Bajaj V15 Motorcycle
বাজাজ তার নতুন বাইক V15 নিয়ে যে কৌশলটি করেছে তা একেবারেই কর্পোরেট কৌশল এবং এবারই প্রথম না, এর আগেও করেছে। ১৯৭৯ সালের শুরুর দিকে তারা
ইন্ডিয়া ১৯৯১ সালের মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করার পরে বাজাজ ক্রমাগত বেশ কিছু ভুল সিধান্ত নিয়ে নেয়। যেমন চেতক বন্দ করে দেয়া, জনপ্রিয় বাইক ডিস্কভার ১৩৫ এর উৎপাদন বন্দ করে দেয়া আরও অনেক নীতিগত সিধান্তে তারা ভুল করে ফেলে। ভুলের মাসুল দিতেই হবে। এক সময়ের নাম্বার ওয়ান কোম্পানি এখন তিন নাম্বারে। টু হুইলারে তাদের মার্কেট শেয়ার বর্তমানে ১৯%।
যত পটুই সাতারু হোক স্রোতে পড়লে হাবুডুবু খেতেই হবে। বাজাজ চেষ্টা করছে দেশপ্রেম আর আর নতুন কিছু দিয়ে আবার টু হুলার জগতের দখল নিতে। এবার বাজাজ বেশ গর্বের সাথে বলছে ‘invincible (অপরাজেয়)‘ . কিন্তু কাকে ? বিমানবাহী রণতরী INS Vikrant কে , না কি তাদের নতুন বাইক V15 কে ? বিমানবাহী রণতরী INS Vikrant সত্যিই অপরাজেয় ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৃটিশ রয়্যাল নেভির হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। গৌরবময় ইতিহাস আছে সেই সময়ের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বৃটিশ নেভি রণতরীটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করলে ১৯৫৭ সালে ইন্ডিয়ান সরকার তা কিনে নেয় এবং ১৯৬১ সালের নভেম্বরে তা ইন্ডিয়ান নেভিতে কমিশনড প্রাপ্ত হয়। ১৯৬১ সালে গোয়া থেকে পর্তুগিজ কলোনি উদচ্ছেদে এবং ১৯৭১ সালে ইন্দো- পাকিস্থান যুদ্ধে গুরুত্তপূর্ন ভুমিকা রাখে এই রণতরী। ১৯৯৭ সালে ডিকমিশনড করা হয় এবং ২০০৪ সালে স্ক্রাপড ইয়ার্ডে পাঠান হয়। সে হিসাবে এই রণতরী ছিল অজেয়। বাজাজ ৬০ কোটি রুপি দিয়ে ১৯৫০০ টনের এই স্ক্রাব মেটাল কিনে নেয় এবং V15 এর শুধু ট্যাঙ্ক তৈরিতে এই মেটাল ব্যবহার করা হয়।
অন্যদিকে BAJAJ V15 বাজাজের নতুন মোটরসাইকেল । ১৪৯.৫ সিসির DTS-I প্রযুক্তির ১২ হর্স পাওয়ারের ৭৫০০ RMP এর ১৩ Nm টর্কের একটা বাইক । কার্ব ওয়েট ১৩৫ কিলো। বাইকের ইঞ্জিন দেখতে বেশ বড় কোন মতেই ১৫০ সিসির বাইকের ইঞ্জিন মনে হবে না ।অনেকটা ২০০ বা ২২০ সিসির ইঞ্জিনের মতো।
ডিজাইনঃ
