আমরা বাজাজ অটোর দুটি বাইকের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করবো। বাইক দুটি Bajaj V15 এবং Bajaj Avenger 150 Street । যদিও Bajaj Avenger 150 Street নতুন বাইক না, তবে ক্রুজার সেগমেন্টের এই বাইকটির ১৫০ সিসি ২০১৫ সালে প্রথম ইনডিয়ার বাজারে আনা হয়। অন্যদিকে Bajaj V15 ২০১৬ সালে বাজারজাত শুরু করা হয়। কোম্পানি বলছে Bajaj V15 কমিউটার বাইক, তবে সমালোচকরা বলছেন, কমিউটার থেকে ক্রুজার এবং তার থেকেও ক্যাফে রেসারের সাথে মিল বেশী। এক অদ্ভুত ডিজাইনের (off-beat )বাইক Bajaj V15.
আমরা সাধারণত বাইকের তুলনামূলক আলোচনার ক্ষেত্রে একই সেগমেন্টের ভিন্ন কোম্পানির দুটি বাইককে বেছে নিয়ে থাকি। তবে আমরা একই কোম্পানির দুটি বাইককে একে অপরের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছি এবার। কারণও আছে, বাইক দুটিই ইন্ডিয়াতে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বলা হচ্ছে বাজাজ অটোর দুটি বেষ্ট সেলিং বাইক বর্তমানে Bajaj Avenger 150 Street এবং Bajaj V15. বাজারজাত শুরুর ১২০ দিনের মধ্যেই Bajaj V15 এর এক লক্ষ মোটরসাইকেল ইন্ডিয়াতে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আসলে বাজাজ অটো, V15 এর প্রচারণায় ভিন্ন পদ্ধতি নিয়েছিলো এবং অনেকেই বলছেন এটাই ব্যাপক বিক্রির অন্যতম কারণ। অন্যদিকে Bajaj Avenger 150 Street সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছে, এবং ক্রুজার সেগমেন্টের ইন্ডিয়াতে জনপ্রিয় বাইক এটি। ইন্ডিয়াতে ক্রুজার বাইকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর ইন্ডিয়াতে ক্রুজার বাইকে Royal Enfield কে টেক্কা দেয়া কঠিন। তবে আপনি যদি এন্ট্রি লেভেলে সুলভে ক্রুজার বাইক চান তবে Bajaj Avenger 150 Street এগিয়ে থাকবে। কারণ এই লেভেলে Royal Enfield এর থেকে Bajaj Avenger 150 Street 30/40 হাজার রুপী কমেই আপনি পাবেন।
চলুন দেখে নেই বাজাজের এই দুটি বাইকের মধ্যে তুলনামুলক আলোচনায় কে বেশী এগিয়ে থাকে।
Bajaj V15 এবং Bajaj Avenger 150 Street এর ডিজাইন
আগেই বলেছি Bajaj V15 এর ডিজাইন বেশ অদ্ভুত। সামনে থেকে দেখলে প্রথমেই নজরে পড়বে বড় মাপের একটি হেড লাইট। মজার বেপার হলো এর পেছনের অংশ ডিজাইন Suzuki Intruder based tail lamp section এর মতো। ডিজাইনের মধ্যে পেশীবহুল রাগী একটা ভাব আছে। বাইকে কিছু ইন্টারেস্টিং ফিচার আছে, যেমন রিমুভেবল রিয়ার বডি কাউল(Cowl), এলইডি ফুয়েল গেজ যা তেলের লেভেল পরিবর্তনের সাথে সাথে রঙ পরিবর্তন করে ইত্যাদি। অন্যদিকে Bajaj Avenger 150 Street নিখুঁত ক্রুজার ডিজাইনের বাইক। সামনে একটা গোল হেড ল্যাম্প এবং গোল ইন্ডিকেটর (winkers lens) গুলি বাইকের ডিজাইনের সাথে চমৎকার ভাবে মানিয়ে গিয়েছে। বাইকের ফুয়েল ট্যাংকের উপরে বসানো ইন্সট্রুমেন্ট কনসোল প্যানেল আপনাকে ক্লাসিক ক্রুজার বাইকের কথাই মনে করিয়ে দিবে। বাইকের এলয় রিম ভিজুয়াল অ্যাপিলে আলাদা ছাপ ফেলবে। Sporty step up seat অতিরিক্ত কুশনের পাশাপাশি বাড়তি সাপোর্ট দিবে আপনাকে।
Bajaj V15 এবং Bajaj Avenger 150 Street এর ইনজিন
