বাইক চালানোর গল্পটা শুরু হল হোন্ডা এইচএস ১০০ সিসির বাইক দিয়ে । এটা ছিলো ২০০২ সালের কথা তখন থেকেই আমার বাইকের প্রতি একটা আকর্ষণ কাজ করত এবং আমি চাইতাম যে বাইক নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে। যখন বাইক চালানো পুরোপুরি শিখে ফেললাম তখন আমি কিনি হিরো হাংক ১৫০। সেই বাইকটা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ট্যুর করেছি বাইকার ভাইদের সাথে এবং সেই বাইকটা আমি রাইড করেছি প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার কিলোমিটার। ১ লক্ষ ৩০ হাজার কিলোমিটার রাইড করে আমি হিরো হাংক বাইক নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম। এরপরে আমি বাজেটের মধ্যে সুন্দর ডিজাইন, পারফরমেন্স ও আধুনিক ফিচারসের বাইক খুঁজতে থাকি । খুঁজতে খুঁজতে আমার সামনে আসলো বেনেলী ১৬৫এস যেটা সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারে এসেছে এবং আধুনিক ফিচারস দিয়ে বাইকটা একদম পরিপূর্ণতা পেয়েছে। আমার খুব কাছের এক বন্ধু বেনেলী ১৬৫এস বাইকটা ব্যবহার করে তার থেকে বাইকটা রাইড করে আমি খুব ভালো অনুভুতি পেয়েছি বাইকটা সম্পর্কে এবং এর আরাম, ইএফআই লিকুয়িড কুল্ড ইঞ্জিন, ইঞ্জিনের শক্তি, এক্সেলেরেশন, ব্রেকিং ইত্যাদি সব কিছু আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে। সব মিলিয়ে আমার বাজেটের বেনেলী ১৬৫এস বাইকটাকে প্রাধান্য দিই এবং বাইকটা ক্রয় করি নিজের পরিবার নিয়ে গিয়ে। এখন পর্যন্ত ৩ মাসে বাইকটা রাইড করেছি প্রায় ৯৫০০ কিমি । এর মধ্যে তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ ট্যুর সহ অনেক ট্যুর ছিলো । আমি এই বাইক থেকে কী কী সাপোর্ট পেয়েছি এবং বাইকটা আমাকে কেমন ফিডব্যাক এখন পর্যন্ত দিচ্ছে তা আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
আরাম
বাইকটার সিটিং পজিশন আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে । আমি একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাইড করেও এই বাইক থেকে খারাপ কোন অনুভুতি পাইনি। এমনটি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া ১৪ ঘণ্টা রাইড করেও কোমড় ব্যথা বা শরীরে কোন সমস্যা ইত্যাদি পাইনি। আমার কাছে এই বাইকের সিটিং পজিশন খুবই ভালো লেগেছে।
ইঞ্জিন
ইঞ্জিন পারফরমেন্স নিয়ে এই বাইকের প্রতি আমি খুব সন্তুষ্ট। বিশেষ করে এর লিকুয়িড কুল্ড ইঞ্জিন লং রাইডে আমাকে অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। একটানা ঘন্টার পর ঘন্টার রাইড করেও ইঞ্জিনের পারফরমেন্সে কোন ঘাটতি পাইনি এবং ইঞ্জিন থেকে শক্তি একদম যথাযথ পেয়েছি। ১৪ ঘণ্টা একটানা ইঞ্জিন চালু ছিলো এবং ইঞ্জিন এক্ষেত্রে কোন সমস্যা করেনি। ৪ ভালভ ৩ স্পার্ক প্লাগের এই ইঞ্জিন আসোলেই আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে। আর সত্যি কথা বলতে এই সেগমেন্টে সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিন রয়েছে এই বাইকের যা অন্যান্য দামী বাইকের সাথে এই ইঞ্জিন নিয়ে টেক্কা দেওয়ার মত।
ডিজাইন
ডিজাইনের কথা যদি বলি তাহলে এক কথায় বলতে হবে যে এই বাইকের ডিজাইন দেখে যে কেউ প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যাবে। বাইকের সামনের দিকে রয়েছে সুন্দর এলিডি ল্যাম্প যা রাতে দেখতে আরও সুন্দর মনে হয় এছাড়াও সাইডে এবং পেছনে রয়েছে নিখুত ডিজাইন যা বাইকটাকে অভাবনীয় সুন্দর করে তুলেছে। আমি এই বাইকের ডিজাইন নিয়ে সন্তুষ্ট ।
মাইলেজ
১৬৫ সিসির ৪ ভালভ, ৩ স্পার্ক প্লাগ ইঞ্জিন থেকে আমি মাইলেজ পেয়েছি শহরের মধ্যে ৩৫ কিমি প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে পেয়েছি ৪২ কিমি প্রতি লিটা। এত শক্তিশালী ও স্পীডের ইঞ্জিন থেকে এই রকম মাইলেজ পেয়ে আমি অবশ্যই দাবি নিয়ে বলবো যে বাইকের মাইলেজ অনেক ভালো।
কন্ট্রোল ও বাইকের আফটার সেলস সার্ভিস
বাইকের কন্ট্রোল অনেক ভালো। এর সিবিএস ব্রেকিং খুবই কার্যকর কিন্তু এই ব্রেকিং এর সাথে আপনাকে মানিয়ে নিতে হবে কারণ সিবিএস ব্রেকিং সিস্টেম সবাই ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। আমার কাছে এই বাইকের সাসপেনশন থেকে শুরু করে কন্ট্রোল এর দিক থেকে অনেক ভালো লেগেছে এবং আমি খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে কন্ট্রোল করে নিতে পারি।
আমার মতে অন্যান্য বাইকের থেকে এই বাইকের স্পেয়ার পার্টসের দাম অনেক কম । কারণ আমি বাইকের কিছু বিষয় রিপ্লেস করেছি এবং সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে দেখেছি যে বাইকের স্পেয়ার পার্টসের দাম তুলনামূলক কম।
এইবার আসি বাইকের মন্দ কিছু বিষয় শেয়ার করতে
বাইকের বল রেসার যেটা আছে সেটা আমার মতে একটু সমস্যা মনে হয়েছে। বল রেসারে আমি অল্প দিনেই সমস্যা পেয়েছি এবং আমার মনে হয় কোম্পানীর উচিত এই বিষয়টা একটু নজরে নেওয়া।
শুরুতে ভাইব্রেশন না থাকলেও ইঞ্জিন যত গর্জন করে ততই এর ভাইব্রেশনের মাত্রা বাড়তে থাকে । আমি মনে করি যে বাইকের ভাইব্রেশন আরেকটু কম হলে রাইড করে আরও মজা পাওয়া যেত।
বাইকের এক্সজস্ট এর ডিজাইন আমার কাছে ভালো লাগেনি। এক্সজস্টের ডিজাইন এই বাইকের সাথে ম্যাচিং করে আরও ভালো দেওয়া উচিত ছিলো।
সবশেষে আমি সকল বাইকাদের বলবো যে বেনেলী ১৬৫এস বাইকটি আসোলেই অনেক ভালো একটি বাইক। বিশেষ করে এই বাইকের ইঞ্জিন পারফরমেন্স, ইএফআই সিস্টেম, আরাম ইত্যাদি উল্লেখ করার মত। তাই যারা ভাবছেন যে এই বাইকটা কিনবেন কী না তাদের উদ্দেশ্যে বলবো যে আমার কাছে এই বাইকটা আপনাদের জন্য সাজেস্ট করার মত । সবাই ভালো থাকবেন এবং সাবধানে বাইক রাইড করবেন।