আসসালামুয়ালাইকুম পাঠক, আমি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান সায়মন ।আজকে আমি আপনাদের সাথে বাংলাদেশের বহুল আলোচিত মটরবাইক LONCIN GP ১৫০ এর ১০৫০০কিমি পথ পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করব ইনশাআল্লহ ।
বাইক চালানো এবং কিনার অভিজ্ঞতা
বাইক চালানোটা সব সময় আমার কাছে থ্রিল ।ছোটবেলা থেকেই অন্যান্য সবার মত বাইকের প্রতি আমি নিজেও অনেক আগ্ৰহী ছিলাম ।স্বপ্ন দেখতাম নিজের বাইকের ।আমার বড় হবার সাথে সাথে সেই স্বপ্ন ও বড় হতে লাগল ।বাসায় বাইক কিনে দেয়ার কথা বলে লাভ হতো না ।একমাত্র সন্তান হবার কারণে বাসা থেকে রাজি হচ্ছিল না । কিন্তু আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া করে যেতাম যেন তিনি একটা ব্যবস্থা করে দেন । আলহামদুলিল্লাহ, এর মধ্যে আমার ছোট খালু একটি হোন্ডা কোম্পানির বাইক কিনেন ।আমি সেই বাইকটি দেখতে যাই এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, তখন তার ঐ সদ্য কিনা বাইকটি তিনি আমাকে দিয়ে দেন ।
এর আগে বন্ধুর বাবার বাইক দিয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল । ঐ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জীবনে প্রথম বারের মত সাভার থেকে উত্তরা আসি , পিলিওন সহ ।যাক , সেই ঘটনার পর আমার বাসার সবার বাইক নিয়ে যেই ভীতি ছিল সেটা কিছুটা হলেও কমে ।আর সময়ের সাথে সাথে সেটা এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ দূর হয়ে যায় ।পরে , আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছায় আম্মুকে রাজি করে ফেললাম বাইক কিনে দেয়ার জন্য ।আম্মুর জমানো টাকা আর আমার নিজের টাকায় বাইক কিনে ফেললাম।আলহামদুলিল্লাহ,এখন আমি LONCIN GP 150 এর একজন গর্বিত মালিক ।আর নিজের টাকায় কিনে বাইক চালানোর অনুভূতি অন্যরকম ।
কেন LONCIN GP
স্পোর্টস বাইকের প্রতি দুর্বলতা কম বেশি সবারই থাকে ।সেই কারনে পছন্দের তালিকা দখল করে ছিল Yamaha R15 V2 & Honda CBR ( Repsol ) ।কিন্তু , প্রিমিয়াম সেগমেন্টের বাইক কিনার সামর্থ্য না থাকার কারণে Suzuki Gixxer SF কিনার সিদ্ধান্ত নিয়ে টাকা গুছানো শুরু করি ।এর মধ্যে Lifan KPR বাইকটিও চোখে পড়ে ।এর পর Gixxer আর KPR এর কম্পেয়ার করতে থাকি ।লুক , স্টাইল , টান , দাম এই সব মিলিয়ে মনে হল KPR বেস্ট অপশন আমার জন্য ।এর পর বিভিন্ন সাইটে KPR নিয়ে লিখা গুলো পড়তাম । একদিন কোন একটা সাইট ঘাটতে গিয়ে দেখলাম LONCIN VS KPR এর কম্পেয়ার ।Trust Me , প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাই আমি LONCIN এর ।এর পর Gixxer , KPR & LONCIN এর পিকচার দেখাই আম্মুকে ।আমাকে অবাক করে দিয়ে , আম্মুও LONCIN পছন্দ করে ফেলে ।আর তখনি LONCIN GP কিনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি ।এর পর বাইকিং গ্ৰুপ গুলোতে LONCIN VS KPR নিয়ে পোষ্ট করি ।১০০ জনের মধ্যে ৯৫ জন KPR কিনতে বলে কিন্তু এত এত নেগেটিভ মন্তব্য আসার পরেও আমার মন LONCIN এর দিকেই ঝুঁকে ছিল ।এর পর এক ভাইয়ার সহযোগিতায় LONCIN GP BANGLADESH গ্ৰুপটির লিংক পেয়ে সেখানে জয়েন করি । জয়েন করার পর " মাইলেজ " কম এই প্রবলেম ছাড়া আর বড় কোন সমস্যায় ইউজাররা পড়ে না দেখে এইটা কিনার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই চূড়ান্ত ভাবে ।
ডিজাইন
আমার মনে হয়না LONCIN এর ডিজাইন নিয়ে আলাদা ভাবে কিছু বলতে হবে ।স্পোর্টস সেগমেন্টের যত গুলো বাইক আছে বাংলাদেশে তার মধ্যে LONCIN এর লুকস প্রিমিয়াম ক্যাটগরির । সিটিং পজিশন, ৩ পার্ট হ্যান্ডেল বার , আলাদা পিলিওন সিট (রাইডার জমিনে আর পিলিওন আকাশে টাইপ না ) , ডিজিটাল স্পিডোমিটার ,এনালগ RPM বক্স, ৬ গিয়ার , সাইড ইন্ডিকেটর সাথে পার্কিং লাইট ।এক কথায় " কিলার লুক "
স্পেসিফিকেশন
E-start only, Vacuum carburetor, Alloy wheel, Tubeless tyre, Fr. & Rr. disk brake, LED Taillight, LED turn light, Digital meter, Upside down Fr. shock absorber, Centre placed absorber, Alloy main and passenger footrest, Alloy rear armrest, Anti-slip seat with good elasticity, Alloy body muffler, Half chain case.
