(Hello there Assalamualaikum, This is Saifullah Sany . Hope You guys are doing good) । Bros কাহিনি যেটা হইছে সেটা হল যে আজকে আমি আমার নিজস্ব বাইক বাজাজ পালসার এনএস ১৬০ নিয়ে নিজের রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। আমি আমার এই মিসেস এনএসকে অনেক দিন যাবত রাইড করছি প্রায় ৮ মাস হবে আর এই ৮ মাসে আমি এই বাইকটাকে প্রায় ১৫ হাজার কিমি রাইড করেছি। তাই চিন্তা করলাম যে বাজাজ পালসার এনএস ১৬০ নিয়ে একটা রিভিউ দিই । যারা এনএস ১৬০ কিনবেন তাদের আশা করি এই রিভিউটা অনেক উপকারে আসবে। আজকে আমি এনএস এর মোট ১০টা বিষয় নিয়ে কথা বলবো। ১০টা বিষয়ের মধ্যে এনএস ১৬০ এর কোন জিনিসটা আমার কাছে ভাল লেগেছে কোন জিনিসটা আমার কাছে খারাপ লেগেছে সেগুলো নিয়েই মূলত আলোচনা করব। তাই চলুন আর দেরি না করে আমার মিসেস এনএস ১৬০ কে নিয়ে রিভিউ দিয়ে ফেলি।
১। ডিজাইন ও লুকস
এই ডিজাইন ও লুকসের কারণে এনএস ১৬০ আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে। প্রথম যখন এনএস ১৬০ বাংলাদেশের মার্কেটে ঢুকে তখন থেকেই এই বাইকটা কেনার জন্য আমার মন আনচান আনচান করছিলো। কারণ এটার লুকস, খুব দারুণ ডিজাইনের একটা লুকস এই বাইকের মধ্যে দেওয়া আছে। সামনের হেডল্যাম্পের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে হেডল্যাম্পের চিনে দুইটা সুন্দর পার্কিং লাইট দেওয়া আছে , আর এই লুকসটা আমার কাছে ওলফ এর মত দেখতে লাগে। এর পাশাপাশি পেছনের যে টেল ল্যাম্পটা সেটা ডিজাইনটাও একদম ইউনিক। এটা পালসারের সাইন বহন করে। তারপরে ফুয়েল ট্যংকারটা অনেক মাস্কুলার । আমি যখন বাইকটার উপর বসি তখন খুব মাস্কুলার অনুভব করি। শুধু একটা বিষয় নিয়ে আমার অভিযোগ সেটা হল এর মিটার কনসোল কেন ২০২১ সালে এসেও ফুল ডিজিটাল করা হল না। এটা নিয়ে আমার খুবই আক্ষেপ। বাজাজ এর উচিত তাদের মিটার কনসোল এর ডিজাইন পরিবর্তন করা। ওভার অল আমার কাছে এই বাইকের ডিজাইন , মাস্কুলার লুক খুবই ভালো লেগেছে। মূলত তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার জন্যই তারা এনএস ১৬০ কে এত সুন্দর ডিজাইন দিয়েছে।
২। বিল্ড কোয়ালিটি
পালসারের বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে কখনই সন্দেহ করবেন না এটা আমি নিজে ভাই মোহাম্মাদ সানি বলছি। কারণ আগের যে পালসার বাইকটা আমি ব্যবহার করতাম সেটা মধ্যেও আমি বিল্ড কোয়ালিটি খারাপ খুজে পাইনি। প্রতিটা জিনিসের কোয়ালিটি টপ ক্লাস । যেমন বলি বাইকের বডি চেসিস পেরিমিটার ফ্রেম দেওয়া আছে, এই সেগমেন্টে অন্যান্য বাইকে পাইপ হ্যান্ডেলবার দেওয়া থাকে কিন্তু এই বাইকের মধ্যে থ্রি পার্ট হ্যান্ডেলবার রয়েছে যেটা খুবই ভালো বিষয়। এখন পর্যন্ত আমার এই বাইকের কিছু পরিবর্তন করতে হয়নি শুধুমাত্র একটা ছোট বাম্পারের নাট পড়ে গিয়েছিলো সেটা মেজর কোন ইস্যু না।
৩। ইঞ্জিন পারফরমেন্স
