বাইক চালানোটা আমার সব সময়ের জন্য আনন্দের একটি বিষয়। আমাদের দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থার কথা বিবেচনায় নিয়ে আমি মনে করি যে মোটরসাইকেল একটি আরামদায়ক বাহন। তাই আমি আমার এই বাইকটা সহজেই যাতায়াত করার জন্য কিনে ফেলি। আমি মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম এবং একজন বাইক রাইডার। আমি বাইক রাইড করতে খুব পছন্দ করি এবং মাঝে মাঝে আমি আমার বাইক নিয়ে স্টান্ট করে থাকি তবে স্টান্টটা শখের বসে করি আমি প্রোফেশনাল স্টান্ট রাইডার না। বর্তমানে আমি ব্যবহার করছি বাজাজ পালসার এএস ১৫০ সিসি এই বাইকটি। ১০ মাস যাবত আমি এই বাইকটি খুব ভালো ভাবে ব্যবহার করছি। এর পূর্বে আমি ব্যবহার করেছি এপ্যাচি আর টি আর, সুযুকি জিক্সার সহ বিভিন্ন বাইক। যেহেতু আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি যে আমি এই বাইকটি প্রায় ১০ মাস ধরে ব্যবহার করে আসছি তাই আমি আপনাদের সাথে এই দশ মাসের রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই। আমার ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এই বাইকটি কেনার মুল কারন হল বাইকের প্রতি আমার ভালোবাসা ও অন্য রকমের এক অনুভুতি কিন্তু এই বাইকটির আউটলুক, অসাধারণ ডিজাইন এবং অনেক আরামদায়ক রাইডিং এর জন্য আমি এই বাইকটিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। এছাড়াও বাইকটির গ্রাফিক্স এবং বিল্ড কোয়ালিটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। বিশেষ করে চকচকে কালার, কার্ভ এবং এরো ডাইনামিক ডিজাইন আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। তাই আমি আর কোন দিকে না তাকিয়ে এই বাইকটি কিনে ফেলি।
বাইকটি যখন প্রথম চালানো শুরু করলাম তখন এটি অনেক আরামদায়ক একটি বাইক মনে হয়েছে। বাইকটির সিটিং পজিশনটা আমার খুব ভালো লেগেছে যদিও এটা লম্বা রাইডারদের জন্য আরামদায়ক, সিটিং পজিশন ও হ্যান্ডেলবারের কম্বিনেশনটাও বেশ দারুন। যে কোন ধরনের রাস্তায় আমি অনেক আরামের সাথে রাইড করতে সক্ষম হয়েছি এবং রাতে রাইড করতে গিয়ে এর প্রজেকশন হেডল্যাম্প থাকার কারনে আলোর কোন ঘাটতি আমি খুজে পায়নি। এছাড়াও ইলেকট্রিক্যাল সুইচগুলো যথাযথভাবে স্থাপন করা হয়েছে যা খুব অনায়াসেই ঝামেলাবিহীনভাবে
ব্যবহার করা যায়। তাই কম্ফোরট নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। দৈনন্দিন যারা বাইক ব্যবহার করেন বা যারা খুব ভালো বাইকার আছেন তারা জানেন যে কন্ট্রোলিং এর ফলে রাইড করে অনেক আরাম অনুভব করা যায় এবং এই দিক দিয়ে আমার বাইক আমাকে যথেষ্ট সন্তুষ্ট করেছে। বাইকটির টায়ারের সাইজটা নিয়ে আমি একদম সন্তুষ্ট না। এই রকম পাওয়ারফুল, এগ্রেসিভ বাইকের সাথে এই ধরনের টায়ার মানায় না। পেছনের টায়ারটা টপ স্পীডে ব্রেক করলে স্কীড করে যার ফলে আমি এর পেছনের টায়ারটা