Engine and transmission:
Engine type:Single cylinder, 4-stroke, Oil-cooled
Maximum power:17.7 hp (13.2 kw) / 8500 rpm
Maximum torque:17.2 N.m / 6000 rpm
ইঞ্জিন ক্ষমতা
পারফেক্ট পারফরম্যান্স পেতে চাইলে " HIGHWAY " ছাড়া কোন বিকল্প নেই ।১১০-১১৫কিমি পর্যন্ত দানবের মত গতি উঠবে । কিন্তু এর পর স্লো ।এর গিয়ার শিফটিং হার্ড ।১ ও ২ নং গিয়ার রাফ । বেশিক্ষণ রাইড করতে প্রবলেম হয় ।৩ নং গিয়ার কিছুটা স্মুথ , বাকি গিয়ার গুলো অনেক স্মুথ ।১ থেকে ৩ এ থাকা অবস্থায় গিয়ার বদলানোর কথা মাথায় আসবে বার বার ।৬ নং গিয়ারটা বেশি জোশ ।আমি এর টপ স্পীড পেয়েছি ১৪১-১৪৩ । হাইওয়েতে পিলিওন সহ আমি টপ পেয়েছি ১২৮-১৩০ । Valve adjustment ঠিক থাকলে বাইকে কোন ভাইব্রেশন পাবেন না ।
কন্ট্রোল , ব্রেকিং , কমফোর্ট
১০০ তে ৯৫ , মানে GPA 5 ।সাসপেনশন , ডুয়েল ডিস্ক , সিটিং পজিশন এই সব নিয়ে কোন কথা হবে না ।
মাইলেজ
সব চেয়ে বেশি জানতে চাওয়া প্রশ্ন। কিনার আগে ভেবে রেখেছিলাম, "বাঘের খাবার একটু বেশী লাগে" । তাই মাইলেজ নিয়ে আপাতত মাথা ঘামাই না । কয়েক বার চেক করে ৩০+- পেয়েছি ।হাইওয়েতে ৩০+ পাবেন ইংশাআল্লহ যদি প্রপার কন্ডিশনে থাকে ।
ইঞ্জিন ওয়েল-অফিসিয়াল রিকমেন্ড ২০w৫০ ।আমি MOTUL ব্যবহার করে ভাল পারফরমেন্স পাচ্ছি ।
যা যা পরিবর্তন করেছি
এই ১০৫০০কিমি চলার পথে এখন পর্যন্ত আমি সামনের ব্রেক প্যড ২ বার আর পিছের ব্রেক প্যড ১ বার বদলানো আর কিছুই পরিবর্তন করিনি ।
তবে ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহারের কারনে চেইন স্প্রোকেট বদলানোর ইচ্ছা আচে খুব শীঘ্রই । যদিও খুব একটা প্রয়োজন পরছে না এত জলদি ।
পার্টস নিয়ে কিছু কথা
অনেকেই ভাবতে পারেন চায়না বাইক মানেই পার্টস না থাকা । কিন্তু এইটা ভাবা একেবারে উচিত হবে না ।শো-রুমে অর্ডার করলে ২-৩ দিনের মধ্য পার্টস পেয়ে যাবেন । আর টুক-টাক পার্টসতো শো-রুমে আছেই ।এই ছাড়া H.Power এর অথরাইজড ডিলার ঢাকার বাইরে + ঢাকার মধ্য পার্টস সরবারহ করে থাকে ।
সুবিধা
- অসাধারণ ব্রেকিং
- চমৎকার লুক
- আরামদায়ক সাসপেনসান
- কমফোর্টেবল সিটিং পজিশন । কোমর ব্যাথা হয় না । ( রাইডার+পিলিওন)
- অসাধারণ টান
- অসাধারণ সাউন্ড & এক্সহোস্ট
- অবিশ্বাস্য মূল্য
অসুবিধা
- ক্লাস & গিয়ার হার্ড
-চেন লুজ হয় জলদি (লো কোয়ালিটি)
- হেডলাইট আলো কম
-বিল্ড কোয়ালিটি ১০০ তে ৮৫
- স্মুথ না
-জ্যামের মধ্যে হাত ব্যাথা করে
পরিসমাপ্তি
১লাখ ৮০ হাজার টাকা বাজেটের মধ্যে সেরা স্পোর্টস বাইক । প্রোপার সার্ভিস পেলে এই বাইক আপনাকে আশাহত করবেনা । কিন্তু, সার্ভিস সেন্টার আর সার্ভিস টীমের কারনে কিছুটা সমস্যা হবে । আমরা আশা করছি, এই ব্যাপারগুলো H-Power Management দেখবে আর অনেক তাড়াতাড়ি সমাধান দিবে ।
কিছু টিপস
- ২০W৫০ গ্ৰেডের ভাল মানের ১২০০মিলি ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করবেন ।
- নিয়মিত চেইন পরিষ্কার, টাইট ও লুব করবেন (ও রিং চেইন Sprocket সেট ব্যবহারে এই সমস্যার সমাধান পাবেন ।
- সার্ভিস সেন্টার থেকে হাতে মিলানো সিস্টেমে ট্যাপেড মিলাবেন না ।
ট্যাপেডের মাপ - ইনটেক - ০.৪ - ০.৬
এক্সহোস্ট - ০.৪-০.৬