Bajaj V15 এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে প্রথম দর্শনে আপনাকে ধাঁধায় ফেলে দিবে। সাধারণত একটা টার্গেট গোষ্ঠী ঠিক করে বাইকের ডিজাইন করা হয়। যেমন পালসার এ এস ১৫০ এর টার্গেট গোষ্ঠী তরুণ প্রজন্ম। বয়স্ক মানুষের ব্যাক্তিত্ত্বের সাথে এই বাইক যায় না। আবার রেগুলার পালসার ১৫০ সব বয়েসের মানুষের সাথেই চমৎকার মানিয়ে যায়। কিন্তু Bajaj V15 কে আপনি সেভাবে ক্লাসিফাইড করতে পারবেন না। এর সামনের ১৮ ইঞ্চি এবং পেছনের ১৬ ইঞ্চি চাকা আপনার মনে ক্রুজার বাইকের ধারণা দিবে কিন্তু সার্বিক ক্রুজার বাইকের যে রিলাক্স ভাব আপনি এতে তা পাবেন না। বরং এর ডিজাইনে এবং পেছনের সিটে removable seat cowl দেখে আপনার মনে হতে পারে এটি একটি ক্যাফে রেসার (café racer) বাইক। ক্যাফে রেসার এমন ধরণের বাইক যেখানে স্পীড আর হ্যান্ডেলিং কে প্রাধান্য দেয়া হয় কম্ফোর্টের বদলে। বৈপরিত্ব কি ধরতে পারলেন? ক্রুজারে প্রাধান্য দেয়া কম্ফোর্ট আর ক্যাফে রেসারে প্রাধান্য দেয়া হয় গতি আর হ্যান্ডেলিং এ। কিন্তু বাজাজ আবার দাবি করছে এটি কমিউটার বাইক। যদি Bajaj V15 কে কমিউটার বাইক ধরে নেই তবে বলতেই হয় বাজাজ চমক দিয়েছে কারণ ১৫০ সিসির কমিউটার সেগমেন্টে এই ধরণের ডিজাইনের বাইক আপনি রাস্তায় আর একটিও দেখবেন না।
আসলে বাজাজ এই বাইকটির ডিজাইন করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। আর যাই হোক এটি কমিউটার বাইকের ডিজাইন না। Bajaj V15 এর যে ডিজাইন দেয়া হয়েছে তার সাথে neo-retro design এর মিল সর্বাধিক। ইন্ডিয়ান আইকনিক ব্যান্ড রয়াল এনফিল্ডের (Royal Enfield Continental GT) বা BMW R nineT এর ডিজাইন দেখলেই আপনারা তা বুঝতে পারবেন। neo-retro design এর বাইকে removable seat cowl দিলেই কি কমিউটার বাইক হয়?
neo-retro design এর সাথে সম্পুর্ন বেমানান হেডলাইট সাদাসিদা একটা গোল হেডলাইট দিলেই বরং বেশী মানাতো । অন্তত ৮০ এর দশকের ক্লাসিক মডেলে সাথে এর তুলনা করতে পারতেন পেছনের সিট কাওল তুলে দিলে এবং এর ডিজাইনের সর্বত্রই যেনো দাম কমানোর সর্বাত্মক চেষ্টা পরিলক্ষিত হয় । যেমন ধরুন instrument panel, এনালগ স্পীড মিটার , অডোমিটার আর ফুয়েল গেজ দিয়েই শেষ করা হয়েছে। কিন্তু যে অজেয় রণতরীর নাম এর সাথে যুক্ত করা হয়েছে তাতে এর instrument panel আরো বেটার ইকুইপ্টড হতে পারতো।
ব্যবহারে কেমন?