এই বাইকের ইঞ্জিন ডিস্প্লেসমেন্ট হচ্ছে ১৬৩ সিসি এর পাশাপাশি এই ইঞ্জিনে রয়েছে ৪ স্ট্রোক, ৪ ভালভ, ওয়েল কুল্ড, ইত্যাদি অনেক কিছুই আছে । বাইকের স্পেসিফিকেশনে যে টর্ক ও ইঞ্জিন শক্তি উল্লেখ করা আছে সেটা পরীক্ষা করে দেখেছি বাইকের স্পীড ০-৬০ মাত্র ৫.৪১ সেকেন্ডে তুলতে পেরেছি আর ০-১০০ তোলার জন্য সময় পেয়েছি ১৩ থেকে ১৪ সেকেন্ড । এই বিষয়টা আমার ভালো লেগেছে এবং আপনাদের বলে রাখি যে আমি কিন্তু বাইক নিয়ে ওভার স্পীডিং করি না। আপনাদের ভাই মোহাম্মাদ সানি ১০০ থেকে ১১০ এর মধ্যে বাইকের স্পীড রাখার চেষ্টা করে। আমি এই বাইকের টপ স্পীড পেয়েছি ১২২ কিমি প্রতি ঘন্টা এবং আমি টপ স্পীড তোলার পক্ষপাতীও নই। আমি যেহেতু বেশি ট্রাভেল করে বেড়ায় সেজন্য আমার কাছে এই বাইকের এই ইঞ্জিন শক্তি ও এক্সেলেরেশন যথেষ্ট।
৪। মাইলেজ
আমি আমার এই মিসেস এনএস ১৬০ এর থেকে সর্বচ্চো মাইলেজ পেয়েছি ৪৩ এবং সর্বনিম্ন মাইলেজ পেয়েছি ২৮ কিমি প্রতি লিটারে। এনএস ১৬০ যদি আপনারা ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার আরপিএম এর মধ্যে রাইড করেন তাহলে আপনি এই বাইক থেকে অনেক ভালো মাইলেজ পাবেন ঠিক আমি যেমনটা পাই। যত বেশি আরপিএম বেশি রেখে রাইড করবেন তত বেশি মাইলেজ কমে যাবে । হাই রেভ করলে তেল বেশি খায় এটা স্বাভাবিক।
৫। রাইডিং কম্ফোরট না সিটিং কম্ফোরট
যদি সিটিং পজিশনের কথা বলি তাহলে সেটা যথেষ্ট পরিমাণে আরামদায়ক। আপনি লং রাইডের ক্ষেত্রে একটানা ২ -৩ ঘন্টা আরামে রাইড করতে পারবেন। যদি একটু কুজো হয়ে রাইড করেন তাহলে মাজার ঠিক উপরে পীঠের মাঝখানে ব্যথা করবে। আর যদি সোজা হয়ে সারাক্ষণ রাইড করতে পারেন তাহলে কোন ঝামেলা হবে না । আরামের জন্য আরেকটা যে বিষয় দরকার সেটা হল সিটের যে কুশেনিং । এনএস ১৬০ এর যে কুশেনিং দেওয়া হয়েছে সেটা যথেষ্ট পরিমাণে শক্ত তাই যদি বেশিক্ষন বসে থাকেন তাহলে একটু সমস্যা অনুভব করতে পারেন। আর পিলিয়নের সিটিং পজিশন নিয়ে যদি বলি তাহলে সিটে বসে অনেক মজা আছে কিন্তু সিটিং পজিশন অনেক শক্ত। যার ফলে অনেকক্ষণ বসে থাকলে জায়গামত জ্বালা পোড়া অনুভব করতে পারেন। আরেকটি বিষয় সেটি হল যে এই বাইকের সিটিং পজিশনের উচ্চতা একটু বেশি তাই তাদের উচ্চতা ৫ ফিট ৭ ইঞ্চি এর উপরে তাদের জন্য বাইকটা আরামদায়ক হবে বলে আমি মনে করি।
৬। ব্রেকিং
এনএস ১৬০ এর ব্রেকিং কেমন? ইঞ্জিন পাওয়ার তো ঠিকই আছে কিন্তু ব্রেকিং নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন থাকে যে আসোলেই ব্রেকিংটা ভালো কি/না? সত্যি কথা বলতে আমি প্রথমের দিক এনএস ১৬০ থেকে খুব ভালো ব্রেকিং পেতাম না এবং আমার কাছে ব্রেকিং ভালো লাগত না। আমার বাইক ডাবল ডিস্ক নন এবিএস ভার্সন । যে ভার্সনে এবিএস আছে সেটাতে আশা করা যায় অনেক ভালো ব্রেকিং পাওয়া যাবে। আমি যখন এনএস ১৬ বাইকে প্রথমের দিকে ব্রেকিং করতাম তখন একদমই কনফিডেন্স পেতাম না , ব্রেকিং করলে মনে হত যে বাইক থেকে পড়ে যাবো কিন্তু ৬৪ জেলা ট্যুর দেওয়ার পরে এনএস ১৬০ এর ব্রেকিং নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস পাই। ভালো ব্রেকিং না পাবার জন্য শুধু বাইকের ব্রেকিং সিস্টেমের দোষ দিলেই হবে না এর সাথে কিছু বিষয় যুক্ত আছে যেমন- এই বাইকের সামনের টেলিস্কোপিক ফর্কটা তেমন মোটা না , টায়ারের সাইজ চিকণ যেটা আরেকটু মোটা দিলে বেটার হত এবং ব্রেকিং ভাল পাওয়া যেত । চাকার গ্রিপের পারফরমেন্স ভাল পেয়েছি। আমি মনে করি বাজাজ কোম্পানীর উচিত এই এনএস ১৬০ বাইকের ব্রেকিং আরও উন্নত করা। এই সেগমেন্টে অন্যান্য বাইকের থেকে এনএস এর ব্রেকিং একটু দুর্বল তবে এই বাইকের একটা ভালো দিক হল এই ওজন বেশি এবং ভালো মানের বডি ফ্রেমের জন্য বাইকটা কড়া ব্রেক করলে পেছনের চাকা কাপে না।
