বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে যে জাপানী মোটরসাইকেলটি এখনও চোখে পড়ে সেটি হলো ইয়ামাহা ডিলাক্স ১০০। যুগের চেয়ে আধুনিক ডিজাইনের এই মোটরসাইকেলটি দিয়েই আমার মোটরসাইকেল চালানোর শুরু, ২০০৫ সালে। মোটরসাইকেলটি ছিলো আমার দাদার। পরবর্তীতে বাজাজ ডিস্কোভার ১৩৫সিসির এই মোটরসাইকেলটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয়। অসাধারন পারফরমেন্স ছিলো মোটরসাইকেলটির। সর্বশেষ ব্যবহার করছি ঐতিহাসিক বিমানবাহী রনতরী INS VIKRANT এর ধাতব গলিয়ে তৈরী করা বাজাজ ভি১৫।
আমি মাহবুব হোসেন মুন্না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের একজন ছাত্র। জন্ম থেকেই পরিবারের মোটরসাইকেল দেখে আসছি আর তাই মোটরসাইকেলের নেশাও একেবারে শিশুকাল থেকে। পরিবারে ব্যবহার হচ্ছিলো বাজাজ এর ডিস্কোভার ১৩৫সিসির মোটরসাইকেলটি। মোটরসাইকেলটির ডিজাইন, কন্ট্রোল, পারফরমেন্স সব মিলিয়ে অসাধারন ছিলো। কিন্তু ইনডিয়াতে যখন বাজাজ ভি১৫ এলো তখন থেকেই মোটরসাইকেলটির প্রতি আমার আলাদা আকর্ষন তৈরী হলো। বিশেষ করে তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, গঠন প্রনালী, সেমি-ক্রুজার লুক সব কিছুই আমাকে মুগ্ধ করে। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম কবে এই মোটরসাইকেলটি বাংলাদেশে আসবে। বাংলাদেশে আসার পরপরই আমি কিনে ফেলি উত্তরা মোটর্স, রাজশাহী থেকে।
মোটরসাইকেলটি সাথে করে এ পর্যন্ত ৩০০০কিমি এরও অধিক পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছি। ব্যবহৃত এসময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি মোটরসাইকেলটির ভালো-মন্দ দিক গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আশা করি সাথেই থাকবেন।
বাজাজ ভি১৫ নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় তার ডিজাইনের কথা। আমার মোটরসাইকেলটি সাদা রংএর । সাদা রংএর মোটরসাইকেলের ট্যাংকির দুপাশে মোটা গাঢ় লাল রংএর দাগ মোটরসাইকেলটির চেহারা আকর্ষনীয় করেছে। একটু অদ্ভৃত ডিজাইনের ট্যাংকি এখানে ব্যবহার হয়েছে। দূর থেকে মোটরসাইকেলটিকে রাগী বাইসনের মতো মনে হয়। পেছনের থেকে সামনের চাকা সামান্য উচু যেটি মোটরসাইকেলটিকে সেমি-ক্রুজারলুক দিয়েছে। আবার পেছনের সীট কাউলের কারনে কিছুটা ক্যাফে রেসার মনে হয়। যদিও আমার ব্যবহারের প্রয়োজনে সেটি খুলে রাখতে হয়েছে। কেননা মাঝে মাঝেই পেছনে কাউকে নিতে হয়।সামনের ভিন্ন লুকের হেডলাইট এবং পেছনের ফ্লাট টেইল ল্যাম্প একেবারেই নতুন বৈশিষ্ট্যের। সত্যি কথা বলতে মোটরসাইকেলটির প্রায় সকল ক্ষেত্রেই গতানুগতিক ডিজাইনের বাইরে ভিন্ন ডিজাইন। যা যে কারোর চোখে পড়ে। এই কারনে রাস্তায় যখন মোটরসাইকেলটি চালাই তখন অনেকেই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