এইতো কিছুদিন হলো ইনডিয়ান মার্কেটে রিলিজ হলো বাজাজ মোটরস এর নতুন বাইক Bajaj V15 । বাইকটি রিলিজের আগে থেকেই বাইকটি নিয়ে সবার মাঝে আগ্রহ ছিলো তুংগে। প্রথমত এই বাইকের ইতিহাস এবং বাইক তৈরীর ইতিহাস, দ্বিতীয়ত এর ইঞ্জিন, চেসিস, ডিজাইন সব কিছুই নতুন। বাজাজ অটো সাধারণত এই কাজ করে না। নতুন বাইকের প্রয়োজন হলেই বাজাজ অটো তার চালু কোন মডেলের ইঞ্জিন শক্তি পরিবর্তন করেই কাজ সেরে নেয়। কিন্তু এইবার বাজাজ তা করেনি সম্পুর্ন নতুন পারসোনালিটির বাইক উপহার দেয়ার চেষ্টা করেছে।
বাজাজ অটো বলছে এর শক্তিশালী ইঞ্জিন আপনাকে দৃঢ় ও স্থিতিশীল রাইডিং এর অনুভূতি দিবে। এর কর্মদক্ষতা ও নতুন ডিজাইন কমিউটার বাইকেও ভিন্ন এক টুইষ্ট এনে দিবে। কথা সত্য , এর গমগমে আওয়াজ আর দশটা বাইকের মধ্যে সহজেই একে আলাদা করে তুলবে। বাইকটির মধ্যে কোন তাড়াহুড়া খুঁজে পাবেন না। ক্লাচ সম্পুর্ন ছেড়ে না দেয়া পর্যন্ত ইঞ্জিন পুর্ন শক্তিতে যেতে পারবে না কিন্তু ইঞ্জিনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলে এর শক্তি টের পেতে দেরী হবে না।
শহরের ভিড়ে বাইকটি চালিয়ে বেশ মজা পাওয়া যাবে। বাইকটির স্পীড গিয়ার চেঞ্জ রেসিও কম । মানে আপনি ৩৫ কিমি গতিতেই এর পাঁচটি গিয়ারই দিয়ে দিতে পারবেন। ঘনঘন গিয়ার চেঞ্জের ঝামেলা না থাকার কারণে ভীড়ের রাস্তায় নিরবিচ্ছিন ঝামেলাহীন রাইড উপভোগ করতে পারবেন। বাজাজের সাস্পেনশান বরাবরই ভালো এ নিয়ে কারো কোন অভিযোগ থাকবে না আশা করি। V15 কে থামানোর জন্য সামনে ২৪০ মিমি. ডিস্ক ব্রেক থাকলেও পেছনে সাধারণ মানের ১৩০ মিমি. ড্রাম ব্রেক রাইড কম্ফোর্টকে কিছুটা বিঘ্নিত করবে।
অন্যদিকে ইন্ডিয়ান V15 ইউজারদের কাছ থকে কিছু অভিযোগের গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে
• পিক আপ বেশ খারাপ
• গিয়ার সিফটে বেশ ভালো সমস্যা আছে
• অল্প স্পীডেও বাইকটির ভাইব্রেশান অত্যধিক
• বাজাজ যাকে হাস্কি সাউন্ড বলছে অনেক ইউজারি তাকে ইঞ্জিন নয়েজ বলছে
• কিছু ইউজার বলছেন ইঞ্জিন এতো গরম হয়ে যাচ্ছে যে পা পুড়ে যাবার অনুভূতি হয়।
• কিছু ইউজার বলছেন বাইকটিকে কমিউটার বাইক হিসাবে ধরে নিলেও এর ইঞ্জিন ১৫০ সিসির সেগমেন্টের বলে মনে হয় না । এর তুলনায় পালসার ১৫০ এর ইঞ্জিন অনেক ভালো। যেখানে পালসারের ইঞ্জিন ক্ষমতা ১৪.৮ বিএইচপি, ৯০০০ আরপিএম। আর V15 এর ইঙ্গিন ক্ষমতা ১২ বিএইচপি, ৭৫০০ আরপিএম ।
বাজাজ তাদের সাধ্যের মধ্যে চেষ্টার কোন ত্রুটি করেনি। বাইকটি নিয়ে তাদের প্রত্যাশা অনেক, মাসে ৫০০০০ ইউনিট। পারবে কি তাদের আশা পুরন করতে V15 ? না কি ইন্ডিয়ার ইতিহাস আর ঐতিহ্যের লিমিটেড এডিশান সুভেনির হিসাবে থেকে যাবে। এই মুহুর্তে এর উত্তর জানা নেই সময়ই এর উত্তর দিবে।