৬০ কিমি/ লিটার। এই বিষয়টি অনেক কিছুর উপরেই নির্ভর করে। তবে গড়ে ৪৫ কিমি/লিটার পেতে খুব বেশী কৌশল করতে হবে না।
ভালো দিক
নির্মান শৈলী অসাধারণ
প্রোজেক্টর হেড ল্যাম্প
ভিজুয়াল অ্যাপিল মুগ্ধ করার মতো
ইঞ্জিন খুব স্মুথ এবং কর্মদক্ষতাও ভালো
মন্দ দিক
গিয়ার পাচটির বদলে ছয়টি থাকলে ভালো হতো
পেছনের ট্যায়ার এর প্রতিদ্বন্দ্বী বাইকের তুলনায় অনেকটাই চিকন
পেছনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক থাকলে ভালো হতো।
শেষ কথা
পরিশেষে এ কথা বলা যায় Pulsar AS150 কোন মতেই ঠিক এডভেঞ্চার স্পোর্টস বাইক বলা যাবে না। এর ডুয়েল পারপাস টায়ার, অফ রোড সাস্পেনশান না থাকার কারণে এবং শুধু গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স দিয়ে আপনি আর যাই হোক এডভেঞ্চার বাইকের মতো যেকোনো রাস্তায় চালিয়ে মজা পাবেন না। তবে এর ইঞ্জিনের শক্তি, স্টাইল আর ডিজাইনের নতুনত্ব, ভিজুয়াল অ্যাপিল মিলিয়ে বাইকটির স্যাডেলে চেপে বসলে আপনাকে অন্য অনুভূতি দিবে যা এই সেগমেন্টের অন্যবাইকে আপনি পাবেন না।
সব কিছু মিলিয়ে টুরিং এবং রেসিং এর জন্য এই বাইক আদর্শ। এর হ্যান্ডেল আর সিটের পজিশানের কারণে আপনি খাড়া হয়ে বসার সুযোগ পাবেন ফলে দীর্ঘ সময় বাইক চালালেও আপনার শরীরের কোন পেশীতেই ব্যাথা অনুভব করবেন না। এর জ্বালানী সাশ্রয়ী দিকটিও উল্লেখযোগ্য। সম্ভবত এই দিকটির জন্যই বাইকের টায়ার মোটা করা হয়নি। যারা সব কিছু, সব সুবিধা এক প্যাকেজে( কমিউটিং, টুরিং, কখনো বা অফ রোডে ভ্রমণ বা রেসিং) চান তাদের জন্য এই বাইক আদর্শ। আপনি যদি তাদের মধ্য একজন হন তবে চোখ বন্ধ করে এই বাইক নিতে পারেন।