বাজাজ ভি১৫ এ নতুন ইনজিন ব্যবহার করা হয়েছে তাই তার পারফরমেন্স নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। কেননা বাজাজের বাংলাদেশের জনপ্রিয় মডেলগুলোর ইনজিন পারফরমেন্স অসাধারন। যাইহোক বাজাজ ভি১৫ এর ইনজিন ১৪৯.৫ সিসি, ১সিলিন্ডার বিশিষ্ট,
যেটি ১১.৮৩ BHP এবং ১৩Nm টর্ক তৈরী করতে পারে। ৫টি গিয়ার রয়েছে। বাইকের ইনজিনে শক্তি পাবার জন্য দ্রুত গিয়ার চেইন্জ করতে হয়। ৭০কিমি স্পীড সহজে তোলা গেলেও এরবেশিতে সমস্যা করে। ইনজিনের শব্দে পরিবর্তন মনে হয়।
মোটরসাইকেলটি নিয়ে আমি রাজশাহী থেকে চাপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ পর্যন্ত (১৮০কিমি) ঘুরে এসেছি। এই পথ কিছুদুর যেমন বেশ ভালো আবার কিছু রাস্তা ছিলো খুবই খারাপ। ভালো এবং মন্দ দূধরনের অভিজ্ঞতাই হয়েছে। বাইকটি নিয়ে শহরের মধ্যে ইনজিনের শক্তির ঘাটতি না বুঝলেও দূরের রাস্তায় স্পীড তুলতে পারিনি। ১৫০সিসি মোটরসাইকেল হিসেবে আরো শক্তি থাকার দরকার ছিলো। সুবিধা এই যে মোটরসাইকেলটি যথেষ্ঠ জ্বালানী সাশ্রয়ী প্রতি লিটার জ্বালানিতে প্রায় ৫৫কিমি যাওয়া যায়।
মোটরসাইকেলটির সাসপেনশন মোটামুটি। খারাপ রাস্তায় সামনের সাসপেনশনে একটু বেশি ঝাকুনি লেগেছে। আরেকটু আরামদায়ক দরকার ছিলো। ব্রেকিং ভালোই। সামনে ডিস্কব্রেক এবং পেছনে ড্রাম ব্রেক। বাইকটির ওজন ১৩৫কেজি। তাই ব্রেকিং এ দুটি ব্রেক ভালোই কাজ করে। মোটরসাইকেলটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স উচু, তাই সাধারন স্পীড ব্রেকারে কখনও ঘষা খায় নাই।
সামনের ভিন্ন লুকের হেডলাইটের আলো বেশ ভালোই। রাতের রাস্তায় পথ চলতে সমস্যা হয় না। পেছনের টেইল ল্যাম্পতো আরো ভিন্ন। একদম ফ্লাট। এরকম ফ্লাট টেইল ল্যাম্প এর আগে মনে হয় বাংলাদেশের কোন মোটরসাইকেলে দেখা যায় নাই। দেখতে ভালোই লাগে।
মোটরসাইকেলের বসার পজিশন এবং হ্যান্ডেল আরামদায়ক। ইলেক্ট্রিক্যাল সুইচগুলো মজবুত। মিটার কনসোলটাও ভিন্ন ডিজাইনের। মোটরসাইকেলে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বা মেটালগুলো বেশ মজবুত মনে হয়েছে।
ভালো দিক
- ভিণ্ন আকর্ষনীয় ডিজাইন
- ঐতিহাসিক ঘটনা মিশ্রিত
- কম জ্বালানী খরচ
- চালাতে আরামদায়ক
- মজবুত গঠন
খারাপ দিক
- ইনজিনের শক্তি কম মনে হয়েছে
- সাসপেনশন কম আরামদায়ক
- পেছনের সীট কাউলটি খুলে ফেললে বাইকটির সৌন্দর্য্য কমে যায়, অথচ দুজন বসার জন্য খুলেই রাখতে হয়।
বাজাজ ভি১৫ মোটরসাইকেলটির কিছু দিক হয়তো খারাপ রয়েছে। কিন্তু আপনি এর ডিজাইন, দাম এবং পারফরমেন্সের কথা ভাবলে ২/১টি খারাপ দিক আর মনে থাকার কথা নয়। সব মিলিয়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। মোটরসাইকেলটিকে আমি দশে আট দিবো।