Bajaj V15 এর ইঞ্জিন ১৪৯.৫ সিসির, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার কুল। স্পিড ট্রান্সমিশান (গিয়ার) সংখ্যা পাচটি। ম্যাক্সিমাম পাওয়ার 11.8 bhp @ 7500 rpm এবং সর্বোচ্চ টর্ক আউটপুট 13 Nm @ 5500 rpm. অন্যদিকে Bajaj Avenger 150 Street এর ইঞ্জিন ১৫০ সিসির, এয়ার কুল , সিঙ্গেল সিলিন্ডার সাথে ফাইভ স্পীড গিয়ার বক্স। ম্যাক্সিমাম পাওয়ার 14.3 bhp @ 9000 rpm এবং সর্বোচ্চ টর্ক আউটপুট 12.5 Nm @ 6500 rpm। ইনজিনের বৈশিষ্ট্য দেখেই বুঝতে পারছেন Bajaj V15 শহরের রাস্তা্র উপযোগী হলেও দূরের রাস্তায় পথ চলতে Bajaj Avenger 150 Street আপনাকে বেশি সন্তুষ্ট করবে।
জ্বালানি খরচ
Bajaj V15 এর ARAI (The Automotive Research Association of India ) certified mileage হলো ৫৭ কিমি/ লিটার যা Avenger Street 150 থেকে ৭ কিমি/লিটার বেশী। Avenger Street 150 যায় ৫০ কিমি প্রতি লিটারে। সে হিসাবে এক লক্ষ কিমি চলতে Bajaj V15 এ আপনার ফুয়েল লাগবে প্রায় ১৭৫৫লিটার, অন্যদিকে Avenger Street 150 এ আপনার ফুয়েল লাগবে ২০০০ লিটার। যদি জ্বালানী সাশ্রয়ের বিষয়টি ভেবে থাকেন তাহলে Bajaj V15 এগিয়ে থাকছে।
পারফরমেন্স
Torque to weight ratio তে Avenger Street 150 এর থেকে ১৫% বেশী হওয়ায় বাজাজ V15 প্রাথমিক ভাবে আপনাকে গতিতে এগিয়ে রাখবে। তবে দীর্ঘ যাত্রায় কিন্তু Avenger Street 150 প্রাথমিক এই পরাজয় কাটিয়ে উঠবে এবং V15কে পেছনে ফেলে দিবে। কারণ Avenger Street 150 এর Power to weight ratioতে Bajaj V15 থেকে ১০% বেশী। তবে হ্যা যদি বলেন এই দুই বাইকের মধ্যে কোনটি সহজে পরিচালনা করা যায় তবে V15 এগিয়ে থাকবে। চালানোর সময় আনুগত্য আপনি V15 এই বেশী পাবেন। বিশেষ করে শহরের ব্যাস্ত রাস্তায় তুলনামূলক লম্বা Avenger Street 150 নিয়ে আপনি কখনো কখনো বিব্রত হতে পারেন। উল্লেখ্য, Bajaj V15 এর ওজন ১৩৬কেজি অন্য দিকে Bajaj Avenger 150 Street এর ওজন ১৪৮কেজি।
গঠন
মজার ব্যাপার হলো দুটি বাইকেই কিন্তু বিশ্বস্ত পালসার ১৫০ DTS-i ইঞ্জিন ব্যাবহার করা হয়েছে। তবে দুটি বাইকেই আলাদা ভাবে এই ইঞ্জিনকে টিউন করা হয়েছে এর ফলে উভয় বাইকেরই ইঞ্জিনের শব্দ কিছুটা কর্কষ মনে হতে পারে। আসলে ১৫০ সিসির ইঞ্জিন নিয়ে হোন্ডা, সুজুকি বা ইয়ামাহার যে সুদীর্ঘ গবেষণা রয়েছে সে গবেষনা বাজাজের নেই। ফলে হোন্ডা, সুজুকি বা ইয়ামাহার ১৫০ সিসির ইঞ্জিন গুলি সময়ের সাথে সাথে অনেক পরিশোধিত হলেও বাজাজ সেই পুরাতন পালসারের ইঞ্জিনকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাদের বিভিন্ন মডেলের ১৫০ সিসির বাইকে যুক্ত করে আসছে। এর ফলে বাজাজ হোন্ডা, সুজুকি বা ইয়ামাহার তুলনায় অপেক্ষাকৃত নিম্ন মানের বাইক তাদের ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। যদিও বাজাজ সম্প্রতি সময়ে এই বিষয়ের উপরে মনোযোগ দিয়েছে। তাদের রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট ইউনিটকে আরো শক্তিশালি করেছে কিন্তু তারপরেও তাদের জাপানী প্রতিযোগী বাইকগুলি থেকে তাদের বাইকের প্লাস্টিক ও রাবার পার্টেস মান এখনও অনেক নিম্ন মানের। যাই হোক আমরা জাপানী বাইকের সাথে বাজাজের তুলনা করছি না আমাদের আজকের তুলনা বাজাজ এর দুটি বাইকের মধ্যে। অন্যকোন দিন সুযোগ পেলে জাপানী আর বাজাজ বাইকের মধ্যে তুলনা করবো। আসলে এই কথাগুলি বলার কারণ হলো Avenger Street 150 এখনও অরিজিনাল Kawasaki Eliminator বাইকের কিছু পার্টস ব্যবহার করা হয়; আর তাদের বিল্ড কোয়ালিটি দেখেই একনজরে আপনি বলে দিতে পারবেন কোন গুলি। আর সার্বিক গাঠনিক বৈশিষ্ট্যে এবং মান এ Bajaj Avenger 150 Street এগিয়ে থাকবে Bajaj V15 এর থেকে।
