CFMOTO 300SR বাইক টি কেন কিনেছি, এ ব্যাপারে কিছু বলার আগে আমার ব্যাপারে কিছু বলতে চাই।
আমি মাহিম হোসেন তীব্রো, আমার অনেক পরিচয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে আমি একজন বাইক প্রেমী। ভালোবাসি বাইক রাইড করে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়াতে। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বাইকগুলো আমার আগে থেকেই ভালো লাগে। আমি Suzuki Gixxer দিয়ে বাইক চালানো শুরু করি এর পরে আমি বেশ কয়েক টা বাইক পরিবর্তন করি বাইক গুলো হচ্ছে Yamaha R15, CBR, GSXR এবং সর্বশেষ R15M।
এখন আমি আমার বর্তমান বাইক
CFMOTO 300SR এর ব্যাপারে কিছু কথা বলতে চাই।
CFMOTO একটি চাইনিজ ব্র্যান্ড এবং আমরা যারা জাপানি বা ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ডের বাইক ব্যবহার করি তারা সাধারনত চাইনিজ ব্র্যান্ডের উপরে বিশ্বাস পাই না, আমিও তার ব্যাতিক্রম না। তবে যখন থেকে CFMOTO ব্যান্ডের খবর শুনতে পাই যে, এ ব্র্যান্ড তাদের বাইক বাংলাদেশে নিয়ে আসবে তখন থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে এ ব্র্যান্ডের উপরে রিসার্চ শুরু করি। ফলস্বরূপ জানতে পারি, এ ব্র্যান্ড KTM এবং Yamaha ব্র্যান্ডের সাথে কোলাবোরেশনে আছে এবং ২০২৪ সালে মোটোজিপি তে বিজয়ী ছিলো এ ব্র্যান্ড।
আরও জানতে পারি বাংলাদেশে তাদের প্রতিটি শো-রুম হবে 3S সার্ভিস এবং তারা তাদের সার্ভিস ও স্পেয়ার পার্টসের এভেলএবিলিটি নিয়ে অনেক বেশি কনফিডেন্স। এ ব্যাপার গুলা আমাকে এ ব্র্যান্ডের ব্যাপারে পজিটিভ করে তোলে। আমার এক বন্ধু অস্ট্রেলিয়া তে থাকে এবং CFMOTO এর ৪৫০সিসির বাইক ইউজ করে। তার কাছে থেকে আমি এ ব্র্যান্ডের ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে পারি এবং তার নিজের বাইকের উপরে সে যে পরিমান সন্তুষ্ট তা শুনে আমিও এ ব্র্যান্ডের উপরে ভরসা পাই এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে আমি CFMOTO 300SR বাইক টী কিনবো।
জানুয়ারী মাসে CFMOTO তাদের প্রথম স্লটের বাইক ডেলিভারি শুরু করে এবং আমিও আমার বাইক্টি হাতে পাই। ভালো লেগেছে যে তারা তাদের কথা রেখেছে এবং যে ডেটে ডেলিভারি দেয়ার কথ ছিলো
সে ডেটেই দিয়েছে। প্রায় দুই মাস ধরে আমি আমার বাইক টি ব্যবহার করছি এবং প্রায় ১৫০০ কিমি রাইড করেছি।
এই ১৫০০ কিমি চালিয়ে আমার যে ব্যপার গুলা ভালো লেগেছে সে গুলা হচ্ছেঃ
লুকঃ এ বাইকের লুক। আমার মনে হই এখন পর্যন্ত সব থেকে আকর্ষনীয় লুকের বাইক এই টি। যে রাস্তা দিয়েই যায় একটা আলাদা এটেনশন পাওয়া যায়, সবাই বাইক টা কাছে এসে দেখতে চায় এবং ছবি তুলতে চাই। ব্যাপার গুলা আমি খুব উপভগ করি।
কম্ফোর্টঃ এ বাইকের কন্ট্রোল যেমন ভালো ঠিক তেমনি কম্ফোর্টেবল। আমি সিটি এবং হাইওয়ে উভয় রাস্তায় রাইড করে দেখেছি, কম্ফোর্ট এবং কন্ট্রোল এর দিক থেকে এ বাইক সেরা।
থ্রটল রেস্পন্সঃ এ বাইকের আর একটা মজার দিক হচ্ছে এর এক্সসেলারেশন। যা এতোই স্মুথ যে, বাইক চালানোর অভিজ্ঞতাকে এক অন্য মাত্রাই নিয়ে যায়।
টিএফটি মিটারঃ সব থেকে ভালো ফিচার হচ্ছে এর টিএফটি মিটার। বাইক চালানোর সময় আমার মনে হই আমি কার চালাচ্ছি। এ মিটারের ফিচারসগুলো সত্যি মনোমুগ্ধকর।
বিল্ড কোয়ালিটিঃ আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি বাংলাদেশে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির যে সমস্ত বাইক আছে তাদের বিল্ড কোয়ালিটি এবং এই বাইকের কোয়ালিটি সেম বা অনেক আংশে ভালো।
আর একটা ভালো দিক হচ্ছে, এ বাইকে এমন সব পার্টস আগে থেকেই দেয়া ছে যা, অন্য প্রিমিয়াম বাইকগুলোতে আমাদের কিনে ইন্সটল করতে হতো এবং একটি ৩০০ সিসির বাইক হিসেবে এ বাইকের কোন হিটিং ইস্যু নেই।
যে সমস্যা সমূহ শুরু থেকে ফেস করেছিঃ
ভাইব্রেশনঃ শুরুতে ভাইব্রেশন ফিল করতাম, পরে এ ব্যাপারে কথ বলে জানতে পারলাম যে, আমরা যেহেতু হাইয়ার সিসি বাইক চালিয়ে অভ্যন্ত না তাই সঠিক সময়ে গিয়ার সিফটিং না করাই এমন টা মনে হচ্ছে। এখন যত দিন যাচ্ছে বাইক ততই স্মুথ হচ্ছে।
পিলিয়ন নিয়ে রাইড করাটা অনেক বেশি আনকম্ফোর্টেবল। একটু হেভি পিলিয়ন হলেই রাইড করতে অনেক প্রব্লেম ফেস করতে হয়। যদিও এ বাইকগুলো সাধারণত সিঙ্গেল ইউজের জন্যই তৈরী।
এ বাইকের লুকিং গ্লাস নিয়া আমি সন্তুষ্ট না। পেছনের অবজেক্ট দেখতে প্রব্লেম হয়।
বাইকের স্টক হর্ন আমার কাছে ভালো লাগেনি।
ইঞ্জিনের সাউন্ড আমার কাছে তেমন ভালো লাগে নি। যদিও ১৫০০ কিমি হয়েছে মাত্র সামনে হয়তো পরিবর্তন হতেও পারে।
পরিশেষে বলেতে চাই, চাইনা ব্র্যান্ড হলেই যে খারাপ হবে এমন চিন্তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে এবং নতুন যে ব্র্যান্দ গুলা বাংলাদেশে আসছে তাদের স্বাগতম জানাতে হবে ।