বাইক চালানোর হাতেখড়ি হয় হোন্ডা সিজি ১২৫ দিয়ে। বাইকটা আমি ব্যবহার করে অনেক মজা পেয়েছিলাম। এরপর আমি ব্যবহার করেছি বাজাজ ক্যালিভার ,পালসার ১৩৫ সিসি এবং বর্তমানে বাজাজ ভি ১৫। বাজাজ পালসার ১৩৫ বাইকটা আমার অনেক লাকি একটা বাইক ছিল। আমি পালসার ১৩৫ দিয়ে বিভিন্ন রাস্তায় দাপিয়ে বেড়িয়েছি। যাই হোক সেই পালসার ১৩৫ টা বিক্রি করে দিয়ে আমি কিনে ফেললাম বাজাজ ভি১৫। আপনারা আমাকে বাজাজের মস্ত বড় ফ্যান বলতে পারেন। কারণ বাজাজের বাইকের সাথে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ভি১৫ বাইকটা কেনার মুল অভিপ্রায় ছিলো এর আউটলুক। বাইকের আউটলুকটা আমার পরিবার এবং বন্ধু বান্ধব সবাই খুব পছন্দ করে। আমি বিগত ৪ মাস যাবত এই বাইকটা ব্যবহার করে আসছি এবং এই ৪ মাসে প্রায় ৫৫০০ কিমি পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হই।আজকে আমি আমার ৫৫০০ কিমি রাইড অভিজ্ঞতা গুলো মোটরসাইকেল ভ্যালীর মাধ্যমে আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেবো।
ইঞ্জিন ও মাইলেজ
ইঞ্জিনের দিক দিয়ে বলতে গেলে ইঞ্জিনটা আমাকে খুব হতাশ করেছে। ইঞ্জিনের পারফরমেন্স ভালো না এবং তেমন স্পীড আমি পাই না। ইঞ্জিনের পাওয়ারের সাথে থ্রটল রেসপন্সটা খুব ভালো ভাবে কাজ করে না এবং এই কারণে আমি একবার এক্সিডেন্টের সম্মুখীন হতে গিয়েছিলাম কিন্তু আল্লাহ রহমতে আমি সেই এক্সিডেন্ট থেকে রেহাই পাই। ইঞ্জিনের বিল্ড কোয়ালিটিও আমার কাছে অনেক দুর্বল মনে হয়েছে এবং পিস্টনের উপরিভাগ একটা স্ক্রু থেকে মবিল লিক করে যা কারও কাছে মান্য করার মতো বিষয় নয়।
এদিকে আমি মাইলেজ পাচ্ছি লিটারে প্রায় ৪৫-৫০ কিমি। মাইলেজের দিক দিয়ে বাইকটা বেশ ভালো। আমি মনে করি যে বাজাজের উচিত দ্রুত এই ইঞ্জিন সমস্যা দূর করা।
কম্ফোরট
সিটিং পজিশন অনেক আরামদায়ক তবে পিলিয়নের সিটিং পজিশনটা তেমন আরামদায়ক না। সিটিং পজিশনে বসে হ্যান্ডেলবারটা ধরে আমি বেশ কম্ফোরট অনুভব করি। সিটিং পজিশন ও হ্যান্ডেলবারের কম্বিনেশনটা দারুণ। হ্যান্ডেলবারের সাথে সংযুক্ত সুইচগুলো মান আমার কাছে মোটামুটি মনে হয়েছে, রাতে এর হেডল্যাম্পটা যথেষ্ট পরিমাণে আলো যোগায় যা আমার রাতে রাইডকে আরও আরামদায়ক করে তুলে।
কন্ট্রোল
ইঞ্জিনের খারাপ পারফরমেন্সের ফলে আমি টপ স্পীড তুলতে সক্ষম হয়েছি ঘণ্টায় ১০৫ কিমি । আমার হাতে আরও পিক আপ ছিলো কিন্তু সেটা টানা সত্ত্বেও ইঞ্জিনের কোনো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছিলো না। ব্রেকিং এর দিক দিয়ে বাজাজ ভি১৫ অনেক ভাল একটি বাইক কারণ আমি অনেক সুন্দর ব্রেকিং অনুভব করি এবং কোন প্রকার স্কীড অনুভব করি না। সামনের সাসপেনশনের পারফরমেন্স আমার কাছে অনেক দুর্বল মনে হয়েছে কারণ আমি যখন খারাপ রাস্তায় বাইকটা নিয়ে রাইড করি তখন সাসপেনশন থেকে অনেক খারাপ ও বিরিক্তিকর শব্দ বেড়িয়ে আসে তবে পেছনের সাসপেনশনটা বেশ ভালোই পারফরমেন্স দেয়। টায়ার যথেষ্ট মোটা এবং গ্রিপ গুলো দারুণ।
সার্ভিস সেন্টার
সার্ভিস সেন্টারের মান আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছে তাদের ব্যবহার ভালো কিন্তু ঠিক করার মান তেমন ভালো না। আমি যে সমস্যা নিয়ে যায় সেটা তখনই সমাধান করে দেয় কিন্তু কিছুক্ষন পর আবার সে সমস্যাটা আমার কাছে ধরা দেয়। আমি মনে করি যে তাদের সার্ভিস দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করা উচিত।
ভালো দিক
-খুব সুন্দর কন্ট্রোলিং
-দুর্দান্ত আউটলুক
-হেডল্যাম্পের আলোটা অনেক বেশি
মন্দ দিক
-ইঞ্জিনের পারফরমেন্স অনেক খারাপ
-সামনের সাসপেনশনটা ভালো পারফর্ম করে না।
-থ্রটল রেসপন্স ভালো না
কোয়ালিটি, ফিচারস ও পারফরমেন্স এর দিক দিয়ে আমার কাছে এর দামটা ঠিক মনে হয়েছে তবে আমি মনে করি যে এর আউটলুক দেখে দাম নেওয়া হয়েছে। পারফরমেন্স এর দিক দিয়ে চিন্তা করলে কেউ যদি পরামর্শ চায় যে বাইকটা কেনা যায় কি না? সেক্ষেত্রে আমার পরামর্শ থাকবে যে বাইকটার পারফরমেন্স খুবই খারাপ কিন্তু বাইকটা আউটলুক অনেক সুন্দর । তাই যারা আউটলুক বেশ পছন্দ করেন তারা এই বাইকটি কিনতে পারেন এবং কেনার পূর্বে অবশ্যই ভেবে চিনতে কিনবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।