নিয়ন্ত্রন
সাধারণ ভাবে, সাধারণ গতিতে মসৃণ রাস্তায় দুটি বাইকে আপনি তেমন কোন পার্থক্য খুজে পাবেন না। তবে বাঁক নিতে গেলেই উভয় বাইকেই আপনার অদ্ভুত অনুভূতি হবে। Avenger তার ইঞ্জিন বৈশিষ্টের কারনেই আপনার কাছে অলস মনে হবে আর এর ঢাউস সাইজের Rake angle আর বড় হুইল বেস(১৪৮০মিমি) দুর্বল ইঞ্জিনে বাড়তি বোঝা চাপানোর মতো মনে হবে। অপেক্ষাকৃত চিকন সামনের চাকা বাঁক নেবার সময় গ্রিপে আপনাকে অসুবিধায় ফেলবে আর বাঁক নেবার সময় হাটু নামানোর চিন্তা মাথায় না আসাই ভালো। তবে এক্ষেত্রে V15 তুলনামূলক ভাবে ভালো। তবে এর ওয়েট ব্যালেন্সের কারণে দ্রুত গতিতে বাক নেবার বিষয়টি আপনার কাছে কষ্টকর মনে হবে। তবে Avenger আপনি একটা বাড়তি সুবিধা পাবেন এর Unusually small rear wheel আপনাকে রাস্তার ঝাকুনিতে বাড়তি সুবিধা দিবে।
আরাম
Avenger Street 150 এর বসার পজিশান অনেকটাই রিলাক্স মুডে সামনে পা ছড়িয়ে দিয়ে যেমনটি ক্রুজার বাইকে হয়ে থাকে। সংক্ষিপ্ত যাত্রায় খুবই আরামদায়ক, তবে লম্বা যাত্রায় ক্লান্ত হয়ে পড়বেন এবং স্যাডেল সোর (saddle sore) এর কবলে পড়বেন। আলাদা ভাবে Avenger কে দোষ দিয়ে লাভ নাই এটা আসলে সব ক্রুজার বাইকেরই একটা কমন সমস্যা। এর পিলিওন সিটে চমৎকার ব্যাক সাপোর্টের কারণে দুই চাকার বাহনে যতটুকু আরাম পাবার কথা তার সবটাই পাবেন। অন্যদিকে V15 এর বসার পজিশান পুরোটাই কমিউটার বাইকের মতো, সাথে ক্রুজার বাইকের হালকা টুইষ্ট পাবেন। মধ্যে বয়সী মানুষের জন্য চমৎকার কমিউটিং বাইক। তবে এর পেছনের ছিট একটু বেশীই ছোট, সত্যি বলতে গেলে এই সিট ব্যাহার না করাই ভালো এর চমৎকার রিমুভেবল সিট কাউল খুলে নিলে এর সৌন্দর্য অনেকটাই নষ্ট হয়।
পরিশেষে
পরিশেষে বলতে চাই ক্রুজার বাইকের ইঞ্জিন সব সময়ই একটু বেশী শক্তিশালী হয় যা আপনি Avenger Street 150 পাবেন না। মূলত আমাদের দেশে সিসি সমস্যার কারনেই Avenger ২২০ সিসির বাইক আমাদের দেশে আপনি পাবেন না। এটা অনেকটা দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মতো ব্যাপার হবে। সিসির সীমাবদ্ধতার কারনেই এর Thump আর Torque এ আপনার কমতি মনে হবে। অন্যদিকে V15 কমিউটার বাইক হিসাবে অনেকটাই সেন্সেবল। আর ১৫০ সিসি রেঞ্জের বাইকের তুলনায় দামও বেশ সহনীয় । আসলে এই বাইকে ক্রুজারের অল্প একটু টুইষ্ট থাকায় যারা নিয়মিত কমিউটিং করে Pot belly বা Back problems ভোগেন তাদের জন্য বেশ আদর্শ একটা বাইক হতে পারে। বাজাজ পালসার ১৫০ থেকে নিঃসন্দেহে কমিউটিং এ এটি একধাপ এগিয়ে থাকবে। বাইক কেনার ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা মতামত দেখাতে পারি পথ দেখাতে পারি কিন্তু শেষ সিদ্ধান্ত আপনারই । ধন্যবাদ।