রিপ্লেস করতে বাধ্য হই এবং টায়ার রিপ্লেস করার পর স্কীড এর সমস্যাটা অনেকটাই দূর হয়ে গেছে এবং ভালো কন্ট্রোলিং পাচ্ছি। ব্রেকিংটা আমার কাছে মোটামুটি মনে হয়েছে স্মুথ রাইডিং এর জন্য ব্রেকটা বেশ সহায়ক কিন্তু যে কোন খারাপ পরিস্থিতির জন্য ব্রেকটা তেমন সহায়ক নয়। কিন্তু বাইকটির সাসপেনশন আমাকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করেছে। যে কোনো রাস্তায় অনেক আরামদায়ক এবং স্মুথ একটি সাসপেনশন। যদি কন্ট্রোলিং এবং কম্ফোরট সমস্ত কিছু বিবেচনা করি তবে আমি বলবো যে বাইকটি আমাকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
ইঞ্জিন পারফরমেন্স আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। কারেন্ট পিক আপ, যথেষ্ট পাওয়ার সমৃদ্ধ, গতির দানব এবং ১৫০ সিসির বাইক হিসেবে দুর্দান্ত মাইলেজ। আমি কখনই টপ স্পীডটা সেভাবে চেক করতে পারিনি তবে এটা অনেক তাড়াতাড়ি ১২০ কিমি প্রতি ঘন্টায় উঠে যায়। মাইলেজ এর বিষয়টা আমি তেমন প্রয়োজন অনুভব করি না তবে বর্তমানে আমি ৪৫ থেকে ৫০ কিমি প্রতি লিটারে মাইলেজ পাচ্ছি যা আমার কাছে সহনীয়।
যেহেতু আমার বাইকটা একেবারেই নতুনের মতোই আছে তাই সার্ভিসিং সেন্টারে যাওয়ার তেমন প্রয়োজন আমি অনুভব করিনি। তবে খুবই ছোট কিছু সমস্যার জন্য আমি সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি এবং আমি তাদের আফটার সেলস সার্ভিস এবং সার্ভিসিং মান নিয়ে সন্তুষ্ট। আমি মনে করি যে তারা একটি স্বনামধন্য ব্রান্ড হিসেবে তাদের খ্যাতি ধরে রেখেছে।
দীর্ঘ ১০ মাস ব্যবহার করার পর আমার বাইকের যে সমস্ত দিক গুলো ভালো লেগেছে সেগুলো হলঃ শক্তিশালী হেডল্যাম্প, বেশ ভালো সাসপেনশন, হ্যান্ডেলবার এবং হ্যান্ডেলবারের সাথে মিল রেখে এর সিটিং পজিশনটা। অন্যদিকে আমি বাইকটির কিছু সমস্যা খুজে পেয়েছি তার মধ্যে রয়েছে পেছনের টায়ারটা চিকন আমি পরে রিপ্লেস করে মোটা টায়ার ব্যবহার করছি। বাইকটির মাস্কুলার লুকের সাথে এই রকম টায়ার মিল খায় না। টায়ারটা আরও মোটা হলে ভালো হতো। শুধুমাত্র টায়ার এর সমস্যা ছাড়া এই পর্যন্ত আমার আর কোনো সমস্যা চোখে পড়েনি । আমি আমার বাইক নিয়ে অনেক খুশি এবং অনেক ভালোভাবে রাইড করতে পারছি।
যারা এই বাইকটি কিনতে চান তাদের কাছে আমার পরামর্শ থাকবে এই যে, বাইকটি দাম এবং অন্যান্য সব দিক দিয়ে ঠিক আছে কিন্তু এর সিট হাইট অনেক উঁচু তাই লম্বা রাইডার ছাড়া অন্যান্য রাইডারদের রাইড করতে সমস্যা হতে পারে। আমার মনে হয় ৫ ফিট ৫ ইঞ্জিন যাদের উচ্চতা তাদের এই বাইকটি রাইড করতে তেমন সমস্যা না হওয়ারই কথা।
এই ছিলো আমার রাইডিং অভিজ্ঞতা। আমার কাছে যে সকল বিষয় ভালো বা মন্দ লেগেছে সেগুলো অন্যান্যদের কাছে নাও লাগতে পারে।তবে আমি যে সমস্ত সমস্যায় পরেছি সেগুলো তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। সবাইকে ধন্যবাদ