৭। ইঞ্জিন সাউন্ড
আমি যখন লো আরপিএম এ বাইকটা রাইড করি তখন আমার কাছে এই বাইকের ইঞ্জিন থেকে খুব বেশি শব্দ হয় না একদম শান্ত শিষ্ট মনে হয় বাইকটাকে। অনেক স্মুথ একটা বাইক এবং এর ইঞ্জিন শব্দটাও স্মুথ । ৬ হাজার আরপিএম ক্রস করার পর বাইকের শব্দ একদমই পরিবর্তন হয়ে যায় এবং স্পোর্টই একটা শব্দ অনুভব করা যায়।
৮। ভাইব্রেশন
এনএস ১৬০ বাইকে সব বাইকের মতই ভাইব্রেশন আছে । বাইকের ভাইব্রেশন খুবই মন্দ একটা ইস্যু কিন্তু মিসেস এনএস ১৬০ এর ক্ষেত্রে ভাইব্রেশন অনেক কম এনএস ১৬০ এর ইঞ্জিন অনেক বেশি স্মুথ এবং অনেক বেশি রিফাইন্ড । বাজাজ কোম্পানী এনএস ১৬০ এর ইঞ্জিনে খুব ভালো সময় দিয়েছে বুঝা যাচ্ছে । বাইকের ভাইব্রেশন শুরু হয় ৬ হাজার আরপিএম পার হবার পর তাও আবার সামান্য হ্যান্ডেলবারে হয় এবং ৮ হাজার পার হবার পর ফুট রেস্টে ভাইব্রেশন অনুভুত হয় তারপরে ৯ হাজার আরপিএম এ ভাইব্রেশন অনুভূত হয় ফুয়েল ট্যংকার থেকে । তবে এটা অবশ্যই বলতে হবে যে এনএস ১৬০ বাইকের ভাইব্রেশন তুলনামূলক অনেক কম।
৯। মেইন্টেনেন্স খরচ
বাইকের মেইন্টেনেন্স খরচ আমার কাছে তুলনামূলক কম মনে হয়েছে। আমরা যে জিনিসগুলো বেশি পরিবর্তন করে থাকি সেগুলোর মধ্যে সামনের পেছনের ব্রেক শু, ইঞ্জিন ওয়েল, ওয়েল ফিল্টার, এয়ার ফিল্টার । তো সব মিলিয়ে আমি হিসাব করে দেখেছি যে বাইকের মেইন্টেনেন্স খরচ একটু কম ।আমি ১৪ হাজার এর পর সামনের ব্রেক শু পরিবর্তন করেছি এবং পেছনেরটা ব্রেক শু এখনও স্টক থেকে গেছে।
ইঞ্জিন ওয়েল এর হিসাব যদি বলি তাহলে সেটা ওয়েল ফিল্টার সহ বাজাজ ডিটিএসআই ইঞ্জিন ওয়েল দিয়ে প্রতিবার খরচ হবে ৯০০ টাকা । মিনারেল ইঞ্জিন ওয়েল এর ক্ষেত্রে যদি শেল এডভান্স ব্যবহার করেন তাহলে সেই খরচ একটু কমে আসবে।
১০। পার্টস এবং সার্ভিস
এনএস ১৬০ নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ঘুরেছি এবং কোথাও পার্টস এর জন্য ঝামেলায় পরিনি। সব জায়গায় কম বেশি পার্টস পেয়েছি । আমি যে সমস্যায় ভুগেছি সেটা হল সার্ভিস নিয়ে । আমি শুধুমাত্র ঢাকায় তেজগাঁও তে সার্ভিস করিয়ে সন্তুষ্ট , তাছাড়া অন্য কোথাও বিশেষ করে ঢাকার বাইরে এই বাইকের সার্ভিস করে সুবিধা পাইনি। দক্ষ কারিগরের অভাব , যথেষ্ট পরিমাণে ঠিক করার সরঞ্জাম নাই যার কারণে এনএস এর সার্ভিস নিয়ে আমি খুব বেশি সন্তুষ্ট না।
এনএস ১৬০ নিয়ে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য
বাইকের ব্যাটারী এর পাওয়ার সাপ্লাই এর জন্য তেমন সাপোর্ট দেয় না । যেমন সকাল বেলা স্টার্ট দিতে একটু সমস্যা হয় বিশেষ করে শীতকালে স্টার্ট দিতে গেলে এক প্রকার যুদ্ধ করতে হয় । কিক স্টার্ট ছাড়া উপায় থাকে না ।
এনএস এর টারনিং রেডিয়াস অনেক কম । এর বড় একটা দানবে ঘুরাতে অনেক কষ্ট হয়
এই ছিলো আমার মিসেস এনএস ১৬০ কে নিয়ে রিভিউ। আবারো আমি আমার এনএস ১৬০ বা অন্য কোন বাইক নিয়ে আপনাদের সামনে আসবো। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।